অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তিন মাস পূর্ণ হয়েছে।এই অল্প সময়ে সরকারের বহু সাফল্য যার শেষ নেই,ইতোমধ্যে সরকারের সাফল্য নিয়ে অনেক নেতাই বাহাবা দিচ্ছেন।সরকারও বাহাবা পেয়ে ফুলে ফেঁপে একেবারে যা হবার তাই।
নিত্যপণ্যের বাজার চরম ঊর্ধ্বগতী,এটা নিয়ে কোন রাজনৈতিক দল-ই- জোড়ালো কিছু বলছে না।হাসিনা দেশ ছাড়া আর জাতীয় পার্টী এখন ঘর ছাড়া।দেশে এখন বড় দল বলতে জামায়াত-বিএনপি।তারা-তো আগামীতে কে কিভাবে ক্ষমতায় যাবে এর আখের গোছাতেই ব্যস্ত। সুশিল সমাজ ও বুদ্ধিজীবীরাও মনে হয় ক্লান্ত, টুকটাক যেটুকুন বলে সরকারের কাছে এগুলোর কোন মূল্য আছে বলেও মনে হয় না। আর তাছাড়া পরামর্শদাতা, বুদ্ধিজীবী ও সুশিল সমাজের শুধু শুধু এই গুরুগাম্ভীর্য কথায় নিত্যপণ্যের বাজার ঊর্ধ্বগতী নিয়ন্ত্রণে কোন প্রভাব পড়েবে এটা ভাবার কোন কারণ-ই নেই। তার কারণ হলো,দেশের বেশীর ভাগই পরামর্শদাতা, বুদ্ধিজীবী ও সুশিল সমাজের নেতারা পেটুয়া বাহিনী,আর এ জন্যই শেখ হসিনা তাদেরেকে গাধার সাথে তুলনা করেছিল।এদের একদল বেড রুম থেকে টক-শো-পর্যন্ত হাসিনাকে খুশি করতে ব্যস্ত, একইভাবে আর একদল খালেদা জিয়াকে তেল মাখাতে মরিয়া।ফলে সাধারণ মানুষের ভাগ্যে যা আছে তাই।
সাধারণ মানুষের খেয়ে পড়ে ভালো থাকা নিয়ে কোন সরকারের মাথা ব্যাথা কখনো ছিলনা,এখনো নেই,যদি থাকতো তাহলে হাজার হাজার নাগরিক নিজের ন্যায্য পাওনা আদায়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করতো না,মানবাধিকার ফিরে পেতে মানববন্ধন করার প্রয়োজন ছিলনা। কই, দেশ স্বাধীনের পর থেকে আজ পর্যন্ত কখনো দেখলাম না যে,ক্ষমতায় যারা থাকে তাদের চাওয়া পাওয়া বা অধিকার আদায়ে হরতাল, মিছিল, মিটিং ও মানববন্ধন করতে হয়েছে? তার মানে হলো, জনগণ সকল ক্ষমতার মালিক আর সব ভোগবিলাসের মালিক হলো কর্তাবাবুরা।
ক্ষমতার ভেতরে বাইরে সব রাজনৈতিক দলই দেশের সাধরণ জনগণকে নিয়ে ব্যবসা করে,রাজনৈতিক দলগুলোর পুঁজিই হলো সাধরণ জনগণ। তারা রাজনীতি ও জনসেবার নামে জনগণকে পুঁজি করে বহুমাত্রিক অন্যায়, অপরাধ, দূরাণীতি ও লুটপাটের ব্যবসা পরিচালনা করে। দেশের সাধারণ খেটে খাওয়া হতদরিদ্র বা একেবারে নিম্ন আয়ের মানুষদের নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কোন ভাবনা আছে এটা আর কেন জানি বিশ্বাস হয় না?।কারণ কোন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচী জনবান্ধব নয়। তাদের কর্মসূচী,কার কবে জন্মদিন,কবে মৃত্যুবার্ষীকি,কার কবে কারামুক্তি দিবস, প্রত্যাবর্তন দিবস আর কে কিভাবে ক্ষমতায় যাবে ইত্যাদী।
আজ থেকে মাত্র ৯৫-দিন আগের কথা,যে দিকে তাকাই শুধুই নৌ-কা,দলের সদস্য থেকে রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত আ-লীগ,কনষ্টেবল থেকে আইজিপি,সেনা সদস্য থেকে সেনা প্রধান, পিয়ন থেকে সচিব এক কথায় পুরো দেশটায় ছিল আওয়ামী-লীগ। অথচ এতো ক্ষমতা থাকার পরেও শুধু বহুমাত্রিক অপরাধের কারণে আন্দোলনের প্যাদানীতে দলকে ফেলে একজন প্রধানমন্ত্রী পালিয়ে গেল,পুলিশসহ অনেক দূর্ণীতিবাজরাও পিলিয়ে গেল,বনে বাদারে আশ্রয় নিলো,জীবনের ভয়ে কর্মস্থলে যোগদান করেনা,শত শত মামলা হয়েছে,সাধারণ আসামী-তো দুরের কথা,সাবেক এমপি-মন্ত্রী,আইজিপি,সেনা প্রধানসহ দেশের শীর্ষ দূর্ণীতিবাজ রাঘব বোয়ালরা এখন লাল ঘরে,রিমান্ড খাটতে খাটতে চোখে সরিষার ফুল দেখছে,অথচ নিত্যপণ্যের বাজার ঊর্ধ্বগতী এটা নিয়ন্ত্রন হয় না,কোন সরকার-ই এ সিন্ডিকেট ভাংতে পরেনা।
মজার বিষয় হলো, বহুমাত্রিক দাবি দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে প্রতিদিন দেশব্যাপী বহু রকমের আন্দোলন,বিক্ষোভ,মিছিল ,মিটিং, মানববন্ধন, শোভাযাত্রা, আমরণ অনুশন এবং ঘেরাও কর্মসূচী চলছে। গেল ৫ আগস্ট-২০২৪ এর পর থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন রকমের আন্দোলন এখন যেন রেওয়াজে পরিনত হয়েছে।(এটা খুবি ভালো বিষয়) কিন্তু নিত্যপণ্যের বাজার ঊর্ধ্বগতীতে যে সাধারণ মানুষ দিশেহারা এটা নিয়ে রাজনৈতিক দলসহ কোন সংগঠনের কোন ধরণের জোড়ালো কোন কর্মসূচী দৃশ্যমান নয়। টুকিটাকি যে কথাগুলো মাঝে মধ্যে গণমাধ্যমে শোনা যায়, এগুলো আসলেও কাজ হওয়ার জন্য বলা নয়,জাষ্ট বলার জন্য বলা হয়। হাসিনা সরকারের সময়ও যেমন কেউ কিছু বলতে পারেনি, আমার মনে হয় এখনো ঠিক একই অবস্থা চলছে-কেউ কিছু বলতে পারছেনা।তবে কি ধরে নিবো,যাহা লাউ তাহায় কদূ?
নিত্যপণ্যের বাজারে লাগাম টানতে প্রতিদিন সরকার পক্ষ থেকে প্রেস ব্রিফিং,বাজার মনিটরিং এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালনা হচ্ছে।গণমাধমে শত শত সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে ।এ সব কিছু মিলে সরকার-গণমাধ্যম সহ সংশ্লিষ্ট সকলেই যেন বাজার নিয়ন্ত্রনে আদা জ্বল খেয়ে লেগে পড়েছে,কিন্তু সুফল কোথায়?
বাজার মুনিটরিং-এ কর্মকর্তারা সাধরণত চাষী ও পাইকারী ব্যবসায়ীদের মাঝে খুচরা ব্যবসায়ীদের বেচাকেনায় দামের তফাতটাই দেখছেন যে,কি দামে কিনে কত দামে বিক্রি হচ্ছে।এটা কোন সমাধান নয়।আবার এই মুনিটরিং এর সূত্র ধরে পাইকারী-খুচরার মাঝে বেশী ব্যবধান হলে,সে ক্ষেত্রে মাঝে মধ্যেই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা আদায় কারা হচ্ছে।চলমান পরিস্থিতিতে এটাও যথেষ্ট নয়।
সাধারণ মানুষের মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি বিষয়ে কোন ধারণা নেই,আর মূলত বর্তমান বাজার ব্যবস্থাপনায় অর্থনীর প্রকৃত কোন ফর্মূলাই ব্যবহার হচ্ছেনা,এমন কি এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের বাজারে যেটা চলছে,এটাকে বলা হয় এটচেটিয়া বাজার ব্যবস্থাপনা,কিন্তু সাধারণ ভোক্তারা সেটিও জানেনা বলে আমার ধারণা।সুতরাং নিম্ন আয়ের মানুষের আয়ের সাথে ব্যয়ের সংগতি কিভাবে থাকবে এটাই হলো আসল কথা,বাজারে ক্রেতা বিক্রেতার মাঝে সমতা থাকাটায় মূল বিষয়। এ ক্ষেত্রে বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর পরিসংখ্যান আমার কাছে মূল্যহীন বলে বিবেচিত।যেখানে বাজার নিয়ন্ত্রণ নেই,সেখানে এতো পরিসংখ্যান ও প্রতিবেদনের আসলেও কাজটা কি।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর-২০২৪) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতি নিয়ে চলতি বছরের অক্টোবর মাসের ভোক্তা মূল্যসূচকের (সিপিআই) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, চাল, ডাল, তেল, লবণ, মাছ, মাংস, সবজি, মসলা ও তামাকজাতীয় পণ্যের দাম বাড়ায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ।
কারণ হিসেবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে,সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে গত জুলাই মাসজুড়ে আন্দোলন করছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে দেশে এক ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়। রাজধানী ঢাকা কার্যত সারাদেশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। স্থবিরতা নামে পণ্য সরবরাহ। এরই প্রভাবে জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে উঠেছিল। দেশের ইতিহাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির এ হার অতীতে আর দেখা যায়নি।
এর আগে ২০২৩ সালের আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ হয়েছিল, যা গত ১২ বছরের মধ্যে ছিল সর্বোচ্চ। এর আগে খাদ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখা যায় ২০১১ সালের অক্টোবরে ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ। ফলে অক্টোবর মাসে সাধারণ খাত ও খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে।
অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য বা নিয়ম নীতি যেমন:ব্যষ্টিক অর্থনীতি,সমষ্টিক অর্থনীতি,চাহিদা, চাহিদা রেখা ও চাহিদা সূচি,বাজারে স্থিতিস্থাপকতা,যোগান,মোট মুনাফা-নিট মুনাফা এবং বাজারে সমতা এসবের কোনটায় কার্যকরী না থাকায় বহুমাত্রিক অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ী নামের সিন্ডিকেট দেশে একচেটিয়া বাজার ব্যবস্থাপনা কায়েম রেখেছে।
উল্লেখ্য,দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতী মানুষ দিশেহারা। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দামে লাগাম টানতে পারছে না সরকার ,আমার মনে হয় একথা সঠিক নয়।কারণ এই সিন্ডিকেট দখল করে আছে শুধু মাত্র নিত্যপণ্যের বাজার, আর যে সরকার-ই ক্ষমতায় থাক,সে দখল করে আছে পুরো দেশ,সুতরাং শক্তিশালী সিন্ডিকেট নয়,সরকার।সাধারণ জনগণনের প্রত্যাশার জায়গা সামান্যও পুরেুণ হয়েছে কি না, এটা অবশ্য দেশবাসী ইতোমধ্যেই অনেটায় বুঝে গেছে?দূর্ণিতিবাজ ও ফ্যাসীবাদকে বিদায় দিয়ে অন্তর্বতী সরকার এলো,জনগণনের আশার জায়গা ছিল,হয়তোবা এবার আর কিছু না হলেও ভাগ্য পরিবর্তনে আশার ছোঁয়া লাগবে নিত্যপণ্যের বাজারে।আশায় গুড়ে বালি।নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের বাজারে কোথায় সিন্ডিকেট? কেন সিন্ডিকেট? এবং এর সমাধান কি? এর সব উত্তর আছে সরকারের কাছে।সুতরাং নিত্যপণ্যের বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ সরকারকেই করতে হবে। সেটা যে ধরনের সরকার হোক না কেন? এ বিষয়টি এরিয়ে যাওয়র কোন সুযোগ কোন সরকারের আছে বলে আমি মনে করি না।এতে ব্যার্থ হলে আমি মনে করবো,সরকার অযোগ্য, অদক্ষ্য এবং অবিচক্ষণ সম্পূন্ন। আর এ কথাটি সরকার মানতে না চাইলে প্রতিয়মান হবে যে,সরকার নিজেই সিন্ডিকেট।(ফলে আমার ভাষায় বলি,সরকার লাগাম টানেনা-তাই বাজার থামেনা।