শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৪:০৭ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
বেলকুচিতে এমপির এপিএস বাহিনীর মারধরে পৌর মেয়র আহত সেমিকন্ডাক্টর খাতে ১০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের সম্ভাবনা নারীবান্ধব শিক্ষানীতির কারণে মেয়েরা এগিয়ে: প্রধানমন্ত্রী কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনার ওপর জোর প্রধানমন্ত্রীর সিরাজগঞ্জে স্বাস্থ্য সহকারীদের সম্মানি ভাতা সুকৌশলে হাতিয়ে নিলেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আপিল বিভাগের নবনিযুক্ত বিচারপতিদের সাক্ষাৎ বগুড়ায় গাছ কেটে ঢাকায় গ্রেপ্তার হলেন বিএনপি নেতা নো হেলমেট, নো ফুয়েল কার্যকরের নির্দেশ ওবায়দুল কাদেরের ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের নির্দেশ প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগের ফল রাতে, জানবেন যেভাবে

সঞ্চয়পত্রে আসছে আরও সংস্কার

রিপোর্টারের নাম / ১০২ বার দেখা হয়েছে
আপডেট করা হয়েছে

সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনঃবিনিয়োগ সুবিধা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে এ সুবিধা বন্ধ আছে। পাশাপাশি সমন্বিত একটি নীতিমালার আওতায় আনা হচ্ছে চারটি গুরুত্বপূর্ণ সঞ্চয়পত্রকে।

এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে খসড়া নীতিমালা প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। এছাড়া চলমান ডলার সংকট কাটাতে তুলে নেওয়া হচ্ছে ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা। এতে প্রবাসীরা বেশি অঙ্কের ডলার এ বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারবেন। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এ ব্যাপারে সমীক্ষা শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

সংস্কার প্রক্রিয়া শুরুর আগে উল্লিখিত পরিবর্তন আনতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ বিভাগকে পৃথক চিঠি দিয়েছে জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তর।

জানতে চাইলে সঞ্চয়পত্রের সমন্বিত নীতিমালা খসড়া প্রণয়ন কমিটির প্রধান এবং অভ্যন্তরীণ বিভাগের যুগ্মসচিব (সঞ্চয়পত্র) সুরাইয়া পারভিন শেলী যুগান্তরকে বলেন, যা কিছু করা হবে জনগণের ভালোর জন্য। তবে সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন কাজ এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে, বলার মতো অবস্থা তৈরি হয়নি।

সূত্র জানায়, ‘বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র’, ‘তিন মাস অন্তর’ মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, ‘পরিবার’ সঞ্চয়পত্র এবং ‘পেনশনার’ সঞ্চয়পত্রের জন্য একটি সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সমন্বিত নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের যুগ্মসচিব (সঞ্চয়) সুরাইয়া পারভীন শেলীকে প্রধান করে ৮ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সংস্থার প্রতিনিধি। খসড়া চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে কমিটি ৭ ফেব্রুয়ারি একটি বৈঠক করেছে।

এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত কমিটির এক সদস্য যুগান্তরকে জানান, পৃথক নীতিমালার মাধ্যমে চারটি সঞ্চয়পত্রের স্কিম চললেও গ্রাহকদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় শর্ত ও ক্রয়ের ক্ষেত্রে ডকুমেন্ট প্রায় সবগুলোর একই ধরনের। এছাড়া সঞ্চয়পত্রের মূল্যায়ন, আয়কর হার, ক্রয় পদ্ধতি ও নিবন্ধন, নগদায়ন পদ্ধতি, ব্যক্তি মনোনয়ন, সঞ্চয়পত্র হারিয়ে গেলে করণীয় এবং অন্যান্য শর্তাবলি প্রায় একই রকম। তবে সুদহার ও ক্রেতার বয়স এবং শ্রেণির ভিন্নতা আছে। এসব দিক বিবেচনায় উল্লিখিত চারটি সঞ্চয়পত্র স্কিমকে সমন্বিত একটি নীতিমালার আওতায় আনা হচ্ছে। অধিদপ্তর থেকে একটি খসড়া নীতিমালা বাংলায় তৈরি করে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। সেটি ধরেই কাজ চলছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র এবং তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে ‘সঞ্চয়পত্র বিধিমালা-১৯৭৭’-এর মাধ্যমে। এছাড়া পরিবার সঞ্চয়পত্রের জন্য রয়েছে পরিবার সঞ্চয়পত্র নীতিমালা-২০০৯। আর পেনশনার সঞ্চয়পত্র চলছে ‘পেনশনার সঞ্চয়পত্র নীতিমালা ২০০৯’-এর আওতায়।

পুনঃবিনিয়োগ সুবিধা চালু : ২০১৯ সাল থেকে সঞ্চয়পত্র ব্যবস্থাপনা অনলাইনভিত্তিক হওয়ার পর স্বয়ংক্রিয় পুনঃবিনিয়োগ সুবিধা বন্ধ আছে। অর্থাৎ কোনো গ্রাহক সঞ্চয়পত্র খাতে বিনিয়োগ করলে নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে সেটি ভেঙে টাকা তুলে নিতে হয়। অথবা পুনরায় বিনিয়োগের জন্য সব ধরনের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করতে হয়। কিন্তু আগে মেয়াদ শেষে গ্রাহক স্কিম না ভাঙালে পুনঃবিনিয়োগ হিসাবে গণ্য করে গ্রাহকের সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবে সুদ প্রদান করা হতো। এ সুবিধা পুনরায় চালু করতে সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগকে চিঠি দিয়েছে সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তর।

সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, সঞ্চয়পত্র হচ্ছে একধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি। এর আওতায় অনেক নিুমধ্য ও মধ্যবিত্তরা সুবিধা পাচ্ছেন। কিন্তু একশ্রেণির ধনী ব্যক্তিরাও এ সুবিধা নিচ্ছেন। সেগুলো বন্ধ করতে স্বয়ংক্রিয় পুনঃবিনিয়োগ বন্ধ করা হয় সফটওয়্যারের মাধ্যমে। তবে নতুন করে আসা প্রস্তাবটি বিবেচনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডের ক্রয়সীমা প্রত্যাহার : ডলার সংকট কাটাতে সঞ্চয়পত্রের স্কিম ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা তুলে নেওয়ার একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আরব আমিরাতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং সরকারের আর্থিক খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান সোনালী ব্যাংকের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এ কার্যক্রম শুরু হয়। উভয় জায়গা থেকে মার্কিন ডলারের বর্তমান সংকট নিরসনের উপায় হিসাবে এ প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবগুলোর যৌক্তিকতা পর্যালোচনা করতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগকে এরই মধ্যে চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত (আরব আমিরাত দূতাবাস) মোহাম্মদ আবু জাফর তার দেওয়া চিঠিতে বলেছেন, এ বন্ডের ঊর্ধ্বসীমা তুলে নেওয়া হলে ডলারে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। অর্থ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেয় অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগকে।

সূত্র জানায়, ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা তুলে নেওয়ার আগে একটি সার্ভে পরিচালনা করছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ। মূলত প্রবাসীরা ডলার দিয়ে এ বন্ড কেনার হার, টাকা দিয়ে এ বন্ড কেনার অঙ্ক, বন্ডে কী পরিমাণ ডলার আসছে, কোন কোন দেশ বেশি ডলার দিয়ে এ বন্ড ক্রয় করছে-এসব বিষয় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ওই সমীক্ষায়। সংশ্লিষ্টদের মতে, সমীক্ষাটি শেষ হলে ওয়েজ আর্নার বন্ডে ডলারের বিনিয়োগের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে। ওই সমীক্ষা রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আরব আমিরাতে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানায়, প্রস্তাব পাঠানোর একটি বড় কারণ হচ্ছে অনেক প্রবাসী এ বন্ডের নির্ধারিত সীমার চেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে। সারা বছর সুদ যুক্ত হয়ে সেটি আরও বেড়েছে। এখন বছর শেষে এটি স্বয়ংক্রিয় নবায়ন হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে বর্ধিত অংশ তুলে নিচ্ছে। আবার নতুন অনেক প্রবাসী এ বন্ডে বেশি হারে বিনিয়োগ করতে চাইলেও পারছেন না। এখানে বিনিয়োগের একটি বড় কারণ হচ্ছে সুদ ১২ শতাংশ হারে দিচ্ছে, যা বর্তমানে দেশের সব আমানতের সুদের হারের চেয়ে বেশি। নির্দিষ্ট সীমা থাকায় যেমন বেশি বিনিয়োগ আসছে না, অপরদিকে এর ঊর্ধ্বসীমা তুলে নিলে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ আসবে প্রবাসীদের কাছ থেকে। আর অধিকাংশ বিনিয়োগ হচ্ছে ডলারে। ফলে এটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এসব বিবেচনায় সরকারের কাছে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, বর্তমান ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড একজন প্রবাসী সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা বা এর সমতুল্য বৈদেশিক মুদ্রায় কিনতে পারবেন। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসের কর্মরতরাও এ বন্ড ক্রয় করতে পারেন। তবে বিভিন্ন স্লটে যেমন ২৫ হাজার, ৫০ হাজার, এক লাখ, দুই লাখ, পাঁচ লাখ, ১০ লাখ এবং ৫০ লাখ টাকারও ক্রয় করতে পারবেন এই বন্ড। এই বন্ডে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মৃত্যুঝুঁকির সুবিধা রয়েছে। এই বন্ডের বিপরীতে ঋণ নেওয়া যায়। প্রতি ছয় মাস অন্তর এই বন্ডের সুদ দেওয়া হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By Limon Kabir