অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফির লর্ডস টেস্টে একটি করে ইনিংস শেষে আলাদা করা গেল না কাউকে, দুই দলের স্কোরই যে সমান। ইংল্যান্ডের ৩৮৭ রানের জবাবে তৃতীয় দিন ভারত অলআউট হয় ৩৮৭ রানেই। ১১ রানে শেষ ৪টি ও ২ রানে শেষ ৩টি উইকেট হারায় সফরকারীরা।
১৪৮ বছরের টেস্ট ইতিহাসে ২ হাজার ৫৯৪ ম্যাচে এই নিয়ে স্রেফ ৯ বার দুই দলের প্রথম ইনিংসের স্কোর হলো সমান। সবশেষ এমন কিছু দেখা গিয়েছিল ২০১৫ সালে, হেডিংলিতে ইংল্যান্ড-নিউ জিল্যান্ডের টেস্টে।
দ্বিতীয় ইনিংসে শেষ বেলায় এক ওভার খেলার সুযোগ পেয়ে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ বিনা উইকেটে ২ রান। দিনের সবচেয়ে উজ্জ্বল নাম রাহুল। চমৎকার ব্যাটিংয়ে ১৩ চারে ১৭৭ বলে ১০০ রানের ইনিংস খেলেন ৩৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান।
টেস্ট ক্যারিয়ারের ১০ সেঞ্চুরির ৯টিই দেশের বাইরে করলেন রাহুল। এই সফরে ২টিসহ ইংল্যান্ডে করলেন ৪টি, যার ২টি লর্ডসে। ক্রিকেট-তীর্থ বলে পরিচিত এই মাঠে ভারতের হয়ে একাধিক টেস্ট সেঞ্চুরি আছে আর কেবল দিলিপ ভেংসারকারের (৩টি)। রাহুলের আগে সফরকারী ওপেনার হিসেবে লর্ডসে একাধিক টেস্ট সেঞ্চুরি করতে পারেন কেবল বিল ব্রাউন, গর্ডন গ্রিনিজ ও গ্রায়েম স্মিথ। তাদের প্রত্যেকেরই ২টি করে।
৩ উইকেটে ১৪৫ রান নিয়ে তৃতীয় দিনের ব্যাটিং শুরু করে ভারত। আগের দিন রাহুল অপরাজিত ছিলেন ৫৩ রানে, পান্ত ১৯ রানে। প্রথম সেশনের শেষ ওভারের আগে তাদের জুটিতে চিড় ধরাতে পারেনি ইংল্যান্ড।
প্রথম দিন কিপিংয়ের সময় আঙুলে চোট পাওয়া পান্ত ৮৬ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে এই সফরে তৃতীয় সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। লাঞ্চের আগে শেষ ওভারে স্পিনার শোয়েব বাশিরের প্রথম বলে এক রান নিয়ে ৯৮-এ পৌঁছে যান রাহুল। স্ট্রাইক পেতে যেন কিছুটা মরিয়া হয়ে ওঠেন তিনি। তৃতীয় বলে শর্ট কাভারে খেলে দ্রুততায় সিঙ্গল নিতে গিয়ে বেন স্টোকসের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউটে কাটা পড়েন পান্ত।
পান্তের বিদায়ে ভাঙে ১৯৮ বলে ১৪১ রানের জুটি। ৮ চার ও ২ ছক্কায় গড়া তার ১১২ বলে ৭৪ রানের ইনিংস। এই দুটি ছক্কায় ভারতের হয়ে টেস্টে সর্বোচ্চ ছক্কার তালিকায় দুই নম্বরে রোহিত শার্মার পাশে বসেছেন পান্ত, দুইজনেরই ৮৮টি করে। ৯১ ছক্কা মেরে চূড়ায় বিরেন্দার শেবাগ।
ক্যারিবিয়ান গ্রেট ভিভ রিচার্ডসকে (৩৪) ছাড়িয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে সর্বোচ্চ ছক্কার কীর্তিও গড়েছেন পান্ত (৩৬)। এছাড়া প্রথম সফরকারী উইকেটকিপার হিসেবে ইংল্যান্ডে কোনো একটি টেস্ট সিরিজে চারশ রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন তিনি (৪১৬)।
লাঞ্চ বিরতি থেকে ফিরে প্রথম ওভারে রাহুল সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ১৭৬ বলে। মাইলফলক ছোঁয়ার পর প্রথম বলেই তিনি স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বাশিরের বলে। ষষ্ঠ উইকেটে ৭২ রানের জুটিতে দলের স্কোর তিনশ পার করেন জাদেজা ও নিতিশ কুমার রেড্ডি। স্টোকসের লাফিয়ে ওঠা বলে কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন নিতিশ (৯১ বলে ৩০)।
জাদেজা এরপর আরেকটি পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি গড়েন ওয়াশিংটন সুন্দারকে সঙ্গে নিয়ে। ফিফটি করেন তিনি ৮৭ বলে। ক্যারিয়ারে এই প্রথম কোনো এক সিরিজে টানা তিন ইনিংসে পঞ্চাশ স্পর্শ করলেন এই স্পিনিং অলরাউন্ডার। ক্রিস ওকসের বলে কিপারকে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় জাদেজার ৮ চার ও এক ছক্কায় ১৩১ বলে ৭২ রানের ইনিংস। এরপর দ্রুতই গুটিয়ে যায় ভারত। ৮৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের সফলতম বোলার ওকস। প্রায় সাড়ে চার বছর পর টেস্ট ক্রিকেটে ফেরা জফ্রা আর্চার ও স্টোকসের প্রাপ্তি ২টি করে উইকেট।
এরপরই দিনের শেষ ওভারের উত্তেজনা। জাসপ্রিত বুমরাহর দ্বিতীয় বলে ক্রলি দুই রান নেওয়ার পর তিনি সময় নষ্ট করছেন ধরে নিয়ে স্লিপ থেকে কিছু একটা বলেন ভারত অধিনায়ক শুবমান গিল। তার সঙ্গে যোগ দেন আরও কয়েকজন। পঞ্চম বল ক্রলির গ্লাভসে আঘাত করার পর ক্রিজ থেকে সরে গিয়ে হাতের ইশারায় ফিজিওকে ডাকেন তিনি। তখন তার দিকে এগিয়ে কিছু একটা বলেন গিল। দিনের খেলা শেষে অবশ্য হাসি মুখেই মাঠ ছাড়তে দেখা যায় সবাইকে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩৮৭
ভারত ১ম ইনিংস: (আগের দিন ১৪৫/৩) ১১৯.২ ওভারে ৩৮৭ (রাহুল ১০০, পান্ত ৭৪, জাদেজা ৭২, নিতিশ ৩০, ওয়াশিংটন ২৩, আকাশ ৭, বুমরাহ ০, সিরাজ ০*; ওকস ২৭-৫-৮৪-৩, আর্চার ২৩.২-৬-৫২-২, কার্স ২৪-৫-৮৮-১, স্টোকস ২০-৪-৬৩-২, বাশির ১৪.৫-২-৫৯-১, রুট ১০.১-০-৩৫-০)
ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: ১ ওভারে ২/০ (ক্রলি ২*, ডাকেট ০*; বুমরাহ ১-০-২-০)
প্রকাশক: সোহেল রানা II সম্পাদক: আব্দুস সামাদ সায়েম II অফিস: দ্য পিপলস্ নিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম বাজার স্টেশন, রেলওয়ে কলোনী,সিরাজগঞ্জ II মোবা: ০১৭১২-৪০৭২৮২,০১৭১১-১১৬২৫৭ II ই-মেইল thepeoplesnews24@gmail.com II
©২০১৫-২০২৫ সর্বস্ত্ব সংরক্ষিত । তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত (নিবন্ধন নং-২১০)