এবার স্থাপত্য নকশার পাশাপাশি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কাছে ভবনের কাঠামোগত নকশাও জমা দিতে হবে। নির্মিয়মাণ ভবনের মজবুতীকরণ দেখার উদ্দেশ্যেই রাজউক এমন সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। এর আগে রাজউকের কাছে ভবনের স্থাপত্য নকশা (আর্কিটেকচারাল ডিজাইন) জমা দিয়ে রাজউকের বেঁধে দেয়া সব শর্ত পূরণ করা হলেই ভবন নির্মাণের অনুমোদন পাওয়া যেত। কিন্তু সামনের দিনগুলোতে আর তা হচ্ছে না।
আগামী ১১ এপ্রিল থেকে রাজউকের জোন-৩ থেকে এ ব্যাপারে পাইলটিং শুরু হবে বলে রাজউক থেকে জানা গেছে। রাজউকের জোন-৩ অঞ্চলটি মোহাম্মদপুর, মিরপুর, উত্তরা ১৫, ১৬ ও ১৭ সেক্টরজুড়ে অবস্থিত। এই জোনে নতুন ভবনের জন্য আর্কিটেকচারাল (স্থাপত্য) ও স্ট্রাকচারাল (কাঠামোগত) এই ধরনের ডিজাইন জমা দিতে হবে ১১ এপ্্িরল থেকে। তবে এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত আইন হয়নি। রাজউকের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রাজউক থেকে আইনের একটি খসড়া গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। তারা যত শিগগির আইনটি গেজেট আকারে প্রকাশ করবে তত তাড়াতাড়ি এ বিষয়ে পুরো ঢাকা শহরে এমনকি সারা দেশে নির্মাণকাজ শুরু হবে।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের নতুন ইমারত নির্মাণ বিধিমালা প্রণয়নের আগে ভবন নির্মাণ করতে হলে আর্কিটেকচারাল ও স্ট্রাকচারাল দুই ধরনের নকশা জমা দেয়াই বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু নতুন ইমারত নির্মাণ বিধিমালার আওতায় স্ট্রাকচারাল ডিজাইন জমা দেয়া স্বেচ্ছাধীন করে দেয়ায় ভবন মালিকদের আর দুই ধরনের নকশা জমা দিতে হয়নি। ফলে গত ১৪ বছরে কয়েক হাজার ভবন নির্মাণ হয়ে গেছে কেবল ঢাকা শহরে এবং ঢাকা হয়ে পড়েছে ভূমিকম্পে ঝুঁকিপূর্ণ একটি শহর।
তবে গতকাল রাজউকের জোন-৩ এর পরিচালক তাজিনা সরোয়ার জানিয়েছেন, তার আওতাধীন জোন-৩-এ এখন পর্যন্ত আগের নিয়মেই নকশা অনুমোদন হচ্ছে। এখন শুধু ভবনের নকশায় সংশ্লিষ্ট স্থপতি এবং কাঠামোগত ইঞ্জিনিয়ারের স্বাক্ষর নেয়া হচ্ছে। এর বাইরে আর কিছু হচ্ছে না। এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত রাজউক থেকে তিনি কোনো নির্দেশনাও পাননি।
রাজউকের কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকা শহর ভূমিকম্পে বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ শহরগুলোর একটি। আশেপাশে বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে এই শহরের কয়েক লাখ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। মুহূর্তেই হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি হতে পারে। ভূমিকম্প ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেতে এখনই সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া উচিত বলা হচ্ছে বিভিন্ন পর্যায় থেকে।
কেন স্ট্রাকচারাল ডিজাইন জমা নেয়া নতুন নির্দেশনা জারি করতে যাচ্ছে রাজউক? এ প্রশ্নের উত্তরে রাজউকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কেবল স্থাপত্য নকশায় নির্মিয়মাণ ভবনের মজবুতি বুঝা সম্ভব হয় না। আর্কিটেকচারাল ডিজাইনে কেবল ভবনটির কোন স্থানে দরজা, জানালা, বাথরুম, কিচেন এবং কয়টি রুম কোথায় কোথায় থাকবে এবং এগুলোর আকার কী রকম হবে তা নির্দেশ করা থাকে। ‘ভবনটি কতটুকু মজবুত হবে, ভবনটির অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে কি না, কত মাত্রায় ভূমিকম্প হলে ভবনটি টিকে থাকতে পারবে, ভবনটির কলামে অথবা বিমে কয়টি রড দেয়া হয়েছে’ এ ধরনের বিষয়গুলো বুঝা যায় না। আর এই সুযোগে ভবন মালিকরা নিজেদের ইচ্ছামতো ভবন তৈরি করে ভবনের বাণিজ্যিক স্বার্থটা বেশি দেখে ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ করে দিচ্ছেন। ফলে ভবনটি কতটুকু শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে থাকবে তা নিশ্চিত করা হয় না।
সট্রাকচারাল ডিজাইন জমা দেয়া হলে সেখানে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) অনুসরণ করা হয়েছে কি না তাও বুঝতে পারবে রাজউক অথবা অন্যান্য ভবন উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। অন্য দিকে নতুন করে স্ট্রাকচারাল ডিজাইন বাধ্যতামূলক করা হলে নকশা বিচ্যুতি (ডেভিয়েশন) কমে যাবে এবং ভবনগুলো মজবুত হবে। ফলে বড় ধরনের ভূমিকম্পেও ভবনগুলো টিকে থাকতে পারবে।
সম্প্রতি তুরস্কে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পে দেখা গেছে একই স্থানে নির্মিত কোনো কোনো ভবন টিকে রয়েছে এবং অনেকগুলো ধসে পড়েছে। বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা বলছেন, তুরস্কে যেসব ভবন সেখানকার সর্বশেষ বিল্ডিং কোড অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে সেগুলোর কিছু হয়নি। বাংলাদেশ তথা ঢাকা শহরের ভবনগুলো রক্ষা করতে নতুন আইনের বিকল্প নেই।