(সুশিক্ষায় গড়তে হবে দেশ,সব মানুষের বাংলাদেশ,যত দূরে যাই,যা কিছু গড়ি,সুশিক্ষার বিকল্প কিছুই নাহি,যেখানেই যাই যা কিছু দেখি,অতীত আদলে ফিরে আসার বিকল্প নাহি,যদি নিতে চাই অতীতের নির্জাস,তবে খঁজতে প্রকৃত অতীত ইতিহাস। এখনি ঘটছে যাহা তাহাই ঘটনা,সময় পেরিয়ে গেলে ইহাই ইতিহাস যাহার ইয়াত্বা নাহি, ঘটনা ঘটতে দেখে যে সেই প্রত্যক্ষদর্শী,তিনিই আবার প্রকৃত ইতিহাস লিপিবদ্ধের কাণ্ডারী,জানতে হলে তথ্যবহুল প্রকৃত ইতিহাস করতে হবে যথাযথ সংরক্ষণ,যোগ্য-দক্ষ ও আদর্শীক দেশ প্রেমিক একাজে অতী প্রয়োজন)।
ইতিহাস: বাংলাদেশ অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের অধিকারী। প্রায় আড়াই হাজার বছরের অধিক সময় থেকে এদেশে বিভিন্ন সম্প্রদায়, জনগোষ্ঠী ও শাসক শ্রেণী গড়ে তোলেন বসতি, নগর, ইমারত, প্রাসাদ, দুর্গ, মসজিদ, মন্দির, বিহার, স্তূপ, সমাধি, সৌধ প্রভৃতি অসংখ্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এসব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অধিকাংশই বিলীন হয়েছে কালের গর্ভে । তবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রাচীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আজো টিকে আছে, যা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে সমধিক পরিচিত। এসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের অনুসন্ধান, খনন, সংস্কার, সংরক্ষণ, প্রদর্শন এবং গবেষণার মাধ্যমে ইতিহাস পুনরুদ্ধারের কাজে নিয়োজিত রয়েছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ।
উপ-মহাদেশের অন্যতম প্রাচীন অধিদপ্তর হলো এই প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর । ১৮৬১ সালে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া নামে এ অধিদপ্তরের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর ঢাকায় স্থাপিত হয় বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়।১৯৮৩ সালে বিভাগীয় পূনর্বিন্যাসের মাধ্যমে ঢাকায় প্রধান কার্যালয় সহ প্রতিষ্ঠা করা হয় ৪টি আঞ্চলিক কার্যালয়। বর্তমানে ঢাকা আঞ্চলিক কার্যালয়ের অধীনে ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের , রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ের অধীনে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের, খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের অধীনে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের,এবং চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের অধীনে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।
বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় দেশব্যাপী ৫৩৬টি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি রয়েছে। এরধ্যে মহাস্থানগড়, ময়নামতি, শালবন বিহার,পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, সীতাকোট বিহার, কান্তজীর মন্দির, ছোট সোনা মসজিদ, ষাটগম্বুজ মসজিদ, ভাসুবিহার, বারোবাজার, লালবাগ দুর্গ প্রভৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পুরাকীর্তি ও প্রত্নস্থল।
এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ৩১টি জাদুঘর ও প্রত্নস্থল প্রবেশ মূল্যে পরিদর্শনের জন্য চালমান রয়েছে। দেশী-বিদেশী দর্শনার্থী, ছাত্র-ছাত্রী ও গবেষকগণ এসব জাদুঘর ও প্রত্নস্থলে প্রদর্শিত নিদর্শনসমূহ পরিদর্শন করেন দেশের প্রকৃত ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করে থাকেন।
জাদুঘর এমন একটি স্থান, যেখানে বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, শিল্পকর্ম, প্রাকৃতিক ইতিহাসের নমুনা এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক মূল্যবান বস্তু সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করা হয়। জাদুঘরগুলি একদিকে আমাদেরকে যেমন অতীতের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় তেমনি অন্যদিকে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান সম্পর্কে গভীর জ্ঞান আহরণে শিক্ষাগুরুর দায়ীত্বও পালন করে থাকেন । আবার ভ্রমণের ক্ষেত্রে, জাদুঘরগুলি একটি গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য। ভ্রমণকারীরা জাদুঘরে গিয়ে বিভিন্ন দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারে, যা তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করে। এছাড়াও, জাদুঘরগুলি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি আদর্শ শিক্ষার স্থান, যেখানে তারা বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে। জাদুঘরগুলো আমাদের অতীত জীবনের স্মৃতি আর বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য একটি মূল্যবান সম্পদ। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট প্রায় ১০৩টি জাদুঘর রয়েছে।
জাদুঘরের অবস্থান ও পরিসংখ্যান:
(১)আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর (ভাষা শহীদ আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালা), ঢাকার পলাশী অবস্থিত জহুরুল হক হল, ০১৭১৬৮৮৭৭৯৫। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা। জাদুঘরের প্রধান আকর্ষণ গুলির মধ্যে রয়েছে আবুল বরকতের ব্যবহৃত ব্যক্তিগত জিনিসপত্র, যেমন তার চিঠি, ব্যক্তিগত ছবি, মরণোত্তর একুশে পদক বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ এবং অন্যান্য স্মৃতিচিহ্ন। এছাড়াও, এখানে ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার আলোকচিত্র এবং ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।
(২) এশিয়াটিক সোসাইটি ঐতিহ্য জাদুঘর, ঢাকার নিমতলা, +৮৮-০১৫-৫২৪৩৬৩২৭, +৮৮-০২৪-৭১২৩৪৯০, ইমেইল: mailto:asiaticsociety.bd@
(৩) জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর, আগারগাঁও, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা-১২০৭, +৮৮০২-৯১১২০৮৪, ইমেইল: mailto:infonmst@gmail.com। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান যা দর্শনার্থীদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দেয়। এই জাদুঘরে বিভিন্ন প্রদর্শনী এবং সংগ্রহশালা রয়েছে যা দর্শকদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়। জাদুঘরের প্রদর্শনী গ্যালারিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শিশু বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, তথ্য প্রযুক্তি, মহাকাশ বিজ্ঞান, মজার বিজ্ঞান, শিল্প প্রযুক্তি এবং ভৌত বিজ্ঞান গ্যালারি। প্রতিটি গ্যালারিতে বিভিন্ন ধরনের মডেল, চার্ট, এবং ইন্টারেক্টিভ ডিসপ্লে রয়েছে যা দর্শকদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে সহজে এবং মজার মাধ্যমে জানার সুযোগ করে দেয়। বিশেষ করে শিশুদের জন্য তৈরি শিশু বিজ্ঞান গ্যালারিতে বিভিন্ন ধরনের খেলা এবং ইন্টারেক্টিভ প্রদর্শনী রয়েছে যা তাদের বিজ্ঞান সম্পর্কে আগ্রহী করে তোলে। এই জাদুঘরটি তরুণ প্রজন্মকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহী করে তুলতে এবং বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
(৪)ঢাকা নগর জাদুঘর, রাজধানী ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কার্যালয়ের নগর ভবন। ঢাকার ইতিহাসকে সংরক্ষণের জন্য এই ভবনের ষষ্ঠতলায় জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখানে রয়েছে মোগল এবং ব্রিটিশ আমলের বিভিন্ন দলিল, ছবি এবং গ্রন্থসহ নানা জিনিস। এমনকি ১০০ বছর আগের ঢাকার এ মানচিত্রটি ছাড়াও এখানে প্রাক-মোগল আমল থেকে বাংলাদেশ আমল পর্যন্ত ঢাকার সীমানার ধারাবাহিক বৃদ্ধির নকশাসহ ঢাকার ইতিহাস সংবলিত ১০১টি দুর্লভ আলোকচিত্র রয়েছে।
(৫) বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের বিজয় সরণিতে অবস্থিত, +৮৮০ ১৭৬৯০১৭৭৭০। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীর কমান্ডারদের ব্যাজ, পোশাক, অস্ত্র, গোলাবারুদ, কামান, এন্টি এয়ারক্রাফ্ট গান এবং যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন যানবাহন জাদুঘরটিতে সংরক্ষিত রয়েছে।
(৬) বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের শাহবাগে অবস্থিত, +৮৮০১৫৫২৩৭৫৬৪৭, ইমেইল: mailto:dgmuseum@yahoo.com। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংগৃহীত নিদর্শনের সংখ্যা প্রায় ৯৪ হাজার। সংগৃহীত নিদর্শনসমূহের প্রায় ৫ হাজার নিদর্শন ৪৫টি প্রদর্শন কক্ষে জনসাধারণের দর্শনের জন্য সাজিয়ে রাখা আছে।
(৭)বাংলাদেশ ডাক জাদুঘর, ঢাকা জেনারেল ডাকঘর (জিপিও)-তে অবস্থিত। শনিবার হতে বৃহস্পতিবার - (সকাল ১০টা - বিকাল ৫টা)। জাদুঘরে নানা সময়ে ডাক বিভাগের ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি যেমন উর্দি পরিহিত, বর্শা ও লণ্ঠন হাতে এবং কাঁধে চিঠির ব্যাগসহ একটি পূর্ণ মাপের ডাকপিয়নের অবয়ব এবং রানী ভিক্টোরিয়া আমলের একটি বিশালাকৃতির ডাকবাক্স, পার্সেল করার কাজে ব্যবহূত সাত মণ পর্যন্ত ওজন মাপার তুলাদন্ড, ডাকঘরে বিভিন্ন সময়ে ব্যবহূত সিলমোহর, হাত ও টেবিলঘড়ি, রানার ও পিয়নদের বেল্টে ব্যবহূত ব্যাজ, উর্দি ও পোশাক ইত্যাদি প্রদর্শিত হয়।
(৮)বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, রাজধানী ঢাকার রাজারবাগে প্রতিষ্ঠিত, ০১৭৬৯-৬৯৩৫২৩। জাদুঘরটিতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পুলিশ সদস্যদের ব্যবহূত রাইফেল, বন্দুক, মর্টারশেল, হাতব্যাগ, টুপি, চশমা, মানিব্যাগ, ইউনিফর্ম, বেল্ট, টাই, স্টিক, ডায়েরি, বই, পরিচয়পত্র, কলম, মেডেল, রক্তভেজা প্যান্ট-শার্ট, দেয়ালঘড়ি, এমএম রাইফেল, মর্টার, মর্টার শেল, সার্চ লাইট, রায়ট রাবার শেল, রিভলবার, এলএমজি, মেশিনগান, এমএম এলএমজি, বোর রিভলবার, রাইফেলসহ বিবিধ স্মৃতিস্মারক ইত্যাদি প্রদর্শিত আছে। না
(৯) বাংলাদেশ বিমান বাহিনী যাদুঘর, ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত, +৮৮০ ২-৮৭৫৩৪২০। যাদুঘরটি বাংলাদেশের প্রথম বিমান জাদুঘর। মূলত বিভিন্ন সময়ের হেলিকপ্টার ও বিমান দিয়েই এই জাদুঘর সাজানো হয়েছে। যেমন- বলাকা, এয়ার টু ওরার, পিটি-৬, ফুগা সিএম-১৭০, গ্লাইডার, এয়ারটেল কানাডিয়ান ডি এইচ ৩/১০০০, হান্টার বিমান, এছাড়াও আছে এফটি-৫, মিগ-২১,ডাকোটা বিমান, জি নাট, এফ৬, এ৫-১১১ ইত্যাদি।
(১০) বাংলাদেশি মুদ্রা জাদুঘর, ঢাকা জেলার মিরপুরে অবস্থিত, +৮৮-০২-৯০২৮৪৫৬, ইমেইল: mailto:museum.taka@bb.org.bd। এখানে সংরক্ষিত ও প্রদর্শিত হচ্ছে প্রাচীন আমল থেকে বর্তমান সময়কাল পর্যন্ত মুদ্রিত বিভিন্ন ধরনের ধাতব মুদ্রা, স্মরণাতীতকাল থেকে ১৯ শতক পর্যন্ত বাংলায় ক্ষুদ্র লেনদেনে মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত কড়ি কাগজের নোট ও মুদ্রা সম্পর্কিত দ্রব্যসামগ্রী।
(১১)বিজয় কেতন জাদুঘর, রাজধানী ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় অবস্থিত। জাদুঘরের কয়টি গ্যালারি মুক্তিযুদ্ধে ব্যবহৃত সামরিক যোদ্ধাদের নানা কীর্তি, স্মৃতিস্মারক, সেক্টর কমান্ডারদের আলোকচিত্র ও পরিচিতি, এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত রাইফেল ও কামান প্রদর্শিত হয়। এছাড়াও প্রদর্শনী হিসেবে রয়েছে বাংলাদেশের সংবিধানের মূল কপি, জাতীয় পতাকা, বাংলাদেশের মানচিত্র এবং ধাতু পাতে খোদাই করা জাতীয় সঙ্গীত।
(১২) মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, ঢাকার এফ-১১/এ-বি, সিভিক সেক্টর, আগারগাঁওয়ে অবস্থিত, ইমেইল: mailto:mukti@citechco.net। জাদুঘরে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত কালপর্বের বিভিন্ন জনপদের প্রতিনিধিত্বমূলক প্রত্ননিদর্শন, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ঘটনা থেকে ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় প্রবাসী সরকার গঠন পর্ব, বাঙালির প্রতিরোধ গড়ে তোলার নিদর্শন ইত্যাদি রয়েছে।
(১৩) লোক ঐতিহ্য জাদুঘর, ঢাকার বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের তৃতীয় তলার পশ্চিম পাশে অবস্থিত। বিষয়ভিত্তিক জাদুঘর হিসেবে জাদুঘর বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতির সৃষ্টিশীলতা উপস্থাপন করে। বাংলা একাডেমি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাঁশ-বেতের উপকরণ, গ্রামীণ জীবনধারার মডেল নকশিশিকা, নকশিকাঁথা, জামদানির মতো বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী লোক উপাদান উপাদান সংগ্রহ করেছিল, যেগুলো বর্তমানে জাদুঘরটিতে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
(১৪) শিল্পাচার্য জয়নুল লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর, ঢাকার সোনারগাঁও এ অবস্থিত। এই জাদুঘরের ১০টি গ্যালারির মধ্যে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের অবহেলিত গ্রাম-বাংলার নিরক্ষর শিল্পীদের হস্তশিল্প, জনজীবনের নিত্য ব্যবহার্য পণ্যসামগ্রী। যেমন- প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্পের রূপচিত্র, কাঠ থেকে বিভিন্ন কারুপণ্য।
(১৫) স্বাধীনতা জাদুঘর।
(১৬)পল্লী কবি জসীম উদ্দীন সংগ্রহশালা ফরিদপুর।
(১৭)ফরিদপুর জাদুঘর।
(১৮ মুন্সী আবদুর রউফ স্মৃতি জাদুঘর ও পাঠাগার।
(১৯)জগদীশ চন্দ্র বসু স্মৃতি জাদুঘর মাদারীপুর।
(২০) জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘর।
(২১) জিয়া স্মৃতি যাদুঘর।
(২২) বাংলাদেশ মেরিটাইম মিউজিয়াম।
(২৩) বাংলাদেশ রেলওয়ে জাদুঘর।
(২৪)ভাষা শহীদ আবদুস সালাম গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর।
(২৫)উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট বরিশাল।
(২৬) বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর স্মৃতি জাদুঘর, বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত।
(২৭)শেরে বাংলা স্মৃতি জাদুঘর, চাখার চাখার বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও ওয়াজেদ স্মৃতি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে অবস্থিত।
(২৮)বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্মৃতি জাদুঘর, ভোলা শহর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে আলীনগর ইউনিয়নের মোস্তফা নগরে অবস্থিত।
(২৯)স্বাধীনতা জাদুঘর।
(৩০) ওসমানী জাদুঘর মিউজিয়াম অব রাজাস।
(৩১)শ্রীমঙ্গল চা জাদুঘর।
(৩২)রংপুর তাজহাট জমিদার বাড়ি।
(৩৩)লালমনিরহাট জেলা জাদুঘর।
(৩৪)কুষ্টিয়া পৌর জাদুঘর।
(৩৫)ঠাকুর স্মৃতি জাদুঘর শিলাইদহ কুঠিবাড়ি ।
(৩৬) কাঙাল হরিনাথ স্মৃতি জাদুঘর।
(৩৭)বাগেরহাট জাদুঘর।
(৩৮)আমঝুপি নীলকুঠি জাদুঘর।
(৩৯)বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতি যাদুঘর।
(৪০)জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা।
(৪১) নজরুল স্মৃতিকেন্দ্র।
(৪২)জামালপুর এস্টেট জাদুঘর।
(৪৩)ভূমি জাদুঘর।
(৪৪) বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর।
(৪৫)বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর কমপ্লেক্স।
(৪৬) বাঘা জাদুঘর।
(৪৭) মোহাম্মদ আলী প্যালেস মিউজিয়াম।
(৪৮) পাহাড়পুর প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর।
(৪৯)উত্তরা গণভবন সংগ্রহশালা।
(৫০)মহাস্থানগড় বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। প্রসিদ্ধ এই নগরী ইতিহাসে পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর নামেও পরিচিত ছিল।এক সময় মহাস্থানগড় বাংলার রাজধানী ছিল। যিশু খ্রিষ্টের জন্মেরও আগে অর্থাৎ প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে এখানে সভ্য জনপদ গড়ে উঠেছিল প্রত্নতাত্ত্বিক ভাবেই তার প্রমাণ মিলেছে। ২০১৬ সালে এটিকে সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
প্রাচীর বেষ্টিত এই নগরীর ভেতর রয়েছে বিভিন্ন আমলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত এ স্থান মৌর্য, গুপ্ত, গৌড়, পাল এবং সেন শাসকবর্গের প্রাদেশিক রাজধানী ও পরবর্তীকালে হিন্দু সামন্ত রাজাদের রাজধানী ছিল। তৃতীয় খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে পঞ্চদশ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত অসংখ্য হিন্দু রাজা ও অন্যান্য ধর্মের রাজারা রাজত্ব করেন। মহাস্থানগড়ের অবস্থান বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় ।বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৩ কি.মি. উত্তরে করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে গেলে এই শহরের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়৷।
ইতিহাস:মহাস্থানগড় বাংলাদেশের একটি প্রাচীনতম প্রত্নতাত্ত্বিক নগরী। খ্রিষ্টপূর্ব ৭০০ অব্দে এটি পুণ্ড্র রাজ্যের প্রাচীন রাজধানী ছিল। বিখ্যাত চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ ৬৩৯ থেকে ৬৪৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে পুন্ড্রনগরে এসেছিলেন। ভ্রমণের ধারাবিবরণীতে তিনি তখনকার প্রকৃতি ও জীবনযাত্রার উল্লেখ করে বর্ণনা দেন। বৌদ্ধ শিক্ষার জন্য প্রসিদ্ধ হওয়ায় চীন ও তিব্বত থেকে ভিক্ষুরা তখন মহাস্থানগড়ে আসতেন লেখাপড়া করতে৷ এরপর তারা বেরিয়ে পড়তেন দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। সেখানে গিয়ে তারা বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষার বিস্তার ঘটাতেন।
সেন বংশের শেষ রাজা লক্ষ্মণসেন (১০৮২-১১২৫) যখন গৌড়ের রাজা ছিলেন তখন এই গড় অরক্ষিত ছিল। মহাস্থানের রাজা ছিলেন নল যার বিরোধ লেগে থাকত তার ভাই নীল এর সাথে। এসময় ভারতের দাক্ষিণাত্যের শ্রীক্ষেত্র নামক স্থান থেকে এক অভিশপ্ত ব্রাহ্মণ এখানে আসেন। তিনি রাজা পরশুরাম । এই রাজা পরশুরাম রাম নামে ও পরিচিত ছিলেন।
ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে আসেন ফকির বেশি দরবেশ হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (র:) এবং তার শীষ্য। ধর্ম প্রচারক শাহ্ সুলতান বলখী সম্পর্কে রয়েছে আশ্চর্য কিংবদন্তি।কথিত আছে, তিনি মহাস্থানগড় অর্থাৎ প্রাচীন পুন্ড্রনগরে প্রবেশ করার সময় করতোয়া নদী পার হয়েছিলেন একটা বিশাল মাছের আকৃতির নৌকার পিঠে চড়ে।
ভূগোল: পুণ্ড্রবর্ধনের রাজধানী মহাস্থানগড়ের অবস্থান বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার(৬.৮ মাইল) উত্তরে বগুড়া রংপুর মহাসড়কের পাশে। মনে করা হয় এখানে শহর পত্তনের মূল কারণ এটি বাংলাদেশের একটি অন্যতম উচ্চতম অঞ্চল। এখানের ভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩৬ মিটার (১১৮ ফুট) উঁচু, যেখানে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৬ মিটার (২০ ফুট) উঁচু। এছাড়া এই স্থানটি বেছে নেওয়ার আরেকটি কারণ হল করতোয়া নদীর অবস্থান ও আকৃতি। নদীটি ১৩ শতকে বর্তমান গঙ্গা নদীর তিনগুণ বেশি প্রশস্ত ছিল। মহাস্থানগড় বরেন্দ্র অঞ্চলের লাল মাটিতে অবস্থিত যা পলিগঠিত অঞ্চল হতে কিছুটা উঁচু। ১৫-২০ মিটার উপরের অঞ্চলগুলোকে বন্যামুক্ত ভূপ্রাকৃতিক অঞ্চল বলে ধরা যায়।
আবিষ্কার: মহাস্থানগড়ের ধ্বংসাবশেষ চিহ্নিত ও উদ্ঘাটন করার ক্ষেত্রে একাধিক ব্যক্তির অবদান রয়েছে। ১৮০৮ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্সিস বুকানন হ্যামিলটন প্রথম মহাস্থানগড়ের অবস্থান চিহ্নিত করেন। ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ আলেকজান্ডার কানিংহাম প্রথম এই প্রাচীন ঐতিহাসিক নগরীকে পুন্ড্রবর্ধনের রাজধানীরূপে চিহ্নিত করেন। অনেক পর্যটক ও পণ্ডিত ব্যক্তি, বিশেষত সি. জে. ও’ডোনেল, ই. ভি. ওয়েস্টম্যাকট ও হেনরী বেভারীজ এই শহরতলি এলাকাটি পরিদর্শন করেন এবং তাদের প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করেন। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে সন্ধান মেলে ব্রাহ্মী লিপির। সেই লিপিতে পুণ্ড্রনগরের প্রাদেশিক শাসক সম্রাট অশোক দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষকে রাজভান্ডার থেকে খাদ্যশস্য ও অর্থ সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দেন। এসব তথ্য উপাত্ত থেকে প্রসিদ্ধ এই নগরীর প্রাচীনতমের প্রমাণ মেলে। এখানে তীরের ফলাও পাওয়া যায়।
দুর্গস্থাপনা: প্রাচীন শহরের কেন্দ্রেস্থিত দুর্গটি উপর থেকে দেখতে আয়তাকার ছিল যা উত্তর-দক্ষিণে ১.৫২৩ কিলোমিটার (০.৯৪৬ মাইল) ও পূর্ব-পশ্চিমে ১.৩৭১ কিলোমিটার (০.৮৫২ মাইল) পর্যন্ত বিস্তৃত। এর প্রতি পাশে উঁচু ও প্রশস্ত সুরক্ষা প্রাচীর ছিল। দুর্গের আয়তন প্রায় ১৮৫ হেক্টর। এককালের প্রশস্তা নদী করতোয়া এর পূর্বপার্শ্বে প্রবাহিত হত। ১৯২০ সাল পর্যন্ত খননকার্যের পূর্বে দুর্গের উচ্চতা আশেপাশের অঞ্চলের চেয়ে ৪ মিটার বেশি ছিল এবং বেশ কয়েকটি উঁচু মাটির আস্তরে দাগাঙ্কিত ছিল। রক্ষাপ্রাচীরটি কাদামাটির তৈরি প্রাচীরের মতো দেখতে যা বহু স্থানে বলপূর্বক ভাঙার চেষ্টা দেখা যায়। প্রাচীরটি আশেপাশের অঞ্চলের চেয়ে ১১-১৩ মিটার (৩৬-৪৩ ফুট) উঁচু। এর দক্ষিণ-পূর্ব কোণে একটি মাজার ছিল। এছাড়া পরবর্তীকালের (১৭১৮-১৯) নির্মিত একটি মসজিদও রয়েছে। বর্তমানে দুর্গের ভিতরে কয়েকটি ঢিবি ও নির্মাণ নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে জিয়ত কুণ্ড (একটি কূপ যাতে জীবন প্রদানের শক্তি আছে বলে বিশ্বাস করা হয়), মানকালীর ধাপ(মানকালীর পবিত্র স্থান),পরশুরামের বাসগৃহ (রাজা পরশুরামের প্রাসাদ), বৈরাগীর ভিটা (সন্ন্যাসিনীদের আখড়া), খোদার পাথর ভিটা (ঈশ্বরকে অর্পিত প্রস্তরখণ্ড), মুনির ঘোন (একটি ক্ল্লো) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি প্রবেশদ্বার রয়েছে যেমন কাঁটা দুয়ার (উত্তরে), দোরাব শাহ তোরণ (পূর্বে), বুড়ির ফটক (দক্ষিণে), তাম্র দরজা (পশ্চিমে )। উত্তর-পূর্ব কোণে কয়েকটি ধাপ (পরে সংযুক্ত) রয়েছে যা জাহাজঘাটা পর্যন্ত গিয়েছে। জাহাজঘাটার কিছুটা সামনে করতোয়া নদীর তীরে গোবিন্দ ভিটা (গোবিন্দের মন্দির) অবস্থিত। এর সামনে স্থানীয় জাদুঘর রয়েছে যেখানে উল্লেখযোগ্য কিছু নিদর্শন প্রদর্শিত হয়েছে। এর পাশে একটি রেস্ট হাউজ রয়েছে।
নগরের অবকাঠামো: Colored dice with white background
গোকুল মেধ,এখানে বেহুলা লখিন্দরের বাসরঘর ছিল বলে লোকমুখে শোনা যায়
Colored dice with checkered background
নরপতির ধাপ (ভাসু বিহার)
দুর্গকাঠামো ছাড়াও সেখানে প্রায় শখানেক ঢিবি ৯ কি.মি. ব্যাসার্ধের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে আছে।
খননকৃত ঢিবি: গোবিন্দ ভিটা, দুর্গের উত্তর পূর্ব কোণে অবস্থিত একটি মন্দির
খুল্লনার ধাপ, একটি মন্দির
মঙ্গলকোট, মহাস্থানগড় জাদুঘর থেকে ১.৬ কিলোমিটার দক্ষিণ বা দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত একটি মন্দির।
গদাইবাড়ি ধাপ, খুল্লনার ধাপ থেকে ১ কিলোমিটার দক্ষিণে একটি মন্দির
তোতারাম পণ্ডিতের ধাপ, দুর্গের ৪ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত একটি আশ্রম
নরপতির ধাপ (ভাসু বিহার), তোতারাম পণ্ডিতের ধাপ হতে ১ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত একগুচ্ছ আশ্রম
গোকুল মেধ, (লখীন্দরের বাসরঘর), দুর্গের তিন কিলোমিটার দক্ষিণে একটি মন্দির
স্কন্ধের ধাপ, গোকুল মেধের ২ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে একটি মন্দির
বৈরাগীর ভিটা, ১৯২৮-২৯ সালে খনন করা বৈরাগীর ভিটায় দুটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়।
প্রধান অখননকৃত ঢিবি:শীলাদেবীর ঘাট:
চুনোরু দিঘি ধাপ. কৈবিল্কি ধাপ,জুরাইনতলা,পরশুরামের , শোভাবাতি,বলাই ধাপ,প্রচীর ঢিবি,কাঞ্জির হাড়ি ধাপ,লহনার ধাপ,খোজার ঢিবি,দোলমঞ্চ ঢিবি,ধনিকের ধাপ,মন্দিরির দরগাহ
বিষমর্দন ঢিবি,মলিনার ধাপ,মলপুকুরিয়া ধাপ,যোগীর ধাপ, পদ্মবতীর ধাপ,কানাই ধাপ,দুলু মাঝির ভিটা,পদ্মার বাড়ি,ওঝা ধন্বন্তরির ভিটা,রাসতলা ধাপ, শশীতলা ধাপ,চাঁদের ধাপ, সিন্ধিনাথ ধাপ,শালিবাহন রাজার কাচারিবাড়ি ঢিবি,ধনভাণ্ডার ঢিবি,কাঁচের আঙ্গিনা,মঙ্গলনাথের ধাপ,ছোট টেংরা,বাবুর ধাপ, কেদার ধাপ,সন্ন্যাসীর ধাপ,দশহাতিনা ধাপ।
খননকার্য:
মহাস্থানগড়ের প্রথাগত প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার কে. এন. দীক্ষিত এর তত্ত্বাবধানে ১৯২৮-২৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম শুরু করা হয়। তখন জাহাজঘাটার আশেপাশে মুনির ঘোন আর বৈরাগীর ভিটা পরিদর্শন করা হয়। বৈরাগীর ভিটা আর গোবিন্দ ভিটায় ১৯৩৪-৩৬ খ্রিষ্টাব্দে খননের কাজ স্থগিত করা হয়। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে সন্ধান মেলে ব্রাহ্মী লিপির। সেই লিপিতে পুণ্ড্রনগরের প্রাদেশিক শাসক সম্রাট অশোক দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষকে রাজভান্ডার থেকে খাদ্যশস্য ও অর্থ সহায়তা প্রদানের নির্দেশ দেন। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে মাজার, পরশুরামের প্রাসাদ, মানকালীর ধাপ, জিয়ৎ কুণ্ড ও উত্তরপাশের প্রাচীরের নিকটে খননকাজ চালানো হয়। পূর্ব ও উত্তরপাশের রক্ষাপ্রাচীরে পরবর্তীধাপের খননকাজ বিক্ষিপ্তভাবে চালানো হয় যদিও তখনও চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়নি।
এসব উৎখননের প্রাথমিক প্রতিবেদন ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়। প্রায় দু’দশক পর ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে খননকাজ পুনরায় শুরু করা হয় এবং ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় প্রতি বছরই খননকাজ চলতে থাকে। এ সময় খননকাজ মাজারের নিকটবর্তী এলাকা এবং উত্তর ও পূর্ব দিকের রক্ষা-প্রাচীর সংলগ্ন অংশে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু এ পর্যায়ে সম্পন্ন কাজের পরিমাণ এলাকাটির বিশালত্বের তুলনায় খুবই নগণ্য ছিল। এ স্থানটির ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক অনুক্রম এখনও অজ্ঞাত। এ প্রত্নস্থল ও অঞ্চলের প্রাচীন ইতিহাস পুনর্গঠন এবং প্রাচীন নগরটির সংগঠন সম্পর্কে অবগত হওয়ার জন্য একটা ব্যাপক অনুসন্ধান কাজ পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা দীর্ঘকাল ধরে অনুভূত হচ্ছিল। ফলে বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির (১৯৯২) অধীনে ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম দিকে বাংলাদেশী ও ফরাসি প্রত্নতাত্ত্বিকবিদগণ একটি যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করে। তখন থেকে পূর্ব দিকের প্রতিরক্ষা প্রাচীরের মধ্যভাগ সন্নিহিত স্থানে প্রতিবছর প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখনন কাজ পরিচালিত হতে থাকে। ইতঃপূর্বে সুরক্ষিত নগরের বাইরে ভাসুবিহার, বিহার ধাপ, মঙ্গলকোট ও গোদাইবাড়ির ন্যায় কয়েকটি স্থানেও বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক খননকার্য পরিচালিত হয়েছে। নগরটিতে উৎখননকালে কয়েকটি স্থানে প্রত্নস্থলের মূল মাটি পর্যন্ত খনন করা হয়েছে। এর মধ্যে ফ্রান্স-বাংলাদেশ মিশন কর্তৃক পরিচালিত সাম্প্রতিক উৎখনন ১৮টি নির্মাণ স্তর উন্মোচন করেছে। ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে অদ্যাবধি (ফ্রান্স-বাংলাদেশ উদ্যোগসহ) বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত উৎখননের ফলে নিম্নবর্ণিত সাংস্কৃতিক অনুক্রম উদ্ঘাটিত হয়েছে।
প্রথম যুগ: এ পর্যায়ে রয়েছে প্রাক-মৌর্য সংস্কৃতির স্মারক হিসেবে খ পর্যায়ের বিপুল পরিমাণ উত্তর ভারতীয় কালো মসৃণ পাত্র, রুলেটেড পাত্র, কালো ও লাল রঙের পাত্র, কালো প্রলেপযুক্ত পাত্র, ধূসর বর্ণের পাত্র, পাথরের যাতা, মাটির তৈরি মেঝেসহ মাটির ঘর (রান্নাঘর), চুলা এবং খুটির গর্ত। উত্তরাঞ্চলীয় কালো মসৃণ পাত্র সর্বনিম্ন স্তরে অধিক পরিমাণে পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে থালা, কাপ, গ্লাস এবং গামলা প্রধান। এ স্তরে অত্যন্ত সীমিত এলাকায় একটি ইট বিছানো মেঝে পাওয়া গেছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মেঝের সাথে সংশ্লিষ্ট কোন দেয়াল পাওয়া যায়নি। সম্ভবত প্লাইস্টোসিন ভূভাগের উপর এখানে সর্বপ্রথম বসতি গড়ে উঠেছিল। এর উপরের বসতি স্তরের তেজস্ক্রিয় কার্বন তারিখ পাওয়া গেছে খ্রিস্টপূর্ব চার শতকের শেষ ভাগ। এ থেকে ধারণা করা যায়, এ স্তরের বসতি প্রাক-মৌর্য যুগের। এই আদি বসতি স্তর নন্দ বা প্রায় ঐতিহাসিক সংস্কৃতির সাথে সম্পৃক্ত কিনা তা নির্ণয় করা প্রয়োজন।
দ্বিতীয় যুগ: এ যুগে প্রাপ্ত প্রত্নসম্পদের মধ্যে রয়েছে ভাঙ্গাঁ টালি (জানামতে এ ধরনের ছাদের জন্য ব্যবহূত টালির প্রাচীনতম নিদর্শন), মাটির দেয়াল নির্মাণে মিশ্রণ বা বন্ধনের জন্য ব্যবহূত ইটের টুকরা (মাঝে মাঝে গৃহস্থালি কাজেও যেমন চুলার স্থান, পোড়ামাটির পাতকূয়া), উত্তরাঞ্চলীয় কালো মসৃণপাত্র, ঈষৎ লাল বা ঈষৎ হলুদ রঙের সাধারণ পাত্র, রিং স্টোন, ব্রোঞ্জের আয়না, ব্রোঞ্জের প্রদীপ, ছাচ ঢালা মুদ্রা, পোড়ামাটির ফলকচিত্র, পোড়ামাটির জীবজন্তু, অর্ধমূল্যবান পাথরের গুটিকা বা পুঁতি এবং পাথরের যাতা। কয়েকটি তেজস্ক্রিয় কার্বন তারিখ (খ্রিস্টপূর্ব ৩৬৬-১৬২, ৩৭১-১৭৩ অব্দ) এবং সাংস্কৃতিক দ্রব্য এ পর্যায়কে মৌর্য যুগের অন্তর্ভুক্ত করে।
তৃতীয় যুগ: এ যুগ মৌর্যোত্তর (শূঙ্গ-কুষাণ) পর্বের অন্তর্ভুক্ত। এ যুগে বৃহদায়তনের ও অপেক্ষাকৃত ভালভাবে সংরক্ষিত ইটের উল্লেখযোগ্য স্থাপত্যিক ধ্বংসাবশেষ, ইট বিছানো মেঝে, খুঁটির গর্ত, পোড়ামাটির পাতকূয়া, শূঙ্গ বৈশিষ্ট্যযুক্ত প্রচুর পোড়ামাটির ফলক, অর্ধমূল্যবান পাথরের (এ্যাগেট কার্নেলিয়ন, কোয়ার্টজ) পুঁতি, সুর্মা লাগানোর দন্ড, ছাপাংকিত রৌপ্য মুদ্রা, রূপার বালা, ঢালাই করা তাম্র মুদ্রা, পোড়ামাটির মন্দির চূড়া, ঈষৎ লাল বা হলুদ রঙের প্রচুর পরিমাণ সাধারণ পাত্র (বিশেষত থালা, কাপ, গামলা) এবং ধূসর মৃৎপাত্র পাওয়া গেছে। মোটা বুননের উত্তরাঞ্চলীয় কালো মসৃণ পাত্র মৌর্যস্তরের তুলনায় এ স্তরে কম। কয়েকটি তেজস্ক্রিয় কার্বনের ক্রমাঙ্ক স্তর হলো খ্রিস্টপূর্ব ১৯৭-৪৭ অব্দ, খ্রিস্টপূর্ব ৬০ অব্দ-১৭২ খ্রিষ্টাব্দ, খ্রিস্টপূর্ব ৪০ অব্দ-১২২ খ্রিষ্টাব্দ।
চতুর্থ যুগ: এ সময়ে কুষাণ-গুপ্ত যুগের নিদর্শনাদি উন্মোচিত হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণ কুষাণ মৃৎপাত্রের টুকরা এবং সমসাময়িক কালের সুনির্দিষ্ট শৈল্পিক বৈশিষ্ট্যমন্ডিত প্রচুর পোড়ামাটির ফলকচিত্র এ যুগের আবিষ্কৃত প্রত্নসম্পদ। মৃৎপাত্রের প্রধান ধরন হলো খোদাই করা নকশাসহ হাতলওয়ালা রান্নার পাত্র, পিরিচ, গামলা, পিচকারি এবং ঢাকনি। উপরের এবং নিচের স্তরের তুলনায় স্থাপত্যিক ধ্বংসাবশেষ এ অংশে কম। স্থাপত্যের নিদর্শন হিসেবে আছে ভাঙ্গা ইটের টুকরা। অন্যান্য সাংস্কৃতিক সামগ্রী হলো পোড়ামাটির গুটিকা বা পুঁতি, গামলা, পাথর এবং কাঁচের গুটিকা বা পুঁতি, কাঁচের চুড়ি এবং পোড়ামাটির সিলমোহর।
পঞ্চম যুগ: এ যুগ গুপ্ত ও গুপ্তোত্তর যুগের পরিচয় বহন করে। তেজস্ক্রিয় কার্বন পদ্ধতিতে ৩৬১ থেকে ৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দের ক্রমাঙ্কিত তারিখ নির্দেশিত হয়েছে। এ পর্যায়ে দুর্গ-নগরীর সন্নিকটে পরবর্তী গুপ্তযুগের গোবিন্দ ভিটা নামে পরিচিত মন্দিরের ইটনির্মিত বিশাল কাঠামোর ধ্বংসাবশেষ এবং নগরে ইটের তৈরী ঘরবাড়ি, মেঝে ও রাস্তার ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও রয়েছে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ রীতির পোড়ামাটির ফলক, সিলমোহর, কাচ ও প্রায়-মূল্যবান পাথরের গুটিকা বা পুঁতি, পোড়ামাটির গোলক ও চাকতি, তামা ও লোহার দ্রব্য এবং ছাপ দিয়ে নকশা করা পাত্রসহ বিপুলসংখ্যক প্রত্নসম্পদ।
ষষ্ঠ যুগ: এ যুগটি নগরের পূর্ব দিকে খোদার পাথর ভিটা, মানকালীর কুন্ড ধাপ, পরশুরামের প্রাসাদ ও বৈরাগীর ভিটার ন্যায় কয়েকটি বিক্ষিপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ দ্বারা পাল যুগের পরিচয় বহন করে। এ পর্যায়টি ছিল সবচেয়ে সমৃদ্ধ এবং এ যুগে নগরের বাইরে বহুসংখ্যক বৌদ্ধ ইমারত নির্মিত হয়েছিল।
মহস্থানগড়ে প্রাপ্ত একটি প্রাচীন লিপি:
সপ্তম যুগ: মানকালীর কুন্ডে পূর্ববর্তী যুগের ধ্বংসাবশেষের উপর স্থাপিত ১৫ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের ধ্বংসাবশেষ, ফররুখসিয়ার কর্তৃক নির্মিত এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের ধ্বংসাবশেষ এবং চীনা সেলাডন ও এ যুগের বৈশিষ্ট্যমন্ডিত চকচকে মাটির পাত্রের ন্যায় অপরাপর প্রত্ননিদর্শন দ্বারা মুসলিম যুগের পরিচয় বহন করে। নগরের অভ্যন্তরভাগে বৈরাগীর ভিটা, খোদার পাথর ভিটা, মানকালীর ঢিবি, পরশুরামের প্রাসাদ ঢিবি ও জিয়ৎ কুণ্ড প্রভৃতি প্রত্নস্থল থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। এসব প্রত্নস্থল ছাড়াও ১৯৮৮-৯১ সালে খননকার্যের ফলে নগরটির তিনটি প্রবেশদ্বার, উত্তর ও পূর্ব দিকের রক্ষা-প্রাচীরের উল্লেখযোগ্য অংশ এবং মাযার এলাকার নিকটে একটি মন্দির-স্থাপনা উন্মোচিত হয়েছে।
মহাস্থান প্রত্নস্থলের তিনটি প্রবেশদ্বারের দুটি উত্তর দিকের রক্ষা-প্রাচীরে অবস্থিত। দুর্গের উত্তর-পশ্চিম কোণের ৪৪২ মিটার পূর্ব দিকে অবস্থিত একটি প্রবেশদ্বার ৫ মিটার প্রশস্ত ও ৫.৮ মিটার দীর্ঘ। অন্যটি ৬.৫ মিটার পূর্ব দিকে অবস্থিত এবং ১.৬ মিটার প্রশস্ত। প্রবেশদ্বার দুটি প্রাথমিক ও পরবর্তী পালযুগ দুপর্যায়ে ব্যবহূত হয়েছিল। পূর্ব দিকের রক্ষা-প্রাচীরের একমাত্র প্রবেশদ্বারটি প্রায় এর মধ্যস্থলে এবং পরশুরামের প্রাসাদের ১০০ মিটার পূর্বে অবস্থিত এবং প্রায় ৫ মিটার প্রশস্ত। পাল যুগের শেষের দিকে একটি পুরানো প্রবেশদ্বারের ধ্বংসাবশেষের উপর এটি নির্মিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। এ প্রবেশদ্বারটি এখনও সম্পূর্ণরূপে উদ্ধার করা যায়নি। সবগুলি প্রবেশদ্বার-স্থাপনায় ভেতর দিকে প্রহরি-কক্ষ এবং রক্ষা-প্রাচীরের বাইরে সম্প্রসারিত বুরুজ রয়েছে।
মাজার এলাকায় উন্মোচিত মন্দির-স্থাপনায় কোন সুসঙ্গত নির্মাণ পরিকল্পনা লক্ষ্য করা যায় না। পাল শাসনামলে এটি পাঁচটি পর্যায়ে নির্মিত ও পুননির্মিত হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। এ এলাকা থেকে উদ্ধারকৃত প্রত্ননিদর্শনের মধ্যে রয়েছে কয়েকটি বড় আকারের পোড়ামাটির ফলক, খেলনা ও গোলক এবং অলঙ্কৃত ইট ও মাটির পাত্র।
নগরের রক্ষা-প্রাচীরটি ছয়টি পর্যায়ে নির্মিত। সর্বপ্রাচীন পর্যায়ে সম্ভবত মৌর্যযুগ এবং পরবর্তী পর্যায় শূঙ্গ-কুষাণ, গুপ্ত, প্রাথমিক পাল, পরবর্তী পাল ও সুলতানি আমলের সাথে সম্পৃক্ত। এই প্রাচীরগুলি পর্যায়ক্রমে একটির উপর অন্যটি নির্মিত হয়েছে। কাজেই নগরের অভ্যন্তরে পর্যায়ক্রমিক সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষের পাশাপাশি প্রতিরক্ষা প্রাচীরেও নির্মাণের পর্যায়ক্রমিক স্তর পরিদৃষ্ট হয়। অবশ্য প্রাচীনতম স্তরে নগরটির সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ এবং প্রাচীনতম রক্ষা-প্রাচীরের পারস্পরিক সম্পর্ক এখনও নির্ণয়সাপেক্ষ।
গোবিন্দ ভিটা, লক্ষ্মীন্দরের মেধ, ভাসুবিহার, বিহার ধাপ, মঙ্গলকোট ও গোদাইবাড়ি ধাপ নগরটির বাইরে সন্নিহিত এলাকায় খননকৃত প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা। কিন্তু সন্নিহিত গ্রামসমূহে আরও অনেক স্তূপ বিক্ষিপ্ত অবস্থায় রয়েছে, যেখানে প্রাচীন সুরক্ষিত পুন্ড্রনগরের উপকণ্ঠের সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ নিহিত আছে বলে বিশ্বাস করা হয়।
দর্শনীয় স্থান:
মহাস্থান গড় বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রাচীন পর্যটন কেন্দ্র। এখানে বহু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। ২০১৬ সালে দক্ষিণ এশিয়ার সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসাবে মহাস্থানগড়ে নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।
দর্শকদের জন্য জ্ঞাতব্য:
মহাস্থানগড় বগুড়া থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার উত্তরে বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। পাশেই করতোয়া নদীর একটি ক্ষীণকায় স্রোতধারা প্রবহমান। রাস্তাটি জাহাজঘাট ও জাদুঘর অবধি গিয়েছে। ঢাকা থেকে সরাসরি যাওয়ার বাস রয়েছে এবং যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর উপর দিয়ে যেতে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা সময় লাগে।
ভাড়া গাড়িতে ভ্রমণ করলে একই পথে পুনরায় চলে আসা যায়, অথবা কেউ চাইলে সেখান থেকে নওগাঁর পাহাড়পুরে সোমপুর মহাবিহার পরিদর্শনে যেতে পারেন।
মাজার শরীফ:
শাহ সুলতান বলখী মাহিসাওয়ারের মাজার শরীফ
অনেক ঐতিহাসিক এবং স্থানীয় লোকের মতে এটি হযরত শাহ সুলতান মাহমুদ বলখী (র:) এর মাজার। মহাস্থান বাস স্ট্যান্ড থেকে কিছুটা পশ্চিমে এ মাজার শরীফ অবস্থিত। শাহ সুলাতান বলখী (র:) ১৪শ শতাব্দির একজন ইসলাম ধর্ম প্রচারক ছিলেন। কথিত আছে মাছ আকৃতির নৌকাতে করে তিনি তার শীষ্যদের নিয়ে বরেন্দ্র ভূমিতে আসেন। সেখান থেকে তার নাম এসেছে মাহিসাওয়ার (মাছের পিঠে করে আগমণকারী) এবং তিনি বল্লখ রাজ্যের রাজার পুত্র ছিলেন বিধায় তাকে শাহ সুলতান বলখী ও বলা হয়।
১৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট আওরঙ্গজেব সৈয়দ রেজা, সৈয়দ তাহির, সৈয়দ আব্দুর রাহ্মান (তিন ভাই) কে এই মাজারকে জামিনদার দেখাশোনার দায়িত্ব প্রদান করেন। স্থানীয় লোকজন শাহ সুলতান মাহিসওয়ারকে খুব শ্রদ্ধা করে। ধর্মপ্রান হাজারো মুসলমান এখনো তাদের নানা সমস্যার সমাধান ও মানত করতে এই মাজারে আসেন।
জাদুঘর:
মূল নিবন্ধ: প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর, মহাস্থান বগুড়া থেকে ৭ কিলোমিটার উত্তরে এবং মহাস্থানগড় থেকে সামান্য উত্তরে গোবিন্দ ভিটার ঠিক বিপরীত দিকে অবস্থিত এই জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৭ সালে। প্রথম দিকে ৩ একর জায়গার উপর জাদুঘরের মূল অংশটি থাকলে নানা সময়ে সম্প্রসারিত হয়ে বর্তমানে এর পরিধি দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ একরে।
মহাস্থান গড় খননের ফলে মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন ও অন্যান্য রাজবংশের হাজার বছরের পুরানো অসংখ্য স্মৃতিচিহ্ন সোনা, রুপা, লোহা, ব্রোঞ্জ, পাথর, কাঁসাসহ বিভিন্ন মূল্যবান ধাতব পদার্থ, পোড়ামাটির তৈরি মূর্তি, কালো পাথরের মূর্তি, বেলে পাথরের মূর্তি, মাটি দিয়ে তৈরি খোদাই করা ইট, স্বর্ণবস্তু, বিভিন্ন শিলালিপি, আত্মরক্ষার জন্য ধারালো অস্ত্র, নিত্যপ্রয়োজনীয় তৈজসপত্র ও নানা ধরনের প্রাচীন অলংকারসহ ইত্যাদি সামগ্রী পাওয়া গেছে যা মহাস্থানগড়ের উত্তরে অবস্থিত জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। মহাস্থান গড় ছাড়াও আরও বিভিন্ন স্থানের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এখানে সংরক্ষিত আছে।
খোদার পাথর ভিটা:
পাথর নির্মিত চৌকাঠের ধ্বংসাবশেষ খোদার পাথর ভিটা মাজারের পূর্বে পাহারে অবস্থিত। আয়তাকার এই বৌদ্ধ মন্দিরটি ছিল পূর্বাভিমুখী। এটি দীর্ঘাকার এবং চৌকাণাকৃতির মর্সণ পাথর যা সাধারণত প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না। ধারণা করা হয়, রাজা পরশুরাম এটি সংগ্রহ করে মসৃণ করে বলী দেয়ার কাজে ব্যবহার করতেন। হিন্দু রমণীগণ এ পাথর দুধ ও সিঁদুর দিয়ে স্নান করাতো। এখনো কেউ কেউ নগ্ন পায়ে এই চৌকাঠটিতে দুধ ঢেলে ভক্তি নিবেদন করেন।
এই ভিটার ধ্বংসাবশেষ পাল শাসনামলের প্রথম দিকের (আনুমানিক খ্রিস্টীয় আট শতক) বলে জানা গেছে। ১৯৭০ সালে এ ঢিবি বা ভিটাতে খননকার্য করে একটি মন্দির এবং তার সাথে ছোটখাটো কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া যায়। এই ঢিবির উপরিভাগে গ্রানাইট পাথরের একটি বিশাল চৌকাঠ পাওয়া যায় এবং এ থেকেই স্থানীয় জনগণ ঢিবির এমন অদ্ভুত নামকরণ করেছে। এখানে খননকার্যের ফলে প্রাপ্ত খোদাইকৃত প্রস্তর খন্ডগুলির মধ্যে একই সারিতে আসীন অবস্থায় তিনটি বৌদ্ধমূর্তি পাওয়া গিয়েছিল। যা বর্তমানে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে রক্ষিত আছে। এখনও মাটির নিচে চাপা পড়া অবস্থায় আছে প্রত্নস্থলটির কাঠামোর ধংসাবশেষ। শুধু বিশাল চৌকাঠটি এখানে দেখা যায়।
মানকালীর ঢিবি:
আজীবক ধর্ম প্রচারক মোক্ষালি গোসালের নির্মিত হয় এই মন্দির। এটি মহাস্থানগড়ের মজা পুকুরের পূর্ব পারে অবস্থিত। ১৯৬৫-৬৬ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্বাবধানে এখানে খননকাজ শরু হয় ও শেষ পর্যন্ত সুলতানী আমলের একটি মসজিদের ধ্বংসাবশেষসহ বেশ কিছু ছোট ছোট প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তু আবিষ্কার করা হয়। মসজিদটির আয়তন ২৬.২১ থেকে ১৪.৫৪ মিটার। খনন কাজ চলার সময় মসজিদের নিচে একটি মন্দিরেরও কিছু ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গিয়েছিল। মসজিদটিতে কোন শিলালিপি পাওয়া যায়নি তবে মসজিদের অবকাঠামো দেখে প্রত্নতত্ত্ববিদগণ ধারণা করেন এটি খুব সম্ভবত মুঘল আমলের পূর্বেই নির্মাণ করা হয়েছিল। কিংবদন্তি অনুসারে, এই স্থানে প্রথমে একটি মন্দির নির্মাণ করেন রাজা মানসিংহ ও তার ভাই তানসিংহ। অন্যান্য কিংবদন্তি অনুসারে, এখানে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন ঘোড়াঘাটের জমিদারগণ। এছাড়াও এখানে পাওয়া জৈন প্রতিমা দেখে অনেকেই মনে করেন পূর্বে জৈন ধর্মগুরুদের আবাসস্থল ছিলো স্থানটি।
বৈরাগীর ভিটা:
মহাস্থানগড় এর উত্তর-পূর্বে কোনো রাজা পরশুরামের বাড়ি হতে প্রায় ২০০ গজ দূরে অবস্থিত। এই স্তূপটির আয়তন ৩০০*২৫০ ফুট।
স্কন্ধের ধাপ:
এটি একটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। মহাস্থানগড় থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দক্ষিণে পাকা সড়কের প্রায় ৫০ মিটার পুবে একটি জলাশয়ের পাশে এই ধাপ অবস্থিত। খ্রিষ্টীয় সাত শতকে কলহন নামে পণ্ডিতের রাজতরঙ্গিনী গ্রন্থে পুণ্ড্রনগরে একটি কার্তিকের মন্দির ছিল বলে জানা যায়। ধরনা করা হয় স্কন্দের ধাপের এই মন্দিরটি হল কার্তিকের মন্দির। উৎখনন করার কারণে ঢিবির অনেক ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
মঙ্গলকোট স্তুপ:মহাস্থান গড় হতে ১ কি:মি: পশ্চিমে অবস্থিত।
গোকুল মেধ:মহাস্থানগড় হতে দক্ষিণ পশ্চিম কোণে ২ কি:মি: দূরে অবস্থিত।
ট্যাংরা বৌদ্ধ স্তুপ: প্রায় ৪৫ ফিট উচ্চতা বিশিষ্ট এই স্তুপ ট্যাংরা নামক স্থানে অবস্থিত।
বিহার ধাপ: মহাস্থানগড় হতে ৬ কি:মি: উত্তর পশ্চিম অবস্থিত। স্তুপটি ৭০০*৬০০ ফুট আয়তন।
ভাসু বিহার: মহাস্থানগড় হতে ৭ কি:মি: উত্তর পশ্চিমে এবং বৌদ্ধ বিহার হতে ২ কি:মি: উত্তরে অবস্থিত।
ভিমের জঙ্গল: মহাস্থানগড় এর তিন দিক পরিবেষ্টিত এবং অসংখ্য কালোত্তীর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনা সমৃদ্ধ এই ভিমের জঙ্গল।
কালীদহ সাগর:
গড়ের পশ্চিম অংশে এবং গড়ের পশ্চিম অংশে রয়েছে ঐতিহাসিক কালীদহ সাগর এবং পদ্মাদেবীর বাসভবন।কালীদহ সাগর সংলগ্ন ঐতিহাসিক গড় জড়িপা নামক একটি মাটির দুর্গ রয়েছে। প্রাচীন এই কালীদহ সাগরে প্রতিবছরের মার্চ মাসে হিন্দু ধর্মালম্বীদের রারুন্নী স্নান অনুষ্ঠিত হয়। স্নান শেষে পুণ্যার্থীগণ সাগরপাড়ে গঙ্গাপূজা ও সংকীর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
শীলাদেবীর ঘাট: গড়ের পূর্বপাশে রয়েছে করতোয়া নদী এর তীরে ‘শীলাদেবীর ঘাট’। শীলাদেবী ছিলেন পরশুরামের বোন। এখানে প্রতি বছর হিন্দুদের স্নান হয় এবং একদিনের একটি মেলা বসে।
জিয়ৎ কুন্ড: এই ঘাটের পশ্চিমে জিয়ৎ কুণ্ড নামে একটি বড় কুপ রয়েছে, যা বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। কথিত আছে এই কুপের পানি পান করে পরশুরামের আহত সৈন্যরা সুস্থ হয়ে যেত। যদিও এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি পাওয়া যায়নি।
বেহুলার বাসর ঘর:
মহাস্থানগড় বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রায় ২কি.মি দক্ষিণ পশ্চিমে একটি বৌদ্ধ স্তম্ভ রয়েছে যা সম্রাট অশোক নির্মাণ করেছিলেন বলে মনে করা হয়। স্তম্ভের উচ্চতা প্রায় ৪৫ ফুট। স্তম্ভের পূর্বার্ধে রয়েছে ২৪ কোন বিশিষ্ট চৌবাচ্চা সদৃশ একটি গোসল খানা। এটি বেহুলার বাসর ঘর নামেই বেশি পরিচিত।
গোবিন্দ ভিটা:মহাস্থানগড় জাদুঘরের ঠিক সামনেই গোবিন্দ ভিটা অবস্থিত। গোবিন্দ ভিটা শব্দের অর্থ গোবিন্দ (হিন্দু দেবতা) তথা বিষ্ণুর আবাস। এ ভিটা একটি খননকৃত প্রত্নস্থল, ১৯২৮-২৯ সালে খনন করে গোবিন্দ ভিটায় দুর্গ প্রাসাদ এলাকার বাইরে উত্তর দিকে অবস্থিত। কিন্তু বৈষ্ণব ধর্মের কোনো নিদর্শন এ স্থানে পাওয়া যায়নি। তবুও প্রত্নস্থলটি স্থানীয়ভাবে গোবিন্দ ভিটা নামে পরিচিত।
পরশুরামের প্রাসাদ: পরশুরামের প্রাসাদ ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ের সীমানা প্রাচীর বেষ্টনীর ভিতরে যেসব প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম। স্থানীয়ভাবে এটি তথাকথিত হিন্দু নৃপতি পশুরামের প্যালেস নামে পরিচিত।
বৌদ্ধ বিহারসমূহ: সোমপুর বিহার,হলুদ বিহার,ভাসু বিহার, আনন্দ বিহার ও সীতাকোট বিহার।
গেল ২১ ফেব্রুয়ারী-২০২৫,উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার, প্রসিদ্ধ বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত প্রত্নস্থল, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ে ঘুরতে আসেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের চার জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে (১) ঠাকুরগাঁ জেলার সদর উপজেলার মোনাব্বিরা জাহীম (২) কুষ্টিয়া জেলার সাজিয়া ফারুক (৩) জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার তাবাস্সুম মোস্তারীএবং (৪)ফরিদপুর জেলার জেনিয়া আক্তার। আগামী প্রজন্মকে কেন্দ্র করে সময়োপযোগী পর্যটক মুখর পরিবেশ তৈরী করতে হলে কেমন দেখতে চাই ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়কে? এমন প্রশ্নের জবাবে,তরুণ প্রজন্মের অদম্য উদীয়মান,আগামীর সুখী-সুন্দর,সমৃদ্ধ ও পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ বিনির্মাণে ইচ্ছা পোষনকারী এবং দেশ উন্নয়নে প্রগতীশীল ভাবনাময়ী মেধাবী এই শিক্ষার্থীরা বলেন,ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ের ট্রাকচার এমন হওয়া উচিৎ যেখানে আধুনিকতার আদলে শোভাবর্ধন হবে,পর্যটকদের জন্য থাকবে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা। দর্শনার্থীদের জন্য প্রদর্শীত লিপিবব্ধে সংরক্ষণ থাকা প্রয়োজন ঐতিহাসিক প্রতিটি ঘটনার বিস্তারিত তথ্য উপাত্ত,যা দেখে অনুপ্রাণীত হবে সব বয়সী ও শ্রেণী পেশার মানুষ,অনুধাবন এবং অনুমান করতে পারবে সে সময়ের জীবণমান সম্পর্কে,দৃষ্টিভঙ্গির প্রখরতা নিয়ে যাবে ইতিহাসের মূল ফটকে,যে সব জানার আগ্রহী ভ্রমন পিপাষুরা দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে আসে এই সব প্রত্নস্থলে।যাদুঘরের ভেতরে-বাহিরে কিছু নিদর্শন শোভাবর্ধনের ফলে ঢেকে গেছে যা কাম্য নয়,এছাড়াও প্রদর্শীত প্রতিটি বিষয়-বস্তুর ইতিহাসও লিপিবদ্ধ আছে অতী সামান্য উল্লেখ করে তারা বলেন, আধুনিক স্থাপত্বশিল্পে মুড়িয়ে ফেলা যাবেনা ঐতিহাসিক স্থাপত্বশিল্পের নান্দনিক নির্মাণ শৈলীর এক টুকরা পাথরও।কারণ এমনিতেই পাঠ্য বই-এ এসবের বিষদ কোন ইতিহাস আমরা জানতে পারিনা। এক কথায় ঐতিহাসিক যা ছিল তাই থাকবে এটাই ইতিহাস। আগত পরিবারের শিশুদের কথা মাথায় রেখে তৈরী করা প্রয়োজন শিশু বিনোদন কেন্দ্র,এতে করে শিশুরা যেমন আনন্দ উচ্ছলতায় মেতে থাকবে, তেমনি মা-বাবারাও উপভোগ করতে পারবে।তারা আরও বলেন,শুধু মহাস্থানগড়-ই নয়, দেশব্যপী ঐতিহাসিকভাবে নির্মিত প্রত্নস্থলে সংগ্রহশালা বা যাদুঘরে সংগৃহীত এবং সংরক্ষিত দেশের প্রতিটি ঐতিহাসিক ঘটনার তথ্য উপাত্ত এদেশের ঐতিহ্য ও সম্পদ। তাই এসব তথ্যবহুল ঘটনার পূর্নাঙ্গ তথ্য-চিত্র যথাযথ সংরক্ষণে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে আরো বেশী দক্ষ জনবল নিয়েগের মাধ্যমে তাদের প্রশিক্ষণ ও গবেষণার মধ্যদিয়ে সময়োপযোগী দক্ষ জনবল এবং প্রকৃত ইতিহাস সংরক্ষণকারী হিসেবে গড়ে তোলা প্রয়োজন বলেও মনে করেণ তারা।
ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ে ঘুরতে আসা ঢাকার মোস্তাকিম হেসেন,গাজীপুরের নাহিদ এবং সোহাগ তারা বলেন,এখানে অনেক পুরাকৃত্তির ইতিহাস নেই,এসবের পাশপাশী ন্যাচারাল কিছু থাকলে আরো ভালো হতো এবং কিছু সংস্কারও প্রয়োজন।
ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শণ দেখতে আসা টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল থানার শ্রী:প্রিতীস চন্দ্রশীল ও শ্রী:মনোরঞ্জনশীল বলেন,এখানে ভ্রমণ পিপাষু পর্যটকদের থাকা-খাওয়ার জন্য ভালো হোটেল-মোটেল ও রেষ্টুরেন্ট খুবী জরুরী।
বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত প্রত্নস্থল, প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ঐতিহাসিক মহাস্থানগড় রক্ষণাবেক্ষণে দায়ীত্বরত কাস্টোডিয়ান রাজিয়া সুলতানা সঙ্গে সার্বিক বিসয়ে আলাপ কালে তিনি বলেন,পর্যটকদের থাকার জন্য আবাসীক হোটেল তৈরীর চিন্তা-ভাবনা আছে,আর ইতোমধ্যেই বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য দোলনা ঝুলানো হয়েছে। শীতকালে ডিসেম্বর-মার্চ পর্যন্ত পর্যটকদের উপস্থিতি বেশী থাকে,গেল ২০২৩-২৪অর্থ বছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা বলেও জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
( দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক সঠিক ও প্ররো ইতিহাস প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ধরে রাখার জন্য পাঠ্য বই-এ প্রত্নতাত্ত্বিক একটি অধ্যায় অথবা বাংলাদেশের প্রত্নত নামে আলাদা একটি বই সিলেবাসে অন্তর্ভূক্ত এখন সময়োপযোগী পদক্ষেপ বলে আমি মনে করি)।
লেখক:এম.এ.জলিল রানা,সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিষ্ট:২৮ ফেব্রুয়ারী-২০২৫।
প্রকাশক: সোহেল রানা II সম্পাদক: আব্দুস সামাদ সায়েম II অফিস: দ্য পিপলস্ নিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম বাজার স্টেশন, রেলওয়ে কলোনী,সিরাজগঞ্জ II মোবা: ০১৭১২-৪০৭২৮২,০১৭১১-১১৬২৫৭ II ই-মেইল thepeoplesnews24@gmail.com II
©২০১৫-২০২৫ সর্বস্ত্ব সংরক্ষিত । তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত (নিবন্ধন নং-২১০)