অনলাইন ডেস্ক:
মানুষের মল, গলফের বলসহ কী কী আছে চাঁদে
ভারতেও আগেও চাঁদে একাধিক মকাকাশযান পাঠিয়েছে বিভিন্ন দেশ। চাঁদের মাটিতে মানুষের পা পড়েছে বহুদিন আগে। আর সেখানে রেখেও এসেছে স্মৃতি।
সেই স্মৃতির মধ্যে আছে বিভিন্ন দেশের ল্যান্ডার, রোভার, যন্ত্রাংশ, ভাঙা মহাকাশযান। এখানেই শেষ নয়। চাঁদে মহাকাশচারীদের রেখে আসা স্মৃতিচিহ্নের মধ্যে রয়েছে মল, গল্ফ বল, পতাকা, পরিবারের ছবিও। এছাড়া আরও অনেক কিছুই চাঁদে মাটিতে পড়ে আছে যার বেশিরভাগই মহাকাশচারীরা রেখে আসতে বাধ্য হয়েছেন। কিছু জিনিস আবার রেখে এসেছেন ইচ্ছা করে।
বুধবার চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছে ইতিহাস তৈরি করেছে ভারতের মাহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর চন্দ্রযান-৩। চাঁদের মাটিতে কাজ শুরু করেছে ল্যান্ডার বিক্রম এবং রোভার প্রজ্ঞান। ভারতই প্রথম দেশ যারা চাঁদের দুর্গম দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশযান পাঠিয়ে নজির গড়লো।
চাঁদে গেলে অদ্ভুত যে সব জিনিস দেখতে পাওয়া যাবে, তার বেশির ভাগটাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপোলো অভিযানের মহাকাশচারীদের ফেলে আসা। ধারণা করা হয়, বিভিন্ন অ্যাপোলো অভিযানের কারণে সব মিলিয়ে প্রায় দুই লাখ কেজি বর্জ্য জমা হয়েছে চাঁদের বুকে।
দেখে নেয়া যাক তাহলে চাঁদের বুকে কী কী রেখে এসেছেন মহাকাশচারীরা-
# সংখ্যার আধিক্যের কারণে প্রথমেই নজরে পড়তে পারে মহাকাশচারীদের ফেলে আসা মলভর্তি ব্যাগের দিকে। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মল ও মনুষ্যসৃষ্ট বর্জ্য ভর্তি ৯৬টি ব্যাগ পড়ে রয়েছে চাঁদের বুকে। ফেরার সময় মহাকাশযানের বাড়তি ওজন কমানোর জন্যই চাঁদের এসব ব্যাগ ফেলে আসেন মহাকাশচারীরা। চাঁদে অবতরণকারী প্রথম দুই মহাকাশচারীর অন্যতম এডউইন অলড্রিন একবার একটি টুইট করে বলেছিলেন, ‘ভবিষ্যতে আমার মলভর্তি ব্যাগ যিনি খুঁজে পাবেন, তার জন্য খুব খারাপ লাগছে।’
অলড্রিন চাঁদে পা রাখা দ্বিতীয় ব্যক্তি হলেও তিনিই প্রথম মহাকাশচারী, যার প্রস্রাব চাঁদের মাটিতে পড়েছিলো।
মহাকাশ বিশেষজ্ঞ টিসেল মুইর-হারমোনির লেখা, ‘অ্যাপোলো টু দ্য মুন: এ হিস্ট্রি ইন ফিফটি অবজেক্টস’ বই অনুযায়ী, অলড্রিনের প্রস্রাব সংগ্রহের ব্যাগটি চন্দ্রপৃষ্ঠে ফেটে যায় এবং প্রস্রাব চাঁদের মাটিতে ছড়িয়ে পড়ে।
# মহাকাশচারীদের মলমূত্র ছাড়াও চাঁদের বুকে খুঁজে পাওয় যেতে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা। অ্যাপোলো-১১ অভিযানে গিয়ে ১৯৬৯ সালের ১৬ জুলাই চাঁদের মাটিতে পা রাখেন নীল আর্মস্ট্রং এবং অলড্রিন। ফেরার পথে চাঁদের বুকে তারা দেশের পতাকা রেখে এসেছিলেন।
# অ্যাপোলো অভিযানের সময় ফেলে আসা একটি বাজপাখির পালক এবং একটি অ্যালুমিনিয়ামের হাতুড়িরও দেখা মিলতে পারে চাঁদের দেশে। অ্যাপোলো-১৫ অভিযানে গিয়ে মহাকাশচারী ডেভিড স্কট একই সঙ্গে একটি হাতুড়ি এবং পাখির পালক একই উচ্চতা থেকে চাঁদের মাটিতে ফেলে দেন। মহাকাশের শূন্যতায়, উভয়ই প্রায় একই সঙ্গে চাঁদের মাটি স্পর্শ করেছিলো। সেগুলো পড়ে রয়েছে চাঁদের মাটিতেই।
# ১৯৭২ সালে অ্যাপোলো-১৬ অভিযানের অংশ হিসাবে চাঁদে গিয়েছিলেন মহাকাশচারী চার্লস ডিউক। চাঁদে যাওয়ার সময় নিজের পরিবারের একটি ছবি সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন চার্লস। ফেরার সময় স্মৃতিচিহ্ন হিসাবে ওই ছবি রেখে এসেছিলেন চাঁদের বুকেই।
# চাঁদে প্রথম পা রেখেছিলেন আর্মস্ট্রং, প্রথম আওয়াজ করেছিলেন অলড্রিন। আর চাঁদে প্রথম গলফ খেলেছিলেন অ্যালান শেপার্ড। পেশাদার গল্ফ খেলোয়াড় অ্যালান অ্যাপোলো-১৪ অভিযানের সময় চাঁদে গিয়েছিলেন। নাসাকে অনুরোধ করে চাঁদে দু’টি গল্ফ বল এবং একটি ক্লাবও নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে গিয়ে অ্যালান ওই দু’টি বল নিয়ে খেলেছিলেন। চাঁদে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে ওই বল দু’টিও।
# জিন শুমেকার ছিলেন আমেরিকার এক জন ভূতাত্ত্বিক। অনেক ধূমকেতু এবং গ্রহ আবিষ্কারে তার অবদান রয়েছে। শুমেকারের মৃত্যুর পর তার অস্থিভস্ম একটি মহাকাশযানে করে চাঁদে পাঠানো হয়। শুমেকারই একমাত্র ব্যক্তি যার অস্থিভস্ম রয়েছে চাঁদে।
# অ্যাপোলো-১৫ এর মহাকাশচারীরা ‘ফলেন অ্যাস্ট্রোনট’ নামে একটি অ্যালুমিনিয়ামের ভাস্কর্য চাঁদের মাটিতে পুঁতে রেখে এসেছিলেন। বেলজিয়ামের শিল্পী পল ভ্যান হোয়েডনক এই ভাস্কর্য তৈরি করেছিলেন।