দেশের অন্যতম মেগা প্রকল্প হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় (থার্ড) টার্মিনালের নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে দ্রুতগতিতে। এখন পর্যন্ত এ প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ টার্মিনাল উদ্বোধন করবেন।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘থার্ড টার্মিনাল নির্মাণকাজের ৬৫ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। এ মাসের মধ্যে ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে যাবে। অবকাঠামো নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ শেষ। এখন ছাদের নকশার কাজ চলছে। এ ছাড়া টাইলস, স্যানিটারির কাজ চলছে। ভবনের ভিতরে লিফট ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি লাগানো হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে চলছে। আমরা আশা করি অক্টোবরের মধ্যে থার্ড টার্মিনালের সম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে পারব। এ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ হলে উড়োজাহাজ ওঠানামা ও যাত্রী পরিষেবা বাড়বে।’
সরেজমিন প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভবনের কাঠামো নির্মাণকাজ শেষ। চারপাশে গ্লাস লাগাচ্ছেন শ্রমিকরা। সে কাজ প্রায় শেষের পথে। ভবনের ভিতরে একসঙ্গে একাধিক কাজ চলছে। একপাশে চলছে টাইলসের কাজ। আরেক পাশে লিফট বসানো হচ্ছে। ছাদে নকশার কাজ প্রায় শেষ। একাধিক শিফটে কাজ করছেন শ্রমিকরা। দিনরাত ব্যস্ততা প্রকল্প এলাকা জুড়ে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে বর্তমানে যে দুটি টার্মিনাল রয়েছে, তার যাত্রীধারণ ক্ষমতা বছরে প্রায় ৭০ লাখ। তৃতীয় টার্মিনাল তৈরি হলে এ সংখ্যা দাঁড়াবে ২ কোটির কাছাকাছি। ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটারের এ টার্মিনালে একসঙ্গে ৩৭টি প্লেন রাখার অ্যাপ্রোন (প্লেন পার্ক করার জায়গা) নির্মাণ করা হচ্ছে। টার্মিনাল ভবন হবে ২ লাখ ৩০ হাজার স্কয়ার মিটারের। ভবনের ভিতরে থাকবে পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য ও অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তির ছোঁয়া। নির্মাণাধীন টার্মিনালটিতে বেশ কয়েকটি স্ট্রেইট এসকেলেটর লাগানো হবে। যারা বিমানবন্দরের ভিতরে দীর্ঘপথ হাঁটতে পারবেন না, তাদের জন্য এ ব্যবস্থা। সিঙ্গাপুর, ব্যাংককসহ বিশ্বের অত্যাধুনিক বিমানবন্দরগুলোয় বেশি যাত্রী প্রবাহের জায়গায় এ এসকেলেটর ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এটি যাত্রীদের মসৃণ যাত্রার অভিজ্ঞতা দেবে। বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে মেট্রোরেল। তৈরি হবে পৃথক একটি স্টেশনও। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে আসা যাত্রীরা বিমানবন্দর থেকে বের না হয়েই মেট্রোরেলে নিজেদের গন্তব্যে যেতে পারবেন। এ ছাড়া ঢাকার যে কোনো স্টেশন থেকে মেট্রোরেলের মাধ্যমে সরাসরি বিমানবন্দরের বহির্গমন এলাকায় যাওয়া যাবে।
টার্মিনালটির প্রতিটি ওয়াশরুমের সামনে থাকবে একটি করে বেবিকেয়ার লাউঞ্জ। এ লাউঞ্জের ভিতর মায়েদের ব্রেস্ট ফিডিং বুথ, একটি বড় পরিসরে ফ্যামিলি বাথরুম থাকবে। এ ছাড়া শিশুদের খেলার জন্য স্লিপার-দোলনাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা থাকবে। হেলথ ইনস্পেকশন সুবিধা, প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ফার্স্ট এইড রুম, নানা রোগের টেস্টিং সেন্টার ও আইসোলেশন এরিয়া থাকবে। টার্মিনালের ভিতরের ভবনটির নকশা তৈরি করেছেন বিখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিন। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ প্রকল্প ব্যয় নির্ধারিত হয়েছে ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা। মোট খরচের মধ্যে সরকার দেবে ৫ হাজার ২৫৮ কোটি এবং ঋণ হিসেবে জাপানের সংস্থা জাইকা দেবে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। থার্ড টার্মিনালের নকশায় পর্যাপ্তসংখ্যক একসেলেটর, সাবস্টেশন ও লিফট সংযুক্ত রাখা হয়েছে। থাকবে রাডার, কন্ট্রোল টাওয়ার, অপারেশন ভবন, বহুতল কারপার্ক। টার্মিনালের সঙ্গে নির্মাণাধীন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাধিক লুপ সংযুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে যাত্রীরা কোনো সড়ক ব্যবহার না করেই উড়ালপথে গাড়ি নিয়ে টার্মিনালের পার্কিং এরিয়ায় চলে যেতে পারবেন। তিন তলাবিশিষ্ট এ টার্মিনাল ভবনটির স্থাপত্যরীতিতে আনা হচ্ছে অনন্য নান্দনিকতা। টার্মিনাল ভবনের বহির্বিভাগে থাকবে চোখ ধাঁধানো নকশা।