রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাস থেকে রাজশাহী কলেজের এক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারের পর ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর কারণ নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। ক্যাম্পাসে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা নাকি তাকে মারধর করে হত্যা করা হয়েছে তা নিয়ে চলছে আলোচনা। নিহতের স্বজনদের দাবি, তাকে মারধর করা হয়েছে। তবে দায়িত্বরত চিকিৎসক বলছেন, তার শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন বা রক্তের দাগ পাওয়া যায়নি।
নিহত শিমুল শিহাব রাজশাহী কলেজের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি রাজশাহী নগরের মেহেরচণ্ডী এলাকার জামাল হোসেনের ছেলে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান গণমাধ্যমকে জানান, ক্যাম্পাস থেকে রাত ১১টার দিকে একটি ছেলেকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। প্রথমে সড়ক দুর্ঘটনার কথা বলে লুকাচ্ছিল। পরে জেরার মুখে মারামারি করে মৃত্যু হয়েছে বলে জানায়। তাকে ‘ফিজিক্যাল এসালড ব্রডডেথ’ হিসেবে পেয়েছেন। শরীরের বাইরের অংশে মেজর কোনো ক্ষতের দাগ পাওয়া যায়নি। নিয়ম অনুযায়ী ময়না তদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করা এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা কয়েকজন ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন আমরা দেখি আমাদের সামনে দিয়ে একজন খুব জোরে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে। তার পেছনে একটা মেয়েও ছিল। কিছুদূর যাওয়ার পর ছেলেটি মোটরসাইকেলসহ রাস্তায় পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে সে জ্ঞান হারায়। তার শরীরে তেমন আঘাত লাগেনি। আশেপাশের শিক্ষার্থীরা তখন তার মাথায় পানি দেয়। পরে প্রক্টর সেখানে এসে মেয়েটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তখন মেয়েটি বলে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না। পরে অ্যাম্বুলেন্সে করে ছেলেটিকে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুরর রহমান বলেন, ‘রাত ১০টার দিয়ে আমি ঘটনা জানতে পারি। আমাদের সহকারী প্রক্টর টহল দিচ্ছিলেন। তখন ক্যাম্পাসের ভিতরে শিমুল তার মেয়ে বন্ধুকে নিয়ে সায়েন্স ভবনের দিকে বসে আড্ডা দিচ্ছিল। প্রক্টরের গাড়ি দেখে তারা মোটরসাইকেলে করে দ্রুত চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। ওদিক দিয়ে রাস্তার কাজ চলছিল। সেখানেই দুর্ঘটনাটি ঘটে। পরে তাকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে নেওয়া হয়। এরপর রামেক হাসপাতালে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া অন্য কোনো ঘটনা আছে কিনা তা খোঁজে বের করতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের দায়িত্বরত চিকিৎসক সাজিদ হাফিজ বলেন, ‘ছেলেটাকে যখন হাসপাতালে আনা হয়, তখন তার শরীরে কোনো আঘাতের দাগ ছিল না। তবে গায়ে ধুলোবালি লেগে ছিল। তখন তার শরীরে পালস ছিল না। পরে আমরা তাকে রামেকে রেফার্ড করে দেই।’
এ বিষয়ে নগরের মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মালেক বলেন, লাশে কোনো মারধর, ছেড়া-ফাঁটা কিংবা ক্ষতের দাগ পাওয়া যায়নি। তাই সুনির্দিষ্টভাবে এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে। তবে, নিহতের পরিবার এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ দেননি। তারা মৌখিকভাবে দাবি করেছেন, তাকে মারধর করে মারা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর তারা মামলা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।