বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫, ০৬:৩৮ পূর্বাহ্ন

মফস্বল সাংবাদিকতার বাতিঘর পাবনা প্রেসক্লাব : গৌরবের ৬৪ বছর আজ

এবিএম ফজলুর রহমান / ১৪০ বার দেখা হয়েছে
আপডেট করা হয়েছে বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫, ১২:০৮ পূর্বাহ্ন




“চৌষট্টি বছর পূর্তিতে ; এগিয়ে যাই সম্প্রীতিতে“ মফস্বল সাংবাদিকতার বাতিঘর পাবনা প্রেসক্লাবের আজ গৌরবের ৬৪ বছর আজ। পাবনা প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য এবং ২২তম সদস্য মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন এখন বাংলাদেশের ২২তম মহামান্য রাষ্ট্রপতি।
মহানয়িকা সুচিত্রা সেন, উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত গীতিকার গৌরি প্রসন্ন মজুমদার, সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী, ওস্তাদ বারীন মজুমদার, কবি বন্দে আলী মিয়া, অধ্যাপক মনসুর উদ্দিন আহমেদসহ অসংখ্য গুনি সাংষ্কৃতিক ও সাহিত্যিকের জন্মভুমি পাবনা। ব্রিটিশ পরবর্তি শাসনামলপুর্ব এ অঞ্চলে সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটে। তারই ধারবাহিকতায় ১৯৬১ সালের ১ মে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল পাবনা প্রেসক্লাব। তাই এ অঞ্চলের সাংবাদিকতার গৌরব ও অহংকারের নাম পাবনা প্রেসক্লাব। আজ ১ মে পাবনা প্রেসক্লাব ৬৪ বছরে পা রাখছে। ১৯৬১ সালের এ দিনে পাবনা শহরে পাবনা প্রেসক্লাবের গোড়াপত্তন ঘটে। সেই থেকে অনেক স্মৃতি, নানা ইতিহাস ও গৌরবময় ঘটনার সঙ্গে পাবনা প্রেসক্লাবের নাম জড়িয়ে রয়েছে। সারা দেশে সাংবাদিকদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য ও সাংবাদিকদের একাধিক প্রতিষ্ঠান থাকলেও পাবনা প্রেসক্লাব সে ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এই প্রতিষ্ঠান এখনো দেশের মধ্যে অখন্ড এবং ঐক্যর অন্যন্য নজির হিসেবে দৃষ্টান্ত হয়ে রইছে।

পদ্মা যমুনা বিধৌত এবং ইছামতি নদী তীরে গড়ে উঠা পাবনার জনপদে সাংবাদিকতার সুত্রপাত ঘটে উনিশ শতকের প্রথম দিকে। এ অঞ্চলের বিরাজমান সমস্যা সমাধানে দিক নির্দেশনায়, সৎ বস্তুনিষ্ট ও বলিষ্ঠ লেখনির মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে এবং অসহায় নির্যাতিত মানুষের চালচিত্র নি:শঙ্কভাবে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরার ব্রত নিয়ে সর্বপরি সাংবাদিকগণ ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রয়োজনীতা অনুভব করেন। সাংবাদিকতায় লালিত এই ঐতিহ্যের ধারায় বিশ শতকের ষাটের দশকের শুরুতে তৃনমূল পর্যায়ের সাংবাদিকতা পেশার স্বীকৃতির দাবীকে সামনে রেখে ১৯৬১ সালের ১ মে পাবনা শহরে স্থাপিত হয় পাবনা প্রেসক্লাব।

দি ডেইলি জং বা ডন, দৈনিক আজাদ ও অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অব পাকিস্তানের (এপিপি) এর পাবনা প্রতিনিধি একেএম আজিজুল হক বিএসসি ক্যাল এর সভাপতিত্বে তার বাসা সানভিউ ভিলায় অনুষ্ঠিত সভায় তিনিই (একেএম আজিজুল হক) পাবনা প্রেসক্লাবের প্রথম সভাপতি এবং সংবাদ প্রতিনিধি শ্রী রণেশ মৈত্র সাধারন সম্পাদক নির্বাচত হন। এ ছাড়া দৈনিক ইত্তেফাকের পাবনা প্রতিনিধি এম আনোয়ারুল হক, বিশিষ্ট চিকিৎসক মেজর (অব.) ডা. মোফাজ্জল হোসেন, লোক শিক্ষক শহীদ মাওলানা কছিমুদ্দিন আহমেদ, ফটোগ্রফার শ্রী হিমাংশু কুমার বিশ্বাস প্রমুখ অন্যতম প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলেন। বর্তমানে পাবনা প্রেসক্লাবের সদস্য সংখ্যা ৬২।

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মাশাল (অব.) একে খন্দকার, স্কয়ার গ্রæপের চেয়ারম্যান প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরী, ভাষা সৈনিক প্রয়াত আব্দুল মতিন এই প্রেসক্লাবের সম্মানিত জীবন সদস্য ছিলেন ও রয়েছেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন পাবনা প্রেসক্লাবের আজীবন ও ২২তম সদস্য এবং এখন বাংলাদেশের ২২তম মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাছরাঙা টেলিভিশন ও স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু পাবনা প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য রয়েছেন।

প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার বছরেই ৮ ও ৯ মে পাবনায় অনুষ্ঠিত হয় পুর্ব পাকিস্তান মফস্বল সাংবাদিক সমিতির প্রথম সম্মেলন। যে সভা থেকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ পায় পুর্ব পাকিস্তান মফস্বল সাংবাদিক সমিতি যা বর্তমানে বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি হিসেবে পরিচিত। সেই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন তৎকালীন মন্ত্রীসভার সদস্য বগুড়ার মো: হাবিবুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পাকিস্তান অবজারভারের সম্পাদক আব্দুস সালাম, মনিং নিউজের এসজিএম বদরুদ্দিন। যে সম্মেলনের মাধ্যমে মফস্বল সাংবাদিকরা পেশার স্বীকৃতি তথা রিটেইনার, লাইনেজ, পোষ্টাল চার্জ, টেলিগ্রাম চার্জ, ছবির বিলসহ অন্যান্য খরচ পাওয়া শুরু করেন। পাবনা প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়েই সেদিন সংবাদপত্রে মফস্বলে কর্মরত প্রতিনিধিদের পেশার স্বীকৃতি ঘটেছিল। এখন ঢাকার বাইরে অনেকে এটাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে স্বচ্ছল জীবন যাপন করছেন। তাই অনেক প্রবীণ সাংবাদিক পাবনা প্রেসক্লাবকে মফস্বল সাংবাদিকতার বাতিঘর হিসেবে চিহিৃত করেছেন। সবচেয়ে সৌন্দর্য ও সবার জন্য নেতৃত্বের পথ খুলে দিতে এই প্রেসক্লাবের গঠনতন্ত্রে পর পর দুইবারের বেশী কেউ সভাপতি সম্পাদক পদে ভোটে অংশ নিতে পারবেন না সম্বলিত রয়েছে। তা ছাড়া প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে সরাসরি ভোটে এই প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়ে আসছে। যা সারা দেশে প্রশংসিত হয়েছে। এখানে আরো সম্মান ও মর্যাদার বিষয় এই যে, দেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী অথবা প্রধান উপদেষ্টা কখনো কোন জেলার প্রেসক্লাবে যাননি। কিন্তু মহামান্য রাষ্ট্রপতি চারবার পাবনা প্রেসক্লাবে আগমন করেছেন।

পাবনা প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠার পর একেএম আজিজুল হক পাবনা প্রেসক্লাবের প্রথম সভাপতি এবং সংবাদ প্রতিনিধি শ্রী রণেশ মৈত্র প্রথম সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তিতে এম আনোয়ারুল হক, মির্জা শামসুল ইসলাম, প্রফেসর আব্দুস সাত্তার বাসু, অঞ্জন চৌধুরী পিন্টু, রবিউল ইসলাম রবি, অ্যাডভোকেট মুহম্মদ মহিউদ্দিন, প্রফেসর শিবজিত নাগ, আব্দুল মতীন খান, এবিএম ফজলুর রহমান, রুমী খন্দকার, উৎপল মির্জা, আহমেদ উল হক রানা, আখিনুর ইসলাম রেমন, সৈকত আফরোজ আসাদ বিভিন্ন সময় এক বা একাধিকবার সভাপতি সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে আখতারুজ্জামান আখতার ও মো. জহুরুল ইসলাম সভাপতি ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

পাবনা প্রেসক্লাবের ৭ জন সদস্য সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন এ ছাড়া ৩ জন একুশে পদক লাভ করেন। এ ছাড়া ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন, ভুট্রা আন্দোলন, খাপড়া ওয়ার্ড আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ২০২৪ সালের জুলাই আগষ্ট আন্দোলনে এই প্রেসক্লাবের অনেক সাংবাদিক জীবনের ঝুকি নিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন। পাবনা প্রেসক্লাবের অতীত ঐতিহ্য ও বিশাল ইতিহাস থাকলেও আজও পাবনা প্রেসক্লাবের নিজস্ব ভবন হয়নি। পরিত্যক্ত সম্পত্তির উপর গড়ে উঠা এই ক্লাবটির শরীরে শীর্ণতা থাকলেও মর্যাদা ও আভিজত্যে এখনো অটুট। স¤প্রতি ঐ পরিত্যক্ত ভবনেই একটি অত্যাধুনিক অফিস কক্ষ, ভিআইপি মিলনায়তন, সাধারন মিলনায়তন এবং লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

পাবনা প্রেসক্লাবের গৌরবের ৬৪ বছরে ১ মে বুধবার বেলা ১০টায় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে সর্বস্তরের সাংবাদিদের সমন্বয়ে বর্ণাঢ্য র‌্যালী, কেক কাটা ও তিনদিন ব্যাপী প্রেসক্লাব আলোসজ্জ্বা ও ২ মে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ও সাংবাদিকদের মিলনমেলার আয়োজন করা হয়েছে।

লেখক : এবিএম ফজলুর রহমান, সদ্য সাবেক সভাপতি, পাবনা প্রেসক্লাব।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By Limon Kabir