শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ১০:৪৬ অপরাহ্ন

রাজশাহী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকারের বিরুদ্ধে মহিলা দলের নেত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

রাজশাহী ব্যুরোঃ / ১৫ বার দেখা হয়েছে
আপডেট করা হয়েছে বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই, ২০২৫, ৩:০৭ অপরাহ্ন
Oplus_131072



রাজশাহীতে মহিলা দলের এক নেত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব বিশ্বনাথ সরকারের (৭৪) বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী (৩৬)। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গতকাল মঙ্গলবার (৮ জুলাই) অভিযোগটি গৃহীত হয়েছে। তবে বিশ্বনাথ সরকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

তিন পৃষ্ঠার ওই অভিযোগপত্রের অনুলিপি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস ও রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া অভিযুক্ত বিএনপি নেতার অনৈতিক প্রস্তাব ও যৌন হয়রানির একাধিক অডিও ক্লিপও হাইকমান্ডে দেওয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগী জেলা মহিলা দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। তাঁর বাড়ি পবা উপজেলায়। তিনি অভিযোগ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমার অভিযোগ সত্য। বিশ্বনাথ সরকার আমাকে কীভাবে হয়রানি করেছেন, তার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ আমার অভিযোগপত্রে লেখা রয়েছে।’

অভিযোগে তিনি বলেন, ‘জেলা বিএনপির সদস্যসচিব বিশ্বনাথ সরকার বিগত চার মাস ধরে আমাকে নানাভাবে যৌন হয়রানি, অনৈতিক প্রস্তাব প্রদান ও আমার সঙ্গে বৈরী আচরণ করে আসছেন। সাংগঠনিক কারণে বিশ্বনাথ বাবুর সঙ্গে আমার পরিচয়। বিশ্বনাথ বাবুর বর্তমান বয়স আনুমানিক ৭০ বছর।
এই বয়সেও তিনি আমাকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত, অশ্লীল কথাবার্তা বলা ও অনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছেন, যা বিএনপির মতো একটি জননন্দিত ও জনপ্রিয় গণমানুষের দলের নেতার জন্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বরং তিনি দলের পদকে ব্যবহার করে অবৈধ টাকা কামিয়ে টাকার জোরে এই বয়সে তাঁর ভীমরতি ধরেছে বলে আমার আশঙ্কা।’

ভুক্তভোগী বলেন, ‘সদয় সহানুভূতি ও ন্যায়বিচারের প্রতি শতভাগ আস্থা রেখে প্রতিকারের আশায় জানাতে বাধ্য হচ্ছি যে, বিশ্বনাথ সরকারের সঙ্গে শুধু সাংগঠনিক কারণে ঘনিষ্ঠতা হয়। আমি গুরুতর অ্যানিমিয়া ও হৃদ্‌রোগে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছি। এ কারণে ভারতে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। কিন্তু গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতের ভিসার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি শুরু হলে মেডিকেল ভিসা পেতে বিশ্বনাথ বাবুর শরণাপন্ন হই।

‘আমি মেডিকেল ভিসা পেতে বিশ্বনাথ বাবুর সাহায্য কামনা করি ও তাঁর সাগরপাড়ার বাসভবনে সাক্ষাৎ করি। কিন্তু তিনি আমার ভিসার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে দিনের পর দিন ঘুরাতে থাকেন। তিনি আমার কাজ না করলেও আমাকে ফোন করে সন্ধ্যার পর বাসায় ডাকেন।’
ভুক্তভোগী ওই নেত্রী আরও বলেন, ‘আমি ভিসার প্রসঙ্গ বলতে চাইলে তিনি অন্য প্রসঙ্গে চলে যান। এভাবে আমাকে দিনের পর দিন ঘুরাতে থাকেন। তারপর বিশ্বনাথ বাবু আমাকে সরাসরি অনৈতিক প্রস্তাব দেন। তিনি আমাকে বলেন, “তোমাকে আমি সাত বছর ধরে নজরে রেখেছি। তোমাকে বিয়ে করতে চাই।” এমনকি তিনি আমাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে ঘুরতে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়ে চিকিৎসার সব খরচ বহনের লোভ দেখান। আমাকে নিয়ে রাজশাহীর হোটেলে সময় কাটানোর অনৈতিক প্রস্তাব দেন। আমি তাঁকে বিনীতভাবে বলি, “আপনি আমার পিতার বয়সী মানুষ এবং ভিন্ন ধর্মের।” তাঁর এই প্রস্তাব আমি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করি এবং আমাকে আর ফোন না করার জন্য অনুরোধ করি। কিন্তু বারণ না শুনে ফোনে আমাকে উত্ত্যক্ত করতেই থাকেন।’

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ‘বিশ্বনাথ বাবু প্রায় গভীর রাতে আমাকে ফোন করেন। ফোনে অশ্লীল কথাবার্তা, বিয়ের প্রস্তাবসহ অনৈতিক কথা বলতে থাকেন। আমি বিশ্বনাথ বাবুর কথোপকথনের ফোনকল রেকর্ড করে তা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম মার্শাল, জেলা মহিলা দলের নেত্রী অ্যাডভোকেট মিতালীকে শোনাই ও প্রতিকার পেতে অভিযোগ করি।

‘কিন্তু বিশ্বনাথ বাবুর কথোপকথনের অডিও শোনার পরও তাঁরা কোনো ব্যবস্থা নেননি। আমাকে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে, যাতে আমি দলের হাইকমান্ডে কোনো অভিযোগ না করি। এমনকি বিশ্বনাথ বাবু আমার কাছে তাঁর ঘনিষ্ঠ দুই ব্যক্তিকে পাঠিয়ে আমাকে টাকার প্রস্তাব দিয়েছেন। আমি এখন দলের কোনো কোনো ব্যক্তির হুমকির মুখে পড়ে ভয়ভীতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। নিরাপত্তার অভাবে দলীয় কর্মসূচিতেও যেতে পারছি না।’ অভিযোগে তিনি বিশ্বনাথ সরকারের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করা হলে জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী অ্যাডভোকেট শামসাদ বেগম মিতালী বলেন, ‘এগুলো তো ভাই আমাদের দলের ইন্টারনাল বিষয়। দল থেকে আমার কাছে জানতে চাওয়া হলে আমি বলব। আপনাকে আমি কিছু বলতে পারব না। প্লিজ, এসব প্রশ্ন করে আমাকে বিব্রত করবেন না।’

জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম মার্শাল বলেন, ‘যার অভিযোগ (ভুক্তভোগী) তার সঙ্গেই কথা বলেন। আমি কোনো কথা বলতে পারব না। এসব ঘিন্নাঘাটি বিষয়ে আমি কথা বলি না।’ আর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ বলেন, ‘আমার কাছে কেউ কোনো কমপ্লেইন দেয়নি। আমি এ বিষয়ে কিছু জানিও না।’
অপরদিকে অভিযুক্ত বিশ্বনাথ সরকার বলেন, ‘আমার ৭৩-৭৪ বছর বয়স। যারা দল করে, তারা আমার মেয়ের মতো। আমি সেভাবেই দেখি। দলীয় কারণেই সাচিবিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তার সঙ্গে আমাকে যোগাযোগ করতে হয়েছে। কিন্তু অভিযোগের মতো কোনো বিষয় নেই। তার এ রকম অভিযোগ আছে, আমি সেটাও জানি না।’

ভুক্তভোগীকে টাকা দেওয়ার প্রস্তাবের অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্বনাথ সরকার বলেন, ‘আমাকে তো কেউ কিছু বলেইনি। কেন্দ্রে অভিযোগ হয়েছে কি না, সেটাও জানি না। কেন্দ্রও কিছু বলেনি।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By Limon Kabir