সিরাজগঞ্জে চৌহালীতে হত্যা চেষ্টা মামলার চার্জশীটভুক্ত ১নং আসামী ছেলেকে বাঁচাতে এবং প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এক বাবা সিরাজগঞ্জের চৌহালীর আমলী আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করার অভিযোগ ওঠেছে। আদালত মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে, মিথ্যা মামলা দায়ের করায় এলাকার মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। অবিলম্বে সঠিক তদন্তপুর্বক মিথ্যা মামলার বাদী সাহেব উদ্দিনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন।

জানা যায়, ২০২৪ সালের ৩০মে চৌহালীর উপজেলার বালিয়াকান্দি গ্রামে মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে বাবলুর সমিলে একই গ্রামের জেন্দার আলী ও তার ছোট মেয়ে জমেলাসহ কয়েকজন টিভি দেখতে যায়। কিন্তু বাবলু টিভি বন্ধ করে বাড়ীতে যেতে চাইলে জেন্দার নিষেধ করে। এনিয়ে কথাকাটাটি ও মারপিটের ঘটনা ঘটে। এরই জের ধরে পরদিন ৩১মে বিকেলে জেন্দার আলী ও সাহেব উদ্দিনের ছেলে নুরুন্নবীসহ কতিপয় স্বজনমিলে বাবলুর মিলে হামলা চালায়। হামলার সময় বাবলুর ভাই আবু বক্কার এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসী নুরুন্নবী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বক্কারকে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে এবং হাতের আঙ্গুল ভেঙ্গে দেয়। এ ঘটনায় বাবলু বাদী হয়ে মামলা দায়ের করলে পুলিশ নুরুন্নবীকে প্রধান আসামী করে আদালতে চার্জশীট প্রদান করেন। চার্জশীট প্রদানের পর মামলা থেকে ছেলেকে বাঁচাতে নানা কুটকৌশল শুরু করেন সাহেব উদ্দিনসহ অন্যান্য আসামীরা। এরই ধারবাহিকতায় বাবলু ও বক্কার গংকে ফাঁসাতে গত ৩০ জুন চৌহালী আমলী আদালতে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে সাহেব উদ্দিন। মামলায় উল্লেখ করেন, গত ২৪জুন রাতে সাহেব উদ্দিন টাঙ্গাইল জেলার শাহজাহানপুর হাটে গরু বিক্রি শেষে বাড়ী ফেরার পথে করইতলা বাজারের দক্ষিন পাশের্^ পৌছালে মৃত খালেকের ৫ ছেলে আলমগীর, বাবলু, বক্কার, আমিরুল ও জুয়েল পথরোধ করে ৫লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে এবং টাকা না দেয়ায় তার কাছ থেকে ৬লক্ষ ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং ১শত টাকা মুল্যের তিনটি স্ট্যাম্পে টিপসহি নেয়। কিন্তু তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে ওই দিন করইতলা বাজারের পশ্চিম পাশের্^ ছিনতাই বা চাঁদা দাবীর মতো কোন ঘটনা ঘটেনি। এলাকাবাসীও এ সম্পর্কে কিছুই জানে না। মামলাটি সম্পুর্ন মিথ্যা ও বানোয়াট। শুধুমাত্র প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতেই মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আয়নুল জানান, মামলার বাদী সাহেব উদ্দিন ৩ বছর আগে গরুর ব্যবসা করতেন। এখন মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহী করে। ওই দিন কেন, কোনদিনই বাজারে ছিনতাইয়ের মতো কোন ঘটনা ঘটেনি। ঘটলে আমরা জানতাম। মামলা করার ৩মাস পর শুনছি এরকম একটা মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। মুলত বাবলুর দায়ের করা মামলা থেকে বাঁচতে এবং বাবলু গংদের হয়রানি করতে মামলাটি করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল কাদের জানান, সম্পুর্ন মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। বাবলু যেন তার ছেলের বিরুদ্ধে দায়ের মামলা তুলে নেয় এ জন্য চাপে ফেলতে সাহেব উদ্দিন মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। তবে এটা ঠিক হয়নি। আমরা চাই সঠিক তদন্ত করে পিবিআই যেন সাহেব উদ্দিনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করেন।

মামলার আসামী আলমগীর হোসেন জানান, চাঁদাবাজি বা ছিনতাইয়ের মতো কোন ধরনের ঘটনা ঘটেইনি। মামলা দায়েরের পর পিবিআই যখন তদন্তে গেছে তখন আমরা জানতে পেরেছি আমাদের বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের মামলা দেয়া হয়েছে। মুলত আমার ভাই বাবলুর দায়ের করা মামলার চার্জশীটভুক্ত ১নং আসামী নুরুন্নবী হলো সাহেব উদ্দিনের ছেলে। ওই মামলাটি যাতে আমরা তুলে নেই বা মিমাংসা করি এ জন্য আমাদের চাপে ফেলতে এবং ফাঁসাতে মামলাটি করা হয়েছে। আমরা মিথ্যা মামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং একই সাথে মিথ্যা মামলাটির সঠিক তদন্তপুর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী করছি।

ইউপি চেয়ারম্যান রমজান আলী জানান, আমার ইউনিয়নের গত ২৪ জুন চাঁদাদাবী ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটেছে এমন বিষয় আমার জানা নেই এবং কেউ অবগত করেনি। এমনকি বাদী সাহেব উদ্দিনও কোনদিন জানায়নি। বরং যাদেরকে আসামী করা হয়েছে তারাই কয়েকদিন আগে আমাকে বিষয়টি অবগত করেছে। আমার যতদুর মনে হয়, আগের মামলাটির কাউন্টার হিসেবে মামলাটি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আব্দুল খালেক জানান, মামলাটির তদন্ত চলছে। তদন্তপুর্বক প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।