সিরাজগঞ্জের চলনবিলে পানি এলেই নৌকা নিয়ে একটু আনন্দ ভ্রমনের খোজে বেড়িয়ে পড়ে এখানকার ভ্রমণ পিপাসুরা। বর্ষা মৌসুম এলেই যেন প্রান ফিরে পায় চলন বিলসহ উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর উপজেলার বিভিন্ন নদনদী। বর্ষা মৌসূমে চলনবিল প্রাকৃতিক সৈন্দয্যের এক অপরুপ লিলাভূমিতে পরিনত হয়। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি বৃহৎ বিল চলনবিল সিরাজগঞ্জ, নাটোর এবং পাবনা জেলা নিয়ে এ বিল গঠিত।
দুরদুরান্ত থেকে ভ্রমন পিপাসু লোকজন পরিবার, আত্বীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব নিয়ে বর্ষা মৌসুমে চলনবিল সহ উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর উপজেলার বিভিন্ন নদনদীতে নৌকা ভ্রমনে আসে।
কিন্তু বর্তমানে বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথে নৌকা ভ্রমনের নামে নৌকায় ডিজে বক্স বাজিয়ে উদ্যোম নাচ, আর অশ্লিলতায় ছেয়ে গেছে সমগ্র চলনবিলসহ বিভিন্ন নদনদী। কিছু অসাধু চক্র যাত্রা শিল্পিদের দিয়ে নৌকার উপরে ডিজে পার্টির আয়োজন করছে। আর উঠতি বয়সি তরুনরা ক্রমশঃ ঝুকছে এসব অশ্লীলতার আর বেহায়াপনার দিকে।
আর এসব নৌকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে চলনবিল সহ উল্লাপাড়া উপজেলার বিভিন্ন নদনদী।
সিরাজগঞ্জ রোড, সলঙ্গার তালতলা বিশ্বরোড, হরিন চড়া, দবিরগন্জ, উল্লাপাড়া, মোহনপুর, এসব যায়গায় রয়েছে অশ্লিল নিত্যপরিবেশন কারী যাত্রা শিল্পিদের নামে বেনামে একাধিক সংগঠন ও দালাল চক্র।
এর মধ্যে সিরাজগঞ্জ রোডের জেলা যাত্রা শিল্পী উন্নয়ন পরিষদ ও সলঙ্গা তালতলা স্বপ্ন নাট্য সংস্থা এর মধ্য অন্যতম।
এসব ভুইফোর সংগঠনের নামে দুরদুরান্ত থেকে মেয়েদের এনে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে রেখে দীর্ঘদিন ধরে নৌকা, বাসা বাড়ি সহ বিভিন্ন জায়গায় ডিজে পার্টির নামে চলছে অশ্লিলতা ও বেহায়াপনা।
আর এসব পরিচালনা করছেন জেলা যাত্রা শিল্পী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি, মনজীল হক ও সেক্রেটারি মিজানুর রহমান, এছাড়াও দালাল চক্রের মধ্যে রয়েছে, জাহিদ, খড়ি আলম, ছাগল শফি, কাঠ শফি সাতটিকরি গ্রামের শামিম, ঝালমুড়ি আলামিন, সাকান আলী, হরিনচড়া এলাকার হাসান, ময়ান , দবিরগন্জের শাহিন সহ বেশ কয়েকজন।
আগে ভিন্ন ভিন্ন পেশা থাকলেও বর্তমানে সবারই পেশা হিসেবে দারিয়েছে দেশের বিভিন্ন অন্ঞল থেকে মেয়ে নিয়ে এসে অশ্লীল কাজে ভাড়া খাটানো। এসব দালাল চক্র সিরাজগন্জ রোড ও তালতলার বিভিন্ন বাসা ভাড়া নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মেয়ে নিয়ে এসে, বাসা বাড়িতে বিভিন্ন অনুষ্ঠান সহ, নৌকায় অশ্লীল পিকনিকে শিল্পীদের ভাড়া দিয়ে থাকে।
নৌকাশ দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকায়,এবং রাতের অন্ধকারে নির্জন জায়গায় অশ্লীল ডিজে পার্টিতে চার হাজার টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া নিয়ে থাকে।
এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ জনগনের কাছ থেকে চক্রটি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ।
আবার এসকল এলাকায় সন্ধ্য হলেই জমে উঠে উঠতি বয়সি তরুন আর দালালদের আনাগোনা ও দৌড়াত্ব।
রাত বাড়লে বাড়তে থাকে অসামাজিক কার্যকলাপ।
প্রশাসনের উদাসিনতায় ক্রমশই বেড়ে চলছে এসব ডিজে পার্টি, অশ্লিল নৌকা ভ্রমন, ও দালালদের দৌড়াত্ব।
এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ জেলা যাত্রা শিল্পি উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি মোনজিল হক বলেন, নৌকার পিকনিকে আমিও শিল্পি ভাড়া দেয়।
ওরা অসহায় এখন যাত্রা চলে না তাই ওদের কোন কাজ নেই
তাই আমরা নৌকায় দু একটা শিল্পী ভাড়া দিয়ে থাকি।
জেলা যাত্রা শিল্পি উন্নয়ন পরিষদের সেক্রেটারী মিজানুর রহমান বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, নৌকায় অশ্লীল বা বাসা বাড়িতে অশ্লীল কাজে আমারা শিল্পী দেই না। এগুলা যারা করে আপনারা পারলে পুলিশে ধরিয়ে দিন।
এ সকল দালাল ও শিল্পিদের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে ও রয়েছে। তৈরি করা হয় বিভিন্ন ধরনের অশ্লীল কনটেন্ট।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার অনেকেই বলেন, সিরাজগঞ্জ রোডের যাত্রা শিল্প সংগঠনের পরিচয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক মেয়েরা বিভিন্ন বাসা বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকছে এবং বিভিন্ন অপরাধ মূলক কার্যকলাপে জরিয়ে পরছে।
কিছু প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এরা অসামাজিক কার্যকলাপ করে আসছেন। এলাকার উঠতি বয়সী যুবক থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত বিপথে চলে যাচ্ছে। এলাকার অনেকেই দ্বিতীয় বিবাহ করেছে এছাড়াও অনেকেই স্ত্রী পরিচয় দিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হচ্ছে। অনেক পরিবারের মধ্যে এ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। আশেপাশের পরিবেশের সামাজিক অবক্ষয় রীতিমতো চরমে। এগুলো বন্ধে প্রশাসনের দৃষ্টি দেওয়া জরুরী।
সলঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান জানান, আমার ইউনিয়নে একটি সংগঠন আছে এবং এদের বিরুদ্ধে নৌকায় অশ্লীল পিকনিকে শিল্পিদের ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ শুনেছি।
সলঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি, কোথাও অশ্লিল কার্যকলাপ হলে বা অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জল হোসেন বলেন, যদি সংগঠনের নামে কোন ব্যাক্তি বা সংগঠন অশ্লিল কার্যকলাপে লিপ্ত হয় বা নারীদের দিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ করায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যপারে ভ্রমন পিপাসু সাধারন জনগন ও স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি এসকল নৌকা ভ্রমনের নামে অশ্লিলতা ও চলন বিলের সৈন্দর্য্য রক্ষা সহ এলাকার সুষ্ঠ স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে এসব ভুইফোর সংগঠন বন্ধে প্রশাসনের সুদৃষ্টি দেওয়া জরুরী।
টিপিএন২৪/ রাব্বি হাসান হৃদয়