রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ০৬:৩৩ অপরাহ্ন

খোলা তেলে ক্ষতিকর উপাদান-বহুমত্রিক স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ করুণ

এম.এ.জলিল রানা / ৩২ বার দেখা হয়েছে
আপডেট করা হয়েছে রবিবার, ২৯ জুন, ২০২৫, ৫:২৪ অপরাহ্ন
ফাইল ছবি

ভেজাল বিরোধী আন্দোলন,মোবাইল কোর্টে জরিমানা,নিত্য পণ্যের বাজারে বহুমাত্রিক ভেজালের ছড়াছড়ি-কিছুতেই যেন থামছেনা
‘খোলা তেল তো আমি খাই না’এই কথা শোনা যায় এখন ঘরে ঘরে । মধ্যবিত্ত-শুরু করে নিম্নবিত্ত পর্যন্ত সবার পছন্দের তালিকায় এমন বোতলজাত তেল। কিন্তু স্বাস্থ্য-সচেতনতার এই ‘কমিটমেন্টে’র মধ্যে বলতে গেলে প্রত্যেকের শরীরে ঢুকছে ‘অস্বাস্থ্যকর’ খোলা তেল। যা জন্ম দিয়েছে এক গভীর উদ্বেগের ।

হোটেল, ফাস্টফুড দোকান অথবা সড়কের পাশের পিঁয়াজু-চপ-শিঙাড়ার ঝালঝাল স্বাদ বা মুখরোচক প্রায় সব খাবারেই ব্যবহার করা হচ্ছে এই খোলা তেল। আপনি ‘অস্বাস্থ্যকর’ ভেবে খোলা তেল খাচ্ছেন না ঠিকই, কিন্তু অজান্তেই প্রতিদিন বাইরের খাবারের সাথে সেই খোলা তেল গ্রহণ করছেন। বাসা-বাড়িতে রান্নায় আপনি যত ভালো তেলই ব্যবহার করুন না কেন? বাইরের প্রতিটি খাবারের মাধ্যমে আপনার শরীরে ঢুকছে সেই পুরোনো, অপরিশোধিত ও বারবার ব্যবহৃত পোড়া তেল।

# জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, খোলা তেলে একদিকে যেমন দীর্ঘমেয়াদে ভিটামিন ‘এ’ ঘাটতির ঝুঁকি বাড়ছে, তেমনি পরিশোধিত না হওয়া অথবা বারবার ব্যবহৃত তেলের ক্ষতিকর উপাদান স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করছে। এ অবস্থার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিএসটিআই ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এবং মাঠপর্যায়ে নজরদারির দুর্বলতাকে দায়ী করা হচ্ছে।


খোলা তেলের একচেটিয়া রাজত্ব ফুটপাত থেকে নামি-দামি হোটেল-রেস্তোরাঁয়:

বাংলাদেশের প্রাণ কেন্দ্র রাজধানী শহরের ব্যস্ততম এলাকার কথা দিয়েই শুরু করা যাক, বাড্ডা,রামপুরা ও মালিবাগ এলাকার কমপক্ষে ২০-২৫ টিরও বেশি হোটেল, খাবারঘর ও স্থানীয় রেস্তোরাঁয় এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সেগুলোতে প্রতিদিন দেদারছে ব্যবহৃত হচ্ছে খোলা-অপরিশোধিত ভোজ্যতেলে রান্না করা খাবার। এমন কি প্রায় সব দোকানেই একি তেল নিয়মিত একাধিকবার ব্যবহার করা হচ্ছে। আর অধিকাংশ হোটেলে রান্নাঘরের একপাশে টিনের পট ও ড্রামে করে রাখা ভোজ্যতেল ব্যবহৃত হচ্ছে ভাজাপোড়ার কাজে ।

শুধু সখের রাজধানী ঢকা-ই নয়,সরেজমিন ও বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য তথ্য সূত্রে প্রাপ্ত সংবাদে জানা গেছে, দেশব্যাপী জেলা-উপজেলা,নগর-বন্দরের নামি-দামী হোটেল-রেস্তোরাঁর গুণ্ডিপেরিয়ে এখন পাড়া ও গ্রাম-গঞ্জের আনাচে-কানাছে গড়ে উঠা সাধারণ হোটেল-রেস্তোরাঁ ও ফুট পাতের মুখরোচক পিঁয়াজু-চপ-শিঙাড়া ছাড়াও তৈরি করা হচ্ছে নাগেট, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ও ফ্রায়েড চিকেন সহ রকমারী ঝালঝাল স্বাদের ভাজার দোকানেও খোলা ও আগের ব্যবহৃত হচ্ছে। পোড়া তেল পুনরায় গরম করে পরোটা, বেগুনি ও ডিম ভাজার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।এ সব বিষয়ে একাধিক দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিক সূত্রে জানা গেছে,‘আমরা খোলা তেল-ই কিনি, কারণ প্যাকেটের তেল দামি। লাভ থাকে না। তরুণ ও শিশুদের কাছে এগুলো বেশ জনপ্রিয়। তবে, তেলের উৎস নিয়ে কর্মচারীরা কোনো স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেননি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব তেল নাম-ঠিকানাবিহীন বা অজ্ঞাত কোনো পাইকারি দোকান থেকে আনা হয়েছে। যার গায়ে নেই কোনো লেবেল, নেই ভিটামিন-এ যুক্ত করার প্রমাণ।একাধিক হোটেলে দেখা যায়, প্রতিদিনের খাবার (মাছ-মাংস-তরকারি) তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছেঅ স্বাস্থ্যকর খোলা তেল । ভোক্তারা জানতেও পারছেন না তাদের পরিবেশিত খাবারে ব্যবহৃত তেল আদৌ সরকার নির্ধারিত পুষ্টিমান মেনে চলছে কি না?

সবচেয়ে উদ্বেগজনক চিত্রের দেখা মিলেছে দেশের বিভিন্ন জেলার স্থানীয় চানাচুর ও খোলা স্ন্যাকস প্রস্তুতকারী কারখানাগুলোতে। বেশিরভাগ ছোট কারখানা নিয়মিত খোলা তেল কিনে বড় ড্রামে রেখে বিরতিহীনভাবে এ সব তেলে ভাজাভুজি করছে একটি শিশুখাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, যার চানাচুর বিভিন্ন ছোট ছোট দোকানে বিক্রি হয়,তার তেলের উৎস নিয়ে কথা বললে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি এড়িয়ে যায়।

স্বাস্থ্য-সচেতনতার মায়াজালে শরীরে অপুষ্টির ছোবল :

রাজধানী শহর ঢাকার জীবনযাপনে স্বাস্থ্য-সচেতনতার প্রতি ঝোঁক বেড়েছে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো এখন ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত তেলের ব্যবহার প্রায় নিয়মে পরিণত হয়েছে। বাসায় রান্নার সময় তারা তেলের মান, প্যাকেজিং, এমনকি ফর্টিফিকেশন বিষয়ে নিশ্চিত হতে চান। কিন্তু ঘরের বাইরে পা রাখলেই সেই সচেতনতা যেন শহরের কোলাহল আর ভেজালের ভিরে মিলিয়ে যায়। খাবারের স্বাদ ও দাম নিয়েই যখন এত ভাবনা, তখন তেল কোথা থেকে এসেছে সেটা আর মনে থাকার কথা নয়।

এমন চিত্র দেশজুড়ে। ভোক্তারা ঘরের ভেতরে কতটা সচেতন, বাইরে কতটা উদাসীন। যার সুযোগ দিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। মানহীন, অস্বাস্থ্যকর এমনকি বারবার ব্যবহৃত খোলা তেল ব্যবহার করে তৈরি করা হচ্ছে ফাস্টফুড, চানাচুর, পরোটা, হালুয়া-পুরি। শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক, সবাই এসব খাবারের ভোক্তা। অথচ এসব তেলের অনেকেরই নেই সরকার নির্ধারিত ভিটামিন ‘এ’ ফোর্টিফিকেশন, নেই পরীক্ষিত উৎস বা সঠিক প্যাকেজিং।

চিকিৎসকদের মতে, এ তেলের মাধ্যমে শরীরে প্রতিদিন ঢুকছে অপুষ্টি। এছাড়া চোখের ক্ষতি, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসের মতো দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও রয়েছে।

ভিটামিন এ ঘাটতি ও পুষ্টিহীনতা তেলের কারণে ভবিষ্যতের স্বাস্থ্য সংকট:

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এখন ভিটামিন ‘এ’-এর ঘাটতিকে এক নীরব মহামারি হিসেবে দেখছেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশে এ ঘাটতির প্রভাব ভয়াবহ। বাংলাদেশও এ সংকট মুক্ত নয়। রাতকানা, চোখের শুষ্কতা, কর্নিয়ার ক্ষয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা; সবই ভিটামিন ‘এ’-এর ঘাটতির বহিঃপ্রকাশ। ফলে দীর্ঘমেয়াদে শিশুদের মধ্যে রক্তশূন্যতা, বারবার অসুস্থ হওয়া এমনকি অকালমৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে অনেক গুন।

২০১১–১২ সালের জাতীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রায় ২০.৯ শতাংশ স্কুলগামী শিশু ভিটামিন ‘এ’ স্বল্পতায় ভুগছে। জার্নাল অব হেলথ, পপুলেশন অ্যান্ড নিউট্রিশনে প্রকাশিত এক গবেষণার তথ্য বলছে, ভারতে প্রাক-প্রাথমিক বয়সী প্রায় ৬২ শতাংশ শিশু এ ঘাটতিতে আক্রান্ত এবং প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ ৩০ হাজার শিশুর মৃত্যু এ কারণেই হয়। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায়ও এই সমস্যা প্রকট।

স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবেলায় অনেক দেশ ইতোমধ্যেই খাদ্যপণ্য বিশেষত ভোজ্যতেলের বাধ্যতামূলকভাবে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে। ভারত ২০১৮ সালে ফুড ফর্টিফিকেশন রিসোর্স সেন্টার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ভোজ্য তেলসহ ৫টি প্রধান খাদ্য পণ্যে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’ সংযোজন শুরু করে। বাংলাদেশে ২০১৩ সালে আইন এবং ২০১৫ সালে বিধিমালার মধ্যে ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ ফর্টিফিকেশন বাধ্যতামূলক করে।

কিন্ত বাস্তবতা হলো, এ আইন মানার প্রবণতা অনেক উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই নেই। বিশেষ করে খোলা তেলের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও উদ্বেগজনক। খোলা ও অপরিশোধিত তেল ব্যবহার করে তৈরি হওয়া খাবার যা প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ রাস্তাঘাট, হোটেল-রেস্তোরাঁ বা মিষ্টির দোকানে গ্রহণ করছে তাতে ভিটামিন ‘এ’ থাকে না বললেই চলে। এ খাদ্যাভ্যাস জনগণের ভেতর একটি নীরব পুষ্টিহীনতা গড়ে তুলছে।

অন্ধত্ব,কিডনি বিকল থেকে হৃদরোগ-সব খানে বিপদের হাতছানি:

দেশের প্রখ্যাত কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ ও স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত চিকিৎসক অধ্যাপক মো: কামরুল ইসলাম খোলা তেল ও অস্বাস্থ্যকর উপাদানে ভাজা খাবার কে ‘নীরব ঘাতক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন,‘বাইরে থেকে কেনা খাবারে নানা ধরনের ক্ষতিকর উপাদান মেশানো হয় যেমন- শরীরের জন্য বিপজ্জনক কেমিক্যাল, রং, প্রিজারভেটিভ কিংবা ফরমালিন। এসবের সাথে থাকে অস্বাভাবিক পরিমাণ তেল, যার একটি বড় অংশ খোলা ও বারবার ব্যবহৃত অপরিশোধিত তেল। এসব তেল শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, বিশেষ করে লিভার ও কিডনিতে দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে।’তিনি সতর্ক করে বলেন,‘এসব খাবার শুধু অস্থায়ী-অস্বস্তি নয় বরং দীর্ঘমেয়াদি ক্ষত তৈরি করে। একপর্যায়ে এগুলো দুরারোগ্য রোগ যেমন- কিডনি ফেইলিউর, হেপাটাইটিস বা ক্যানসারের মতো জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এ বিপজ্জনক চক্র থেকে মুক্ত থাকতে হলে আমাদের বাইরের এসব মুখরোচক কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ খাবার বর্জন করতে হবে এবং ঘরে স্বাস্থ্যকর উপায়ে তৈরি খাবারের প্রতি বিশেষ মনোযোগী হতে হবে।’

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা: সোহেল রেজা চৌধুরী সতর্ক করে বলেন, “ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’-এর ঘাটতির কারণে দেশে শিশুদের মধ্যে অন্ধত্ব, হাড় ক্ষয় ও হৃদরোগের মতো শারীরিক সমস্যা বাড়ছে। এ স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলায় আমাদের বাজার থেকে ড্রামের খোলা তেলের অবাধ বিক্রি বন্ধ করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে ভিটামিন সমৃদ্ধ ব্র্যান্ডেড তেলের সহজ প্রাপ্যতা।” ‘আমরা বাসার খাবারে যতই সচেতন হই না কেন? বাইরের খাবার থেকেই এখন সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এসব খাবারে ব্যবহার করা হয় খোলা ও বারবার ব্যবহৃত তেল, যা ফর্টিফাইড তো নয়ই বরং চরম বিষাক্ত। এতে ক্যান্সারের ঝুঁকিও তৈরি হয়।’

বিশেষজ্ঞরা একমত পোষণ করেছে যে, শুধু আইন করলেই হবে না; বাস্তবায়ন এবং তদারকি না থাকলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করবে। কারণ, এ ‘নীরব ঘাতক’ শরীরে ধীরে ধীরে প্রবেশ করে ভবিষ্যতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিচ্ছে।

নীরব ঘাতক ঠেকাতে চাই কঠোর নিয়ন্ত্রণ এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. নাজমা শাহীন বলেন, “বর্তমানে দেশে প্রচলিত অনেক বোতলজাত সয়াবিন তেলের অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে বেশি ট্রান্সফ্যাট পাওয়া যাচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। একি সাথে খোলা ও অপরিশোধিত তেলের সহজলভ্যতা এবং নিয়মিত ব্যবহারের ফলে বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষের মাঝে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’-এর ঘাটতির আশঙ্কা বেড়েই চলেছে।”

সমাধানের পথ দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘কেবল আইন তৈরি করলেই চলবে না, এর কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বিএফএসএ ও বিএসটিআই সহ নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও মানব সম্পদ বাড়াতে হবে। তদুপরি, গবেষণার মাধ্যমে ট্রান্স ফ্যাট নিয়ন্ত্রণে কার্যকর প্রযুক্তি ও কৌশল খুঁজে বের করার কাজ আমরা ইতোমধ্যেই শুরু করেছি।’

অন্যদিকে, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের ইপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, “সরকার ইতোমধ্যে খোলা তেলের বাজারজাত নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু বাস্তবায়নের ঘাটতির কারণে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে না। ড্রামের মতো অস্বাস্থ্যকর প্যাকেজিংয়ে তেল বিক্রি এখনও অব্যাহত আছে, যা আলো ও বাতাসের সংস্পর্শে এসে ভিটামিন ‘এ’ ধ্বংস করে ফেলেছে এবং তেলকে বিষে পরিণত করছে।”

তিনি সুপারিশ করেন, ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের খাদ্য-গ্রেড বোতল বা প্যাকেট ব্যবহার করতে বাধ্য করতে হবে। রিফাইনারি গুলোকে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’-এর নির্ধারিত মাত্রা বজায় রেখে তেল প্রক্রিয়াজাত করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারের নীতিনির্ধারকদের পাশাপাশি ভোক্তা ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে ব্যাপক সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। এ তেল শরীরে কীভাবে পুষ্টি না দিয়ে ধীরে ধীরে রোগ তৈরি করে, সেটা সবাইকে বোঝাতে হবে।”

খোলা তেলের আইন শুধু কাগজে সীমাবদ্ধ:

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন,“খোলা তেল বিক্রি নিষিদ্ধ নয়, এটাই মূল সমস্যা। আইন আছে শুধু তখনই- যখন ভিটামিন ‘এ’ না থাকলে বা তেল দূষিত হলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু চোখে দেখা যায় না তেলটি ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ কি না, অথবা আগেই ব্যবহৃত হয়েছে কি না। ফলে প্রমাণ না থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন হয়ে যায় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন,‘অভিযানের পর সন্দেহভাজন তেলের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠাতে হয়। ফল আসতে অনেক সময় লেগে যায়। ততদিনে সেই দোকান হয়তো আর খোলা থাকে না বা দোকানদার নম্বর-ই বদলে ফেলে। ফলে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়।’

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) উপ-পরিচালক (সিএম) এস এম আবু সাঈদ বলেন, “আমাদের বিদ্যমান আইনে বলা আছে, বাজারজাতকৃত প্রতিটি ভোজ্যতেলে অবশ্যই ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ থাকতে হবে। তেলের মান নির্ধারণ ও পরীক্ষার বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে দেখি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে,বিভিন্ন খুচরা দোকান, রেস্তোরাঁ বা খাবারের দোকানে এখনও যেসব তেল ব্যবহার হচ্ছে, তার অধিকাংশই খোলা ড্রামের তেল, এগুলোর কোনো মান যাচাই হয় না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, খোলা তেল সরাসরি জনস্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। তাই এই তেলের বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ করা প্রয়োজন। আমরা বারবার ব্যবসায়ীদের বোঝাচ্ছি, কিন্তু কঠোর নজরদারি ছাড়া এটা কার্যকর হচ্ছে না।


(ভেজাল টেকাতে করনীয়:(১) ভিটামিন ‘এ’ নেই, এমন মানহীন খোলা তেলের,বাজারজাত বন্ধ করতে অনতীবিলম্বে সরকারকে প্রয়োজনীয় বাস্তবমূখী পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে,(২) যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহনে পর্যাপ্ত জনবল বাড়াতে হবে,(৩)ভেজাল বিরোধী অভিযানে মোবাইল কোর্টে জরিমানার পরিবর্তে কারাদন্ডের ব্যবস্থা করতে হবে,(৪)ভেজাল বিরোধী অভিযানে সাংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে অসাধু ব্যবসায়ীদের আঁতাত বন্ধ করতে হবে,এবং (৫)দেশব্যাপী বহুমাত্রি ভেজাল প্রতিরোধে ভেজাল বিরোধী অভিযান চলমান রাকতে হবে)।(ভেজাল বিরোধী অভিযানে সাংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যদি হয় ভেজাল শূন্য,দেশবাসী তবেই পাবো বাজারে নির্ভেজাল পণ্য)।


লেখক: এম.এ.জলিল রানা,সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিষ্ট: সম্পাদক ও প্রকাশক: ভয়েস অব পার্লামেন্ট.কম।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By Limon Kabir