কোটা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত হজের টাকা জমা নেওয়া চলবে। এ জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখ বেঁধে দেওয়া হয়নি। এ সময়সীমা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। বারবার সময় বাড়ানোর পরও হজের কোটা পূরণ না হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার ছিল হজের টাকা জমা দেওয়া বা নিবন্ধনের শেষ দিন। এদিন পর্যন্ত মোট ১ লাখ ২ হাজার ১৯৩ জনের কোটা পূরণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দৈনিক জনকণ্ঠকে হজ অফিসের পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন- বারবার সময় বাড়ানোর পরও যখন কোটা পূরণ হয়নি, তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ের্ছি এখন থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে টাকা জমা নেওয়ার। সফটওয়্যারে এমনভাবে কমান্ড দেওয়া হয়েছে যাতে ১ লাখ ২৭ হাজার ৯৮টি পর্যন্ত টাকা জমা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সার্ভার বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আর কেউ টাকা জমা দিলেও সেটা সার্ভার নেবে না।
তবে খরচ কমাতে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও এবার হজের প্যাকেজ মূল্য কমানো হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। হজ নিবন্ধনের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল কাশেম মুহাম্মদ শাহীন জানান, হজ প্যাকেজ কমানোর কোনো সুযোগ নেই সরকারের কাছে।
খরচ না কমানোর কারণ হিসেবে ডলারের দাম ও বিমান ভাড়া, বাসা ভাড়া এবং মোয়াল্লেম ফি বৃদ্ধির কথা জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। এর আগে গত ১৫ মার্চ হাইকোর্টকেও এমনই তথ্য জানিয়েছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়। যদিও বর্তমান প্যাকেজ মূল্যকে অমানবিক বলেছে হাইকোর্ট। পরে হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া কমানোর সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি। তারা বিমান ভাড়া ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা থেকে কমিয়ে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা করার জন্য সুপারিশ করেন।
একইসঙ্গে হজযাত্রীদের চিকিৎসার জন্য যে মেডিক্যাল টিম পাঠানো হয়, সেখানে হার্ট, অ্যাজমা ও ডায়াবেটিস রোগ বিশেষজ্ঞকে অন্তর্ভুক্তির জন্যও সুপারিশ করা হয়। তবে কোনো কিছুতেই মন গলেনি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আবুল কাশেম জানান, বৃহস্পতিবারই শেষ হচ্ছে নিবন্ধনের সময়। এখন পর্যন্ত ২৩ হাজার ৫৮৯ জনের কোটা বাকি আছে। তিনি জানান, কোটা পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিবন্ধন সার্ভার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। নিবন্ধন ভাউচার প্রস্তুতের পরবর্তী দুই কার্যদিবসের মধ্যে অর্থ ব্যাংকে জমা দিয়ে নিবন্ধন নিশ্চিত না করলে ওই ভাউচার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জানা গেছে- হজ নিবন্ধনের শেষ দিনেও কোটা খালি রয়েছে প্রায় ২৪ হাজার। সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যেতে পারবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত হজে যেতে চূড়ান্তভাবে নিবন্ধন করেছেন ১ লাখ ২ হাজার ১৯৩ জন। সে হিসেবে এখন পর্যন্ত ২৫ হাজার ৫ হজযাত্রীর কোটা খালি রয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজযাত্রী প্রাক-নিবন্ধন সিস্টেমের হিসাব অনুযায়ী-২০২৩ সালে হজে যেতে ইচ্ছুক দুই লাখ ৪৯ হাজার ২২৪ জন প্রাক-নিবন্ধন করেছিলেন। এদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধন করেছিলেন আট হাজার ৩৯১ জন। আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধন করেছিলেন দুই লাখ ৪০ হাজার ৮৩৩ জন।
প্রাক-নিবন্ধন করতে ৩০ হাজার টাকা (ফেরতযোগ্য) জমা দিতে হয়। আর নিবন্ধনের চূড়ান্ত সময় জমা দিতে হয় অবশিষ্ট টাকা। তবে পাহাড়সম এই খরচ না জোগাতে পেরে অনেকেই চূড়ান্ত নিবন্ধন করছেন না। বরং প্রাক-নিবন্ধনের টাকা ফেরত নেওয়ার আবেদন করছেন।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ-১ শাখার নির্দেশনা অনুযায়ী প্রাক-নিবন্ধনকারীদের হজের চূড়ান্ত নিবন্ধনের শেষ তারিখ ছিল গত ২৩ ফেব্রুয়ারি। প্রথম দফায় এই মেয়াদ ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
কিন্তু কোটা পূরণ না হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় ৭ মার্চ এবং তৃতীয় দফায় ১৬ মার্চ পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। তবে মন্ত্রণালয় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে- এবার আর দিন-তারিখ দিয়ে সময় বৃদ্ধি করা হবে না। কোটা পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এটা চলতেই থাকবে। যখন কোটা পূরণ হয়ে যাবে তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সার্ভার বন্ধ হয়ে যাবে।
বিমান ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই ॥ এদিকে অস্বাভাবিক ভাড়া নিয়ে দেশ বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভের মুখে বিমান আবারও জানিয়েছে কোনো অবস্থাতেই এটা কমানোর সুযোগ নেই। বৃহস্পতিবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শফিউল আজিম গণমাধ্যমকর্মীদের এ কথা বলেন।