ধানমন্ডি ৩২সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে শুধু বিবৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে সরকারের কার্যকর ভূমিকা অপরিহার্য।
দীর্ঘ সময় ধরে কথিত স্বাধীনতা পক্ষের শক্তির দলীয়করণ ও পরিবারতন্ত্রের সীমাহীন দূর্ণীতি,অনিয়ম ও কর্তৃত্ববাদী শাসনামলে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সবচেয়ে বেশি এবং অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করেছেন শেখ হাসিনা ও তার দোসররা। উদ্ভূত এ পরিস্থিতি গণতান্ত্রিক উত্তরণ, সুশাসন ও রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি স্বরুপ।
প্রতিহিংসা,ধ্বংসাত্মক ও অপতৎপরতার পথ পরিহার করে সকল রাজনৈতিক দলকে আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া খুবি জরুরী। তবে একথা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই যে, দলীয়করণ ও পরিবারতন্ত্রের বহুমাত্রিক লোভ-লালসায় ভরা কর্তৃত্ববাদী শাসনামলে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার যে অপূরণীয় ক্ষতি করেছেন গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত বিশ্বের নিকৃষ্টতম স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ও তার দোসররা।তাই পলাতক শেখ হাসিনা ও তার দেশি-বিদেশি সহযোগীদের দেশ বিরোধী চরম ষড়যন্ত্রমূলক প্রচারণার করণে বহুমাত্রিক অধিকার হরণের শিকার দেশের আপামর জনসাধারণের ক্ষোভের মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়েদিয়েছে
তবে আমরা যাই বলি না কেন? বিষয়টিকে যে ভাবেই ব্যাখ্যা করিনা কেন? আইন এটাকে পারমিট করে না। আইনসিদ্ধ প্রক্রিয়ার পথ অনুসরণ না করে দেশব্যাপী যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা,প্রতিশোধপ্রবণ ভাঙচুর ও সহিংসতা চালানো হয়েছে,তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।(কারণ কোন ব্যক্তি যেনে বুঝে অথবা যে কোন কারনে একটি অপরাধ সংঘটিত করেছে,মানে সে অপরাধী। আইনসিদ্ধ প্রক্রিয়ার তার বিচার না করে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী একই অপরাধ সংঘটিত করা এটাও আইন পরিপন্থী বলে আমি মনে করি)। কারণ এটি জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী একটি সুখী-সুন্দর সমৃদ্ধশালী ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ বিনির্মাণ বিষয়ে দেশ-বিদেশ থেকে ইতিবাচক কোনো বার্তা আনবে না।’
সহিংস কর্মসূচির ঘোষণা থাকার পরও আইনশৃঙ্খলা সংস্থা ও তার সঙ্গে সহায়ক হিসেবে দায়িত্বপালনরত সেনাবাহিনী, তথা সরকার কার্যকর নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আশঙ্কাজনকভাবে নিরবতার পরিচয় দিয়ে পরবর্তী সময়ে ঘটনাটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত- এমন বিবৃতি দিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করতেও দেখা গেছে যা দেশবাসী সরকারের কাছ থেকে আদৌ প্রত্যাশা করেনা। ।’
কর্তৃত্ববাদের সুদীর্ঘ ১৬ বছরের জমে থাকা বিশাল জঞ্জাল অপসারণে মধ্যে দিয়ে শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় অন্তর্বর্তী সরকারের সদিচ্ছা হয়তো বা বিতর্কের ঊর্ধ্বে।কিন্তু তার প্রয়োগে সুচিন্তিত ঝুঁকি নিরসন কৌশলের ওপর ভিত্তি করে যে কোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কতটা সক্রিয়,সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর কারণে এ প্রশ্ন যৌক্তিকভাবে উত্থাপিত হতে পারে,তবে এটা সময়ের পরিক্রমা। তাই শুধু দায়সারা ব্রিফিং নয়, যে কোনো পরিস্থিতি আইনসিদ্ধ মোকাবেলায় সরকারের যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান দেখতে চায় দেশবাসী ।
কেন জানি মনে হয় এ উদ্ভূত পরিস্থিতি বাস্তব প্রেক্ষাপটে আওয়ামী কর্তৃত্ববাদের পুনরুত্থানকামী মহলকেই অধিকতর সুযোগ করে দেওয়ার শঙ্কা তৈরি করছে।এমনটি চলমান থাকলে নজিরবিহীন আত্মত্যাগের বিনিময়ে সূচিত নতুন বিজয়ের মধ্যে দিয়ে নতুন বাংলাদেশের অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের পথ রুদ্ধ হয়ে পড়তে পারে। পাশাপাশী গণতান্ত্রিক উত্তরণ, সুশাসন এবং বিশেষ করে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতার সম্ভাবনাকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দারুন সংকদের দিকে ঠেলে দেওয়া হবে। ভূলেগেলে চলবে না, শেখ হাসিনাসহ কর্তত্ববাদের সব দোসরদেরকে সুনির্দিষ্ট অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও জবাবদিহি নিশ্চিত করাই আগামীর সম্বাবনাময় নতুন বাংলাদেশর স্বপ্নপূরণের সর্বোচ্চ প্রাধান্যপ্রাপ্ত করণীয়।’
প্রতিশোধপ্রবণ ও আত্মঘাতী মব জাস্টিস আর নয়, যে দল ,ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যত বড় মাপের অপরাধী হোক না কেন? সুনির্দিষ্ট ব্যক্তি ও সুনির্দিষ্ট অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চি করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সেক্ষেত্রে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইনের পথ অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক। একি সাথে ভিন্নমত পোষণকারীদের মামলা ও হয়রানির সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে সবার জন্য গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষায় রাষ্ট্র ও সরকার যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এবং দেশ জাতির কল্যাণে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজন সহনশীলতার পরিচয় দেবে রাষ্ট্র ও সরকার কাছে এমনটাই প্রত্যাশা দেশবাসীর।
(জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস এবং এ দেশের মালিক যদি জনগণ হয়ে থাকে? তবে প্রতিহিংসার প্রতিযোগীতা কেন? প্রতিহিংসা,প্রতিশোধ, প্রতিবাদ ও রাজনীতির নামে আর নয় ভাঙচুর ও জ্বালাও-পোড়াও। কারণ এদেশের প্রতিটি সম্পদের বিন্দু মাত্রার মালিকও জনগণ,সেটা হতে পারে সরকারী-বেসরকারী বা ব্যক্তিগত,মূলত মালিক জনগণ।তাই রাজনীতি হোক সেবা,সহনশীলতা ও বুদ্ধিমত্বার প্রতিক। আসুন আমরা সকলে সহনশীল হই,দেশ ও জাতীর কল্যাণে সব দল ও জনসেবার জন্য রাষ্ট্রে নিয়োজিত সকলেই সেবার হাত বাড়িয়ে সহনশীলতা ও বুদ্ধীমত্বার পরিচয় ধরে রাখতে প্রানান্তকর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখি)।
(যদি সব দল সকলের মঙ্গল চাই,তবে মোরা সদা করি কেন খাই খাই? সবার মুখে একি আওয়াজ তুলি,দল-মত জাতী-ধর্ম বর্ণ,নির্বিশেষে সকল ভেদাভেদ ভূলি।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিষ্ট