রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০২:৫১ অপরাহ্ন

চিকিৎসকের বিরুদ্ধে দুই মামলা-অস্ত্র গুলি উদ্ধার, কারাগারে প্রেরন

রিপোর্টারের নাম / ১১০ বার দেখা হয়েছে
আপডেট করা হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
সিরাজগঞ্জ শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে শিক্ষকের গুলিতে ছাত্র আহতের ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠেছে ক্যাম্পাস। অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তির দাবীতে ক্যাম্পাসের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, অভিযুক্ত শিক্ষককে বরখাস্ত, বদলী ও বিভাগীয় মামলার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। পুলিশ বলছে, অভিযুক্ত শিক্ষকের বাড়ীতে অভিযান চালিয়ে দুটি বিদেশী পিস্তল ও ৮১ রাউন্ড তাজা গুলিসহ বিভিন্ন অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। গুলির ঘটনায় শিক্ষার্থী বাবা ও অবৈধ দুটি পিস্তল ও তাজা গুলিসহ অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় ডিবি পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে।
আন্দোলনরত কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, সোমবার বিকেলে সাড়ে তিনটার দিকে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে আইটেম পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষক রায়হান শরীফ তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। গুলিটি শিক্ষার্থী তমালের উরুতে লাগে।

আহত অবস্থায় তমালকে মনসুর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত শিক্ষার্থী তমাল বগুড়ার শহরের ধানসিড়ি নাটাইপাড়ার আব্দুল্লাহ আমিনের ছেলে। ঘটনার পর উত্তেজিত হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে ওই শিক্ষক মারপিট ও গলায় জুতার মালা পড়িয়ে দেয়। পরে পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মঙ্গলবার সকাল ১০ টা থেকে শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাসে জড়ো হতে থাকে। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। অভিযুক্ত শিক্ষকসহ কলেজে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানা শ্লোগান দেয়। এসময় শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষক রায়হান শরীফ প্রায়ই নেশাগ্রস্ত হয়ে পিস্তল এবং অস্ত্র নিয়ে ক্লাসে আসতো এবং টেবিলে অস্ত্র রেখে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করত। এছাড়াও বিভিন্ন সময় ছাত্রীদের মোবাইলে ভিডিও কল দিয়ে হয়রানি করতো। বিষয়টি কলেজ প্রশাসনকে মৌখিকভাবে জানানো হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষক রায়হান শরীফ সিরাজগঞ্জ শহরের সরকারী কলেজের নিকটস্থ প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। আর শিক্ষার্থীদের বাড়ী বিভিন্ন জেলায়। শিক্ষক স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় তার ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পারতো না। অস্ত্রহাতে ক্লাসে শিক্ষক-এমন ঘটনা কলঙ্কজনক বলে আখ্যায়িত করে শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষকের মেডিকেল সনদ বাতিল, চাকুরী হতে স্থায়ী বরখাস্তসহ সর্বোচ্চ শাস্তি দাবী করেছেন। একই সাথে কলেজে শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিতসহ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবী জানিয়েছেন।

কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, শিক্ষক রায়হান শরীফ নিজের ইচ্ছে মতো কলেজে আসতো। অস্ত্র নিয়েও আসতো বিষয়টি মুখে মুখে জানার পর তাকে নোটিশ করা হয়েছিল। কিন্তু সে কোন নোটিশের জবাব দেয়নি। আর স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় সবাই তাকে তটস্ত করে চলত। তিনি আরো জানান, শিক্ষার্থীকে গুলির ঘটনায় জরুরী বৈঠক করে শিক্ষক রায়হান শরীফকে সাময়িক বরখাস্ত, অন্যত্র বদলীসহ বিভাগীয় মামলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একই সাথে শিক্ষার্থীদের ধৈর্য্য ধরার পাশাপাশি ক্লাসে মনোযোগ দিতে বলা হয়েছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালককে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সকাল থেকেই তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে।

তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ জানান, গতকাল বিষয়টি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানার পরই প্রথমে শিক্ষার্থীর সুচিকিৎসার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। মন্ত্রীর নির্দেশে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আহত শিক্ষার্থী, তার বাবা-মা ও কলেজের বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষককের সাথেও কথা বলা শেষে তদন্ত প্রতিবেদন এবং সুপারিশ করা হবে। সুপারিশ অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। এছাড়াও অবৈধ অস্ত্র ও মামলার বিষয়গুলো পুলিশ প্রশাসন তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. কামরুল হাসান মুরাদ জানান, বর্তমানে আহত শিক্ষার্থী তমাল শারিরীক অবস্থা ভাল ও শঙ্কামুক্ত।
শিক্ষার্থীরা মা সেলিনা বেগম জানান, ছেলে ঠিকমতো হাটতে পারছে না। ছেলে মনে সব সময় আতঙ্ক বিরাজ করছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমরা মামলা করলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ কোন মামলা করছেন না।

সিরাজগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, অভিযুক্ত শিক্ষকের কাছ থেকে লাইসেন্সবিহীন ২টি বিদেশী পিস্তল, ৮১রাউন্ড তাজাগুলি, ৪টি ম্যাগাজিন, দুটি বিদেশী ছোড়া, ১০টি বার্মিজ চাকু, দুটি ব্র্যাশ নাকেল, একটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, আহতের ঘটনায় শিক্ষার্থীর বাবা আব্দুল্লাহ আল আমিন বাদী হয়ে একটি মামলা এবং অবৈধ অস্ত্র রাখার ঘটনায় ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক আব্দুল ওয়াদুদ বাদী আরেকটি মামলা দায়ের করেছে। দুটি মামলা ডিবি তদন্ত করছে। দুই মামলায় দুপুর ২টার দিকে ডিবি পুলিশ চিকিৎসক রায়হান শরীফকে ৭দিনের রিমান্ড আবেদন চেয়ে আদালতের সোপর্দ করেন।

সিরাজগঞ্জ কোর্ট ইন্সপেক্টর আসাদুজ্জামান জানান, দুপুর আড়াইটার পুলিশ আসামী ডা. রায়হান শরীফকে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট বিল্লাল হোসেনের আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় ডা. রায়হান শরীফ ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী প্রদান করেন। এ কারনে রিমান্ড আবেদনের শুনানীর প্রয়োজনীতা পড়েনি। সন্ধ্যার দিকে তাকে আদালতের নির্দেশে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ড. জান্নাত আরা হেনরী দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাসে আহত শিক্ষার্থীর খোজখবর নেন এবং শিক্ষার্থীদের অভিযুক্ত শিক্ষক রায়হান শরীফের শাস্তি নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By Limon Kabir