নিজস্ব প্রতিবেদক:
যমুনা ডিগ্রি কলেজের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ফারুক ও তার ভায়রা ভাই উপাধ্যক্ষ জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে কলেজের ফান্ড তছরুপ ও অবৈধভাবে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ নেয়ার অপচেষ্টাসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেছে। দুইজনের দুর্নীতির মহোৎসব বন্ধসহ শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহনে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। কলেজের সাবেক সভাপতি আওয়ামীলীগ নেতা সাইদুল ইসলাম রাজা কলেজের সুনাম রক্ষার্থে অভিযোগ করেন। তিনি সুষ্ঠ তদন্তে সাপেক্ষে দুইজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন।
তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, এলাকার কথা চিন্তা করে লেখাপড়ার স্বার্থে প্রয়াত হাজী মো. নাসির উদ্দিন ১৯৯৩ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার সদর উপজেলাধীন সয়দাবাদ ইউনিয়নের সারটিয়া গ্রামে অবস্থিত যমুনা ডিগ্রি কলেজটি প্রতিষ্ঠিত করেন। প্রতিষ্ঠাতাকালীন অধ্যক্ষ মো: ওয়াজেদ আলী প্রতিষ্ঠানটি অত্যান্ত সুনামের সাথে পরিচালনা করছিলেন। কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন মো: বনি আমিন। অবসর জনিত কারনে বনি আমিন বিদায় নিলে তখন উপাধ্যক্ষ পদটি শুন্য হয়। এরপর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পরীক্ষা নিয়ে উপাধ্যক্ষ হিসেবে জাকির হোসেন নিয়োগ পান। ২০২০ সালে ১লা সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ জাকির হোসেন উপাধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। এরপর অধ্যক্ষ জনাব মো: ওয়াজেদ আলী অবসর গ্রহন করলে যোগদানের একমাস ১০দিন পর অর্থাৎ ২০২০ সালের ১০ নভেম্বর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পান। দায়িত্ব পেয়েও তিনি নানা দুর্নীতি অনিয়মের জড়িয়ে পড়েন। এরই মধ্যে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাকির হোসেন কৌশলে তার আপন ভায়রা ভাইকে কলেজের সভাপতি করেন। ভায়রাকে ব্যবহার করে দুর্নীতি ও অনিয়ম করে কলেজের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাত করেন। ধারনা করা হচ্ছে সেই টাকা দিয়েই শহরের ১নং খলিফাপট্টিতে বিলাশবহুল পাঁচতলা বিল্ডিং নির্মাণ করেছেন। তিনি রাজপ্রাসাদে রাজার মতো দিনযাপন করছেন। তিনি অধ্যক্ষ আর ভায়রা সভাপতি তাই কলেজের কোন শিক্ষকরা তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পান না।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, জাকির হোসেনের আপন ভায়রা আনোয়ার হোসেন ফারুক যখন থেকে সভাপতি হন তারপর ভারপ্রাপ্ত মোহাম্মদ জাকিরের দুর্নীতির গতি আরো বেগবান হয়। জাকির হোসেন যমুনা ডিগ্রি কলেজে যোগদান করার পর থেকে অদ্যাবধি কলেজের অ্যাকাউন্টে কোনো টিউশন ফি-এর টাকা জমা হয়নি, অথচ প্রতি মাসে মানবিক/বাণিজ্য শাখার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাত্রপ্রতি ৬৫ টাকা করে এবং বিজ্ঞান শাখা ছাত্র প্রতি ৮০ টাকা করে পায়। যার পরিমান প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকা। সম্পুর্ন টাকাই তিনি আত্মসাত করেছেন। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে অডিটের নামে শিক্ষকদের নিকট থেকে হ্যান্ড ক্যাশ বেসিকের ১৫% টাকা নিয়েছেন। তারপরেও বলেন এই টাকা দিয়ে অডিট হবে না আরও টাকা লাগবে। তখন পুনরায় শিক্ষকদের নিকট থেকে বাড়ী ভাড়ার নামে বেসিকের ২৫% টাকা নেন এবং একটি সীটে সকল শিক্ষক ও কর্মচারীদের স্বাক্ষর দিতে বলেন। ওই সময় তিনি শিক্ষকগনকে জানিয়েছেন এটা ব্যাংক থেকে তুলে অডিট করতে যারা আসছে তাদেরকে দিতে হবে। জাকির হোসেন শিক্ষকদের জানিয়ে ছিলেন অডিটে ৬ লক্ষ টাকার অধিক খরচ হয়েছে। অথচ অডিট নিস্পত্তির কোন কাগজপত্র অদ্যাবধি কলেজের কোন শিক্ষকগণকে দেখানো হয়নি এমনকি কলেজেও জমা রাখা হয়নি। অডিটের নামে কলেজে এ্যাকাউন্টের ও শিক্ষকগণের সমস্ত টাকা উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ জাকির হোসেন একাই আত্মসাত করেন।
অভিযোগে আরো বলা হয়, সিরাজগঞ্জ জেলার জেলা প্রশাসক যখন সভাপতি ছিলেন তখন একটি অভ্যন্তরীন অডিট কমিটি গঠন করে দেন। কিন্তু জাকির হোসেনের তোপের মুখে তারা অডিটি করতে পারেনি। আবার ২-৩ মাস আগে একটি অডিটের চিঠি এসেছে। তিনি অডিটের চিঠি লুকিয়ে রেখেছেন। তিনি শিক্ষকদেরও বিষয়টি জানাননি, শুধু সভাপতিকে জানিয়েছেন। অডিট নিয়ে তিনি নানা তালবাহানা শুরু করেছেন। এছাড়াও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে ৬ মাসের বেশির দায়িত্ব পালন করতে না পারলেও তিনি প্রভাব খাটিয়ে তিন বছর যাবত তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি দায়িত্বে থেকে অধ্যক্ষ পদে ২বার অর্থাৎ ২৩/০৮/২০২৩ খ্রি. এবং ২৪/০৯/২০২৩ খ্রি. তারিখে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর তিনিসহ ৪জন প্রার্থী আবেদন করেছেন। চারজনের মধ্যে তিনজনকে প্রক্সি প্রার্থী হিসেবে অধ্যক্ষ জাকির হোসেন আবেদন করান। প্রক্সি আবেদন কারীদের মধ্যে রয়েছেন, নাসরীন ওয়াজেদ মহিলা ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ সাইদুল ইসলাম, লোকমান ফকির মহিলা ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ গোলাম হোসেন ও সিমলা ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ আখিরা জিনাত মহল। তারা শুধু প্রক্সি দিবেন এই জন্যেই জাকির হোসেন নিজের টাকা দিয়ে ব্যাংক ড্রাফট করে, তাদের তিনজনের আবেদনের কাজগপত্র নিজেই ঠিকঠাক করে দিয়েছেন। এছাড়াও মমিন নামে একজন আবেদন করেন। নামমাত্র যাচাই-বাছাই করে ৪ জনের প্রার্থীর আবেদনে যাচাই-বাছাই কমিটি স্বাক্ষর করেছেন কিন্তু মমিনের আবেদনপত্র যাতে বাতিল হয় সেজন্য শুধু কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামসুল আলম স্বাক্ষর করেছেন। এভাবেই আবেদনপত্রগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছেন এবং নিয়োগ বোর্ডের প্রতিনিধি চেয়ে আবেদন করেছেন। এমনকি আবেদনের সময় স্ট্যাফপ্যাট্যার্ণে ৪৭জন শিক্ষক ও কর্মচারীগণের স্বাক্ষর জালিয়াতি করেছেন। ২৯/১০/২৩ তারিখে স্ট্যাফ প্যাটার্ণে কলেজের কোন শিক্ষক কর্মচারী স্বাক্ষর করেনি। তিনি নিজেই সব স্ক্যান করে বসিয়েছেন এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো: শামসুল আলমকে না জানিয়ে গত ২৯/১০/২৩ খ্রি. তারিখে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরন করেন।
অভিযোগে আরো বলা হয়, গত ২৮/১১/২৩ খ্রি. তারিখে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহুল প্রচলিত একটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে বলা হয়। তার প্রেক্ষিতে ৩০/১১/২০২৩ খ্রি. তারিখে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় এবং সময় দেওয়া থাকে ১৫ দিন। ওই বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশের জন্য কোন রেজুলেশন করা হয়নি। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বাক্ষরও করেনি বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। কিন্তু পরে সভাপতি ও জাকির হোসেন দুজনে প্রেসার দিয়ে রেজুলেশনে স্বাক্ষর নিয়েছেন।
অভিযোগে আরো উল্লেখ রয়েছে, কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ছেড়ে কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো: শামসুল আলমকে ভারপ্রাপ্তর দায়িত্ব দেন। দায়িত্ব দিলেও অধ্যাবদী পর্যন্ত কলেজের কোন কাগজপত্র, আলমারির চাবি, রেজুলেশন খাতা, ব্যাংক এ্যাকাউন্ট, এমনকি কলেজের বোর্ড কর্তৃক মোবাইলটিও বুঝিয়ে দেয়নি। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে শামসুল আলমকে নিয়োগ দিলেও তাকে পুতুল হিসেবে রাখা হয়েছে। সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাকির হোসেন ও তার ভায়রা ভাই সকল কাজ করছেন।
অভিযোগে বলা হয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিপত্র অনুসরণ/তোয়াক্কা না করে অতি তারাতারি অবৈধভাবে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়ার জন্য দুই ভায়রা মিলে অপচেষ্টা করেছে। এছাড়াও গভর্ণিং বডির গঠনে নিয়ম রয়েছে তিনজন শিক্ষক প্রতিনিধি থাকবে। অথচ ইতোমধ্যে শিক্ষক প্রতিনিধি মো: শামসুল আলম ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেয়ার তার পদ শুন্য হয়ে যায়। ইকবাল হোসেন অনিয়ম দুর্নীতির কারনে পদত্যাগ করেছেন। শুধু মালেহা আকতার শিক্ষক প্রতিনিধি রয়েছেন। দু’জন সদস্য না থাকলেও নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে সভাপতি ও উপাধ্যাক্ষ জাকির হোসেন ক্ষমতা দেখিয়ে সব কাজ করছেন। এঅবস্থায় বিষয়গুলো তদন্তপুর্বক সভাপতি ও সাবেক অধ্যক্ষ জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানানো হয়েছেন।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামসুল আলম বলেন, সভাপতি ও জাকির হোসেন সব করছেন। এবেশি আমি কোন কথা বলতে পারব না।
এ বিষয়ে সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাকির হোসেনকে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে গভর্ণিং বডির সভাপতি আনোয়ার হোসেন ফারুক জানান, আপনারা যা খুশি লিখেন এতে আমার কিছু আসে যায় না।