রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলার জিউপাড়া ও ভাল্লুকগাছি ইউনিয়নের ধোপাপাড়া বাজার থেকে নলপুকুরিয়া হয়ে এসআরজি বটতলা পর্যন্ত সড়কটি প্রায় ২ কিলো দুরবস্থা যেন অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শতবর্ষ পুরোনো এই কাঁচা রাস্তাটি বছরের পর বছর ধরে মেরামতের অপেক্ষায় থাকলেও পায়নি উন্নয়নের ছোঁয়া। শুকনো মৌসুমে ধুলোর রাজত্ব আর বর্ষায় হাঁটু সমান কাদামাটি—এই দ্বৈত দুর্ভোগে ভোগে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ।
দুই ইউনিয়নের মানুষের যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অন্যতম প্রধান মাধ্যম এই সড়কটি। ধোপাপাড়া বাজার, রাইস মিল, মসজিদ, ঈদগাহ, গোরস্থান, ভূমি অফিস, ব্যাংকিং সেবা থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান—সবকিছুর কেন্দ্রে এই এলাকাটি। অথচ ওই সড়কের ভাঙা দশা দেখে মনে হয় না এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জনপদে অবস্থিত।
স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, “এটা যেন আমাদের কাছে অভিশপ্ত রাস্তা। সারাবছর কমবেশি কাদা থাকে, আর বর্ষায় তো একেবারেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়। বহুবার দাবি জানিয়েছি, শুধু লোক আসে মাপ নিতে, কাজ আর হয় না।”
সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘ এই সড়ক জুড়ে কোথাও কোথাও হাঁটুসমান কাদা জমে আছে। পথচারীদের হাতে স্যান্ডেল, পরনে কাদা লেপ্টে থাকা পোশাক—এই যেনো নিত্যদিনের চিত্র। গবাদিপশু চলাচল বন্ধ, হুইলচেয়ারে রোগী নেওয়া অসম্ভব, শিশু ও গর্ভবতী নারীদের চলাচল ভয়াবহ ঝুঁকিপূর্ণ।
ধোপাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফারিয়া রহমান কাদায় সিক্ত পা নিয়ে বলেন, “আমার মতো আরও শত শিক্ষার্থী কষ্ট করে স্কুলে আসে। পরীক্ষা থাকলেও এই রাস্তায় কাদা ভেদ করে আসতে হয়, পোশাক নষ্ট হয়। বয়স্ক বা অসুস্থরা তো একেবারেই আটকা পড়ে থাকেন।”
স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরাও জানান, শুধু এই রাস্তাটির কারণে উৎপাদিত মাছ ও সবজি জেলা শহরে পৌঁছাতে বাড়তি খরচ গুণতে হয়। মৎসচাষী আব্দল হান্নান বলেন, “রাস্তাটা পাকা হলে কৃষকরা বাঁচবে, লাভও হবে বেশি।”
ধোপাপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সজীব কুমার সরকার বলেন, “বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থীরা সময়মতো স্কুলে আসতে পারে না। দীর্ঘদিন ধরে আমরা রাস্তাটি পাকাকরণের দাবি জানিয়ে আসছি।”
এ বিষয়ে ভাল্লুকগাছি ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মোঃ আনিছুর রহমান বলেন: এই রাস্তাটি আসলেই অবহেলিত এতে কোন সন্দেহ নেই, আমি নিজেই বহুবার উপজেলায় গেয়েছি কিন্তু কেন যে রাস্তাটির কাজ হয় না এটা আমার নিজেরও জানা নেই।
রাস্তাটির উন্নয়ন বিষয়ে জানতে চাইলে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ. কে. এম. নূর হোসেন নির্ঝর বলেন, “আমি নিজেই এই রাস্তাটি করে দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ধোপাপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তখন অন্য বাজেট নিয়েছেন। তারপরও আমি বিষয়টি আবার দেখছি, প্রয়োজনে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে বহুপ্রয়োজনীয় এই সড়কের উন্নয়ন বারবার পিছিয়ে পড়ায় স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ। তারা আশা করছেন, দুর্ভোগের চিত্র ও জনসাধারণের আকুতি যেন এবারও আর উপেক্ষিত না হয়, এবং দ্রুত এই সড়কটি পাকাকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে উপর মহল।