পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে স্বামী পরিত্যাক্তা এক সুন্দরী নারীকে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী নাসির উদ্দিন নামে জামায়াতে ইসলামীর এক নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় অভিযুক্ত নাসির উদ্দিন উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়ন জামায়াত ইসলামীর সাবেক আমীর এবং বর্তমান রোকন। তিনি ওই ইউনিয়নের পশ্চিম বালিপাড়া গ্রামের মান্নান হাওলাদারের ছেলে।
গত ২৮ অক্টোবর ধর্ষণের ঘটনায় ভূক্তভোগী নারী খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইবুনাল-০১ এ এই মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ২৪৭/২০২৪। আদালত অভিযোগটির শুনানী শেষে মামলাটি খুলনা পিবিআইকে তদন্ত শেষে রিপোর্ট প্রদানের নির্দেশ দেন। এদিকে জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে ঐ নারীর ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ক্লিভ ছড়িয়ে পড়লে গোটা উপজেলা জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে আলোচনার ঝড় ওঠে। এ ঘটনা চারিদিকে জানাজানি হওয়ার পর ঐ জামায়াত নেতাকে এখন আর প্রকাশ্যে এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়নি বলে জানান এলাকাবাসী।
মামলার বিররণে জানা যায়, স্বামী পরিত্যক্তা ভূক্তভোগী ওই নারী ও সাবেক জামায়াত নেতা নাসির উদ্দিন একই গ্রামের বাসিন্দা। চাকুরী দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নাসির উদ্দিন ওই নারীর অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে গত ২৩ অক্টোবর খুলনায় নিয়ে যায় এবং টুটপাড়ার ১৭৪/২৫ নং হোল্ডিংয়ের ফয়সাল ভিলা নামক বাড়ীতে গিয়ে উঠেন। সেখানে তাকে আটকে রেখে ২ দিনে নয় বার তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করেন। পরে ২৪ অক্টোবর ওই নারী কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে বিষয়টি তার আত্মীয় স্বজনকে জানায় এবং তাদের পরামর্শে খুলনা সদর থানায় মামলা করতে যান। থানা কর্তৃপক্ষ মামলা না নিয়ে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দিলে তিনি উক্ত আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
ইন্দুরকানী উপজেলা জামায়াতে ইসলামী আমীর মাওলানা আলী হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ নাসির উদ্দিন বালিপাড়া ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর আমীর ছিলেন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে ২০২৩ সালে জামায়াতে ইসলামী দল থেকে বহিস্কার করা হয়।
তবে উপজেলা নেতৃবৃন্দ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ২০২৩ সালে তাকে জামায়াতে ইসলামীর ইউনিয়ন আমীরের পদ থেকে বহিস্কার করার কথা দাবি করলেও বর্তমানে তিনি জামায়াতের রোকন পদে রয়েছেন বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। তাকে গত কয়েক মাস যাবত ইন্দুরকানিতে সভা সমাবেশ সহ জামায়াতের বিভিন্ন দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে মামলার বাদী ভুক্তভুগী ঐ নারীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর বিভিন্ন রকম হুমকি ধামকির কারণে জীবনের নিরাপত্তার অভাবে বর্তমানে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন বলে তার স্বজনরা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
সূত্রে জানা যায়, কয়েক মাস আগে স্বামীর সাথে ওই নারীর বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। ওই ঘরে বর্তমানে তার দুটি সন্তান রয়েছে। স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর বাপের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন তিনি। সেখানে অসহায় জীবন যাপন করায় একটি চাকরির খোঁজে ঐ জামায়াত নেতার কাছে যান তিনি। চাকরির ব্যবস্থা হলে তিনি তাকে জানাবেন বলে আশ্বস্ত করেন। কয়েকদিন পর ওই নারীকে জানান যে তার জন্য একটি চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই তাকে তার সাথে খুলনা যেতে হবে। এরপর সে তার কথামতো তার সাথে খুলনা চলে যান এবং সেখানে সে তার দ্বারা ধর্ষণের শিকার হন।
এদিকে জামাত নেতা নাসির এ বিষয়টি অস্বীকার করে এড়িয়ে গেলেও সিসিটিভির ফুটেছে একটি খাবার হোটেলে বোরকা পরিহিত ঐ নারীর সাথে দুজনার আলাপচারীতার দৃশ্য দেখা গেছে।
তবে এ ঘটনায় মামলার স্বাক্ষী জসিম উদ্দিন জানান, “নিরাপত্তার কারনে বাদীর মোবাইল ফোন বন্ধ আছে।” তবে ঘটনা সংক্রান্ত বাদীর সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও এ প্রতিবেদকের কাছে পাঠিয়েছেন। যাতে বাদী সকল ঘটনার বর্ননা করেছেন।
এ ব্যাপারে সাবেক জামায়াত নেতা নাসির উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি নিজে এ ধরনের কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পারেন না বলে দাবি করেন। এটাকে তার বিরুদ্ধে স্থানীয় এক মাদক ব্যবসায়ীর ষড়যন্ত্রের ছক বলে উল্লেখ করেন তিনি।