বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫, ০২:৩৯ পূর্বাহ্ন

বাবা-মায়ের চেয়ে আপন কেউ নেই

হাফেজ মাওলানা আল আমিন সরকার / ৮ বার দেখা হয়েছে
আপডেট করা হয়েছে মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫, ৮:২৬ অপরাহ্ন

জীবনের দীর্ঘপথে চলতে গিয়ে কত মানুষের সঙ্গেই তো আমাদের পরিচয় হয়। কত সম্পর্ক গড়ে ওঠে, বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, সহমর্মিতার অগণিত মুখ আমাদের ঘিরে থাকে। কিন্তু সময়ের স্রোতে অনেক সম্পর্ক ফিকে হয়ে যায়, অনেক আপনজনও পরিস্থিতির কারণে পর হয়ে যায়। শুধু দুটি সম্পর্ক পৃথিবীর সবকিছুর ঊর্ধ্বে অক্ষয় হয়ে থাকে, যার গভীরতা কখনো মাপা যায় না- বাবা এবং মা। তাঁরা হলেন সেই ছায়াবৃক্ষ, যার তলে আমরা পৃথিবীর সব দাবদাহ থেকে আশ্রয় খুঁজে নিই। মায়ের আঁচলের স্নিগ্ধ গন্ধে আমাদের সব কষ্ট মুছে যায় আর বাবার হাত ধরে আমরা দুর্গম পথ পাড়ি দেওয়ার সাহস পাই। এ পৃথিবীতে বাবা-মায়ের ভালোবাসাই একমাত্র নিঃস্বার্থ ও অকৃত্রিম, যার বিনিময়ে তাঁরা কিছুই চান না। সন্তানের হাসিমুখই তাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। পৃথিবীর সবটুকু ভালোবাসা একদিকে আর বাবা-মায়ের স্নেহ আরেকদিকে- তাঁদের ভালোবাসার পাল্লাই সর্বদা ভারী থাকে। তাই তো নির্দ্বিধায় বলা যায়, বাবা-মায়ের চেয়ে বড় আপনজন পৃথিবীতে আর কেউ নেই, ছিল না এবং থাকবেও না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা মানুষকে তাঁর সৃষ্টির সেরা হিসেবে জ্ঞান, বুদ্ধি ও বিবেক দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আমাদের জীবনকে সুন্দর ও সহজ করতে তিনি অসংখ্য নেয়ামত দান করেছেন, যার মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেয়ামত হলো পিতা-মাতা। তাঁদের মাধ্যমেই আমরা পৃথিবীতে আলোর মুখ দেখি এবং জীবনের পথচলা শুরু করি। সন্তানের জন্য পিতা-মাতার ত্যাগ ও ভালোবাসার কোনো সীমা নেই। গর্ভধারণের কষ্ট থেকে শুরু করে জন্মদান এবং সন্তানকে লালনপালন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে মা অকল্পনীয় কষ্ট সহ্য করেন। নিজের আরাম-আয়েশ, স্বাচ্ছন্দ্য সবকিছু বিসর্জন দিয়ে তিনি সন্তানের মঙ্গল নিশ্চিত করেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা মায়ের এ ত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন : ‘আমি মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে এবং দুই বছরে তার দুধ ছাড়ানো হয়।’ (সুরা লুকমান, আয়াত: ১৪)।

অন্যদিকে বাবা হলেন পরিবারের বটবৃক্ষ, সন্তানের নিরাপদ আশ্রয়। তিনি নিজের স্বপ্ন ও আকাঙ্খাকে বিসর্জন দিয়ে সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করেন। সন্তানের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য তিনি যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বাবা জান্নাতের দরজাগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম। তুমি চাইলে সে দরজার যত্ন নিতে পার অথবা তা হারিয়ে ফেলতে পার।’ (সুনান ইবনু মাজাহ, হাদিস : ৩৬৬৩)। প্রকৃতপক্ষে পিতা-মাতা সন্তানের জন্য এক জীবন্ত ছায়া। তাঁদের নিঃস্বার্থ দোয়া সন্তানের চলার পথকে মসৃণ করে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া অবশ্যই কবুল হয়’, যার মধ্যে অন্যতম হলেন পিতা-মাতা, যখন তাঁরা সন্তানের জন্য দোয়া করেন। (সহিহ মুসলিম)।

বর্তমান প্রেক্ষাপট ও আমাদের করণীয় : আধুনিক জীবনের ব্যস্ততায় আমরা অনেকেই পিতা-মাতার সান্নিধ্য থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। তাঁদের জন্য সময় বের করা বা তাঁদের খোঁজখবর নেওয়ার মতো সাধারণ দায়িত্বটুকুও পালন করতে পারছি না। অথচ বৃদ্ধ বয়সে তাঁরা কেবল সন্তানের একটু ভালোবাসা, যত্ন আর সম্মানই প্রত্যাশা করেন। এটি শুধু সামাজিক দায়িত্বই নয়, বরং জান্নাত লাভের অন্যতম উপায়ও বটে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন ‘তোমার রব আদেশ দিয়েছেন, তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদত করবে এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে। যদি তাদের কেউ অথবা উভয়েই বার্ধক্যে উপনীত হন, তবে তাদের “উফ” পর্যন্ত বলো না, ধমক দিও না; বরং তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক কথা বলো।’ (সুরা আল-ইসরা, আয়াত : ২৩)। রসুলুল্লাহ (সা.) আরও সতর্ক করে বলেছেন : ‘ধ্বংস হোক সেই ব্যক্তি, যার পিতা-মাতা বা তাদের একজন বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন, অথচ সে (তাদের সেবা করে) জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৫৫১)।

এমনকি পিতা-মাতা যদি অমুসলিমও হন বা শিরকের মতো গুনাহ করতে বলেন, তবু তাঁদের পার্থিব প্রয়োজন মেটানো এবং সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ ইসলাম দিয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘তারা যদি তোমাকে আমার সঙ্গে এমন কিছু শরিক করার জন্য চাপ দেয়, যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তবে তুমি তাদের কথা মানবে না। কিন্তু দুনিয়ার জীবনে তাদের সঙ্গে সদ্ভাবে বসবাস করবে।’ (সুরা লুকমান, আয়াত : ১৫)। যাদের পিতা-মাতা পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন, তাদের জন্য দোয়া ও সদকায়ে জারিয়ার মাধ্যমে দায়িত্ব পালনের সুযোগ রয়েছে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মানুষ মারা গেলে তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়।

লেখক : ইসলামিক গবেষক


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By Limon Kabir