ফ্রান্সে বসবাসরত নাগরিকদের মধ্যে দেশ ছাড়ার আকাঙ্ক্ষা সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গবেষণা ও মতামত জরিপ প্রতিষ্ঠান গ্যালাপের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, দেশটির জনগণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না।
এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে অভিবাসনের ওপর। সমীক্ষায় দেখা গেছে, বর্তমানে ২৭ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ফরাসি নাগরিক সুযোগ পেলেই স্থায়ীভাবে দেশ ছাড়তে চান। যা গত বছর ছিল মাত্র ১১ শতাংশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার পাশাপাশি সামাজিক আস্থাহীনতার কারণেও এই প্রবণতা সৃষ্টি হচ্ছে।
গ্যালাপ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী ফরাসিদের মধ্যে সরকারের ও বিভিন্ন জাতীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতি আস্থা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। ২০২৫ সালে সরকারের প্রতি আস্থা মাত্র ২৯ শতাংশ, যা গত বছরের তুলনায় ১৩ পয়েন্ট কমেছে। বিচারব্যবস্থা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আস্থাও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।
এই পরিস্থিতির পেছনে রাজনৈতিক অচলাবস্থা অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। গত দুই বছর ধরে ফ্রান্সে একাধিক প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন হওয়ার ফলে সরকার কার্যত সংকল্পহীন অবস্থায় পরিচালিত হচ্ছে।
জরিপে দেখা গেছে, জনসাধারণ মনে করছেন, সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা বড় মাত্রায় কমে গেছে। যা দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করছে। অনেক নাগরিক কর্মসংস্থান, ব্যবসার সুযোগ ও নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রতিশ্রুতির অভাবে হতাশা প্রকাশ করেছেন। জীবনযাত্রার ব্যয় ও কর-ভারের বোঝাও মানুষের মানসিক অবস্থার বিরুদ্ধে কাজ করছে।
ফ্রান্সের সামাজিক পরিবেশকে অনেকেই ‘নেতিবাচক’ ও ‘চাপে ভরা’ হিসেবেও অভিহিত করেছেন। বিশেষত পেশাজীবী ও তরুণদের মধ্যে দেশত্যাগের ইচ্ছা আরো বাড়ছে। চলতি বছর দুর্নীতির ধারণাও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৫ সালে ৬৮ শতাংশ ফরাসি প্রাপ্তবয়স্ক বলেছেন, সরকারের মধ্যে দুর্নীতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
এসব কারণ মিলিয়ে ২০২৫ সালে ফ্রান্সের দেশত্যাগে ইচ্ছুক নাগরিকের সংখ্যা রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে। তাদের মধ্যে কানাডা, সুইজারল্যান্ড, স্পেন ও আলজেরিয়া মতো দেশগুলোই সম্ভাব্য গন্তব্য হয়ে উঠছে।