রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৪:০২ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
মেহের-উন-নেছা গালর্স স্কুলের ৫০ মেধাবীকে বৃত্তি প্রদান বেলকুচিতে শিশু সন্তাসহ পৌর মেয়রকে মারধর,এমপির এপিএসসহ ৬০জনের বিরুদ্ধে মামলা : বিক্ষোভ মিছিল বেলকুচিতে এমপির এপিএস বাহিনীর মারধরে পৌর মেয়র আহত সেমিকন্ডাক্টর খাতে ১০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের সম্ভাবনা নারীবান্ধব শিক্ষানীতির কারণে মেয়েরা এগিয়ে: প্রধানমন্ত্রী কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনার ওপর জোর প্রধানমন্ত্রীর সিরাজগঞ্জে স্বাস্থ্য সহকারীদের সম্মানি ভাতা সুকৌশলে হাতিয়ে নিলেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আপিল বিভাগের নবনিযুক্ত বিচারপতিদের সাক্ষাৎ বগুড়ায় গাছ কেটে ঢাকায় গ্রেপ্তার হলেন বিএনপি নেতা নো হেলমেট, নো ফুয়েল কার্যকরের নির্দেশ ওবায়দুল কাদেরের

নিউরোসায়েন্সেস ইনস্টিটিউটে যুক্ত হচ্ছে আরও ৫০০ শয্যা

রিপোর্টারের নাম / ১১ বার দেখা হয়েছে
আপডেট করা হয়েছে

স্ট্রোকের রোগীর ব্রেনে রক্ত জমাট বাঁধে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি জ্ঞান হারান। সাড়ে ৪ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে পৌঁছালে রোগীকে একটি ইনজেকশন দিলে রোগী স্বাভাবিক জীবন ফিরে পায়। এই ইনজেকশনসহ নিউরোলজিক্যাল উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতাল। এ হাসপাতালকে আরও ৫০০ বেডে উন্নীত করা হচ্ছে। ৫০০ বেডের নতুন ১৫ তলা ভবন শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। তখন এর শয্যা সংখ্যা হবে এক হাজার।

সারা দেশ থেকে মাথা ইনজুরি, টিউমার, স্ট্রোক, মৃগী রোগীসহ বিভিন্ন ধরনের নিউরোলজিক্যাল প্রচুর রোগী আসে এই হাসপাতালে।দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে নিউরোলজিক্যাল রোগী। বাংলাদেশে যত মৃত্যু হয় তার দ্বিতীয় কারণ হলো স্ট্রোক। পঙ্গুত্ববরণ করার প্রধান কারণ হলো স্ট্রোক। দেশে প্রতি হাজারে ১১.৩৯ জন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। স্বল্পমূল্যে উন্নতমানের চিকিত্সা সেবা দিচ্ছে আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতাল। অথচ এক যুগে আগে নিউরোলজিক্যাল চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিনের বারান্দায় সীমিত পরিসরে এই চিকিৎসা সেবা শুরু হয়।

পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক সহযোগিতায় চালু হয় পৃথক এই ইনস্টিটিউট। সরকারি হাসপাতাল বলতেই অনেকের মনে আসে অপরিচ্ছন্নতা, মেশিন নষ্ট, সেবা পেতে দেরি হওয়া আর চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের প্রভাব। এ ধারণার আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতাল। পুরো হাসপাতাল পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। চিকিৎসা সেবা বিশ্বমানের। পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্রপাতিও অত্যাধুনিক।

২০১২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর প্রথমে ৩০০ বেডের রাজধানীর আগারগাঁওয়ে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রথমে মনে করছিল, এই শয্যা সংখ্যা যথেষ্ট হবে। কিন্তু এমন অবস্থা হয়েছে, সারা দেশ থেকে মাথা ইনজুরি, টিউমার, স্ট্রোক, মৃগী রোগীসহ বিভিন্ন ধরনের নিউরোলজিক্যাল রোগী আসতে থাকে। স্ট্রোক ও আইসিইউ ওয়ার্ডে বেড খালি পাওয়া যায় না। মাত্রাতিরিক্ত রোগীর চাপ বেড়ে যায়। পরে এটাকে ৫০০ বেডে উন্নীত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ৫০০ বেডে উন্নীত হলো। এরপরও রোগীর চাপ কমেনি। দিন দিন আরও বাড়তে থাকে। কয়েকদিন অপেক্ষা করেও বিছানা পাওয়া যায় না।

প্রধানমন্ত্রী আরও ৫০০ বেড করার পরামর্শ দেন। বর্তমানে মোট ১ হাজার বেডের হাসপাতাল। নতুন ৫০০ বেডের জন্য ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এরমধ্যে নির্মাণ কাজে ব্যয় ২৯৪ কোটি টাকা। ২১২ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সামগ্রী। নির্মাণ কাজ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়। বর্তমান ৫০০ বেডের হাসপাতাল সংলগ্ন দক্ষিণ পাশে নতুন ভবনে ৫০০ বেড নির্মাণ করা হয়েছে। ১৫ তলা ভবনটি অত্যাধুনিক। তিন তলা বেজমেন্ট, ১২ তলা পর্যন্ত হাসপাতাল। এই হাসপাতাল ভবনটি হবে সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এটি দেশে প্রথম। ১০টা লিফট, অপারেশন থিয়েটার ৪টা থাকবে। হাসপাতালের আইসিইউ, সিসিইউসহ সব যন্ত্রপাতি আসবে আমেরিকা, ফ্রান্স, জার্মানি, লন্ডনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে। ৩০ বেডের অত্যাধুনিক আইসিইউ থাকবে। ২০ বেডের এসডিইউ, ক্যাথল্যাব থাকবে অত্যাধুনিক। এখানে যেসব অপারেশন হবে, সেগুলো মস্তিস্ক না কেটে রক্তনালীর মাধ্যমে করা হবে। রক্তনালী চিকন হলে, এনজিওগ্রামের মাধ্যমে সচল করা হবে। প্যারালাইসিস রোগীদের জন্য হাসপাতালের বহিঃবিভাগের এক ও দুই তলা পর্যন্ত এক্সলেটর থাকবে। অত্যাধুনিক দুটি সিটি স্ক্যান মেশিন ও দুটি এমআরআই মেশিন থাকবে। অত্যাধুনিক নিউরো ফিজিওল্যাব থাকবে, যেখানে নার্ভের ফ্যাকশন দেখা হবে। মৃগী রোগীদের পরীক্ষার জন্য ইইজি, এনসিএস থাকবে। এগুলো অত্যাধুনিক মেশিন, জাপান থেকে আনা হয়েছে। অটিজম ল্যাব থাকবে পুরো একটা ফ্লোরে। তাদের চিকিত্সা ও গবেষণা হবে। ডে- কেয়ার সেন্টার থাকবে। ডাক্তার, নার্সদের সন্তানরা সেখানে থাকবে। ডিউটি শেষে সেখান থেকে সন্তানদের নিয়ে যাবেন। প্রকল্পে যে টাকা ধরা হয়েছিল, সেখান থেকে প্রায় ১৩ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এই অত্যাধুনিক ভবন নির্মাণের জন্য জিকে বিল্ডার্স প্রথমে কাজ পায়। ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে প্রতিষ্ঠানটির মালিক জিকে শামিম গ্রেফতার হয়, পরবর্তীতে নির্মাণ কাজ কিছু দিনের জন্য বন্ধ থাকে। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের কনস্ট্রাকশন কাজ করেছিল ওহিদ কনস্ট্রাকশন, নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের নতুন ভবনের নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয় ওই ওহিদ কনস্ট্রাকশনকে। যথাসময়ে কাজটি সম্পন্ন করেছে।

এক যুগ আগে সুচিকিত্সার অভাবে অনেক স্ট্রোক ও প্যারালাইসিসসহ বিভিন্ন ধরনের নিউরো রোগী মারা যায়। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকদের মতো, ওই সময় ৮০ ভাগ রোগী সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত ছিল। এখন শতভাগ নিউরো রোগী চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে এবং অধিকাংশই সুস্থ হচ্ছে। এক হাজার বেডের নিউরোলজিক্যাল চিকিৎসা সেবার পৃথক হাসপাতাল বিশ্বের মধ্যে আর কোথাও নেই। আমেরিকায় আছে ৭৫০ বেডের একটি হাসপাতাল।

পার্কিনসন্স রোগটি ব্রেনের। ডিমেনশিয়া হলো ভুলে যাওয়া রোগ। ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের এই রোগ হয়। দেশে এক হাজার জনের মধ্যে ৮ জন এই রোগে আক্রান্ত। মৃগী রোগী শতকরা ৩ ভাগ আক্রান্ত। সব বয়সে এই রোগ হতে পারে। ব্রেনের টিউমারের প্রচুর রোগী আসে। মস্তিস্কে আঘাত রোগী আসে। জিবিএস হলো হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া। এটা প্রতি লাখে দুই জন আক্রান্ত। এনক্যাপেলাইটিস (মস্তিস্কে প্রদাহ)-এটা বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসের কারণে হয়।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের ডাক্তার-নার্সরা স্পেশালিস্ট। বিদেশি অনেক সার্জন এসেও এখানে অপারেশন করছেন। বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জাপান থেকে ১৬ জন নিউরো সার্জন অপারেশন করছেন। এই হাসপাতালে প্রচুর ডাক্তার প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন। দেশের সব বিভাগে আলাদা নিউরো সায়েন্স হাসপাতাল করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা ।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতাল বিশ্বের একটি মডেল। বিশ্বের উন্নত দেশের মতো অত্যাধুনিক চিকিৎসা সেবা এখানে পাচ্ছেন রোগীর। এই হাসপাতালের জনবলের সংকট নিরসন হবে। একই সঙ্গে নিউরোলজিক্যাল বিশেষজ্ঞ ডাক্তার তৈরি হচ্ছে, যারা গ্রামে গিয়ে সুচিকিৎসা দিতে পারবেন।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক প্রখ্যাত নিউরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. কাজী দীন মোহাম্মদ বলেন, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালটি অত্যাধুনিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণে এই হাসপাতাল করা সম্ভব হয়েছে। প্রস্তাব দেওয়ার পর সব ধরনের সহযোগিতা করেন তিনি। যাতে এই রোগের চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে না হয়। হাসপাতালের যন্ত্রপাতিও অত্যাধুনিক। এতে হাতের কাছে সুচিকিৎসা পাচ্ছেন ধনি-গরীব সব ধরনের রোগী। হাসপাতালের বারান্দা থেকে চিকিৎসা দেওয়া শুরু, এখন ১ হাজার বেডের পৃথক হাসপাতাল। এটি বিশ্বের একটি মডেল।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম বলেন, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে রোগীদের প্রচুর চাপ, জায়গা দিতে পারছি না। এক হাজার বেড চালু হলেও অনেক আশংকাজনক রোগী দ্রুত সুচিকিৎসা পাবেন। তিনি বলেন, নিউরোলজিক্যাল অপারেশন ব্যয়বহুল। তবে এখানে বিনামূল্যে পাবেন রোগীরা। এটা আসলে সত্যি সরকার প্রধানের সরাসরি হস্তক্ষেপের কারণে সম্ভব হয়েছে। এদেশের দরিদ্র রোগীদের, যাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই, তাদের জন্য উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা এখানে। বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ৪০০ নিউরোলজিস্ট ও ৩০০ সার্জন রয়েছেন। এই হাসপাতাল থেকে প্রতি বছর এই ধরনের নিউরোলজিক্যাল চিকিৎসক ও সার্জন তৈরি হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By Limon Kabir