রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ১২:১৭ পূর্বাহ্ন

শতবর্ষীদেরও সুস্থ-সবল জীবনযাপন সম্ভাবনাময় করে তুলছে গবেষণা

রিপোর্টারের নাম / ২২৭ বার দেখা হয়েছে
আপডেট করা হয়েছে সোমবার, ২ অক্টোবর, ২০২৩, ১০:০৯ পূর্বাহ্ন

অনলাইন ডেস্ক:
এখনকার দিনে কেউ ১০০ বছর বেঁচে আছেন, বিষয়টি অস্বাভাবিক না হলেও খুবই বিরল। আমেরিকা ও ব্রিটেনে মোট জনসংখ্যার প্রায় ০.০৩ শতাংশ মানুষ বর্তমানে শতবর্ষী। জীবনকে দীর্ঘায়িত করার সর্বশেষ প্রচেষ্টাটি যদি সফল হয়, তাহলে ১০০ বছর বেঁচে থাকার বিষয়টি পৃথিবীতে স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে; এমনকি এই চেষ্টা সফল হলে মানুষের আয়ু ১২০ বছর পর্যন্তও উঠতে পারে।

আরও রোমাঞ্চকর ব্যাপার হলো, এই অতিরিক্ত বছরগুলো মানুষ সুস্থভাবেই জীবন যাপন করতে পারবে। অর্থাৎ, বার্ধক্য এগিয়ে এলে যেসব রোগশোক শরীরে বাসা বাঁধে, এবারের প্রচেষ্টায় সেসব রোগশোকের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে; বিশেষ করে সংক্রামক রোগব্যাধির বিরুদ্ধে।
দীর্ঘায়ুর এই ধারণাটি বার্ধক্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জৈবিক প্রক্রিয়াগুলোকে পরিবর্তন (ম্যানিপুলেট) করে; এই ধারণা গবেষণাগারের প্রাণীদের ওপর প্রয়োগ করে ইতিবাচক ফল মিলেছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট গবেষকদের।

দীর্ঘায়ু হওয়ার এই প্রক্রিয়ার মধ্যে একটি উপায় হলো– প্রাণী সুষম খাদ্যের মাধ্যমে যে পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ করে তার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সীমাবদ্ধ করে দেওয়া। অর্থাৎ, ব্যালেন্সড-ডায়েট জীবনযাপন। বর্তমান যুগে এই ক্যালোরি কমিয়ে দেওয়ার এই প্রচেষ্টা জনপ্রিয় হলেও, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় মানুষ খুব বেশি দিন স্বাভাবিক রুটিনের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পারে না। তবে কিছু ওষুধ রয়েছে যা ব্যবহারের মাধ্যমে ক্যালোরি মাত্রা কমিয়ে আনতে জৈবিক প্রক্রিয়াগুলোতে এ ধরনের প্রভাব রাখা সম্ভব।

এর মধ্যে একটি হলো মেটফরমিন, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের জন্য ব্যবহার করা হয়; আরেকটি হলো রেপামাইসিন, যা ব্যবহার করা হয় শরীরের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে।

দীর্ঘায়ুর আরেকটি উপায় হলো, এমন ওষুধ তৈরি করা যা শরীরের ‘সেনসেন্ট’ কোষকে মেরে ফেলে; এর ফলে শরীরে এই কোষের আর কোনো ব্যবহার হয় না। মূলত এই সংবেদনশীল কোষগুলোই শরীরে তাদের আশপাশের সুস্থ কোষগুলোর মধ্যে সব ধরনের ত্রুটি সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। ‘সেনোলাইটিক’ ওষুধগুলো এ ধরনের কোষগুলোকে টার্গেট করে থাকে। যদিও অন্যদের ক্ষতি না করে কোনো নির্দিষ্ট ধরনের কোষ মেরে ফেলা কঠিন; তারপরেও বিজ্ঞানীরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

এই প্রক্রিয়ায় যারা ভরসা রাখছেন, এটি তাদের জন্য কেবল শুরু। সংশ্লিষ্ট একাডেমিক এবং বাণিজ্যিক গবেষকেরা বর্তমানে ক্রোমোজোমের ‘এপিজেনেটিক’ মার্কার বা চিহ্ন পরিবর্তন (যা কোষগুলোকে বলে দেয় যে কোন জিনগুলোকে সক্রিয় করতে হবে) করে কোষ এবং টিস্যুগুলোকে কীভাবে পুনরুজ্জীবিত করা যায় সেই গবেষণা করছেন। মার্কারগুলো বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে জমা হতে থাকে; এদেরকে ফিরিয়ে আনতে পারলে ৬৫ বছর বয়সীর শরীরের মধ্যেও ২০ বছর বয়সী শরীরের কোষ তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকরা।

মোটকথা সংশ্লিষ্ট গবেষক ও বিজ্ঞানীদের ধারণা, শরীরে ক্যালোরি কমিয়ে আনতে পারলে এবং সেনসেন্ট কোষগুলোকে নিষ্ক্রিয় বা মেরে ফেলতে পারলেই বিলম্বিত করা যাবে বার্ধক্যকে। তাদের দাবি, এপিজেনেটিক মার্কার পরিবর্তনের মাধ্যমে কোষের পুনরুজ্জীবন বার্ধক্যকে ধীরগতি করতে পারে।

তবে এক্ষেত্রে একটি উদ্বেগের বিষয় হলো মানুষের মস্তিষ্ক। আলোচ্য প্রক্রিয়ায় শরীরের বার্ধক্য ধীরগতির করা গেলেও– মস্তিষ্কের বার্ধক্যের কী হবে? এ এক জটিল প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায় গবেষকদের সামনে। কারণ মস্তিষ্কের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ এবং এটি মানুষের স্বাভাবিক জীবনকালের সঙ্গে প্রাকৃতিক নির্বাচন পদ্ধতি দ্বারা অভিযোজিত।

বয়স বাড়ার সাথে সাথে যেসব মানবদেহে যেসব রোগব্যাধী বাসা বাঁধে, তার ফলে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশ-ও দেখা দেয়। এজন্য সামাজিক প্রস্তুতি থাকা দরকার।

বয়স্কদের মধ্যে প্রযুক্তির ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে হবে, যাতে গড় আয়ু বাড়ানোর গবেষণা সফল হলে সমাজ তার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। এমনটা করা গেলে; দীর্ঘায়ু বয়োবৃদ্ধরা এআই ডায়েরিতে দরকারি তথ্য সংরক্ষণ এবং পরবর্তীতে দরকারের সময় জিজ্ঞেস করে জেনে নিতে পারবেন।

গবেষকদের আরেকটি বড় বাধা হলো- বার্ধক্য ধীরগতির করার পদ্ধতিগুলো মানবদেহে পরীক্ষা (ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল) চালানোর আনুষ্ঠানিক অনুমতি পাওয়া। এর প্রধান কারণ, বিশ্বের অধিকাংশ ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ বার্ধক্যকে নিরাময়যোগ্য শারীরিক অবস্থা বলে মনে করে না। তাই ট্রায়ালের অনুমোদন পাওয়া হয় কঠিন।

তাছাড়া এ ধরনের পরীক্ষানিরীক্ষা বহু বছর ধরে অনেক মানুষের ওপর চালাতে হয়। এতে ট্রায়াল প্রক্রিয়ার জটিলতা ও খরচ বাড়ে। গবেষণা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। আগের গবেষণার ফলাফল নতুন অনুসন্ধানকে পথ দেখায়। কিন্তু, এক্ষেত্রে আলোচ্য কারণগুলোর কারণে মানবদেহে ট্রায়ালের অভাব আছে। আরেকটি কারণ, ট্রায়ালের জন্য আগের বেশিরভাগ প্রাথমিক প্রস্তাবই প্যাটেন্ট বহির্ভূত ওষুধ ব্যবহারের কথা বলেছে। ফলে ওষুধ কোম্পানিগুলো এতে বিনিয়োগের উৎসাহ দেখায়নি।

আশার কথা হলো, এত সমস্যা সত্ত্বেও কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা এরমধ্যেই শুরু হচ্ছে। এরমধ্যে একটি হলো ‘টার্গেটিং এজিং উইথ মেটফরমিন ট্রায়াল (বা টেম)’ – যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩ হাজার ৬০ থেকে ৭০ বছর বয়সীদের ওপর এটি পরিচালিত হবে। পরীক্ষায় ব্যবহার করা ওষুধ সত্যিই তাদের দীর্ঘায়ু দেয় কি না– তা লক্ষ্য করাই ট্রায়ালটির মূল উদ্দেশ্য। বলাই বাহুল্য; এটি সম্পন্ন হতে দীর্ঘসময় লাগবে। কিন্তু, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আরও মানব ট্রায়ালের উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারগুলো সহায়ক ভূমিকা নিলে গবেষণা উৎসাহিত হবে।

মানবদেহ বুড়িয়ে যাওয়াকে ধীর করতে গবেষণা যদি সফল হয়; অর্থাৎ দীর্ঘদিন মানুষ সুস্থ, সবল থাকবে – এমন ফলাফল এনে দিতে পারে, তাহলে সমাজ, অর্থনীতি ও রাজনীতির মতো প্রতিটি অঙ্গনে তার প্রভাব পড়বে।

সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By Limon Kabir