সিরাজগঞ্জ সদর থানার ও কামারখন্দ থানার সীমান্তবর্তী ভারাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দাদের পরকাল জীবনের শেষ ঠিকানা কবরস্থানে একজন অজ্ঞাত ব্যক্তির কবরকে মাজার বানানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে একই গ্রামে দুই ভন্ড নজরুল ইসলাম মাইজভান্ডারী ও তার ভাই ইউপি সদস্য ইসমাইল হোসেন মাইজভান্ডারী। এমনকি গভীর রাতে ওই কবরে নারী-পুরুষ মিলে ঢাক-ঢোল নিয়ে মোমবাতি, ধুপ জ¦ালিয়ে এবং লালসালু কাপড় দিয়ে সাধারন মানুষকে বিপথগামী করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কবরটি দ্রুত অপসারন না হলে এলাকায় বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় গ্রামবাসী তাদের পুর্বপুরুষের শেষ ঠিকানা কবরস্থানের পবিত্রতা রক্ষায় মুফতির ফতোয়ার দলিলসহ অবিলম্বে অজ্ঞাত ওই ব্যক্তির কবরটি অন্যত্র স্থানান্তরের জন্য জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।
এলাকাবাসী লিখিত অভিযোগে উল্লেখ (হুবহু কপি) করেছেন (হবহু কপি), আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারীগণ আপনার জেলাধীন কামারখন্দ উপজেলার ২ নং ঝাঐল ইউনিয়নের ভারাংগা গ্রামের অধিবাসী। গ্রামটি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা ও কামারখন্দ উপজেলারও সীমান্ত গ্রাম। পাশেই কড্ডার মোড় নামক স্থানে সবসময় বহিরাগত লোকজনের আনাগোনা থাকায় বিভিন্ন অপরাধ চক্রের সাথে জড়িত লোকজন আত্মগোপনে থেকে অবস্থান করে। বিগত ২০১৬ সালে এই রকমই একজন ব্যক্তি কড্ডার মোড় নামক স্থানে মারা গেলে ভারাংগা গ্রামের মো: নজরুল ইসলাম মাইজভান্ডারী, পিতা-মৃত- ইব্রাহিম মুন্সি এবং তার ভাই ইউপি সদস্য মো: ইসমাইল হোসেন মাইজভান্ডারী মিলে অজ্ঞাত ব্যক্তির (কথিত কয়েস শাহ) মৃতদেহটি আমাদের কবরস্থানে দাফন করতে চাইলে গ্রামবাসী মৃত ব্যক্তির ধর্মীয় পরিচয় জানতে চান। কিন্তু মো: নজরুল ইসলাম মাইজভান্ডারী এবং মো: ইসমাইল হোসেন মাইজভান্ডারী উভয়ই আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার কারণে সবাইকে নানা প্রকার হুমকি-ধমকি দিয়ে লাশ দাফন করে। দাফন করার পর হইতে প্রায়ই কবরস্থানের ধর্মীয় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ করিয়া আসিতেছে। মো: নজরুল ইসলাম মাইজভান্ডারী অজ্ঞাত ব্যক্তির (কথিত কয়েস শাহ) কবরে বিভিন্ন রকম ফুল, আগরবাতি, গোলাপজল, লালশালু কাপড়, মোমবাতি, টাকা-পয়সা দ্বারা কবরটি সাজিয়ে মাজার বানানোর অপচেষ্টা করিয়া আসিতেছে। সেই সাথে অজ্ঞাত ব্যক্তির (কথিত কয়েস শাহ) মৃত্যু বার্ষিকীতে বিভিন্ন স্থান থেকে দল বেঁধে নারী-পুরুষ এসে এখানে গান-বাজনাসহ নানা প্রকার অশ্লীন, অসামাজিক এবং ধর্ম বিরোধী কার্যক্রমে লিপ্ত হয়। আমরা গ্রামবাসী বার বার বাঁধা প্রদান করা সত্ত্বেও মো: নজরুল ইসলাম মাইজভান্ডারী এবং মো: ইসমাইল হোসেন মাইজভান্ডারীর অসামাজিক কার্যক্রম ঠেকাতে পারিনি। অবশেষে আমরা গ্রামবাসী তাদের দুইভাইকে ডেকে কবরটি তাদের পছন্দের জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যেতে বলি। তারপর তারা কবরটি সরিয়ে না নিয়ে একজন এস.আই কে নানাভাবে ভুল বুঝিয়ে নিয়ে এসে উল্টো গ্রামবাসীকে হুমকি-ধমকি দিয়ে যায়। এমতাবস্থায় তাদের দুই ভাইয়ের আচরনে আমরা গ্রামবাসী ভীত ও সন্ত্রস্ত। এখানে উল্লেখ্য যে, আমাদের গ্রামের জন সংখ্যা প্রায় ৩০০০ (তিন হাজার) এর মধ্যে সকলেই মুসলমান অন্য কোনো ধর্মবালম্বী না থাকার কারনে সবাই ইসলামী সংস্কৃতি ও রীতিনীতিতে বিশ্বাসী। মো: নজরুল ইসলাম মাইজভান্ডারী এবং মো: ইসমাইল হোসেন মাইজভান্ডারী তাদের দুই ভাইয়ের কার্যকলাপে আমাদের গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে ধর্ম নিয়ে নানা রকম মতোভেদ তৈরী হতে যাচ্ছে, যা সমাজে হানাহানী, বিভেদ, বিভাজন ও সামাজিক অশান্তির কারণ হয়ে দাড়াচ্ছে। এখানে আরো উল্লেখ্য যে, মো: ইসমাইল হোসেন মাইজভান্ডারী আনুমানিক ২০০৩/২০০৪ ইং সালের দিকে শান্তা পাগল নামের একজন ব্যক্তিকে কড্ডার মোড়ে আস্তানা তৈরী করে দিয়ে সেখানে নানা প্রকার অসামাজিক কাজকর্ম পরিচালনা করেছিলো। অবশেষে এলাকাবাসী ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপে শান্তা পাগল আস্তানা ছাড়তে বাধ্য হয়। সেই সুযোগে শান্তা পাগলের নিজ নামে থাকা আনুমানিক ৪ শতাংশ তার নিজ নামে কুটকৌশলে লিখে নিয়ে সেখানে মো: ইসমাইল হোসেন মাইজভান্ডারী বহুতল ভবণ নির্মাণ করে বর্তমানে বসবাস করিতেছে। এক্ষনে আমাদের গ্রামবাসীর আশংকা বড় ভাই মো: ইসমাইল হোসেন মাইজভান্ডারীর পথ অনুসরণ করে কবরস্থানটিও সম্পূর্ণ নিজেদের দুই ভাইয়ের নিয়ন্ত্রনে নেওয়ার অপচেষ্ট করছে। ভারাংগা গ্রামের কবরস্থানটি সম্পূর্ণরুপে নিজেরা কুক্ষিগতো করার লক্ষ্যে বার বার তারা দুই ভাই নানা ধরনের অপচেষ্টা চালিয়ে আসিতেছে। আরো উল্লেখ্য যে, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজগঞ্জ সদর ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামারখন্দ গত ০৬/১২/২০২৪ ইং তারিখ, রোজ- শুক্রবার সকাল- ১০.০০ ঘটিকার সময় ভারাংগা কবরস্থানে উপস্থিত হয়ে মো: নজরুল ইসলামকে কবরস্থানে ইসলাম বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করতে নিষেধ করেন কিন্তু তাঁদের কথা অমান্য/তোয়াক্কা না করে পরের দিন অর্থ্যাৎ ০৭/১২/২০২৪ ইং রোজ- শনিবার, বিকাল- ৪.৩৫ মিনিটের দিকে মো: নজরুল ইসলাম মাইজভান্ডারী ইসলাম বিরোধী কার্যক্রম আবারও পরিচালনা করেছে।
অতএব, ভারাংগা গ্রামবাসীর সর্বস্তরের জনগনের পক্ষে নিম্নস্বাক্ষরকারীদের সবিনয়ে নিবেদন এই যে, কবরস্থান থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তির (কথিত কয়েস শাহ) কবর অন্যত্র স্থানান্তর, মো: নজরুল ইসলাম মাইজভান্ডারী ও মো: ইসমাইল হোসেন মাইজভান্ডারীর অসামাজিক কার্যক্রম কবরস্থান থেকে চিরতরে বন্ধ, ইসলাম বিরোধী কার্যক্রম বন্ধ করে ভারাংগা গ্রামবাসীর সৌহার্দ্য, শান্তিও ভাতৃত্ব-বন্ধন তথা শান্তি প্রিয় এবং ধর্মীয় জীবন যাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আপনার সদয় মর্জি হয়। ’’
ছবিতে অভিযুক্ত নজরুল ইসলাম মাইজভান্ডারী
অন্যদিকে সরজমিনে ভারাঙ্গায় এলাকায় গেলে গ্রামবাসী জানায়, ইসমাইল ও নজরুল দুই ভাই ভন্ড। ইসমাইল নিজেই তার বাড়ীতে (বিশ্বরোড সংলগ্ন) বাড়িতে বাৎসরিক পবিত্র ওরস শরীফের নামে বিভিন্ন ধরনের ইসলাম ধর্ম বিরোধী গান-বাজনা ও অশ্লীন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তাদের দুই ভাইয়ের এহেন কার্যকলাপে গ্রামবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। ধর্মের নামে ব্যবসা করায় পুরো গ্রামবাসী ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেছে।
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য মো: ইসমাইল হোসেন মাইজভান্ডারীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, একজন মুসাফির আমার ভাইয়ের কাছে থাকাবস্থায় মারা যায়। পরে জানাযা শেষে ভারা কবরস্থানে দাফন করা হয়। মাঝে-মাঝে মোমবাতি, ফুল দিতো। তিনি আরো জানান, এলাকাবাসী কবরটি সমান্তরাল করে দিয়েছে। কবরের উপরের একটি গাছও কেটে দিয়েছে। আর কবরস্থানে গান-বাজনা করা হয় না তবে কবরস্থানে বাইরে কড্ডার মোড়ে গান-বাজনা করে মৃত্যু বার্ষিকী পালন করে। কবরটি অন্যত্র স্থানান্তর করলে আমার কোন আপত্তি নেই।