রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৩:০৯ অপরাহ্ন

আজ ২৫ এপ্রিল সলঙ্গা গণহত্যা দিবস

পাক বাহিনী এদিন ২ শতাধীক নিরীহ মানুষকে হত্যা করে / ২৫৮ বার দেখা হয়েছে
আপডেট করা হয়েছে মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৩, ১২:৩১ পূর্বাহ্ন


নিজস্ব প্রতিবেদক:
আজ ২৫ এপ্রিল মঙ্গলবার সলঙ্গা নৃশংসতম গণহত্যা দিবস। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী সলঙ্গায় এদিনটিতে চালায় বর্বর গণহত্যা। পাকিস্তানী সৈন্যরা একযোগে ব্রাশ ফায়ারে সলঙ্গায় হত্যা করে প্রায় ২ শতাধিক মুক্তিকামী ও নিরীহ মানুষকে। সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার মধ্যপাড়া চড়িয়া, পাটধারী, কালিবাড়ী, শিকার মগড়াপাড়া, চড়িয়া শিকার দক্ষিণপাড়া, গোলকপুর, কাচিয়ায় চর সংঘটিত হয়েছিল এ গণহত্যাযজ্ঞ।

পথিমধ্যে বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কের সলঙ্গা থানার হাটিকুমরুল গোল চত্বরের অনতিদুরে চড়িয়া শিকার নামক স্থানে রাস্তায় ব্যারিকেডের সম্মুখীন হয়ে যাত্রা বিরতি করে। তারা সন্ধান পায় চড়িয়া শিকারের পূর্ব দক্ষিন পাশে অন্য একটি কাশিনাথপুর গ্রামের। এই গ্রামকেই পাবনা জেলার কাশিনাথপুর মনে করে পাক বাহিনী খুজতে থাকে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাটি। তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার আলবদরদের সহযোগিতায় পাক বাহিনী সন্ধান লাভ করে চড়িয়া মধ্যপাড়ায় ডা: শাজাহান আলী, ইয়াকুব আলী ও মোহাম্মাদ আলী সহ অন্যান্যদের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষন ঘাটি। পাকি বাহিনী সুর্যোদয়ের পূর্ব হতে গুলি চালাতে শুরু করে এবং একটানা সকাল ৯ টা পর্যন্ত গুলি চালায় নিরীহ মানুষের উপর। ভস্মীভূত করে দেয় এলাকার ঘরবাড়ী। পশুত্বের হাত হতে রেহাই পায়নি কোলের শিশু পর্যন্ত।

পাকিস্তানী হায়েনাদের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া চড়িয়া মধ্যগ্রামের আবুল কালাম (কাঙ্গাল মন্ডল) জানায়, ঐ দিন সকালে পাকিস্তানী হায়েনা বাহিনী আব্দুল মজিদের পুকুরের পাশে, ইয়ার আলীর পুকুরের পাশে সারিবদ্ধ দাঁড় করিয়ে নির্মমভাবে গুলি চালায়। ঘটনাস্থলে ৩৫ জনের মৃত্যু হয়। ভাগ্যের জোরে তিনি ৪টি গুলি খেয়েও বেঁচে যান।

পাক বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের শিকার চড়িয়া মধ্যপাড়া গ্রামের বাহাজ উদ্দিন, ইয়াকুব আলী, আদম আলীম, ইউছুব আলী, মেছের উদ্দিন মুন্সী, ছলিম উদ্দিন, আজিজুল হক, গগন মন্ডল, ডাঃ শাহজাহান আলী, মোহাম্মদ আলী, তারা সরকার, কানছু সরকার, আবু বকর প্রামানিক, আবেদ আলী, আব্দুর কাইয়ুম, ডাঃ মুজিবর রহমান, ফজল প্রামানিক, আমানত আলী, আবু তাহের, আহসান আলী, শাহজাহান, কাফি, আবু তালেব, ছানু ফকির, কাঞ্জু প্রামানিক, আব্দুস ছাত্তার, মাহাম খা, দারোগ আলী, মজিবর রহমান, আজিজ, হাকিুমুদ্দীন, আব্দুল মজিদ, পাওমুসা, শমসের আলী, তারা প্রামানিক। এছাড়াও ঐদিন পাটধারী গ্রামের ২৯ জন, কালীবাড়ী গ্রামের ১৩ জন, শিকার মগপাড়া গ্রামের ৮জন, চড়িয়া শিকার দক্ষিণ পাড়া গ্রামের ১০ জন, গোলকপুর গ্রামের ৫ জন, কাচিয়ার গ্রামের ১ জনসহ নাম না জানা অনেককে নির্মমভাবে হত্যা করে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীরা। আজও বেঁচে আছেন আবুল কালাম (কাঙ্গাল মন্ডল)।

স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও মধ্যপাড়া চড়িয়ার বধ্যভূমি ও শহীদ পরিবার আজও উপেক্ষিত। যাঁদের জীবনের বিনিময়ে রক্তস্নাত স্বাধীনতা লাল সূর্য তাদের কাছে আজও কেউ আসেনি সান্ত্বনার বাণী শোনাতে। শহীদ মিনারে স্থানীয় চড়িয়া জনকল্যান সমিতি দিবসটি পালনে নানা কর্মসূচী হাতে নিলেও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কোন কর্মসূচী গ্রহণ করেনি। শহীদদের পরিবার-স্বজনদের ইচ্ছে দিবসটি রাষ্টীয়ভাবে ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দিবসটি পালনে যথাযথ উদ্যোগী হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By Limon Kabir