ইউরোপীয় রাজনীতি ও বিশ্বব্যবস্থার ভেতরের কদর্য রূপটি উন্মোচন করে ২০২৫ সালের এমন কিছু ঘটনা পশ্চিমা মূলধারার সংবাদমাধ্যমগুলো এড়িয়ে যেতে চাইছে। এই বছরের অন্যতম বড় আলোচিত বিষয় ছিল নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইন ধ্বংসের তদন্ত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের জাতীয় অবকাঠামোতে এমন ভয়াবহ আঘাত আর দেখা যায়নি। জার্মানি এই নাশকতার জন্য ইউক্রেনীয় ডাইভারদের দায়ী করে তাদের প্রত্যর্পণের দাবি জানালেও পোল্যান্ড সরকার এই তদন্ত প্রক্রিয়াকে কার্যত নস্যাৎ করে দিয়েছে। পোলিশ প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক এই মামলাটিকে ‘স্থগিত’ ঘোষণা করে দিলেও বার্লিনের অসন্তোষ কাটেনি। একটি সাধারণ প্রমোদতরী ব্যবহার করে ২৫০ ফুট গভীরে গিয়ে বিশাল পাইপলাইন উড়িয়ে দেওয়ার যে তত্ত্বটি প্রচার করা হয়েছিল, তা নিয়ে এখন খোদ পশ্চিমা বিশ্বের ভেতরেই হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে।
একই সময়ে ন্যাটো এবং ইসরায়েলি অস্ত্র সংস্থার মধ্যকার বিশাল দুর্নীতির খবর ইউরোপীয় ইউনিয়নকে নাড়িয়ে দিয়েছে। সাবেক ন্যাটো কর্মকর্তাদের প্রভাব খাটিয়ে ইসরায়েলি কোম্পানি ‘এলবিট’-এর হয়ে কাজ করার অভিযোগে নেদারল্যান্ডসের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সাবেক কর্মকর্তাসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গাজায় চলমান ধ্বংসযজ্ঞ এবং ইউরোপের ক্রমবর্ধমান সামরিকায়নের এই সুযোগে শত শত কোটি ইউরোর অস্ত্র বাণিজ্যে ঘুষের লেনদেন হয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে ন্যাটোর ক্রয় শাখার প্রধান স্ট্যাসি কামিংস এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কোনো কথা না বলতে কড়া নির্দেশ জারি করেছেন। অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক কাজা কালাস গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বারবার অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছেন, যা ব্রাসেলসের দ্বিমুখী নীতিকেই বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছে।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেনের জন্যও ২০২৫ সাল ছিল বিতর্কে ঘেরা। তার ব্যক্তিগত জেটের সিগন্যাল রাশিয়া জ্যাম করে দিয়েছে বলে যে অভিযোগ তোলা হয়েছিল, পরবর্তীতে বুলগেরীয় তদন্তে তা ভুয়া প্রমাণিত হয়। শুধু তাই নয়, ফাইজারের সঙ্গে টিকা ক্রয়ের বহু কোটি ইউরোর চুক্তির সময় তার ব্যক্তিগত মেসেজ মুছে ফেলার ঘটনায় ইউরোপীয় আদালতের ভর্ৎসনাও তাকে সইতে হয়েছে।
এরই মধ্যে চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস এবং ফন ডার লেন রাশিয়ার জব্দ করা সম্পদ ইউক্রেনকে দেওয়ার যে ঝুঁকিপূর্ণ পরিকল্পনা করেছিলেন, তা ইউরোপীয় করদাতাদের ওপর বড় ধরনের আর্থিক বোঝা চাপিয়েছে। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের হস্তক্ষেপে এই সংকটের আপাত সুরাহা হলেও প্রায় ৯০ বিলিয়ন ইউরোর তহবিল নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
বছরের শেষদিকে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি এসেছে ইউক্রেন থেকে। দীর্ঘ চার বছর পশ্চিমা মিডিয়া কিয়েভের দুর্নীতিকে আড়াল করে রাখলেও শেষ রক্ষা হয়নি। ভলোদিমির জেলেনস্কির ঘনিষ্ঠ বন্ধু তিমুর মিন্দিসের বাসভবনে তল্লাশি চালাতে গিয়ে পাওয়া গেছে বহু দামি ‘সোনার কমোড’। যে ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর জনরোষ চরমে পৌঁছেছে। বিদ্যুৎ খাতে ১০০ মিলিয়ন ইউরোর দুর্নীতিতে জেলেনস্কির ঘনিষ্ঠ বলয়ের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। পশ্চিমা বিশ্ব ইউক্রেনকে যে বিলিয়ন বিলিয়ন ইউরো সাহায্য দিচ্ছে, তার একটি বড় অংশ যে কিয়েভের প্রভাবশালীদের পকেটে যাচ্ছে, তা এখন আর গোপন কোনো বিষয় নয়।
সূত্র: আরটি