রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের বেড়িবাঁধ এলাকায় মাদক কারবারি রকি হত্যার ঘটনায় জড়িত দুজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, নিহত রকির সঙ্গে মাদক কারবার নিয়ে দ্বন্দ ও পূর্বে আবু কায়সার হত্যা নিয়ে প্রতিশোধ নিতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। তবে কি কারণে এই হত্যাকাণ্ড সেটি নিয়ে এখনো নিশ্চিত না পুলিশ।
এদিকে রকি হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতারকৃতরা হলো- মো. আবু তালেব মেম্বার (৩৭) ও মো. পলাশ খাঁ (৩৩)।
এছাড়াও পলাতক রয়েছেন আরও তিন জন তারা হলো- আলেক, আবু বক্কর, দুলাল। গ্রেফতারকৃত আবু তালেব এবং পলাতক বক্কর এরা দুইভাই। এছাড়াও আসামিরা সবাই পরস্পর আত্মীয় বলে জানায় পুলিশ।
গতকাল সোমবার (৩০ জুন) বিকেলে মাদারিপুর জেলার কালকিনি থানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
মঙ্গলবার (০১জুলাই) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ‘কামরাঙ্গীরচরে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে রকি হত্যা মামলার দুই আসামি গ্রেফতার’ প্রসঙ্গে এক সংবাদ সন্মেলনে এসব জানান লালবাগ বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন।
জসিম উদ্দিন বলেন, গত ২৩ জুন রাত ১২টা ৫ মিনিট হতে সাড়ে ১২টার মধ্যে কামরাঙ্গীরচর থানাধীন ৫৭নং ওয়ার্ডের বেড়িবাধ এলাকায় রিকশা গ্যারেজের সামনে পাকা রাস্তার উপর ভিকটিম রকি কে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিত ভাবে গ্রেফতারকৃত আসামিসহ পলাতক আবু বক্কর, দুলাল মিয়া এবং অজ্ঞাতনামা ২/৩ জন একত্রিত হয়ে ধারালো চাকু দিয়ে কুপিয়ে রকিকে গুরুতর জখম করে। পরে তারা ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যায়। ভুক্তভোগীর চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে আসে এবং চিকিৎসার জন্যে তাৎক্ষণিক রকিকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল উদ্দেশ্যে রওনা দেয়, মেডিকেল যাওয়ার পথে রকির মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় ভিকটিম রকির মা রাজিয়া বেগমের অভিযোগের ভিত্তিতে কামরাঙ্গীরচর থানায় একটি নিয়মিত মামলা হয়। মামলার পর বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ, নিবিড় তদন্ত ও প্রযুক্তির সহায়তায় গ্রেফতারকৃত আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে মাদারিপুর জেলার কালকিনি থানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা জানায় গত (২২ জুন) বেলা অনুমান সাড়ে ৩টার দিকে আসামি মেম্বার এবং শাওন নামীয় দুইজন, অজ্ঞাতনামা একজন রিকশাওয়ালার নিকট থেকে টাকা নিয়ে যায় এবং ভিকটিম রকির কাছে এ বিষয়ে নালিশ জানায়। তখন ভিকটিম রকি আসামি মেম্বারকে রিকশাওয়ালা এর কাছ টাকা নেওয়ার বিষয়টি জিজ্ঞাসা করলে এই নিয়ে ভিকটিম রকি ও মেম্বার এর মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও গালাগালি হয়। পরবর্তীতে এ ঘটনার জের ধরে গ্রেফতারকৃতরা রকিকে হত্যা করেছে ।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। হত্যার কাজে ব্যবহৃত চাকু উদ্ধারসহ হত্যাকাণ্ডে জড়িত পলাতক অন্যান্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
গ্রেফতারকৃত এবং পলাতক আসামিরা সবাই পরস্পর আত্মীয় জানিয়ে তিনি বলেন, কেরানিগঞ্জে যে হত্যাকান্ড হয়েছিল সেই হত্যাকান্ডে যে আবু কাইসার মারা গিয়েছিল। এই রকি হত্যকান্ডের সিসি টিভি ফুটেজে সর্বশেষ যে ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে দুলাল সে আবু কাইসারের বাবা।
মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে হত্যাকান্ড কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরাও ঘটনার মেইন মোটিভ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। যেহেতু গতকাল রাতেই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে সেহেতু এখনও সেভাবে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারিনেই। তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে আশা করি তাদেরকে পরবর্তী জিজ্ঞাসাবাদে সব তথ্য জানতে পারবো।
আগস্ট পরবর্তী সময়ে কামরাঙ্গীরচর এলাকায় অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে। এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নতুন ধরনের কোন উদ্যোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। আমাদের অন্যন্য বাহিনীগুলোও আমাদের সাথে সম্পৃক্ত করে জুন মাসেও বিভিন্ন অভিযান চালিয়েছি। মূলত এই অঞ্চলে পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষ ও ভাসমান মানুষের বসবাস যার ফলে অপরাধের পরিমানটা বেশি। আমরা আশা করি আগের তুলনায় অপরাধ অনেকটা কমিয়ে আনতে পেরেছি।