“প্রেসক্লাবের কমিটিতে আওয়ামীলীগের পদধারীদের পুনর্বাসনসহ নানা অপকর্মে ফেঁসে যাচ্ছেন সাংবাদিক হারুন অর রশিদ খান হাসান”
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্র ও আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে স্ব-ঘোষিত নবগঠিত কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং যায়যায়দিন পত্রিকার সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি এইচ. এম মোকাদ্দেস সরকার প্রেসক্লাবের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। সোমবার নিজের ফেসবুকে প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক বরাবর লেখা পোষ্ট দিয়ে পদত্যাগের ঘোষনা দেন তিনি। পদত্যাগের কারণ হিসেবে মোকাদ্দেস সরকার ফেসবুক পোষ্টে লিখেছেন, ‘গত ৫ আগষ্ট পতিত স্বৈরাচার পলায়নকারী শেখ হাসিনার দোসরদের নিয়ে গত ১৯ অক্টোবর সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটিতে আমি নীতিগতভাবে থাকতে পারি না। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিরোধীতা করে সরাসরি সক্রিয় থেকে শহীদ রঞ্জু, শহীদ লতিফ ও শহীদ সুমনের রক্তে রঞ্জিত হয়ে হোলি খেলায় মেতে উঠেছিল হেনরী ও মুন্নার দোসররা। সেই সব দোসরদের নিয়ে গঠিত কমিটিতে থেকে আমি শহীদদের আত্বার সাথে বেঈমানী করতে পারবো না। এছাড়াও প্রেসক্লাব নিয়ে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় আদালতের আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে এই কমিটি করা হয়েছে। আদালত অবমাননা করার দুঃসাহস আমার নেই। তাই স্ব-ইচ্ছায় প্রেসক্লাবের পদ থেকে পদত্যাগ করছি।
এদিকে, ১৬ অক্টোবর রাতে সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক আহবায়ক ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি এবং পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম ফিলিপসকে যুবদল নেতা রঞ্জু হত্যা মামলার সন্দেহভাজন আসামী হিসেবে পুলিশ আটক করার পর থেকে সে জেলহাজতে রয়েছেন।
ফিলিপসকে গ্রেপ্তারের পর প্রেসক্লাবের স্বঘোষিত সভাপতি হারুন অর রশিদ খান হাসান নিজের ফেসবুকে পোষ্ট দিয়ে ফিলিপসকে হত্যাকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং মোহনা টিভির সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি পরিশ্রমী ও পেশাদার সাংবাদিক সোহেল রানাকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। এছাড়াও উভয় সাংবাদিকের বিষয়ে ওই পোষ্টে নানা কুরুচিপুর্ন ভাষা ব্যবহার করেছেন খান হাসান। যা ১৯ নভেম্বর কলম সৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ এবং বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে প্রচার করা হয়েছে। এই ঘটনায় জেলা সদরে কর্মরত পেশাদার সাংবাদিকদের মধ্যে বিরুপ প্রভাব পড়েছে।
এ অবস্থায় বাংলাদেশ প্রতিদিন ও নিউজ ২৪ টিভির জেলা প্রতিনিধি সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুস সামাদ সায়েম নিজের ফেসবুকে সোমবার রাতে প্রেসক্লাবের স্বঘোষিত সভাপতি হারুন অর রশিদ খান হাসানের কার্যকলাপ নিয়ে দীর্ঘ মন্তব্য করে পোষ্ট করেছেন। এছাড়াও আরো কয়েকটি পোষ্টে হাসানের নানা সমালোচনা করেছেন সাংবাদিক আব্দুস সামাদ সায়েম। ওই পোষ্টগুলোতে বিগত সময়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে হাসানের উঠা বেশ কিছু ছবিও যুক্ত করা হয়েছে। ফেসবুক পোষ্টে সাংবাদিক আব্দুস সামাদ সায়েম উল্লেখ করেছেন, হাসান বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন ও সাংবাদিক ইসরাইল বাবুর অনুগত ছিলেন। হাসান আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দালাল ছিলেন। সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সিরাজগঞ্জের অভিভাবক ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর দূর্নাম ও বিরুদ্ধাচারণ করেছেন। টুকু ভাইয়ের বিরোধীদের সাথে গোপন বৈঠক করে ষড়যন্ত্র করছেন। স্ব-ঘোষিত সভাপতি হওয়ায় পর এখন আবার টুকু ভাইয়ের কাছে যাওয়ার জন্য ঘুরঘুর করছেন। ত্যাগী বিএনপি নেতাকর্মীরা এর কঠোর জবাব দেবেন। আব্দুস সামাদ সায়েমের দেওয়া পোষ্টও স্থানীয় অনলাইন মিডিয়ায় প্রকাশ করে ফেসবুকগুলোতে প্রচার করা হচ্ছে।
অপরদিকে, জেলা সদরে কর্মরত সাংবাদিকদের মাধ্যমে পরিচালিত “সিরাজগঞ্জ মিডিয়া হোম” নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকেও সাংবাদিক হাসানের বিরুদ্ধে নানা সমালোচনা করা হচ্ছে। সেখানে অভিযোগ করা হয়েছে, সাংবাদিক হাসান বরাবরই সাংবাদিকদের বিরোধী ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত। কোন সুযোগ আসলেই তিনি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কুরুচিপর্ন মন্তব্য করে থাকেন। সম্প্রতি ২৪ এর শহীদদের নিয়ে কোন মামলা দেওয়া হবে না মর্মে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে চাঁদাবাজি শুরু করেছেন তিনি। চাঁদা না দিলেই তাকে খুনি বানিয়ে ফেসবুকে প্রচার করছেন। এই ব্যক্তি থেকে সবাইকে নিরাপদে থাকার জন্যও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ওই পোষ্টে।
জেলা সদরে কর্মরত সিনিয়র সাংবাদিকরা হাসানের এহেন কর্মকান্ডে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, হাসান একজন সিনিয়র সাংবাদিক হয়েও দেশের এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পেশাদার সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ না করে সে নিজের ইচ্ছামত যা খুশি তাই করে যাচ্ছেন। এতে পেশাদার সাংবাদিক এবং ঐতিহ্যবাহী সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন এবং ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বিভিন্ন পেশার লোকজন এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ের পেশাদার সাংবাদিকরা বিষয়টি ভাল দৃষ্টিতে দেখছেন না। তারা হাসানের এমন কর্মকান্ডে ছিঃ ছিঃ করছেন।