মোছা. সাহানা খাতুন। স্বামী-মো. সলিম, বয়স প্রায় ৪৫। বাড়ী সিরাজগঞ্জ শহরের আমলাপাড়ার আফজাল খান রোডে। স্বামী সন্তান নিয়ে সুখের সংসার ছিল। হঠাৎ একদিন কাল নাগিনী হয়ে তার জীবনে প্রবেশ করে পাশের বাড়ীর রুবেল হোসেনের স্ত্রী স্বপ্না খাতুন নামে এক প্রতারক নারী। সংসারে আরো বেশি স্বচ্ছলতা ফেরানোর জন্য কবিরাজী তাবিজ করতে পরামর্শ দেন। তার পরামর্শে কবিরাজের কাছে গিয়ে কোন কাজ হয় না। পরে কাল নাগিনী-প্রতারক স্বপ্না একজন জ্বিনের বাদশার সাথে মোবাইলে কথা বলিয়ে দেয়। পরে ওই জ্বিনের বাদশা ও কালনাগিনী স্বপ্নার খপ্পড়ে পরে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা খুইয়ে এখন নি:স্ব হয়ে পরিবার নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। ভুক্তভোগী সাহানা খাতুন অবিলম্বে কালনাগিনী স্বপ্না ও তার কথিত জ্বিনের বাদশাকে গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছেন।
কান্নাজড়িত কন্ঠে স্বপ্না জানান, স্বামী ও ছেলেমেয়ে নিয়ে মোটামুটি ভালভাবেই সংসার চলাবস্থায় মাঝে-মধ্যে আমার স্বামী ও সন্তানের মধ্যে ঝগড়া হতো। একদিন পাশের বাড়ী রুবেলের স্ত্রী স্বপ্না এসে বলেন আমার কাছে একজন কবিরাজ আছে সে তাবিজ-কবজ দিলে আর ঝগড়া হবে না। তার কথামতো শহরের চন্ডিদাসগাতী এক কবিরাজের কাছে নিয়ে যায়। এরপর একদিন বলে, আমার কাছে একজন জ্বিনের বাদশার নম্বর আছে তার সাথে কথা বললে সব সমস্যার সমাধান করে দিবে এমনকি সে অনেক টাকার মালিক বানিয়ে দিতে পারে। কাল নাগিনী স্বপ্নার মনভুলানো কথায় মুগ্ধ হয়ে যাই। এমনকি আমি তার বশীভুত হয়ে পড়ি। জ্বিনের বাদশার সাথে কথা হয়। জ্বিনের বাদশাও মনভুলানো নানা প্রলোভন দেখায়। জ্বিনের বাদশা বলেন, একলাখ টাকা দিলে ১০লাখ টাকা পাওয়া যাবে। তবে টাকার কথা কাউকে বললে টাকা পাওয়া যাবে না। তার কথামতো প্রথমে স্বপ্নাকে ২৫ হাজার টাকা দেই। এরপর এক বছরে কখনো ৩১ হাজার, কখনো ৪১ হাজার, কখনো ১লাখ ও কখনো দুই লাখ এমনভাবে আমার আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে গাড়ী কেনার কথা বলে হাওলাত ও জমি বন্ধক রেখে পর্যায়ক্রমে প্রায় ৭০ লাখ টাকা স্বপ্নার হাতে তুলে দেই। একদিন টাকা দাবী করলে টাকা না পাওয়ায় স্বপ্না তার নিজের বাবার কাছ থেকে টাকা হাওলাত করে নিয়ে দেবার জন্য বলেন। পরে তার কথামতো ফাকা চেক স্ট্যাম্প দিয়ে দেড়লাখ টাকা নিয়ে স্বপ্নাকে দেই।
এক পর্যায়ে ঋণের বোঝা বেশি হওয়ায় স্বপ্না তাকে পরিবার নিয়ে ঢাকায় চলে যেতে বলেন। তার কথা শুনে আমি ঢাকায় চলে যাই। সেখানে মানুষের বাড়ী ঝিয়ের কাজ করি। এরমধ্যে স্বপ্না ফোন দিয়ে বলে আরো ১লাখ টাকা লাগবে। না হলে তোমার টাকা ফেরত পাওয়া যাবে না। আমি আমার বোনের কাছ থেকে হাতে পায়ে ধরে ১লাখ টাকা নিয়ে স্বপ্নাকে দেই। এ অবস্থায় তিন বছর পার হয়ে যায়। স্বামী-সন্তান সিরাজগঞ্জে আসতে বললেও আমি আসি না। কারন স্বপ্না বলেছে আসা যাবে না। আমি যেন স্বপ্নার হাতের পুতুল হয়ে গেছিলাম। সে যা বলছিল তাই করছিলাম। একদিন আমার ঘোর ভেঙ্গে যায়। আমি পরিস্কার বুঝতে পারি আমি স্বপ্না ও তার দাদাপীর জ্বিনের বাদশার খপ্পড়ে পড়ে গেছি। তারপর সিরাজগঞ্জে এসে স্বপ্নার বাড়ীতে গিয়ে টাকা ফেরতের কথা বললে স্বপ্না, তার স্বামী রুবেল, শামসু সেখের ছেলে পলাশ, লালচানের মেয়ে ছামনি বেগম, শামসু, মৃত আজিজের ছেলে রুবেল আমাদেরকে মারপিট করে বের করে দেয়। এ অবস্থায় এলাকার মুরুব্বীদের নিয়ে বারবার বিচার দাবী করলেও বিচারের দিন ওরা হাজির হয় না। উল্টো নানাভাবে হুমকি প্রদান করেন।
তিনি বলেন, এমনকি আমি স্বপ্নার বাবার কাছ থেকে ফাকা চেক স্ট্যাম্প দিয়ে টাকা নিয়েছিলাম সেই টাকা পরিশোধ করলেও চেক ফেরত দেয়নি। উল্টো আমার বিরুদ্ধে সেই চেক স্ট্যাম্প দিয়ে ১০ লক্ষ টাকার মামলা করেছে।
কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, কালনাগিনী স্বপ্না প্রলোভনে ফেলে আমার পরিবার ধ্বংস করে দিয়েছে। আমার স্বজনরা আমাকে বিশ্বাস করে টাকা দিয়েছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই টাকা ফেরত দিতে পারছি না। তিনি অবিলম্বে কালনাগিনী স্বপ্না ও তার বাবা ভাইসহ জ্বিনের বাদশাকে গ্রেফতারপুর্বক শাস্তি এবং টাকা ফেরতের জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবী জানিয়েছেন।
সাহানার ভাই মো. কালাম জানান, আমার বোন গাড়ী কেনার কথা বলে আমার কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা ধার নিয়েছিল। পরে জানতে পারি সে স্বপ্নার খপ্পড়ে পড়ে তাকে সব টাকা দিয়েছে। তিনি বলেন, স্বপ্নাকে গ্রেফতার করতে না পারলে এই কালনাগিনী আরো মানুষকে প্রলোভনে ফেলে নি:স্ব করে ফেলবে। তাকে এবং তার কথিত দাদাপীর জ্বিনের বাদশকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবী জানান তিনি।
এ বিষয়ে কালনাগিনীকে স্বপ্নার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রাগান্বিত হয়ে মুঠোফোনে কথা বলব না বলে ফোন কেটে দেন।