জয়পুরহাটে বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরি চাষাবাদে সফল হচ্ছেন চাষীরা। খরচের তুলনায় বেশি লাভ হওয়ায় গেল বছরের তুলায় এবার বেড়েছে এর চাষাবাদ। সুস্বাদু-পুষ্টিকর ও বিদেশি ফলটি এখন জেলার চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।
তবে চাষীরা বলছেন, ‘এবার বেশ কিছু জমিতে দেখা দিয়েছে পোকামাকড়ের উপদ্রব। একাধীকবার ওষুধ প্রয়োগ করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। এ বিষয়ে কৃষি অফিসের যথাযথ পরামর্শ চেয়েছেন চাষীরা। যদিও জেলা কৃষি অফিস বলছেন, সবধরণের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে চাষীদের।’
সরেজমিন জানা গেছে, জেলার সদর উপজেলার জামালপুর, চান্দা ও কালীবাড়ী সহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রামে নিজ উদ্যোগে মেধা খাটিয়ে স্ট্রবেরি চাষ করছেন চাষীরা। গ্রামগুলো এখন পরিচিতি পেয়েছে ‘স্ট্রবেরি ভিলেজ’ হিসেবে। অল্প সময়ে উৎপাদন ও লাভ বেশি হওয়ার ফলে গেল বছরের তুলনায় বেড়েছে চাষাবাদ। আর বারতে শুরু করেছে ফলনও।এতে সফলতার আলো দেকতে পেয়েছেন চাষীরা।
চাষীদের তথ্য মতে , এবার বিঘা প্রতি সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ১ লাখ – ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর স্ট্রবেরি বিক্রি হবে ২ লাখ- ৩ লাখ টাকা। খুচরা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩০০-৪০০ টাকা। আর পাইকারি প্রতি কেজি ২৫০-৩০০ টাকা।
সদর উপজেলার কালীবাড়ী গ্রামের চাষী আজিজুল ইসলাম বলেন,‘ধান- আলু সহ অন্য ফসলের তুলনায় স্ট্রবেরি চাষাবাদে অনেক লাভ। এই গ্রামের অনেকেই এটি চাষাবাদ করে হচ্ছেন স্বাবলম্বী। আমরা সকাল- দুপুর পর্যন্ত জমি থেকে স্ট্রবেরি তুলে বাছাই শেষে প্যাকেট করি। বিকেলে পাইকারী ব্যবসায়ী এসে ২৫০-৩০০ টাকা কেজি দরে যান। তবে প্রথমদিকে প্রতি কেজি দাম ছিল ১২০০- ১৪০০ টাকা ।
একই উপজেলার চান্দা গ্রামের চাষী আলী আকবর বলেন, ‘প্রায় ৮ বছর ধরে স্ট্রবেরি চাষ করে আসছি। এবার দু বিঘা চাষ করেছি।বিঘাতে সর্বোচ্চ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। ফলন ভালো হলে ৩-৪ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। চারা রোপনের প্রায় ৫০ দিনের মাথায় ফল আসতে শুরু করে।প্রতিদিন বিঘায় ৪০-৫০ কেজি ফল সংগ্রহ হয়ে থাকে।
এই উপজেলা কালীবাড়ী গ্রামের চাষী রুবেল আহমেদ বলেন, ‘এ বছর ৩ বিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করেছি। জমিতে মাকড় লেগেছে। আর মাকড় এক ধরনের পোকা।এ পোকা অনেক ছোট, খালি চোখে দেখা যায় না। এরা পাতা খেয়ে গাছ নষ্ট করে দিচ্ছে। বিভিন্ন কোম্পানির দামী দামী ওষুধ দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। এ মাকড় নিধনের সঠিক ওষুধ পাচ্ছি না। মাঠে কৃষি অফিসারকে দেখতে পাই না। কৃষি অফিসারের কাছে দাবি, এর একটা উপযুক্ত চিকিৎসা বা ওষুধ প্রয়োজন
জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি মৌসুমে জেলায় এবার প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে স্ট্রবেরি । লাভজনক হওয়ায় চাষাবাদ বাড়ছে। স্ট্রবেরি জমি থেকে তোলার পরই খাওয়া যায়। তাই কৃষকেরা যাতে অতিরিক্ত কীটনাশক না দেন। তাদের জৈব উপায়ে বা নিরাপদভাবে উৎপাদনের পরামর্শ দিচ্ছি। পাশাপাশি ভোক্তাদের কাছে যাতে এটি নিরাপদ হয়, এর জন্য প্রশিক্ষণও দিচ্ছি। এ চাষাবাদ যাতে করে আগামীতে আরও বাড়ানো যায় সে জন্য পরামর্শ সহ অন্যান্য সহযোগিতাও দেওয়া হচ্ছে।