বহুমাত্রিক ত্যাগ আর সিমাহীন কষ্টের পথ পারিদিয়ে অর্জীত হয়েছে মানচিত্র খঁচিত লাল সবুজের ভূখণ্ড,পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশ,আমার সোনার বাংলাদেশ।আয়তনের তুলনায় এদেশের জনংসখ্যার ঘনত্ব অনেক বেশি।বর্তমানে জনসংখ্যা প্রায়-১৮ কোটি। এই জনসংখ্যাকে পুঁজি করে দেশব্যাপী গড়ে উঠেছে খাদ্য ও ওষুধ উৎপাদনকারী হাজারো প্রতিষ্ঠান।কমদামি থেকে নামিদামি আর এনালগ থেকে ডিজিটাল।সব প্রতিষ্ঠানের লক্ষ উদ্দেশ্য উন্নত সেবার মান নিশ্চিত করণের মধ্যদিয়ে জনগণকে স্বাস্থ্যসম্মত সঠিক সেবা প্রদান করা।কিন্তু মুলত সবি যেন তার বিপরীত। যদিও দেশে এখন অন্যায় অপরাধের বহুমাত্রিক রুপরেখা চলমান তথাপিয় সব অন্যায়-অনিয়মও অপরাধের গুরুত্ব সঠিক সময় সমানভাবে আমলে নেওয়া হয় না।আর সব অপরাধের শাস্তিও সমান নয়।বর্তমানে দেশে অসংখ্য ভেজাল চক্র ঘিরে যে অপরাধ মাথাচাড়া দিয়েছে সেটি হলো,খাদ্য ও ওষুধে ভেজাল এবং মেয়াদউত্তীর্ণ ওষুধ যাকে বলে প্রাণঘাতি।
প্রথম সিন্ডিকেট রোগের জন্মদাতা: দেশে অসংখ্য নামি-দামী খাদ্য-দ্রব্য উৎপাদনকারী কোম্পানী বা প্রতিষ্ঠান যারা বিভিন্ন ধরনের খাদ্যশস্য থেকে বেবী ফুডস,ফাষ্ট ফুডস সহ বহুমাত্রিক খাবারের উপযোগী খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত করে থাকেন।এসব খাবার বাজারজাত করণের মধ্যদিয়ে গ্রাহকের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে পত্র-পত্রিকা এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে আকর্ষণীয়, লোভনীয় ও চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচার করে যাচ্ছেন। এসব চটকদার বিজ্ঞাপনের খপ্পরে পরে আধুনিক যুগের মা-বাবা,অত্যাধুনিক যুগের বাচ্চাদের লম্বা,ক্যালশিয়াম বৃদ্ধি,হাড় শক্ত, মাথার ব্রেইন খুলে যাওয়া সহ শরীরের সব ধরনের চাহিদা পুরণের জন্য তাদের খাবার যোগান দিচ্ছে।শুধু তাই নয় শিশু থেকে কিশোর, তরুণ-তরুণী,যুবক থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবাই শরীর সুস্থ্য সবল ও সুন্দর রাখার ক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়েই সব খাবার গ্রহণ থাকেন।একই কারণে নিম্ন আয়ের মানুয়গুলো অতিকষ্টে উর্পাজিত অর্থদিয়ে সাধ্যের মধ্যে খাবার খেয়ে থাকেন। জীবন ধারণ বা বেঁচে থাকার জন্য,অথচ,এসব,খাবারের মধ্য থেকে বেশির ভাগ খাবারি মানহীন-ভেজাল এবং জীবণের জন্য আত্বঘাতী,''প্রশ্ন থেকে যায় জীবণের জন্য খাদ্য নাকি খ্যাদ্যের জন্য জীবণ'' ? এসব গুরুতর ভেজাল খাবার খেয়ে প্রতিটি মুহুর্তে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত নানা শ্রেণী পেশা ও বয়সের মানুষ অসংখ্য,অজানা,অচেনা,জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।আর এর জন্য দায়ী ওই সব খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।এক কথায় যারা নানা আঙ্গিকে ভেজাল খাবার দেশব্যাপী সরবরাহ করে চলেছে।প্রশ্ন হলো,এসব দেখার দায়ীত্ব কার এবং তারা কোথায়?
দ্বিতীয় সিন্ডিকেট রোগ লালনকর্তা: দ্বিতীয় সিন্ডিকেট হলো ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানী বা প্রতিষ্ঠান যারা নাকি রোগকে লালন-পালন করে, জিয়ে রাখে।কথাছিল রোগ হবে,মানুষ রোগী হবে, চিকিৎসকের সুপরামর্শে
উন্নত সেবার মাধ্যমে রোগ নিরাময় হবে। কিন্তু এটা তার পুরুটাই উল্টা।যদি কোন রকমে একজন মানুষ কোনে রোগে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ্যতার লক্ষ্যে ডাক্তার বাবুর স্বরণাপন্ন হয় তবে আর কথাই নেই। কি হয়েছে বা হয়নি প্রথমে হাতে ধরিয়ে দিবেন নানান পদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা,এর পর ৭দিন পর আসবেন,এর পরে ১৫ দিন পর আসবেন এক কথায় ওই রুগী এখন ডাক্তার বাবুর কাছে রিজার্ভ, যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন কোন না কোন ডাক্তার বাবুকে দর্শন দিতেই হবে।
একটি বিষয় আসলেই ভাবার বিষয়,বাংলাদেশের ঔষধ শিল্প - উইকিপিডিয়া তথ্য বলছে,দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বর্তমানে সরকারী তালিকাভূক্ত-৮৫০টি ছোট-বড় ওষুধ কারখানা ও ২৬৯টি এ্যালোপ্যাথিক ওষুধ প্রস্ততকারী বে-সরকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে,যারা দেশের চাহিদার ৯৮ শতাংশ পূরণ করে বিশ্বের ১৬০ টিরও বেশি দেশে ওষুধ রপ্তানী করে আসছে।বাংলাদেশ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্র বলছে,বর্তমানে বাংলাদেশ-এ ২৮৫ টি এলোপাথিক, ২৮৩ টি ইউনানী, ২০৩ টি আয়ুর্বেদিক,৩৮ টি হার্বাল, এবং ৭১ টি হোমিও ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা নিয়মিত ওষুধ উৎপাদন করে চলেছে।প্রতিটি কোম্পানীর স্ব-উৎপাদিত ওষুধ বাজারজাতের লক্ষ্যে নিয়োগ দিয়েছে যোগ্য,,দক্ষ ও কর্মঠজনবল।প্রতিটি কোম্পানীর এই বিক্রয় প্রতিনিধিগণ প্রতিযোগিতামুলক ওষুধ বিক্রি করে চলেছে।প্রত্যেকটি কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধিগণের ক্ষেত্রে টার্গেট আছে। প্রতিমাসে বিক্রির টার্গেট পূরণ করতেই হবে।জনগণ অসুস্থ বা রোগাক্রান্ত হোক অথবা নাহোক ওষুধ বিক্রয় টার্গেট পূরণ হতেই হবে। কোম্পানীর প্রতিনিধি ডাক্তার ভিজিট করতেছে।ছলে-বলে কৌশলে যেকোন কিছুর বিনিময়ে ডাক্তারকে দিয়ে ওষুধ লেখাতেই হবে আর এজন্য কোন রুগী ডাক্তারের কাছে গেলে যেখানে হয়তো এক আইটিম লিখলেই হবে সেখান একাধীক ওষুধ লিখতেছেন। ফলে ডাক্তার আর ওষুধের গুণ্ডি থেকে রুগী আর বেড়িয়ে আসতে পারছেনা।কারণ একদিকে এক রোগের জন্য ডাক্তার দিচ্ছে বহু আইটিম ,এর একটা পার্শ প্রতিক্রিয়া যেমন আছে, তেমনি অন্যদিকে অনেক ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানীর মধ্য থেকে কিছু সংখ্যক কোম্পানী মানহীন ওষুধ তৈরী করে চলেছে।দুয়ে মিলে এসব ওষুধ সেবনের ফলে রুগীরা সুস্থতায় ফিরে না এসে দিনের পর দিন নতুন রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পরছে।ফলে ওষুধ আর ডাক্তারকে পিছু ছাড়ছেনা।একটি বিষয় ভাবলে অবাক লাগে, দেশব্যাপী ওষুধ কোম্পানীগুলো অসংখ্য ওষুধ উৎপাদন করছে ,আর প্রতিদিন ওষুধ কোম্পানীর গাড়ীগুলো দেশব্যাপী যে কি পরিমাণে ওষুধ সরবরাহ করে চলেছে,মানুষ এগুলো খায় নাকি গায়ে মাখে? বিশেষ করে আমাদের দেশে প্রতিটি শ্রেণীর ব্যবসায়ীদের মনোভাব এ রকম যে,চব্বিশ ঘন্টা তার পণ্য বিক্রি হবে। ক্রেতার প্রয়োজন আছে কিনা?বা কতটুকুন প্রয়োজন,অথবা পণ্যের প্রয়োজন আছে কিন্তু ব্যয় সক্ষমতা নেই,এভাবনাটা তাদের কাছে মূখ্য বিষয় নয়।
হাসপাতাল/ক্লিনিক এবং ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে গেলে মনে হয় কেয়ামত শুরু হয়েছে।কাউকে ফিরে দেখার সুযোগ নেই, রুগীর সুস্থ্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য সবায় ছোটাছুটি করছে। বিক্রয় প্রতিনিধি,তার কোম্পানির ওষুধ বাজারজাত করার জন্য ডাক্তার ভিজিট নিয়ে মরিয়া হয়ে উঠেছে।আর ডাক্তারবাবু রুগীর চাপ দেখে একদিকে যেমন বগল বাজাচ্ছেন অন্যদিকে একটু দিশেহারাও বটে।
চলে যাই তৃতীয় ও শেষ সিন্ডিকেট ফার্মেসীতে: দেশে হাজার হাজার ওষুধ ফার্মেসীগুলোর দিকে তাকালে মনে হয় যেন দুনিয়ার সব ব্যস্ততা ও ভির এখানে।এখন ওষুধ নিতে গেলেও দিতে হয় সিরিয়াল।কারণ একই সময়ে তিন কাজ চলছে।একদিকে ফার্মেসী মালিক ও কর্মচারী রুগীর নিকট ওষুধ বিক্রি করতে ব্যস্ত,অন্যদিকে কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধি অর্ডার কাটা নিয়ে ব্যস্ত।পাশাপাশি মহুর্তের মধ্যেই কোম্পানীর ডেলিভেরিম্যান ওষুধ নিয়ে হাজির।ফার্মেসীতে কর্মরত মালিক-কর্মচারীর ,বেঁচা-কেনা ও পরামর্শের ধরণ দেখে মনে হয় সবাই যেন মালিক,কর্মচারী,ফার্মাসিষ্ট ও ডাক্তার।অনেক ক্ষেত্রেই রোগ এবং ওষুধ সম্পর্কে বেশি কোন ধারণা নাথাকা শর্তেও তারা রুগীদের অনুমান বা আন্দাজ-করে চিকিৎসা সেবাবা,ওষুধপত্র দেয়ার ফলে রুগী ভুল চিকিৎসায় আক্রান্ত হন।রোগতো সারেনা বরং নতুন নতুন রোগের সৃষ্টি হয়। আর রুগীর জীবন হয়ে ওঠে ঝুকিপূূর্ণ। দেশের ফার্মেসীগুলোতে মেয়াদ উর্ত্তীণ ওষুধের ছড়াছড়ি এর মুল কারণ হিসেবে জানা গেছে, দেশে অনেক অখ্যাত বা মানহীন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের ওষুধের চাহিদা কম, ডাক্তার সহজে লিখতে চায়না আবার লিখলেও পরিমাণে কম। ওই সব প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধিগণ জোর করে বাঁকিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিভিন্ন ভ্যারাইটিস ওষুধ ফার্মেসীগুলিতে দিয়ে যায়।ধীরগতিতে বিক্রির কারণে ওষুধের মেয়াদ উর্ত্তীণ হয়ে যায়।কোম্পানীর প্রতিনিধি মেয়াদ উর্ত্তীণ ওষুধগুলি ফেরত না নেওয়ার কারণে অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ী এগুলো সমানে বিক্রি করে চলেছে।যার ধকল পোহাতে হয় সাধারণ রুগীকে।যা কিনা জীবন মরণের সন্ধীক্ষন।ভেজাল ওষুধ বাজার থেকে শতভাগ তুলেনেওয়া হোক, আর মানহীন ওষুধ প্রস্তুতকারীপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হোক।সর্বোপরী ভেজাল খাদ্য-ভেজাল ওষুধ প্রস্তুতকারীপ্রতিষ্ঠান এবং মেয়াদ উর্ত্তীণ ওষুধ বিক্রেতা চক্র সহ যারাই এই সব সিন্ডিকেটের
সঙ্গে সম্পৃক্ত বা জড়িত আইনীর মধ্যদিয়ে তাদের কঠিন শাস্তির আওতায় আনা হোক এমনটাই প্রত্যাশা সকল নাগরিকের।
বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে তিন গুণ বেড়েছে।পাঁচ বছরের ব্যবধানে মাথাপিছু মাসিক স্বাস্থ্য ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭০৪ টাকায়। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এবং যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট পরিচালিত এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
উল্লেখ্য,দেশের আপামর জনসাধারণের সুস্থ্য,সুন্দর ও রোগ নিরাময় জীবণ ধারন ও চিকিৎসা ব্যয় কমাতে ভেজাল মুক্ত নিরাপদ খাদ্য ও ভেজাল মুক্ত নিরাপদ ওষুধ উৎপাদন খুবী জরুরী। পাশাপাশী ডাক্তার, ক্লিনিক,ডায়াগনষ্টিক সেন্টারগুলোর স্বাস্থ্য সেবার নামে বহুমাত্রিক ব্যবসা বন্ধ এবং ফার্মাসিষ্ট ব্যতিত ওষুধ বিক্রি বন্ধ করতে পারলে স্বাস্থ্য খাতে সেবার মান উন্নত হবে এবং চিকিৎসা ব্যয় কমে আসবে বলে আমি দৃঢভাবে বিশ্বাস করি।সে ক্ষেত্রে উল্লেখিত বিষয়গুলোর প্রতি সরকারের কঠোর নজরদারি অব্যাহত রাখতে হবে।
লেখক:সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিষ্ট,জয়পুরহাট
প্রকাশক: সোহেল রানা II সম্পাদক: আব্দুস সামাদ সায়েম II অফিস: দ্য পিপলস্ নিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম বাজার স্টেশন, রেলওয়ে কলোনী,সিরাজগঞ্জ II মোবা: ০১৭১২-৪০৭২৮২,০১৭১১-১১৬২৫৭ II ই-মেইল thepeoplesnews24@gmail.com II
©২০১৫-২০২৫ সর্বস্ত্ব সংরক্ষিত । তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত (নিবন্ধন নং-২১০)