প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে গতকাল জানান, এ পর্যন্ত প্রকল্পের যে অগ্রগতি, তাতে আশা করছি আসছে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটটি উৎপাদনে যাবে। তিনি আরও জানান, ‘সে সময় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এর কোনো প্রভাব বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদনে পড়বে না। পর্যায়ক্রমে একই বছরের জুন মাসে এর দ্বিতীয় ইউনিটটিও উৎপাদনে যাবে বলে তিনি জানান। এরই মধ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জন্য ৪ লাখ টন কয়লা প্রকল্প এলাকায় এসে পৌঁছেছে।’
এদিকে এই বিদ্যুৎ প্রকল্প ঘিরে কক্সবাজারের মাতারবাড়ী ও ধলঘাটা ইউনিয়নের ১ হাজার ৬০৫ একর জমির ওপর চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। কয়েক হাজার কর্মী বাহিনী দিনরাত কাজের মাধ্যমে দ্রুত এগিয়ে চলছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, কয়েক বছর আগেও এই দ্বীপ উপজেলার বাসিন্দারা উন্নত জীবনের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না। সেই এলাকায় লোকজনই এখন এই প্রকল্পের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার সুফল পাচ্ছেন। আবার স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হওয়ায় দ্রুত বদলে যাচ্ছে এই এলাকার মানুষের জীবনমান।বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এই প্রকল্প ঘিরে মাতারবাড়ীতে যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। এটি বাস্তবায়নের ফলে এই এলাকার মানুষের জীবনমান ও আর্থসামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।
জানা যায়, পুরোমাত্রায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে এই কেন্দ্রে দৈনিক ১৩ হাজার ১০৪ টন কয়লার প্রয়োজন হবে। এ জন্য কয়লা খালাসের জেটি ও সাইলো নির্মাণ করা হয়েছে। বিশাল আকৃতির সাইলোগুলোতে ৬০ দিনের কয়লা মজুদ রাখা যাবে। কয়লা জেটিতে সরাসরি ৮০ হাজার টন ক্ষমতার মাদার ভেসেল ভিড়তে পারবে। আর মাদার ভেসেল থেকে কয়লা খালাস করতে সময় লাগবে দেড় থেকে দুই দিন। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিজস্ব জেটিতে মাদার ভেসেল ভেড়ানোর জন্য ১৪ দশমিক ৩ কি.মি. লম্বা (প্রস্থ ৩০০ মিটার) চ্যানেল খনন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে ছাই মজুদ রাখার জন্য দুটি অ্যাশপন্ড রাখা হয়েছে। আর কয়লা মজুদের জন্য ৮০ একর জমিতে কোল ইয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। সাগরের কোল ঘেঁষে গড়ে তোলা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি যাতে সাইক্লোন বা জলোচ্ছ্বাসের কবলে না পড়ে এ জন্য সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৪ মিটার উঁচু বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মনোয়ার হোসেন মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্ধারিত সময় ২০২৪ সালের জানুয়ারিতেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসবে। মাতারবাড়ীর এই প্রকল্পের ফলে স্থানীয় দুই হাজার মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হয়েছে। গভীর সমুদ্রবন্দর ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশাপাশি এ প্রকল্পকে ঘিরে আরও ৩৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য টাউনশিপ ডেভেলপমেন্টের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আর স্থানীয় বাসিন্দা যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, জাপানের সুমিতোমো করপোরেশন, তোশিবা করপোরেশন ও আইএইচআই করপোরেশনের কনসোর্টিয়ামকে মাতারবাড়ী আলট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের ইপিসি ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের অধীনে ১৫টির অধিক সাব-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এই প্রকল্পটি সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প। এর কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট। এরপর ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপানি সংস্থা জাইকার অর্থায়ন রয়েছে ৪৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। বাকি ৭ হাজার ৯৩৪ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার ও কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির নিজস্ব অর্থায়ন।