সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের যমুনা ডিগ্রী কলেজের সদ্য সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেছে। অভিযোগ রয়েছে জাতীয় বিদ্যালয়ের প্রজ্ঞাপন তোয়াক্কা না করে তিন বছরের অধিক সময় দায়িত্ব পালন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থাকাকালীন অধ্যক্ষ পদে আবেদন, অডিটের নামে শিক্ষকদের কাছে অর্থ আদায় ও নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে হিসেবে অন্যজনকে দায়িত্ব দিলেও চেয়ার, হিসেব-নিকেশ বুঝে না দিয়ে নানা তালবাহানা শুরু করেছে। এছাড়াও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে না জানিয়ে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়েছে। শিক্ষকদের অভিযোগ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাকির হোসেন তার বড় ভায়রা কলেজের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ফারুক এ সকল অনিয়ম করছেন। এমন কি তিনি আগামীতে নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যামে পূর্ণাঙ্গ অধ্যাক্ষ হিসেবে নিয়োগ পাবেন-এই বলে বেড়াচ্ছেন এবং কলেজের সকল শিক্ষকদের তটস্থ ও ভীতির মধ্যে রাখছেন।
মো. শামসুল আলম ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হয়েও পুর্বের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষে জাকির হোসেনের দাপটের কারনে চেয়ারে বসতে পারছেন না। তাই ঠুটোজগন্নাথ হয়ে পাশের চেয়ারে বসে আছেন।
কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামসুল আলম জানান, ২০২০ সালে উপাধ্যক্ষ জাকির হোসেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দয়িত্বভার গ্রহন করেন। দীর্ঘ তিন বছর পর গত ২৫ অক্টোবর ম্যানেজিং কমিটি আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করেন। কিন্তু প্রায় দেড় মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত কলেজের কোন হিসেবে-নিকেশ, আলমারি চাবি, চেয়ার, রেজুলেশন খাতা এমনকি কলেজের মোবাইলে বুঝে দেওয়া হয়নি। আমাকে অধ্যক্ষের চেয়ারে না বসিয়ে পাশের চেয়ারে বসিয়ে জাকির হোসেন অধ্যক্ষের চেয়ারে বসছেন। ম্যানেজি কমিটির সভাপতি বলেছে ধৈর্য্য ধরেন সব দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়াও হবে। এছাড়াও জাকির হোসেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থাকাকালে নিজেই অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিজেই আবেদন করেছিল। নিজেই যাচাই-বাচাই করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে ছিলেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানতে পেরে সেটি বাতিল করেছেন। পুনরায় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কোন রেজুলেশন ছাড়াই নিয়ম বহির্ভূতভাবে ৩০ নভেম্বর অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের জন্য ইচ্ছেমতো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন।
মো. জাকির হোসেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ছিলেন দেড়মাস আগে। কিন্তু এখনো নেমপ্লেটে তার নাম রয়েছে। আগামীতে তিনি নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে অধ্যক্ষ হবেন-এই দাপটে নেমপ্লেট পরিবর্তন করতে দিচ্চছন না কাউকে।
কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আব্দুল আউয়াল জানান, প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী একজন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ছয় মাসের বেশী থাকতে পারেন না। কিন্তু জাকির হোসেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে তিন বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। কি ভাবে করলেন তা আমাদের মত সাধারন শিক্ষকের জানার বিষয় নয়। তিনি তিন বছর থাকার পর গত ২৫ অক্টোবর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব ছেড়ে দিলেও এখনো অধ্যক্ষের চেয়ারে বসছেন। আর বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামসুল আলম তার পাশে বসছেন। এটা আমাদের কেন সবার কাছেই দৃস্টিকটু মনে হলেও আমাদের বলার ক্ষমতা নেই।
কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক কফিল উদ্দিন জানান, অডিট আপত্তির নাম করে সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাকির হোসেন আমাদের কাছ থেকে বেসিক বেতনের ১৫% টাকা হ্যান্ডক্যাশ নিয়েছেন। এছাড়াও কলেজে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি ও বাসাভাড়ার নামেও নানা টাকা আত্মসাত করেছেন।
কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইকবাল হোসেন জানান, মফস্বল কলেজগুলোতে অধ্যক্ষরা যা বলেন সেটাই নিয়ম ভেবে আমাদের মানতে হয়। যদিও সেটা অনিয়মই হয় তাও মানতে হয়। কারন আমরা জলে বাস করে কুমিরের সাথে লড়তে পারি না। তারমধ্যে সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ যিনি ছিলেন তারা দুজন আপন ভায়রা-সব বুঝেনতো আপনারা।
অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাকির হোসেনসহ অনেক শিক্ষকই বলেন, আমাদের শুধু দুটি ঈদে বোনাস দেয়া হয়। কিন্তু কোন টিউশনি ফি দেয়া হয় না।
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জাকির হোসেন বলেন, প্রজ্ঞাপনে কি আছে সেটা বিষয় নয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশে তিন বছরের অধিক দায়িত্ব পালন করেছি। আর ম্যানেজিং কমিটির মিটিংয়ের মাধ্যমে রেজুলেশন করে হিসেব-নিকেশ ও সরকারী মোবাইলসহ সকল জিনিস বুঝিয়ে দেয়ার নিয়ম। কিন্তু ম্যানেজিং কমিটি বৈঠক না করায় বুঝিয়ে দেয়া সম্ভব হয়নি।
কলেজের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ফারুক বলেন, কমিটি মিটিং করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে শামসুল আলমকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু সময়ের অভাবে পুনরায় মিটিং করে ব্যাংকিং পাওয়ারসহ অন্যান্য কাগজপত্র সবকিছু বুঝে দেয়া সম্ভব হয়নি। দ্রুতই মিটিং করে সব কিছু ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে বুঝিয়ে দেয়া হবে। রেজুলেশন ছাড়া বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিষয়ে বলেন, যদি ভুল হয়ে থাকে তবে পুনরায় রেজুলেশন করে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।