নিজস্ব প্রতিবেদক:
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের বেলকুচি থানার ওসির বিরুদ্ধে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগ ওঠেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী, তার কর্মী-সমর্থক জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা অভিযোগ তুলে বলছেন, বেলকুচিতে নৌকা প্রার্থীর সমর্থকের বাড়ীতে বোমা বিস্ফোরনে নিহতের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টাসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মারপিটের অভিযোগ দিলেও নেয়া হচ্ছে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। নৌকাকে বিজয়ী করতেই নির্বাচনী এলাকার এনায়েতপুর থানায় দুই বছর কর্মরত থাকার পর একই নির্বাচনী এলাকা বেলকুচিতে কৌশলে বদলী হয়ে এসেছেন। এ অবস্থায় সুষ্ঠ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে ওসির অপসারন দাবী করেছেন তারা।

স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী বেলকুচি পৌরসভার মেয়র সাজ্জাদুলক হক রেজা জানান, কয়েকদিন আগে বেলকুচির সুবর্নসাড়া গ্রামে নৌকার প্রার্থী আব্দুল মমিন মন্ডলের কর্মী মোতালেব সরকারের বাড়ীতে বিস্ফোরনের বিকট শব্দ হয়। বোমা বিস্ফোরনের ক্লু থাকা সত্ত্বেও বেলকুচি থানার ওসি আনিছুর রহমান ঘটনাস্থলে পরিদর্শন শেষে প্রেসার কুকার বিস্ফোরনের ঘটনা ঘটেছে বলে সকলকে জানায়। পরবর্তীতে একজন মারা গেলে বিস্ফোরন ঘটনা প্রকাশ পায় এবং থানায় মামলা হয়। এতে বোঝা যায় ওসি নৌকার সমর্থককে বাঁচাতে পক্ষপাতিত্ব করেছে। তিনি আরো জানান, ওসি নৌকাকে বিজয়ী করার জন্যেই এনায়েতপুর থেকে বেলকুচিতে এসেছেন। তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা সুষ্ঠ নির্বাচন করে বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিতে চায়, কিন্তু বেলকুচিতে ওসির কর্মকান্ড দেখে মনে হয় সুষ্ঠ হবে না। ভোটাররাও সুষ্ঠ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে । তিনি সুষ্ঠ নির্বাচনের স্বার্থে ওসির অপসারন দাবী করেছেন।

বেলকুচির সদর ইউপি চেয়ারম্যান সোলায়মান হোসেন জানান, আমার ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থীর দুইজন কর্মীকে নৌকার সমর্থকরা মারপিট করেছে। থানায় অভিযোগ দিলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি।
বেলকুচি পৌর আওয়ামীগের সভাপতি শরিফুল ইসলাম জানান, ওসি শুধু অভিযোগ শোনেন কিন্তু কার্যত কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেন না।

বেলকুচি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল হক সাজেদুল বলেন, দিনে দুপুরে নৌকার কর্মীর বাড়ীতে বিস্ফোরনের ঘটনা ঘটলেও তা’ক্ষনিক কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বোমা বিস্ফোরনে নিহতের ঘটনা চারদিন পর পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশ পাবার পর মামলা হয়েছে। এটাতো শুভ লক্ষন হতে পারেনা। সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য প্রশাসনের আরো দায়িত্বশীল হবার দাবী জানান তিনি।

বেলকুচি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক বেগম আশানুর বিশ্বাস অভিযোগ তুলে বলেন, বেলকুচি বোমা বিস্ফোরনের আগেই ওসিকে ফোন করে বলেছিলাম মোতালেবের বাড়ীতে বোমার কারিগর এসেছে বাইরে থেকে এমন তথ্য আমার কাছে এসেছে, আপনি বিষয়টি দেখবেন। তখন ওসি আনিছুর রহমান বলেছিলেন, এসব আজেবাজে কথা বলবেন না। অথচ তার পরেই বোমা বিস্ফোরনে একজন মারা গেছেন। এছাড়াও প্রতিদিন নৌকার সমর্থকরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজনকে মারপিট করছে। কোন অভিযোগের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। তিনি বলেন, অভিযোগ দিবো নাকি নাকি নির্বাচন করব। তার কর্মকান্ডে আমি শতভাগ মনে করি ওসি নৌকার পক্ষে কাজ করছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস বলেন, ওসি আমার নির্বাচনী এলাকার আরেকটি থানা এনায়েতপুরে ২বছর ছিল। কৌশলে তিনি একই নির্বাচনী এলাকা বেলকুচিতে এসেছেন। ওসির পক্ষপাতিত্বের কারনে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, যেভাবে বোম ব্লাস্ট হয়েছে আর নৌকা প্রার্থীর পাশে বহিরাগতদের আনাগোনা দেখছি তাতে সন্দেহ করছি নির্বাচনে সহিংসতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা না হলে নির্বাচনে সহিংসতার আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি ওসিকে বদলীর দাবী জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে নৌকার আব্দুল মমিন মন্ডল বলেন, অভিযোগ থাকতে পারে। এবিষয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যারা আছে তারা প্রপার ইনভেস্টিগেশন করে রিপোর্ট দেবেন। নির্বাচনকালীন বিভিন্ন ধরনের আওয়াজ ওঠে। কোনটা প্রকৃত ঘটনা এটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই বলতে পারবে। আমি যেহেতু মনিটরিং করছি না। সেহেতু এ বিষয়ে বলতে পারব না।

এ বিষয়ে বেলকুচি থানার ওসি আনিছুর রহমান জানান,পুলিশ কারো ব্যক্তিগত লোক না। আমি একজন পুলিশের সদস্য। নির্বাচন কমিশনের আওতায় নিরপেক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছি। কোন অভিযোগ কেউ তুলতেও পারে। অভিযোগ দাখিলের সুনির্দিষ্ট জায়গা আছে। সেখানে অভিযোগ দাখিল করলে কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে দেখবেন অভিযোগের ভিত্তি আছে কিনা?

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল জানান, শুধু বেলকুচি থানার ওসি নয় পুলিশের কোন সদস্যের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রমানসহ অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।