বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫, ০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন

বর্ষার আগেই ডুবছে ঢাকা জলবন্দি নগর জীবণের মুক্তি যেখানে?

এম.এ.জলিল রানা / ৬৫ বার দেখা হয়েছে
আপডেট করা হয়েছে রবিবার, ৪ মে, ২০২৫, ৭:৩৮ অপরাহ্ন
ফাইল ছবি


“যে আসে সেই শুনাই মোদের আশার বাণী,জানীনা তা সত্যি হয়েছে কতখানি নগরবাসীর জীবণে, ভোট এলেই বাড়ী বাড়ী প্রতিশ্রু দেয় গাড়ী গাড়ী, সবাই বলে সব সমস্যার মিলবে সমাধান, তারে নাড়ে সময় পার, কে রাখে খবর কার,সময় শেষে সবাই বলে ,শুরু করেছি বহুমাত্রিক উন্নয়ন প্রকল্প তাই শেষ হয়নি কোন কাজ,আবার যদি ভোট দেন শেষ করবো সব উন্নয় কাজ, সবার মুখে ফুটাবো হাসি থাকবেনা কোন নাভিশ্বাস’’।

বর্ষা মৌসুম এলো মানেই জলাবদ্ধতার কবলে ঢাকা। আসছে বর্ষা মৌসুম, পুরো মৌসুম আসার আগেই যেন সম্প্রতি ২-৩ দিন যে বৃষ্টি হয়েছে,তাতেই ডুবে গেছে রাজধানী ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকা। তাই জোরালোভাবেই বলা যায়, আসন্ন ভরা বর্ষায় মৌসুমে এবারও ডুবতে যাচ্ছে প্রিয় রাজধানী শহর ঢাকা আর জলবন্দি হতে চলেছে প্রিয় নগরবাসী।

গেল কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে, সামান্য বৃষ্টিতেই রাজধানীর অলি-গলি ও প্রধান প্রধান সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যায়। আর বৃষ্টি একটু দীর্ঘ সময় স্থায়ী হলেই রীতিমতো ডুবে যায় ঢাকা শহর। হাঁটু ও কোমর সমান পানিতে নাকাল হতে হয় নগরবাসীকে। অথচ জলাবদ্ধতা নিরসনে বহুমাত্রিক প্রকল্প ও পদক্ষেপ নিয়ে আবির্ভাব হয় ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু ফলাফল যেন শূন্যের কোঠাই থেকে যাচ্ছে। কোনো উদ্যোগই আসছে না কোন কাজে। এর ফলে এবারও ডুববে ঢাকা এমন শঙ্কায় আতঙ্কিত নগরবাসী।

প্রতি বছরই সরকার জলাবদ্ধতা নিরসনে বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেয় । বছর বছর অর্থ বরাদ্দের পরিমাণও বাড়ে। কিন্তু কাজের কাজ যেন কিছুই হয় না, আসল জায়গায় কবি নিরব। আবার ক্ষেত্রবিশেষ ভোগান্তির পরিমাণও বাড়ে। বছর বছর জলাবদ্ধতা নিরসনে বহুদাত্রিক প্রকল্প ও পদক্ষেপ হাতে নিয়ে প্রচুর অর্থ খরচ করে চলেছে এই দুই সিটি কর্পোরেশন। গেল ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও এ জলাবদ্ধতা নিরসনে দুই সিটি প্রায় ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিল, কিছু কাজও করেছে,কিন্তু সুফল মিলছে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, জলাবদ্ধতা নিরসনে গেল ২০২৩- ২৪ অর্থবছরে দুই সিটি কর্পোরেশন বরাদ্দের ২০০ কোটি টাকার মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) জলাবদ্ধতা নিরসনে সরাসরি ৯০ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখে। এছাড়া,পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের (নর্দমা, খাল, জলাশয়, পরিষ্কার) জন্য ৩০ কোটি টাকা, খাল-পুকুর ও জলাশয় পুনরুদ্ধারে আরও দু’কোটি টাকা এবং পানির পাম্প ক্রয় ও স্থাপনে রাখা হয় আরও এক কোটি টাকা।

অপরদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) একই অর্থবছরে জলাবদ্ধতা নিরসনে পাম্প হাউজের যন্ত্রপাতি আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও ক্রয়ে বরাদ্দ রাখেন ২৫ কোটি। খালের উন্নয়ন, সীমানা নির্ধারণ ও বৃক্ষরোপণে বরাদ্দ রাখে আরও ৩৮ কোটি। এছাড়া, নর্দমা পরিষ্কারে ১১ কোটি, খাল পরিষ্কারে ৫ কোটি, খাল-কালভার্ট মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে ১০ কোটি, পাম্প হাউজ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে ৮ কোটি, লেক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে তারা বরাদ্দ রাখেন ৫ কোটি টাকা ।

একসময় রাজধানীর এই বহুল আলোচিত জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্বে ছিল ঢাকা ওয়াসা। পরে রাজধানীর সব নালা ও খাল দুই সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। দীর্ঘ এ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে ঢাকা ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থা গত ১৫ বছর হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেও সমস্যা যেন পিছু ছাড়েনি নগরবাসীর ।

পূর্বে ঢাকা মহানগরীর প্রধান প্রধান ড্রেন লাইন নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ঢাকা ওয়াসা আর শাখা লাইনগুলোর দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল সিটি কর্পোরেশনের হতে। ওই সময় রাজধানী শহরের মোট ড্রেনেজ লাইনের মধ্যে ৩৮৫ কি:মি: ঢাকা ওয়াসার অধীন আর প্রায় দু’হাজার ৫০০ কি:মি: ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের অধীনে ছিল। এর বাইরে ৭৪ কি:মি: দৈর্ঘ্যের ২৬টি খাল ও ১০ কি:মি: বক্স কালভার্ট রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও ছিল ঢাকা ওয়াসার। যার কারণে বর্ষায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে ব্যর্থ সংস্থাগুলো একে অন্যের ওপর দায় বা দোষ চাপানোর সুযোগ পেত।

যেসব এলাকায় এবারও থাকবে জলাবদ্ধতা:
(প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে ঢাকার সিংহভাগ এলাকা ডুবলেও নির্দিষ্ট কিছু সংখ্যক এলাকা বেশি জলাবদ্ধতার স্থান বা হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছেন দুই সিটি কর্পোরেশন। সে সব স্থানে এবারও বেশি জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে এমটাই আশঙ্কা করা হচ্ছে। উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন জলাবদ্ধতা প্রবণ এলাকাগুলোর মধ্যে উত্তরখান, দক্ষিণখান, হরিরামপুর, বাড্ডা, ভাটারা, বিমানবন্দর সড়ক, বনানী কবরস্থান সড়ক এবং রোকেয়া সরণি রয়েছে)।
তবে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ওয়াসার দায়িত্বে থাকা সব নালা ও খাল দুই সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর থেকেই রাজধানীর জলাবদ্ধতার সব দায় এসে পড়ে দুই সিটি কর্পোরেশনের ওপর। তারাও গেল কয়েক বছর ধরে রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয় করলেও এর সুফল দেখেনি নগরবাসী।

দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকার মধ্যেও এবার জলাবদ্ধতা বেশি হতে পারে নিউ মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট, ঢাকা কলেজ এলাকা, নায়েম সড়ক, বকশীবাজার মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এলাকা, মুগদা প্রধান সড়ক ও মুগদা হাসপাতালের আশ-পাশের এলাকা, জুরাইন আলমবাগ, মিতালী স্কুল রোড এবং রাজারবাগ গ্রিন লাইন বাস কাউন্টারের সামনের সড়কে।

তবে আশার কথা, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গেল ২ ফেব্রুয়ারি নতুন করে খাল বাঁচানোর উদ্যোগের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। যেখানে ঢাকার খালগুলোতে ‘ব্লু নেটওয়ার্ক’ সৃষ্টি করার উদ্যোগ গ্রহণের কাজ চলমান।

এ কার্যক্রমের আওতায় ঢাকার খালগুলোতে পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনা এবং খাল খনন কার্যক্রম চলমান । জলাবদ্ধতা নিরসনে ডিএনসিসির ৬টি খাল খননের কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে এবং আরও ১৩ টিসহ ১৯টি খাল খননের কার্যক্রম চলতি বছরেই বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এ সব কার্যক্রমগুলোর অগ্রগতি হলে ঢাকায় আগের মতো আর জলাবদ্ধতা হয়তো বা সৃষ্টি হবে না।

“আমি ঢাকাবাসীকে বলতে চাই, যারা এখনও সরকারি খাল-বিল দখল করে নাকে তেল দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছেন, তাদের ঘুমানোর সময় শেষ। যারা সরকারি জমি, খাস জমি দখল করে স্থাপনা বানিয়ে ভোগদখল করছেন, তাদের বলছি; ঘুম থেকে জেগে দখল করা জায়গাটা ছেড়ে দিন। খালগুলো দখলমুক্ত করে পানির প্রবাহ ঠিক করা গেলে জলাবদ্ধতা অনেক অংশে কমে যাবে বলে মনে করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ’’।

সার্বিক বিষয়ে প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘খাল ও জলাশয়ের অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চলমান রয়েছে। আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে হাইক্কার খালের (কাটাসুর) ওপর অবৈধভাবে গড়ে তোলা একটি দোতলা ভবন সম্পূর্ণ এবং ৩ তলা ভবনের আংশিক ভেঙে দিয়েছে। এ খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং খাল খনন করে লাউতলা খালের সাথে সংযোগ করে দিব। ডিএনসিসির কবরস্থানের দেওয়ালও ভেঙে দিয়ে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করা হবে। এর ফলে বৃষ্টির পানি বা বন্যার পানি খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নেমে যাবে তুরাগে ।

অন্যদিকে, জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রস্তুতির বিষয়ে সংস্থাটির দায়িত্বপ্রাপ্ত এক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমাদের প্রস্তুতি ও কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে, বর্ষার জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ খুবই চ্যালেঞ্জিং। খাল উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পাশা-পাশি জলাবদ্ধতার স্থানগুলো চিহ্নিত করে খাল ও নর্দমা পরিষ্কারের কাজও আমাদের চলমান রয়েছে ।

সার্বিক বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেছেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। নিয়ম মেনে সঠিক কার্যক্রম হিসেবে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। বর্তমানে এসব কাজের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের, তাই তাদের অন্যদের ওপর দোষ চাপানোর কোনো সুযোগ নেই। কাজের সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন তাদেরই করে নগরবাসীকে জলাবদ্ধতার সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে হবে।’

ঢাকায় নগর জীবণে প্রতি বছর কেন জলাবদ্ধতা:
ঢাকার দুই সিটির তথ্য বিশ্লেষণে জানা গেছে, ঢাকার পানি তিন মাধ্যমে আশপাশের নদ-নদীতে গিয়ে পড়ে। এগুলো হচ্ছে- পাম্প স্টেশন, স্লুইসগেট ও খাল। বর্তমানে বেশ কয়েকটি পাম্প স্টেশন নষ্ট হয়ে আছে। একইভাবে স্লুইসগেটগুলোও অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। আর খালগুলোর অবস্থা ভালো নয়, সেগুলো পানি প্রবাহের জন্য উপযুক্ত নয়। অবৈধ দখলের পাশা-পাশি নানান ধরনের বর্জ্য জমে খালগুলোতে কয়েক স্তরের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে।

ঢাকার দুই সিটি এলাকায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭ হাজার মে:টন বর্জ্য উৎপাদন হয়। এর মধ্যে প্রায় ১৫ শতাংশ বর্জ্যই প্লাস্টিক ।এগুলো ঢাকার ড্রেন, নালা আর খালে গিয়ে পড়। এসব বর্জ্য খালে বা ড্রেনে আটকে থাকছে, যে কারণে পানি নামতে পারছে না। আবার কিছু খাল এখনও দখল অবস্থায় আছে। বাকিগুলো যেভাবে সংকুচিত করা হয়েছে, তা দিয়ে পানির প্রবাহ সম্ভব নয়। যার ফলে বৃষ্টি হলেই পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে প্রাণের রাজধানী শহর ঢাকা।

বৃষ্টি হলেই রাজধানীর যে সব এলাকায় নিয়মিত জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে দেখা যায়। আগত বর্ষাতেও একই ফলাফল দেখা যাবে বলে ধারণা করছেন নগরবাসী। বেশি জলাবদ্ধতা এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে- রাজধানীর নিউ মার্কেট, আজিমপুর, নীলক্ষেত, বকশিবাজার, মালিবাগ, শান্তিনগর, সায়েদাবাদ, শনির আখড়া, পুরান ঢাকা, বংশাল, নাজিমুদ্দিন রোড, ধানমন্ডি, মিরপুর, শেওড়াপাড়া, আরামবাগ, মতিঝিল, বনানী, খিলক্ষেত, উত্তরার কিছু অংশ, কারওয়ান বাজার, বিজয় সরণি, মিরপুর ১৩, হাতিরঝিলের কিছু অংশ, আগারগাঁও থেকে জাহাঙ্গীর গেট যেতে নতুন রাস্তা, খামারবাড়ি থেকে ফার্মগেট, ফার্মগেট-তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকা, মোহাম্মদপুরের কিছু অংশ, মেরুল বাড্ডা, ডিআইটি প্রজেক্ট, গুলশান লেকপাড় এলাকার সংযোগ সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলিতে নিয়মিত জলাবদ্ধতা দেখা যায় সবচেয়ে বেশি।

দীর্ঘ জলাবদ্ধতায় ক্ষুব্ধ নগরবাসী:
প্রতি বছর এত কাজ, এত প্রকল্প তবুও কেন ঢাকাবাসীকে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার কবলে পড়তে হয় এটা নিয়ে সীমাহীন ক্ষুব্ধ নগরবাসী। রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকার বেসরকারি চাকরিজীবী হাবিবুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করেন, প্রতি বছরই বর্ষা মৌসুমে তলিয়ে যায় ধানমন্ডি এলাকা। শুধু ধানমন্ডি নয়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থইথই করে বৃষ্টির পানিতে । কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাজের কাজ কিছুই করে না। প্রতি বছর জলাবদ্ধতা নিরসনে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ থাকে, লোক দেখানো কাজও হয়। কিন্তু আমরা এর কোনো সুফল পাই না। ধারণা করি এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না, ডুববে ঢাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর নিউ মার্কেটের নিচতলার কোন এক দোকানের ম্যানেজার বলেন, গত বছর বর্ষায় কয়েকবার আমাদের দোকান ডুবে গেছে। একবার দোকানে পানি ঢোকা মানেই লাখ লাখ টাকার ক্ষতি। এমন কোনো বছর নেই যে বর্ষাকালে নিউ মার্কেটের নিচতলা ডুবে যায় না। আমরা চাই জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। প্রতি বছর আমরা সিটি কর্পোরেশনে অভিযোগ জানাই। কিন্তু তারা কোনো পদক্ষেপ নেয় না। আশা করি এ বছর বর্ষার আগেই জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি কর্পোরেশন দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

রাজধানীতে দীর্ঘ ১০ বছরের বেশি সময় সিএনজি চালান ইমরান হোসেন। তিনি জানান, বৃষ্টি হলেই রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। বর্ষা মৌসুমে এ সমস্যা সবচেয়ে বেশি থাকে। কতবার জলাবদ্ধতায় সিএনজির ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়েছে, তার কোন শেষ নাই। বাধ্য হয়ে রাস্তা দিয়ে ঠেলে ঠেলে নিয়ে যেতে হয়েছে। সবার মতো আমরাও চাই রাজধানী জলাবদ্ধতামুক্ত হোক। এটি যাদের দায়িত্ব তারা যেন সবকিছু আগেভাগেই ঠিক করে ফেলেন। অন্তর্বর্তী এই সরকারের কাছেই এটাই আমাদের চাওয়া।

(মনে রাখা প্রয়োজন,ঢাকা যে শুধু বাংলাদেশের রাজধানী শহর এমনটি নয়,বরং জাতীয় অর্থ-বাণিজ্য,স্বাস্থ্য-শিক্ষা, শিল্প সাংস্কৃতি,ধর্ম,রাজনীতিসহ দেশের ৬৪ জেলার ১৮ কোটি মানুষের কহুমাত্রিক কর্মজগ্যের মিলন মেলার বাণিজ্যক স্থাপত্য কেন্দ্র এই ঢাকা শহর)।
(ক্ষমতার পালাবদলে এই ঢাকা শহরে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী থেকে এমপিদের বসবাস,যে শহরের নিবির ও নিরবিচ্ছিন্ন ছায়ায় জীবণ অতীবাহীত করছেন হাজারও শিক্ষাবিদ, হাফেজ-ক্বারী,মুফতী-মুহাদ্দিস, প্রকৌশলী, পরিকল্পনাবিদ,গবেষক,লেখক,কবি-সাহিত্যিক,সাংবাদিক,সুধিজন,সুশিল সমাজের নেতৃবৃন্দ,সকল রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতারাসহ বহুমাত্রিক শ্রেণী পেশার মানুষের বসবাস এই প্রিয় রাজধানী শহর ঢাকায়।অথচ দীর্ঘ ১৫ বছরেও এই শহররে জলবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হয় না,এটা আমার কাছে অত্যান্ত লজ্জাজনক।“নেতা আসে নেতা যায় নতুন নেতা তৈরী হয়’’ প্রশ্ন থেকে যায়,এই সমস্যার সমধান কেন হয় না? জানতে চায় ঢাকা শহরের সাধারণ মানুষ? “প্রশ্ন আর্টিকেলে উল্লেখিত নেতৃবৃন্দের কাছে’’।

( তথ্য বিশ্লেষণ বলছে, ঢাকার পানি তিন মাধ্যমে আশপাশের নদ-নদীতে গিয়ে পড়ে। এগুলো হচ্ছে- পাম্প স্টেশন, স্লুইসগেট ও খাল। বর্তমানে বেশ কয়েকটি পাম্প স্টেশন নষ্ট হয়ে আছে। একইভাবে স্লুইসগেটগুলোও অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। আর খালগুলোর অবস্থা ভালো নয়, সেগুলো পানি প্রবাহের জন্য উপযুক্ত নয়। অবৈধ দখলের পাশা-পাশি নানান ধরনের বর্জ্য জমে খালগুলোতে কয়েক স্তরের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে।

দুই সিটি এলাকায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭ হাজার মে:টন বর্জ্য উৎপাদন হয়। এর মধ্যে প্রায় ১৫ শতাংশ বর্জ্যই প্লাস্টিক ।এগুলো ঢাকার ড্রেন, নালা আর খালে গিয়ে পড়। এসব বর্জ্য খালে বা ড্রেনে আটকে থাকছে, যে কারণে পানি নামতে পারছে না। আবার কিছু খাল এখনও দখল অবস্থায় আছে। বাকিগুলো যেভাবে সংকুচিত করা হয়েছে, তা দিয়ে পানির প্রবাহ সম্ভব নয়। যার ফলে বৃষ্টি হলেই পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে প্রাণের রাজধানী শহর ঢাকা)। দীর্ঘ এ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে ঢাকা ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থা গত ১৫ বছর হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেও জলাবদ্ধতা সমস্যা যেন পিছু ছাড়েনি নগরবাসীর? এখন ঢাকাবাসী জানতে চায় ১৫ বছর হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেও সমস্যার সমাধান কেন হয়নি? তাহলে চেয়ারে বসেই যারা নগর পিতা সাজেন,এই সব নগর পিতা এবং প্রকৌশলী ও পরিকল্পনাবিদের কাজ কি? “প্রশ্ন তাদের কাছে, গত ১৫ বছর ধরে যারা যারা নগর পিতা, প্রকৌশলী ও পরিকল্পনাবিদ হিসেবে কাজ করছেন’’?

( অপরিকল্পিত নগরায়নের কারনেই আজ ঢাকায় জলাবদ্ধতার এই করুন পরিনতি। কারণ রাজধানীতে ক্রমান্বয়ে ভবন নির্মাণ হচ্ছে উচু স্থানে ফলে পর্যায়ক্রমে রাস্তাগুলো নিচু হচ্ছে,রাস্তা তৈরীর সময় ড্রেন নালার যে পরিকল্পনা, ফ্লাই ওভার ও মেট্রো রেলের সময় তা আর থাকছে না,আবার ভবন নির্মাণের সময় আর এক মতো।সব মিলেমেশে যেটি মনে হয়, পানি নিস্কাশনের ক্ষেত্রে ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনায় নগর উন্নয়নে প্রতিটি পরিকল্পনার সাথে একে অপরের কানেক্টিভিটির যথেষ্ট গ্যাব রয়েছে। এজন্য এখন যখন যেখানে রাস্তা-ঘাটসহ যে কোন ধরনের স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা হবে তার আগেই পরিকল্পিত স্থান থেকে পানি নিস্কাশনের স্থান পর্যন্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা আগে ঠিক করতে হবে বলে আমি মনে করি। ‘রাজধানীবাসীর জলাবদ্ধতা নিরসনে শুধুই স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় কাজ হবে না বলেও আমি করি,যদি তাই হতো তবে আজ এসময় দেখতে হতো না, প্রয়োজন সু-দুরদর্শী মানসম্পন্ন ও সুদুরপ্রসারী দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। আর নিয়ম মেনে সঠিক কার্যক্রম হিসেবে এসব পরিকল্পনা যথা সময়ে বাস্তবায়ন করতে হবে।আর এমতাবস্থায় যখন যেখানে জরাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে,সাথে সাথে ওই স্থান চিহ্নিত করে সমস্যা খুঁজে বের করতে হবে, এর পর সমাধানে যেতে হবে,তবেই হয়তো
নগরবাসীকে জলাবদ্ধতার সমস্যা থেকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব হবে এবং অবসান ঘটতে পারে সুদীর্ঘ ১৫ বছরের নগর জীবণের জলাবদ্ধতার বলে আমি মনে করি। না হলে‘সকালে পরিকল্পনা গ্রহন করবে আর বিকালেই তা ডিলেট করতে হবে’।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের রাজধানী ও মহানগর বা বৃহত্তম শহর। প্রশাসনিকভাবে এটি ঢাকা বিভাগের ও জেলার প্রধান শহর। ভৌগোলিকভাবে এটি বাংলাদেশের মধ্যভাগে বুড়িগঙ্গা নদীর উত্তর তীরে একটি সমতল অঞ্চলে অবস্থিত। ঢাকা দক্ষিণ এশিয়ায় মুম্বাইয়ের পরে দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনৈতিক শহর। ঢাকার জিডিপি ১৮৮$ বিলিয়ন (২০২৩)। এছাড়া ঢাকার পিপিপি ২৯৭.৮৭$ বিলিয়ন (২০২৩)। ভৌগোলিকভাবে ঢাকা একটি অতিমহানগরী বা মেগাসিটি; ঢাকা মহানগরীর মোট জনসংখ্যা ২ কোটি ৩২ লাখ ১৫ হাজার ১০৭ জন, যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১২.৮ ভাগ।

জনসংখ্যার বিচারে ঢাকা দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম শহর। জনঘনত্বের বিচারে ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহর; ৩০৬ বর্গকিলোমিটার: আয়তনের এই শহরে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় ২৩ হাজার লোক বাস করে।

ঢাকা শহর “মসজিদের শহর” নামেও সুপরিচিত।এখানে প্রায় দশ হাজারেরও বেশি মসজিদ আছে (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ এর তথ্য মতে)। এ শহরে রোজ প্রায় ৫ লক্ষ রিকশা চলাচল করে। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রধান সংস্কৃতি, শিক্ষা ও বাণিজ্য কেন্দ্র ঢাকা।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিষ্ট: সম্পাদক ও প্রকাশক: ভয়েস অব পার্লামেন্ট।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By Limon Kabir