বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেছেন, পুশব্যাক বা পুশ ইন যেটাই বলেন এটা প্রতিনিয়ত হচ্ছে। হয়তো মাঝেমধ্যেই ২/১ দিন বন্ধ থাকছে। কিন্তু চূড়ান্ত প্রক্রিয়ায় পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা আমাদের পক্ষ থেকে বিএসএফের কাছে প্রতিনিয়ত কড়া প্রতিবাদ সবসময় দিচ্ছি৷ আমরা বলেছিলাম নিয়ম মাফিকভাবে হ্যান্ডওভার করতে। শুধু বাংলাদেশীকেই পুশব্যাক করানো হচ্ছে না, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারতীয় নাগরিককে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে, কিছু কিছু রোহিঙ্গা নাগরিককেও পাঠিয়ে দিচ্ছে যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল হয়ে যাচ্ছে বলে কঠোর প্রতিবাদ করেছি। জাতীয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০জুলাই) চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে অবস্থিত বিজিবির ঐতিহ্যবাহী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ (বিজিটিসিএন্ডসি)-এর বীর উত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত বিজিবি’র ১০৩তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ হয়। অনুষ্ঠানে শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি।
এ সময় বিজিটিসিএন্ডসি’র কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গাজী নাহিদুজ্জামানসহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পুশ ইন- ব্যাক সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, আমরা বলেছিলাম নিয়ম মাফিকভাবে হ্যান্ডওভার করতে। যদি আমাদের কেউ বাংলাদেশী অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করে থাকে তাহলে আমরা বিএসএফ’কে বুঝিয়ে মিটিং এর মাধ্যমে সমঝোতা করে তাদেরকে ফিরিয়ে আনা নিশ্চিত করেছি। কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় তারা আমাদের কাছে অফিসিয়ালি হ্যান্ডওভার করছে। কিন্তু সর্বক্ষেত্রে বিএসএফ শুনছে না। কিছু কিছু জায়গায় পুশব্যাক বা পুশ ইন এখনো চলছে।
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, আমরা বিএসএফ’কে বলার পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একাধিকবার ভারতীয় হাই কমিশনে একাধিকবার লেখা হয়েছে। বাংলাদেশ দূতাবাসেও লেখা হয়েছে। বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাসের হাইকমিশনারের সঙ্গে আমি যোগাযোগ রাখছি। আমরা এটা প্রতিহত করার চেষ্টা করছি। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যারা আসছেন তারা বাংলাদেশী যারা আগে ভারতে গিয়েছিল।
তিনি বলেন, “শুধু বাংলাদেশীকেই পুশব্যাক করানো হচ্ছে না, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারতীয় নাগরিককে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে, কিছু কিছু রোহিঙ্গা নাগরিককেও পাঠিয়ে দিচ্ছে যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল হয়ে যাচ্ছে বলে কঠোর প্রতিবাদ করেছি। জাতীয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়েছে।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে বিজিবি ডিজি বলেন, জনবলের সংকট রয়েছে। এটা আপেক্ষিক একটা বিষয়। আমাদের জনবল সব মিলে প্রায় ৫৭ হাজার। আমাদের ৪৪২৭ কিলোমিটারের অত্যন্ত দীর্ঘ বর্ডার। বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূল ভূমিও আছে। সে তুলনায় জনবল আমাদের আরো বাড়ানো প্রয়োজন। জনবল বাড়ানোর প্রক্রিয়া কিন্তু চলছে।
তিনি বলেন, কিছুদিন আগে কিন্তু উখিয়াতে একটা ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আরো বিভিন্ন জায়গায় আরো কিছু ব্যাটালিয়ন চালু করার প্রক্রিয়া চলছে। নতুন নতুন বিওপি বাড়ানো হচ্ছে। আমরা অচিরেই আরো ৫ হাজারের মতো জনবল বৃদ্ধির আশ্বাস আমাদেরকে দিয়েছে বর্তমান সরকার। অচিরেই আমরা হয়তো এই রিক্রুটমেন্ট এবং ট্রেনিং শেষ করে, বর্ডারে অন্যান্য কার্যক্রমসহ আসন্ন যে জাতীয় নির্বাচন সেখানেও আমরা কাজে লাগাতে পারি। গতকালই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের এ সংক্রান্ত বিষয়ে বৈঠক হয়েছে। এ ব্যাপারে পর্যাপ্ত আলোচনা হয়েছে। শুধু বিজিবি না অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ও জনবলসহ অন্যান্য সংকট দূরকরণে সিদ্ধান্ত হয়েছে। জনবল বৃদ্ধি সময় সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল একটি ব্যাপার। এটা চলমান প্রক্রিয়া আমরা চেষ্টা করব জনবল আরো বেশি করার জন্য।
জাতীয় নির্বাচন সম্পন্নে প্রস্তুতি চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আপনাদের কোনো প্রস্তুতি বা নির্দেশনা রয়েছে কিনা? নির্বাচনকালীন বর্ডার নিরাপত্তার বিষয়ও থাকে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, সীমান্ত রক্ষা বা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরই বাকি জনবলগুলো আমরা সুষ্ঠু-সুন্দর ফেয়ার জাতীয় নির্বাচনের জন্য যে সাপোর্টটুকু দেয়া দরকার তা যেন দিতে পারি।
তিনি বলেন, সীমান্তের ৮ কিলোমিটার এলাকায় ভোট কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু ভোটগ্রহণে বিজিবি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ভবিষ্যতে এটা নির্বাচন কমিশন বা সরকার যেভাবে দায়িত্ব দেয় আমরা সেভাবে কাজ করবো। এব্যাপারে নির্বাচন কেন্দ্রে, বা ভোট কেন্দ্রে যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ভয় বা যৌন জীবনের নিরাপত্তা হানি ঘটে সেজন্য শুধু বিজিবি নয় পুলিশ, আনসার, কোস্ট গার্ডসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সকল বাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।