ইতালি, পোল্যান্ড, রোমানিয়াসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশে বাংলাদেশের জনশক্তির বাজার দিন দিন চাঙ্গা হচ্ছে। পূর্ব ইউরোপের দেশ রোমানিয়াতে সাম্প্রতিক সময়ে শ্রমিক যাওয়ার হারও বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক পাঠাচ্ছে ঢাকার উত্তর বারিধারা ডিপ্লোম্যাটিক জোনের (গুলশান-২) এশিয়া কন্টিনেন্টাল গ্রুপ (বিডি) নামের প্রতিষ্ঠান। শ্রমিক পাঠানোর ধারাবাহিকতায় এবারো প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সব নির্দেশনা এবং নিয়ম মেনে আরো ২৯ শ্রমিককে রোমানিয়ায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে এই রিক্রুটিং এজেন্সি।
প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সোমবার রাত পৌনে ৮টায় কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ২৯ দক্ষ কর্মী রোমানিয়ার উদ্দেশে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। এ সময় এশিয়া কন্টিনেন্টাল গ্রুপ বিডির ম্যানেজার আব্দুস সালামসহ একটি প্রতিনিধিদল তাদের বিদায় জানান।
প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার মো: আব্দুস সালাম নয়া দিগন্তকে জানান, ২০২১ সালের ২২ নভেম্বর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় রিক্রুটিং এজেন্সি এশিয়া কন্টিনেন্টাল গ্রুপ (বিডি) আরএল-৫২৩ এর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোমানিয়াস্থ ফেরাকসিও কন্সট্রাকশন এসআরএল কোম্পানির জন্য মোট ৬০০ জন পুরুষ কর্মীর নিয়োগ অনুমতি প্রদান করে। কোম্পানির চাহিদা অনুসারে এজেন্সির নিজস্ব ট্রেনিং সেন্টার জেআই ইসলামিক সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট এ দক্ষতা অর্জনের জন্য ফ্রি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
প্রশিক্ষণ শেষে গত জুলাই মাসে কোম্পানির প্রতিনিধি কর্তৃক বাছাইপর্বে ৮০ জন দক্ষ কর্মী নির্বাচিত হয়। এর মধ্যে সবার ভিসা ভারতের রোমানিয়ান দূতাবাসের মাধ্যমে ইস্যু করা হয় এবং বিএমইটি কর্তৃক সবার বহির্গমন ছাড়পত্র নেয়া হয়। তিনি বলেন, নিয়োগকারী কোম্পানিতে ৫৫০ ইউএস ডলার বেতনে দুই বছরের চুক্তিতে (নবায়নযোগ্য) দৈনিক ৮ ঘণ্টা করে সপ্তাহে ছয় দিন কাজের শর্তে কর্মীদের পাঠানো হয়েছে। শর্ত মোতাবেক ভিসা, থাকা, খাওয়া বাসস্থান পোশাক ও বীমা রেসিডেন্স পারমিট নিয়োগকারী কোম্পানি বহন করবে। কর্মীদের বিদেশ যাওয়া বাবদ সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ ৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা অভিবাসন ব্যয় হচ্ছে বলে জানান আব্দুস সালাম।
রোমানিয়ার শ্রমবাজারের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে চাইলে এশিয়া কন্টিনেন্টাল গ্রুপের (বিডি) কর্নধার লোকমান শাহ গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, পূর্ব ইউরোপের দেশ রোমানিয়াতে ২০০৭-২০০৯ সাল পর্যন্ত আমরাই সর্বপ্রথম বৈধভাবে রোমানিয়াতে শ্রমিক প্রেরণ করেছিলাম। ২০০৯ সালের পর বাংলাদেশী কর্মীদের পশ্চিম ইউরোপে যাওয়ার প্রবণতার কারণে রোমানিয়া সরকার দেশটিতে কর্মী নেয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। এরপর বিভিন্নভাবে চেষ্টা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রৈমাত্রিক কূটনৈতিক সফলতা হিসেবে ২০১৭ সালে আবারো রোমানিয়ায় কর্মী প্রেরণের দ্বার উন্মুক্ত হয়। ওই সময় কর্মী যাওয়া শুরু হলেও তা ছিল সীমিত। এর মধ্যে করোনা মহামারীর কারণে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়।
অনেক চড়াই উৎরাই পেরোনোর পর প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং সিনিয়র সচিবের আন্তরিকতায় ২০২২ সালে পুরোদমে আবারো দেশটিতে কর্মী যাওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়। এর মাঝে ২০২২ সালে বাংলাদেশে অস্থায়ী কন্স্যুলেট টিম ঢাকায় অফিস স্থাপন করে ভিসা কার্যক্রম শুরু করলে কাজের গতি বেড়ে যায়। তিন মাস পর কন্স্যুলেট টিম চলে যাওয়ার পর আবারো কাজের গতিতে ভাটা পড়ে যায়। তবে অত্যন্ত আনন্দের খবর হচ্ছে, রোমানিয়ার অস্থায়ী কন্স্যুলেট টিম আবারো আগামী মাসে (মার্চে) বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে। তারা আসলে আবারো কাজের গতি বাড়বে বলে জানান এশিয়া কন্টিনেন্টাল গ্রুপি বিডির কর্ণধার লোকমান শাহ। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রোমানিয়ার শ্রমবাজার ধরে রাখতে হলে বাংলাদেশী শ্রমিকদের পালিয়ে পশ্চিম ইউরোপে চলে যাওয়ার প্রবণতা ঠেকাতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের সাথে সাথে যেসব বৈধ এজেন্সি রোমানিয়াতে শ্রমিক পাঠানোর সাথে সম্পৃক্ত তাদের সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। সবাইকে অবৈধ অভিবাসনের বিপক্ষে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে হবে। তবেই এই শ্রমবাজার ধরে রাখা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করছেন।