দিনাজপুর জেলার চিলিবন্দর থানার এম এইচ ব্রীক ফিল্ড এবং অটো রাইচ মিল এর মালিক মো. নুর আমিন শাহকে ফরেইন ব্যাংক হতে সহজ শর্তে বিনা ডকুমেন্টে ৫০ কোটি টাকা লোন করিয়ে দেওয়ার মিথ্যা প্রতারনায় হাতিয়ে নেয়া হয় ২ কোটি ছয় লাখ টাকা। এমনই এক প্রতারক চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
বৃহস্পতিবার (২৬জুন) রাজধানীর শেরেবাংলা নগর পশ্চিম আগারগাঁওয়ে পিবিআই কার্যালয়ে এক সংবাদ সন্মেলনে এসব জানান অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক মো.এনায়েত হোসেন মান্নান।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- আসামী মো. সফিকুল ইসলামকে ও ড. সিপার আহমেদ।
রাজধানীর পল্লবী ও বনানী থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামি মো.সফিকুল ইসলামকে ভাড়া বাস হতে এবং আসামী ড. সিপার আহমেদকে নিজ ফ্লাট থেকে গ্রেফতার করা হয়।
মো.এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, দিনাজপুর জেলার চিলিবন্দর থানার এম এইচ ব্রীক ফিল্ড এবং অটো রাইচ মিল এর মালিক মো. নুর আমিন শাহকে ৫% সুদে বিনা ডকুমেন্টে ৫০ কোটি টাকা ফরেইন ব্যাংক হতে লোন করিয়ে দেওয়ার নামে প্রতারকচক্রের মিথ্যে নাটক ও প্রতারনার ফাঁদে পড়ে ২ কোটি ৬ লাখ টাকা হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে বনানী (ডিএমপি) থানায় একটি মামলা করেন।
মামলার বাদীর দাবী ২ কোটি ৬ লাখ টাকা প্রতারকের খপ্পরে পড়ে নেয়ার কথা উল্লেখ করলেও মামলা তদন্তকালে ও আসামীদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদে বাদীকে ৫ শতাংশ সুদে বিনা ডকুমেন্টে ৫০ কোটি টাকা ফরেইন ব্যাংক হতে লোন করিয়ে দেওয়ার নামে প্রতারনার ফাঁদ পেতে বাদীকে বোকা বানিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় বলে জানা যায়।
ঘটনার বিবরন জানিয়ে তিনি বলেন,
বাদী এম এইচ ব্রীক ফিল্ড এবং অটো রাইচ মিল এর একজন ব্যবসায়ী। ব্যাবসার সুবাদে পরিচিত ব্যাবসায়ী খন্দকার শাহ্ আলম এর পরিচয়। ভুক্তভোগী নুর আলম তার ব্যাবসাকে প্রসারিত করতে টাকার সমস্যার কথা আলোচনা করলে তখন তিনি তার পরিচিত আসামী মো. সফিকুল ইসলামকে ব্যাংকের বড় কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং সহজ শর্তে ৫% সুদে লঙ্কা বাংলা ও ব্রাক ব্যাংকসহ বিদেশী ব্যাংক থেকে ৫০ কোটি টাকা লোন করে দিবে বলে প্রলোভন দেখায়। একপর্যায় আসামী বাদীকে বলে ঢাকায় আসেন। পরে গত বছরের সেপ্টম্বর মাসে বাদী ও ব্যাবসয়ী খন্দকার শাহ্ আলমকে সহ ঢাকায় এসে আসামীদের সাথে বনানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেল সাক্ষাৎ করেন। তখন তিনি বলে তার বস (আসামী) ডঃ সিপার আহমেদ বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা।
আসামী বাদীকে আশ্বস্ত করেন যে ২নং আসামী যেহেতু ব্যাংকের কর্মকর্তা এবং বহু ব্যাংকের ও বিদেশী ব্যাংকের সাথে তার যেকোন লোন করে দিতে অসুবিধা হবে না। আলোচনার একপর্যায় আসামীরা, বাদীর সম্পর্কে সব বিষয় শুনে বাদীকে আসামীরা ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত লোন করে দিতে পারবে। তবে আসামীদেরকে ২ শতাংশ কমিশনে টাকা অগ্রীম দিতে হবে ও নানাবিধ খরচ বহন করতে হবে বলে জানায়। এর ধারাবাহিকতায় বনানী থানাধীন মহাখালী আমতলী পর্যটন হোটেলের ক্যান্টিনে বসে বাদীর কাছ থেকে নগদ ১০ লাখ টাকা নেয় এবং বিভিন্ন খরচের কথা জানিয়ে৭/৮ ধাপে ১ কোটি ২ লাখ টাকা নেয়। আসামীরা তাদের বিকাশ ও নগদে বিভিন্ন কথা বুঝিয়ে লোন ফাইলের কথা বলে ২৬ লাখ টাকা পর্যন্ত গ্রহণ করে।
এছাড়াও নগদ ৫/৬ টি ধাপে বিভিন্ন ধাপে আরও ৭৬ লাখ টাকা গ্রহণ করে। নগদ ক্যাশ, ব্যাংক একাউন্ট, বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে এভাবে প্রতারণা করে মোট ২ কোটি ৬ লাখ টাকা আদায় করে।
এছাড়াও আসামীরা ভুক্তভোগী নুর আমিনের পরিচালিত এতিমখানা জন্য জাইকা হতে ৭ কোটি টাকা অনুদান এনে দিবে দিবে জানিয়ে তার স্বাক্ষর করা অগ্রনী ব্যাংকের এবং পূবালী ব্যাংকের ৮টি চেক নিয়ে নেয়।
আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, আসামী সিপার বেসিক ব্যাংকের ও প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি পরিচালক হতে চাকুরীচ্যুত কর্মকর্তা ছিলেন। আসামী দেয়া তথয় মতে তার নামে দুদকের ২৬ টি মামলা চলমান ও বিচারাধীন রয়েছে। তিনি চাকুরীচ্যুত হওয়ার পরও সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার পরিচয়কে পুজি করে অল্প সুদে ব্যাংক লোন পাশ করিয়ে দেওয়ার নামে আসামি সফিকুল-এর সহযোগিতায় প্রতারণা করতেন।
এসময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যাবহৃত মোবাইল ৪টি, গাড়ি ১টি, মোবাইল সিম ৮টি, বিভিন্ন ভিকটিমের কথা বলার ভয়েস রেকর্ড জব্দ করা হয়।
এছাড়াও বাদীর দুইটি ব্যাংকের, ব্যাংক একাউন্টের থেকে আসামীদের বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্ট ১ কোটি ২ লাখ ৯৯ হাজার টাকার লেনদেনের হিসাব বিবরণী, নন-জুডিসিয়া স্ট্যাম্পে প্রস্তুতকৃত ভূয়া ৬টি চুক্তিপত্র এবং বাদীর বিশ্বাস স্থাপন করার জন্য আসামীদের কর্তৃক সাক্ষারিত অগ্রনী ব্যাংকের, এক্সপোট ইমপোট ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংকের, বেসিক ব্যাংকের ১৩ টি চেক উদ্ধার করা হয়।
প্রকাশক: সোহেল রানা II সম্পাদক: আব্দুস সামাদ সায়েম II অফিস: দ্য পিপলস্ নিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম বাজার স্টেশন, রেলওয়ে কলোনী,সিরাজগঞ্জ II মোবা: ০১৭১২-৪০৭২৮২,০১৭১১-১১৬২৫৭ II ই-মেইল thepeoplesnews24@gmail.com II
©২০১৫-২০২৫ সর্বস্ত্ব সংরক্ষিত । তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত (নিবন্ধন নং-২১০)