রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তনকা দ্বিমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয়রা। প্রধান শিক্ষক একক দাপট খাটিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে দীর্ঘদিন থেকে অনিয়ম দূর্নীতি করার কারণে দিন দিন ধ্বংসের দারপ্রান্তে যাচ্ছে বিদ্যালয়টি। এমতাবস্থায় বিদ্যালয়টি রক্ষায় ফুপে উঠেছে এলাকাবাসী।
সরেজমিনে জানা গেছে, তনকা দ্বিমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এমপিওভুক্ত হয় ১৯৮৪ সালে। শিক্ষার্থী রয়েছে ২৫০জন। তবে ২ জন শিক্ষক এবং ২ জন ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী নৈশপ্রহরী ও অফিস সহায়ক সংকট রয়েছে। এই শুন্যপদে সম্প্রতি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে গোপনে নিয়োগ দেওয়ার পায়তারা চলছে। ইতিমধ্যে কয়েকজন প্রার্থীর কাছ থেকে কয়েকলাখ টাকা নিয়েছেন প্রধান শিক্ষক চপল। একজন প্রার্থীর টাকা ফেরতও দিয়েছেন।
এছাড়াও বিদ্যালয়টিতে শ্রেণিকক্ষ সংকট রয়েছে। একতলা বিশিষ্ট ৩ কক্ষের একটি ভবন থাকলেও শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়েই চলছে পাঠদান। আর এতেই ফুপে উঠেছে অভিভাবক ও স্থানীয় সুশীল সমাজ। কারণ বিদ্যালয়ের নামে নিজস্ব জমি, পুকুর ও দোকান রয়েছে। সেগুলো থেকে বছরে গড়ে কমপক্ষে ৩ লাখ টাকা আয় হয়। এছাড়াও ছাত্রীদের সেসন, পরীক্ষা ও মাসিক বেতন বাদব আয় রয়েছে। অভিভাবকদের প্রশ্ন এত আয় থাকার পরেও মেয়েরা জরাজীর্ণ ঘরে লেখাপড়া করছেন। কারণ হিসেবে উঠে এসেছে প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা চপলের একক আধিপত্য, দাপট এবং অনিয়ম দূর্নীতির তথ্য।
অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা চপল গত দুই যুগে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে অর্ধ কোটি টাকা লুটপাট করেছেন। বিদ্যালয়ের নামে থাকা জমি নিজস্ব কবজায় রেখেছেন যুগের পর যুগ। এছাড়াও নিয়োগ বাণিজ্য করে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। এমনকি নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে জেল খেটেছেন প্রধান শিক্ষক চপল। হাজতবাস শেষে বিদ্যালয়ে ফিরে আবারও লুটপাট শুরু করেছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে সাময়িক বহিষ্কার, পে-স্কেল না দেওয়াসহ নানাভাবে হয়রানি ও কোণঠাসা করে রেখেছেন এই চপল। তার এই কর্মযজ্ঞে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা এবং স্থানীয় কিছু সুবিধাবাদী জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
অভিভাবকরা জানান, চপল মাস্টার ঘুষ ছাড়া কোন কাজ করেন না। মেয়েদের উপবৃত্তি করাতেও তাকে টাকা দিতে হয়। আশাপাশের বিদ্যালয়গুলো চকচক করছে আর আমাদের এলাকার স্কুলের ঘর ভেঙে পড়ছে। সরকারি বরাদ্দ, স্কুলের আয়, সেসন পরীক্ষা ফিসহ বিভিন্ন সময় আমরা যে টাকা দেই সেগুলো কোথায় যায়? কে খায়? প্রশাসন তদন্ত করলে সব বিরিয়ে আসবে কিন্তু। সঠিক তদন্ত হয় না, তারাও প্যাকেট হয়।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা চপল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিদ্যালয়ের আয় কই? প্রমাণ দেন। তখন বিশাল পুকুর কত টাকায় লিজ দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুকুর লিজ দেওয়ার সময় স্থানীয়রা বাইরের কাউকে আসতে দেয় না এজন্য কম মূল্যে লিজ দিতে হয়। চলতি বছরের মার্চ মাসে আড়াই লাখ টাকায় পুকুর লিজ দেওয়া হয়েছে সেই টাকায় কি কি উন্নয়ন হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বিভিন্ন টালবাহানা শুরু করেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনিয়ম করলে সংশ্লিষ্ট কমিটির সভাপতি বিষয়টি দেখবেন। অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।
তনকা দ্বিমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি তসলিম উদ্দিন বলেন, স্কুলের নামে কিছু জমি, পুকুর ও দোকান রয়েছে এটা সত্য। সর্বশেষ পুকুর লিজের আড়াই লাখ টাকা জমা আছে। টাকা থাকার পরেও জরাজীর্ণ ক্লাসরুমে পাঠদান কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে সংস্কারের সিন্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রকিবুল হাসান ব্যবহ্নত সরকারি মোবাইল ফোন নাম্বারে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
টিপিএন২৪/ হৃদয়