বিশ্বব্যাপী গণমানুষের সমধিকার প্রতিষ্ঠা ও মানুষ যা করতে, চিন্তা করতে বা বেছে নিতে পারেন তার উপর কোন নিয়ম বা সীমাবদ্ধতা না থাকে সে লক্ষ্যেই দেশে দেশে বহুমাত্রিক লড়াই আর সংগ্রামের মধ্যদিয়ে পর্যায়ক্রমে বিশ্বে কায়েম হচ্ছে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা,অর্জীত হচ্ছে স্বাধীন সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রের অবকাঠামো।
স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র পরস্পর সম্পর্কিত, কিন্তু তারা ভিন্ন ধারণা। স্বাধীনতা হলো আপনি যা করতে, চিন্তা করতে বা বেছে নিতে পারেন তার উপর কোন নিয়ম বা সীমাবদ্ধতা না থাকা।বিশ্বের প্রথম স্বাধীন দেশ বলা হয় 'সান মারিনো'কে। কেননা, ৩০১ খ্রিস্টাব্দ থেকেই বিশ্বে দেশটির নাম রয়েছে। 'সান মারিনো' স্বাধীন হয়েছিল রোমান সাম্রাজ্য থেকে । পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্রগুলোর একটি হলো সান মারিনো। সান মারিনো আয়তনে মাত্র ৬১ বর্গ কি:মি।
অন্যদিকে,গণতন্ত্র হলো সরকার পরিচালনার একটি উপায় মাত্র, যেখানে ক্ষমতা সরাসরি বা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কাছ থেকে আসে। ভিন্ন মত, ভিন্ন দল, বিরুদ্ধবাদীদের সমালোচনার প্রতি সহনশীলতা এবং গুরুত্ব প্রদান ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। রাষ্ট্রে জনগণের ক্ষমতা সম্প্রসারণ ও গণতন্ত্রের কাজ। গণতন্ত্র হলো জনসাধারণের শাসন ব্যবস্থা। নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করাই গণতন্ত্র। ফলে গণতন্ত্রে নাগরিকদের ব্যক্তিত্বের বিকাশে যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা ও স্বাধীনতা থাকে।
গণতন্ত্র বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে শ্রুতিমধুর এবং রাজনীতিতে বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। এটি এমন একটি প্রচলিত ও সর্বজনীনভাবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য শাসনব্যবস্থা, যেখানে জনগণই প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী এবং তাদের ইচ্ছা ও মতামতের ভিত্তিতেই সরকার পরিচালিত হয়।
গণতন্ত্রের খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যার মধ্যে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন,মত প্রকাশের স্বাধীনতা, আইনের শাসন এবং মানবাধিকার ও স্বাধীনতা ভোগ অন্যতম। তবে বাস্তবিক অর্থে,এসব বৈশিষ্ট্যের যথাযথ বাস্তবায়ন আমরা প্রত্যক্ষ করতে ও দৃশ্যমান হতে দেখি না আর তা সম্ভব হয়েও উঠে না, যদিও এটা খুবই জরুরি।কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, কেন তা সম্ভব হয়ে ওঠে না?
বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রগুলো কেন গণতন্ত্র সফলভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারছে না? কেনইবা কোনোদিন পারেনি? স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও আমাদের দেশে কোথায় গণতন্ত্র? আমরা কথায় কথায় গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার দোহায় দেই,আর রাজনীতিবিদরাতো মূলত গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা এই দুটিকেই পুজিঁ করে রাজনৈতিক নামের এই ব্যবসা পরিচালনা করেন। অথচ আমরা প্রাতিনিয়তই স্বপ্ন দেখি এবং কথিত বুদ্ধিজীবীদের মার্কিন আদলে শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান করতে শুনি। তবে বাস্তবতা বিশ্লেষণের সময় হয়তো সংবাদকর্মীরা দেন না, অথবা তারাও যথেষ্ট পরিমাণে ধৈর্য ধারণ করতে পারেন না।
আবার এমনতো হতে পারে যে, বাংলাদেশে বসবাসরত জনগণ আসলেই গণতন্ত্র কখনোই চায়নি। আবার এমনও হতে পারে যে, আপনি শুনলেন আপনার এলাকায় নতুন একটি রেস্তোরাঁ হয়েছে, যেখানে সুস্বাদু বিদেশি খাবার পাওয়া যায়। চারিদিকে তার সুনাম ও সুখ্যাতি শোনা যাচ্ছে। আপনি অতি উৎসাহ ও আগ্রহ নিয়ে সেটি খেতে গেলেন, খেলেনও। কিন্তু কেন যেন তাতে আপনার মনটা ভরলো না।
আপনার জন্ম থেকে গড়ে ওঠা খাদ্যাভ্যাসের সেই স্বাদ ওই খাবারটির সাথে মেলেনি। অথচ এটি ইতিমধ্যেই সামাজিক স্বীকৃতিও পেয়েছে এবং মর্যাদার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সমালোচনা করলে হয়তো সামাজিকভাবে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বিষয়টি কিছুটা এমনই।
ইমানুয়েল কান্ট (Immanuel Kant) ও জন স্টুয়ার্ট মিল (John Stuart Mill)-এর সূত্র মতো দার্শনিকেরা কখনোই মানুষকে মাধ্যম হিসেবে নয়,বরং উদ্দেশ্য হিসেবেই দেখেছেন। অর্থাৎ,মানুষ চায় না যে, সে নিজে কখনো কারও স্বার্থে ব্যবহৃত হোক।বরং তারা চায়,তাদের পারিপার্শ্বিকতায় তাদের মতামতের প্রতিফলন ঘটুক। হয়তো সব মতামতও গ্রহণ করা সম্ভব নয়, কিন্তু এমন একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকা উচিত যেখানে সবাই মত প্রকাশের স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে এবং সেই মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে শোনা হয়। প্রশ্ন এসে যায়,বাংলাদেশের সুদীর্ঘ ইতিহাসে কখনো এদেশের মানুষ কোনো শাসক বা রাজনৈতিক দলের দ্বারা ব্যবহৃত হয়নি? তবে ক্ষমতালোভী শাসক ও রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থে ব্যবহৃত হওয়ার উদাহরণ বাংলার ইতিহাসে খুবই সুপরিচিত। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে যে পরিমাণ ক্ষোভ ও অভিযোগ প্রকাশ করতে দেখা যায়, রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে তারা কি ততটাই উদ্বিগ্ন বলে মনে হয়?
সম্প্রতি অভিজ্ঞতা বলছে,প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন এবং সর্বজনীন ভোটাধিকার ক্ষুণ্ন হওয়ার বিষয়টি দেশের জনগণকে হয়তো খুব একটা উদ্বিগ্ন করেনি।কারণ তাদের মধ্যে ভোট প্রদানের ব্যাপারে গভীর আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়নি; বরং নির্বাচন থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তাহলে বিষয়টি কি এমন দাঁড়ায় যে, বাংলার মানুষ ভোটাধিকারকে তাদের মৌলিক চাহিদা হিসেবে দেখেন না?
আবার নিত্যপূণ্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে যে পরিমাণ ক্ষোভ ও অভিযোগ প্রকাশ করতে দেখা যায়, রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে তারা কি ততটাই উদ্বিগ্ন? তাহলে কি ধরে নিতে হবে, এদেশের মানুষ এখনো গণতান্ত্রিক অধিকারকে মৌলিক চাহিদা হিসেবে বিবেচনা করেন না? অথবা হতে পারে যে, সামাজিক ন্যায়বিচারের মতো জটিল বিষয়গুলো এখনো তাদের বোধগম্য নয় বা বুঝে আসে না।
এখানে মানুষ এখনো অন্যের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত হওয়াকে অসম্মানের চোখে দেখেন না। হতে পারে,এদেশের মানুষের মাঝে এক ধরনের গোষ্ঠীগত মানসিকতা বা ডোরম্যাট সিনড্রম (Doormat syndrome) রয়েছে। যারা এই মানসিকতা বা ধারণা সম্পর্কে তারা আসলেও জানেন না, তাদের উদ্দেশ্যে বলা যায়, ডোরম্যাট অর্থাৎ পাপোশ হলো এমন কিছু যেখানে পা মোছা হয়। আর ডোরম্যাট সিনড্রম অর্থ হলো এমন একজন ব্যক্তি যিনি অন্যের স্বার্থে ব্যবহৃত হতে বা পদদলিত হতে মোটেও আপত্তি করেন না।
এ বিষয়টি অন্য দৃষ্টিকোণ থেকেও ব্যাখ্যা করা যায়। সক্রেটিস (Socrates), প্লেটো (Plato), রুশো (Jean-Jacques Rousseau),এমনকি জন রলস (John Rawls)-এর মতো আধুনিক দার্শনিকেরা বারবার বলেছেন, সামাজিক ন্যায়বিচারই প্রকৃত ন্যায়বিচার। তাদের মতে, সর্বজনীন ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয় এবং এর ফলে ক্ষমতার ভারসাম্যও প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যই হলো কোন একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত না হওয়া। অথচ বাংলাদেশের কথিত সফল নির্বাচনগুলো বরাবরই ধনিকতন্ত্রের রূপ নিয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি,যা মানুষের নাভিশ্বাস তুলে রেখেছে আর রাজনৈতিক অধিকারকে সৌখিন হিসেবে প্রতীয়মান করেছে, সেটিও এই সামাজিক ন্যায়বিচারের অভাবের কারণেই। আবার এই অভাব রাজনৈতিক সচেতনতার অভাব থেকেই মূলত সৃষ্টি। তবে এটি একটি নিষ্ঠুর চক্র।
এ চক্রের সাথে প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী পলিবিয়াস (Polybius)-এর রাজনৈতিক ব্যবস্থা চক্র (Anacyclosis) কেন যেন মিলে যায়। পলিবিয়াসের মতে, এ চক্রটি রাজতন্ত্র দিয়ে শুরু হয়, যেখানে একজন সৎ ও শক্তিশালী নেতা জন কল্যাণে শাসন করেন। কিন্তু সময়ের সাথে এ শাসন ব্যবস্থা আবার দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে স্বৈরতন্ত্রে পরিণত হয়। জন বিদ্রোহের মাধ্যমে তা আবার ভেঙ্গে পড়ে এবং অভিজাততন্ত্রের উদ্ভব ঘটে। এরপর এ ব্যবস্থাও অলিগার্কি বা স্বৈরতন্ত্রে রূপ নেয়, যেখানে ক্ষমতাধর গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে শাসন করেন, যা এক সময় জনগণের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়।গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলেও এক পর্যায়ে তা আবার জনতার উচ্ছৃঙ্খল শাসনে পরিণত হয় এবং অরাজকতার সৃষ্টি হয়। তারপর আবার শক্তিশালী একজন নেতার প্রয়োজন হয়,এবং রাজতন্ত্রের পুনরুত্থান ঘটে। এ নেতার রূপরেখা অনেকটা জনতুষ্টিবাদী নেতা (পপুলিস্ট) বা জননায়ক (ডেমাগগ)-এর মতো যিনি জনগণের আবেগ, ভয় বা পূর্বাগ্রহ কাজে লাগিয়ে সাধারণত বাস্তবসম্মত নীতির চেয়ে অনেক বেশী জনপ্রিয় স্লোগান দিয়ে ও প্রলোভন দেখিয়ে আদায় করেন তাদের সমর্থন ।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ধারাবাহিকতা এ চক্রের সাথে মিলে যায়। এখন যেহেতু ক্ষমতা রাজনৈতিক দলের হাতে নয়, অন্যদের হাতে, তার মানে কি আমরা আবার আরেকটি স্বৈরাচারী ডেমাগগের উত্থান দেখতে যাচ্ছি? তবে আমাদের এই স্বপ্নের গণতন্ত্রের কী হবে?
আমি মনে করি, যদি আমরা গণতন্ত্র চাই, তবে সত্যিকারের গণতন্ত্রের জন্য প্রস্তুত থাকা প্রয়োজন। আর যখন গণতন্ত্র পাওয়া যাবে, তখন এর দায়ভার গ্রহণ করতে হবে। রাজপথে দাবি আদায়ে সক্রিয় না হয়ে আইনসভায় আওয়াজ তোলার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। যেদিন আমরা এই মনোভাব গড়ে তুলতে সক্ষম হবো, সেদিনই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে। সংবিধান নিজেই খাঁটি ও নির্ভেজাল হয়ে উঠবে। সেদিন আর পেঁয়াজের দাম কমাতে লোক দেখানো অভিযান চালানোর প্রয়োজন হবে না, কারণ সর্বত্র রাজনৈতিকভাবে সচেতন মানুষ দৃশ্যমান হবে,যাদের বোকা বানানো সম্ভব হবে না।
আসলে গণতন্ত্র বলতে কোনো জাতিরাষ্ট্রের (অথবা কোনোও সংগঠনের) এমন একটি শাসন ব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে নীতিনির্ধারণ বা সরকারি প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিক বা সদস্যের সমান ভোটাধিকার থাকে। ইংরেজি 'Democracy' শব্দটি গ্রিক শব্দ Demo Kratia থেকে এসেছে যা গ্রিক শব্দ 'Demos' এবং 'Kratia' শব্দ দুটির সমন্বয়ে সৃষ্ট। 'Demos'শব্দের অর্থ হলো 'জনগন' এবং 'Kratia'শব্দের অর্থ হলো 'শাসন'। গণতন্ত্রে আইন প্রস্তাবনা, প্রণয়ন ও তৈরীর ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের অংশগ্রহণের সমান সু্যোগ রয়েছে,যা সরাসরি বা নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে হয়ে থাকে। "গণতন্ত্র" পরিভাষাটি সাধারণভাবে একটি রাজনৈতিক রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই প্রয়োগ করা হলেও অন্যান্য সংস্থা বা সংগঠনের ক্ষেত্রেও কিন্তু এটি প্রযোজ্য হতে পারে, যেমন বিশ্ববিদ্যালয়, শ্রমিক ইউনিয়ন, রাষ্ট্র-মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি।
খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম শতকে অ্যাথেন্স ও অন্যান্য গ্রিক নগররাষ্ট্রে বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনাকে বোঝাতে শব্দটির প্রথম ব্যবহার হয়। আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে ক্লিসথেনিসের নতুন ধরনের সরকার ব্যবস্থা চালু হয় এবং সেই সথে বিশ্বে প্রথম গণতন্ত্র সৃষ্টি হয় গ্রিসের ছোট্ট একটি শহর-রাষ্ট্র এথেন্সে। এ শহর-রাষ্ট্রটি ছিলো এথেন্স শহর এবং তার আশপাশের গ্রামাঞ্চল নিয়ে গঠিত। রাষ্ট্রব্যবস্থা পরিচালনার জন্য বিভিন্ন উপজাতির মধ্য থেকে নেতাদের বেছে নেয়ার যে সনাতনী রীতি বা রেওয়াজ চালু ছিলো, ক্লিসথেনিস তার অবসান ঘটান। তার বদলে তিনি মানুষের নতুন জোট তৈরি করেন এবং প্রতিটি জোটকে ডিময় (Demoi) অথবা প্যারিশ (Parish)- এ বিভক্ত করেন। প্রতিটি মুক্ত নাগরিককে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নেবার সময় শহর-রাষ্ট্রের সরকার পরিচালনায় সরাসরি অংশগ্রহণের অধিকার দেয়া হয়। এর ফলে সাধারণভাবে এ ঘটনাকেই কেন্দ্র করে গণতন্ত্রের প্রথম উন্মেষরূপে গণ্য করা হয় যার পরে নাম হয় ডেমক্রেশিয়া (Democratia) যার অর্থ হচ্ছে জনগণের (demos) শক্তি (Kratos)।
আবার বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপায়ে গণতন্ত্রকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ৪২২ সালে ক্লিয়ান ডেমোক্রেসিকে সংজ্ঞায়িত করেছেন ঠিক এভাবে- That shall be the democratic which shall be the people, for the people. এর অনেক পরে প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন তার এক ভাসনের মধ্যে ঠিক এমনই এক জনপ্রিয় সংজ্ঞা প্রদান করেন। আব্রাহাম লিংকন (Abraham Lincoln) November 19, 1863 তারিখে তার দেয়া Pennsylvania state এর গেটিসবার্গ বক্তৃতাতে (Gettysburg Address) গণতন্ত্রের সংজ্ঞা দিয়েছিলেন এই ভাবে 'Government of the people, by the people, for the people.' যার অর্থ হলো-গণতান্ত্রিক সরকার জনগণের অংশগ্রহণ, জনগণের দ্বারা ও জনগণের জন্য। আবার অধ্যাপক গেটেলের মতে,' যে শাসন ব্যবস্থায় জনগণ সার্বভৌম ক্ষমতার প্রয়োগে অংশ নেওয়ার অধিকারী তাই-ই গণতন্ত্র।
বিশ্বের প্রাচীনতম গণতান্ত্রিক দেশ:
বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন গণতান্ত্রিক দেশ আইসল্যান্ড।
ইউরোপের দেশ গ্রিসকে গণতন্ত্রের সূতিকাগার বলা হয়। ডেমোক্রেসি শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ডেমোক্রেসিয়া থেকে, যার অর্থ জনগণের শাসন।
পৃথিবীতে মোট রাষ্ট্রের সংখ্যা ২৩৪টি।স্বাধীন রাষ্ট্রের সংখ্যা ১৯৬ টি। গণতান্ত্রিক দেশ ১২২ টি। জাতিসংঘ কতৃক স্বীকৃত পৃথিবীর স্বাধীন রাষ্ট্রের সংখ্যা ১৯৪ টি।(কসোভো ও ভ্যাটিক্যান সিটি জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত রাষ্ট্র নয়)।
স্বাধীন বলে দাবী করলেও স্বাধীন নয় এমন দেশগুলো হচ্ছেঃ (১) ফিলিস্তিন (১২২ টি দেশ কর্তৃক স্বীকৃত)।
(২) কসোভো (৫৪ টি দেশ কর্তৃক স্বীকৃত)
(৩) তাইওয়ান (২৩ টি দেশ কর্তৃক স্বীকৃত)
-
পৃথিবীর মোট রাষ্ট্র ২৩৪ টি। পৃথিবীর স্বাধীন রাষ্ট্র ১৯৬ টি।
পৃথিবীতে মোট মুসলিম রাষ্ট্র ৬৫ টি। OIC ভুক্ত মুসলিম রাষ্ট্র ৫৭ টি।সর্বশেষ স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র 'কসোভা' (ইউরোপ)।পৃথিবীর মোট রাষ্ট্রসংখ্যার অনুপাতে মুসলিম রাষ্ট্রের হার ২৬%। পৃথিবীর মুসলিম জনসংখ্যা ১৪২ কোটি।
পৃথিবীর জনসংখ্যার অনুপাতে মুসলিম জনসংখ্যার হার ২৩.১৮% । জনসংখ্যার দিক দিয়ে বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া। জনসংখ্যার দিক দিয়ে ক্ষুদ্রতম মুসলিম রাষ্ট্র মালদ্বীপ। জনসংখ্যার দিক দিয়ে পৃথিবীর বৃহত্তম মুসলিম শহর করাচী (পাকিস্তান)। মুসলিম সংখ্যালঘিষ্ঠ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সবচে'বেশি মুসলমান বাস করে ভারতে (১৬%)
মোট জনসংখ্যার অনুপাতে বিভিন্ন মহাদেশের মুসলিম জনসংখ্যার শতকরা হারঃ এশিয়া ২৪% ইউরোপ ১% আফ্রিকা ৫৯% উত্তর আমেরিকা ১.৫% এবং দক্ষিণ আমেরিকা ০.৫০%।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে যেটি দৃশ্যমান,ক্ষমতার বাহিরে মামলার ভরে নড়তেই পারে না,আবার মসনদে বসলে মামলাই থাকেনা।সম্প্রতি প্রেক্ষাপট আবার ভিন্ন,ক্ষমতার মসনদে যাওয়াতো দূরের কথা পট পরিবর্তনের সাথে সাতেই খালাস জোয়ার বইছে।প্রশ্ন থেকে যায় তবে কি তারা নির্দোশ? আবার যে দলই ক্ষমাতায় থাকনা কেন? ক্ষমতাসীনদের দিবালোকে বহুমাত্রিক চলমান অপরাধ কর্মকান্ড কোন ধরণের প্রশাসনেরই কেন যেন নজরেই পড়েনা? যদিও পড়ে তা আমলেই নেননা?বিপরিতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী শুধুমাত্র বিরোধীদের ধরার তালেই থাকে। আবার ক্ষমতাসীনদের অপরাধ বিরুদ্ধে আদালত মামলা গ্রহন করেন না? যদিও উদাহরণ স্বরুপ দু'একটি গ্রহন করলেও সাথে সাথেই তা আবার খারিজের জন্য প্রস্তুত করা থাকে।
"দ্যা স্ট্যাটিস্টিক্স ইন্টারন্যাশনালের জরিপে শেখ হাসিনাকে বিশ্বের সবচেয়ে নিকৃষ্ট শাসক ও সেরা স্বৈরশাসকের তালিকায় নির্বাচিত করা হয়েছে? ৫ আগষ্ট ২০২৪ এর আগের সময় পর্যন্ত দেশটিকে এই নিকৃষ্ট শাসক ও সেরা স্বৈরশাস যে ভাবে দখল করে ছিল,মজার ব্যাপার হলো, দেশে এখন যারা ক্ষমতার বাহিরে বলতে গেলে তারও ঠিক একইভাবে দেশটাকে দখল করে আছে,বাঁকি আছে শুধু মসনদে বসা। এতে করে কি প্রমানিত হয় বা আমরা বলতে পরি যে,কোন রাজনৈতিক দলের হাতে গণতন্ত্র ,স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার কতটা নিরাপদ? প্রশ্ন দেশ জাজীর কাছে।(বায়ুহীন বাতাস মাতোবেগে বায়,সবুজ ধরণীতে জনতার জোগানে নেতারা ফায়দা লুটায়)।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিষ্ট
প্রকাশক: সোহেল রানা II সম্পাদক: আব্দুস সামাদ সায়েম II অফিস: দ্য পিপলস্ নিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম বাজার স্টেশন, রেলওয়ে কলোনী,সিরাজগঞ্জ II মোবা: ০১৭১২-৪০৭২৮২,০১৭১১-১১৬২৫৭ II ই-মেইল thepeoplesnews24@gmail.com II
©২০১৫-২০২৫ সর্বস্ত্ব সংরক্ষিত । তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত (নিবন্ধন নং-২১০)