বাজারে এসেছে আইফোন ১৬। অ্যাপলের নতুন এই পণ্য কিনতে বিশ্বজুড়েই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মানুষ। রাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আইফোন কেনা, তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় হৈচৈ; রীতিমতো প্রতি বছর সেপ্টম্বরের শেষ দিকটায় উন্মাদনা থাকে তুঙ্গে। কেন মানুষ এসব করে?
আইফোন কি শুধুই ক্রেজ বা ভাব নেয়ার জন্যই কেনে মানুষ? এটা কি কেবলই উত্তেজনা? কেবল আমার হাতে বিশ্বের দামি ব্রান্ডের একটা ফোন আছে এটা দেখানোর জন্যই মানুষ আইফোন কেনে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিত্তিক গণমাধ্যম খালিজ টাইমস।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু লোক আইফোন শুধু উন্মাদনা, স্ট্যাটাস বা লোক দেখানোর জন্যই কেনেন। তবে অনেকেরই আইফোন কেনার ভিন্ন কারণ আছে।
আবু ধাবি-ভিত্তিক একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন ও নীতিশাস্ত্রের অধ্যাপক রেক্স বাকাররা বলেছেন, ‘অ্যাপলের ব্র্যান্ডিং হল স্ট্যাটাস মেকিং- এতে কোনো ভুল নেই। এটা অনস্বীকার্য যে অ্যাপলের একটি সাংস্কৃতিক মর্যাদা রয়েছে। কিন্তু তাদের জনপ্রিয়তাকে কেবল একটি স্ট্যাটাস সিম্বল হিসাবে দেখলে তা অতি সরলীকরণ হবে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘আমি আইফোনকে উদ্ভাবন, নিরাপত্তা, বিশ্বাসযোগ্যতা ও মানসম্পন্নতার একটি প্রতিনিধি হিসেবেও দেখি। অ্যাপল উদ্ভাবনের সীমানাকে বিস্তৃত করে, যা অত্যাধুনিক বৈশিষ্ট্যগুলির সাথে ধারাবাহিকভাবে এবং নির্ভরযোগ্যতার সাথে কাজ করে। এর ডিজাইনটি সত্যিই মসৃণ এবং মার্জিত।’
নিরাপত্তা আবেদন
দুবাই-ভিত্তিক আইটি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ রায়দ কামাল আইয়ুব বলেছেন, নিরাপত্তার জন্য আইফোনের খ্যাতি এর আকর্ষণে একটি বিশেষ স্তর যুক্ত করেছে। অ্যাপল তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত এবং প্যাচ বা রিলিজ সাধারণত উপলব্ধ না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা সমস্যাগুলি প্রকাশ, আলোচনা বা নিশ্চিত করে না।
আইয়ুব যোগ করেছেন, ‘অভিভাবকরা তাদের কিশোর-কিশোরীদের ডিজিটাল সুস্থতার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। তাদের সন্তানদের প্রথম স্মার্টফোনের জন্য একটি নিরাপদ বিকল্প হিসেবে আইফোনের দিকে ঝুঁকতে পারে।’
এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেছেন, ‘অ্যাপ স্টোর হল বৈচিত্র্যময় এবং আকর্ষক অ্যাপ্লিকেশনের একটি ভাণ্ডার। গেমিং থেকে সোশ্যাল মিডিয়া পর্যন্ত, iOS প্ল্যাটফর্মটি একটি বিস্তৃত অ্যাপস সরবরাহ করে। যা কিশোর-কিশোরীদের আগ্রহ এবং পছন্দগুলি পূরণ করে। এই সমৃদ্ধ অ্যাপ ইকোসিস্টেমটি নিঃসন্দেহে তরুণ জনসংখ্যার মধ্যে আইফোনের জনপ্রিয়তায় অবদান রাখে।’
সামাজিক মর্যাদা
এদিকে, দুবাই-ভিত্তিক মনোবিজ্ঞানীরাও আইফোনের ক্রেজ সম্পর্কে তাদের চিন্তাভাবনা জানিয়েছেন। কেন কেউ কেউ প্রতিটি নতুন গ্যাজেট নিয়ে হাইপ তৈরি করে এবং এটি পেতে চায়? ইন্টারন্যাশনাল মডার্ন হসপিটাল দুবাই-এর বিশেষজ্ঞ সাইকিয়াট্রিস্ট ডা. শাজু জর্জ বলেছেন, কিছু লোক তাদের আত্মসম্মান বাড়ানোর জন্য ব্র্যান্ডের পিছনে ছুটছেন।
এই মনোবিজ্ঞানী আরও বলেছেন, ‘ফোন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। এটিকে আমরা যেখানে যাই, সেখানেই বহন করি। সুতরাং ধারাবাহিকভাবেই এটি আমাদের পরিচয়ের অংশ হয়ে উঠেছে। একটি দামি ফোন দেখায় যে আপনি কতোটা সফল। এটা সামাজিক উচ্চ শ্রেণিরও পরিচয় বাহক। এই ফোনই আপনাকে বোঝাবে আপনি কোন মনুষ্য গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।’
শারজাহর জুলেখা হাসপাতালের আরেক মনোবিজ্ঞানী ড. সাঙ্গানায়েক বলেছেন, ‘অনেক সফল মানুষ কিছু নির্দিষ্ট ব্রান্ড ব্যবহার করেন। সেই ব্রান্ডের পণ্য ব্যবহার করতে পারলে আমরাও নিজেদের তাদের কাতারে ভাবতে শুরু করি।’