প্রাইমারী স্কুলে ১ম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা ২য় ডোজ ভ্যাক্সিন ডোজ প্রদানে সম্মানি ভাতা স্ব স্ব স্বাস্থ্যকর্মীদের হাতে তুলে দেন ব্র্যাক কর্মকর্তারা। আর সেই সম্মানি ভাতা পকেটস্থ করার করার জন্য সুকৌশলে হাতিয়ে নিলেন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম ।
এছাড়াও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সাড়ে ৪ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নন ক্যাডার এক মেডিকেল অফিসার! ২০১১ সালে এডহক থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে কোন প্রমোশন ছাড়া কিভাবে একজন নন ক্যাডার মেডিকেল অফিসার কিভাবে সাড়ে ৪বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে একটি উপজেলার স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান হয়ে দায়িত্ব পালন করে এই নিয়ে সিরাজগঞ্জ জেলায় চলছে নানা রকম আলোচনা-সমালোচনা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, করোনা ভাইরাস সংক্রমন প্রতিরোধের জন্য কোভিড ভ্যাক্সিন প্রদান করে সরকার। আর এই কোভিড ভ্যাক্সিন প্রয়োগের জন্য সারাদেশে প্রতিটি ইউনিয়নে সাবেক ওয়ার্ডে একটি করে দল গঠন করা হয়। একটি দলে টিকা পুশ করবে স্বাস্থ্য সহকারী আর সহযোগিতা করবে ২জন স্বেচ্ছাসেবী। ইউনিয়ন পর্যায়ে সর্বস্তরের মানুষকে কোভিড ভ্যাক্সিন প্রয়োগ শেষে ২০২৩ সালে প্রাইমারী স্কুলে মে মাসে ১ম ডোজ টিকা প্রদান করা হয়। দ্বিতীয় ডোজ টিকা প্রদান করা হয় আগষ্ট মাসে। দ্বিতীয় ডোজের স্বাস্থ্য সহকারীদের সম্মানি ভাতা প্রদান করেন ব্র্যাক। প্রতিটি পুরাতন ওয়ার্ডে একটি টিমে ১৪হাজার ৫’শ টাকা করে ১০টি ওয়ার্ডে ৪লাখ ৩৫ হাজার ও পৌরসভায় ৫টি পুরাতন ওয়ার্ডে ৭২ হাজার ৫’শ টাকা সম্মানী ভাতা স্বাস্থ্যকর্মীদের হাতে পৌছে দিতে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে যান ব্র্যাকের কর্মকর্তারা। ব্র্যাকের কর্মকর্তারা স্বাস্থ্য সহকারীদের হাতে সম্মানি ভাতা হাতে পৌছে দিতে প্রথমে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা: জাহিদুল ইসলামের নিকট অনুমতি চান। কিন্তু ডা: জাহিদুল ইসলাম ব্র্যাকের কর্মকর্তাদের বলেন, সমুদয় সম্মানি ভাতা দিয়ে যান, আমি সকল স্বাস্থ্য সহকারীদের নিকট তাদের সম্মানি ভাতা পৌছে দিব। কিন্তু ব্র্যাকের কর্মকর্তারা সুষ্পষ্টভাবে বলে দেন, ব্র্যাক একটি বেসরকারি এনজিও। যার যার সম্মানি ভাতা, তার তার হাতে পৌছে দিব। এক পর্যায়ে স্বাস্থ্য সহকারীদের সম্মানি ভাতা প্রদান না করে চলে আসার সময় ডা: জাহিদুল ইসলাম ব্র্যাকের কর্মকর্তাদের নিকট ১৫মিনিট সময় চান। আর এই ১৫ মিনিট সময়ের মধ্য সকল স্বাস্থ্য সহকারীদের সাথে আলাপ আলোচনা করে সকল স্বাস্থ্য সহকারীরা নিজ নিজ স্বাক্ষরে সম্মানি ভাতা গ্রহন করবে, গ্রহন করার পর স্বাস্থ্য সহকারীরা নিজেই স্ব স্ব পুরাতন ওয়ার্ড থেকে ১৪হাজার ৫’শ টাকার মধ্য ৫হাজার টাকা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা: জাহিদুল ইসলামকে প্রদান করবে। এই শর্তে সকল স্বাস্থ্য সহকারীরা প্রতিটি পুরাতন ওয়ার্ডে ব্র্যাকের কর্মকর্তাদের নিকট থেকে ১৪হাজার ৫’শ টাকা করে গ্রহন করে। সম্মানি ভাতা গ্রহন করার পরপরই পুরাতন ওয়ার্ড প্রতি ৫হাজার টাকা করে ১০টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার পুরাতন ৩৫টি ওয়ার্ডে ১লাখ ৭৫ হাজার টাকা ডা: জাহিদুল ইসলামকে প্রদান করেন স্বাস্থ্য সহকারীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্বাস্থ্য সহকারী বলেন, গোপনে প্রতিটি স্বাস্থ্য সহকারীকে জিজ্ঞাসা করলে, ঘটনার সত্যতা পাবেন।
এবিষয়ে স্বাস্থ্য সহকারী এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সেলিম ঘটনা সত্যতা স্বীকার বলেন, ব্র্যাকের কর্মকর্তারা আমাদের নিজ হাতে সম্মানি দিতে চেয়েছিল। তখন আমাদের কর্মকর্তা বাধা প্রদান করে। পরবর্তীতে ডা: জাহিদুল ইসলাম বলেন, এখন সম্মানি না নিলে আর পাওয়া যাবে না। তখন আমরা বাধ্য হয়ে ওয়ার্ড প্রতি ৫হাজার টাকা দিয়ে বাধ্য হয়ে সম্মানি ভাতা নিতে বাধ্য হয়েছি।
এছাড়াও ডা: জাহিদুল ইসলাম এর যোগদানের পর থেকে ৪ মাস পরপর পিকনিক, বিদায় অনুষ্ঠান, পিটুলী ভোজ, ইফতারি, ফল উৎসব এর নামে উপজেলার সকল কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার, স্বাস্থ্য সহকারি, স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও অফিস কর্মচারীদের কাছে জনপ্রতি নির্দিষ্ট টাকার পরিমাণ বসিয়ে চাঁদা আদায় করে। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাকে কর্মক্ষেত্রে ভুলত্রুটি, ক্লিনিকের আগমন-প্রস্থান এর ৫-১০ মিনিট কমবেশি হলে বিভিন্ন ধরনের চিঠি দিয়ে বরখাস্তের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে থাকে। এখানে তিনি ক্ষ্যান্ত নন, চাঁদা ও বিলের কর্তনের বিষয়ে কেউ মুখ খুললে তাকে বরখাস্ত করা হবে মর্মে বিভিন্ন সময়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে থাকে। এছাড়াও পিকনিক, বিদায় অনুষ্ঠান, পিটুলী ভোজ, ইফতারি, ফল উৎসবে চাঁদা প্রদান করার পরেও তার অসৌজন্যমূলক আচারণ, অসুলভমূলক কথাবার্তা না শোনার জন্য অনুষ্ঠানে আসতে চাই না। কিন্তু ক্ষমতার দাপট দেখানোর জন্য তার অসৌজন্যমূলক আচারণ, অসুলভমূলক কথাবার্তা শোনার জন্যই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বরখাস্তের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে অনুষ্ঠানে আসতে বাধ্য করেন। যদি কোন ব্যক্তি না আসে তবে তাকে কৈফিয়ত তলব করে থাকেন।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ৪৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকে ২০২৩ নভেম্বর ২দিন ও ২০২৪ সালে মার্চ মাসে পুষ্টি বিষয়ে ২দিন ব্যাপী মা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার বরাদ্দ প্রদান হয়। ২০২৩ নভেম্বর ২দিনব্যাপী মা সমাবেশের ১০লাখ ৯৭হাজার ১’শ টাকার আত্মসাত ও চলতি বছরে ফেব্রুয়ারী মাসের শেষের দিক থেকে মার্চের ১০ তারিখের মধ্য মা সমাবেশ অনুষ্ঠিত না করে ১৪মার্চ ২০২৪ইং তারিখে ১০লাখ ৯৭হাজার ১’শ টাকা বরাদ্দের বিল ভাউচার স্বাক্ষর করে সিরাজগঞ্জ জেলা হিসারক্ষন কর্মকর্তা বরাবর জমা প্রদান করেন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিবার কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা: জাহিদুল ইসলাম। ইতিমধ্য ১ম দফায় ২০২৩ নভেম্বর ২দিনব্যাপী মা সমাবেশের ১০লাখ ৯৭হাজার ১’শ টাকা ও ২য় দফায় ১০লাখ ৯৭হাজার ১০০টাকা আত্মসাত করেছেন বলে স্বাস্থ্যকর্মীরা অভিযোগ করেন।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা: জাহিদুল ইসলাম বলেন, অফিসের চা খরচ বাবদ কিছু টাকা কর্তন করেছি। এটা কোন দোষের কিছু না।