২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার ঘোষণা দিয়ে নামে মাত্র স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি,বহুমাত্রিক দূর্ণীতিতে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে গেল ৫ আগষ্ট-২০২৪ সুনাম ধন্য ক্ষমতাসীন আ-লীগ সরকারের পতনের পর অনেক সাবেক মন্ত্রী,প্রতিমন্ত্রী,এমপি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাপুটে কর্মকর্তারা গ্রেফতার হয়ে এখন চৌদ্দ শিকের লাল ঘরের বাসিন্দা।কদিন আগের তুমুল ব্যস্ত মন্ত্রী-এমপিরা এখন ২৪ ঘণ্টা পার করছেন কারাগারে শুয়ে-বসে-ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে।ব্যাপারটা মন্দন নয় ভালই লাগছে।যারা জনগনের কল্যানের জন্য রাতদিন সমান করে হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খাটেছেন,টানা ১৬-১৭ বছর আখের গোছাতে তাদের উপর অনেক ধকল গেছে।এতো পরিশ্রমের পর তারা একটু বিশ্রামতো নিতেই পারেন এটা কোন দোষের নয়।
হাইকোর্ট এর রায়ে রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী ছাড়া সংবিধানে ভিআইপি কেউ নন,যে বিষয়টি আইন সিদ্ধ নয়,যেটা নিয়ে হাজারো রকমের আলোচনা-সমালোচনা,এতো কিছুর পরেও আবার কেন দূর্ণীতিবাজদের জন্য কারাগারে ডিভিশন সুবিধা?এ প্রশ্ন অন্তর্বতী সরকার ও সরকারের দায়ীত্বে থাকা ওই সব কর্মকর্তাদের কাছে,যাদের হাতে কারাগারে ভিআইপিদের ডিভিশন সুবিধা দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
প্রশ্ন ভিআইপি সুবিধা:
এখন মজার বিষয় হলো বন্দিদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সারাদেশে ৪৩ জন ভিআইপি পাচ্ছেন কারাগারের ভিডিশন সুবিধা।কারা সূত্রে মতে,সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্বালানি,খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব মো: শাহ কামাল,সেনাবাহিনী থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, নৌবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল,সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হককে আবেদন মঞ্জুরের পর সরকারের নির্দেশে ডিভিশন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
বর্তমানে সারাদেশে কারাগারে রয়েছেন ৪৩ জন ভিআইপি।এদের মধ্যে ১০ জন জেল কোড অনুযায়ী ডিভিশন সুবিধা পাচ্ছেন। এছাড়া ৫ আগস্টের আগে গ্রেফতার সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) উপপরিচালক মো. আবু জাফর ও সহকারী পরিচালক এস এম আলমগীর কবির পাচ্ছেন ডিভিশন সুবিধা।
আবেদন অনুমোদন না হলেও যারা ডিভিশন সুবিধা পাচ্ছেন
সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবি তাজুল ইসলাম, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক পর্যটন ও বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাবেক বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীসহ কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্যকে ডিভিশন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
কারাগারে যারা ডিভিশন সুবিধা পান:
কারা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সু্ত্রেজানা গেছে,কারাবিধি অনুযায়ী কারাগারে শ্রেণি (ডিভিশন) সুবিধা পান সাবেক এমপি, মন্ত্রী,সিআইপি ও সরকারি কর্মকর্তারা।এছাড়া ডিভিশন সুবিধার জন্য যে কোনো বন্দি নিজের সামাজিক অবস্থান তুলে ধরে কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিংবা আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতের কাছে আবেদন করতে পারেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আদালত যদি কোনো বন্দিকে ডিভিশন সুবিধার আবেদন মঞ্জুর করে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় তখন সেই বন্দি ডিভিশন সুবিধা পান।
কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো:মোতাহের হোসেন বলেন,নিয়ম অনুযায়ী সরকারি গেজেটেড অফিসাররা কারাগারে এলে ডিভিশন পান।বাকি যারা বিশিষ্ট ব্যক্তি বা সাবেক এমপি-মন্ত্রী তারা আবেদন করলে অথবা এ বিষয়ে আদালত নির্দেশনা দিলে ব্যবস্থা করা হয়।যাদের বিষয়ে আদালত বলবেন না তারা যদি আবেদন করেন তখন সে আবেদনটি ডিসির কাছে পাঠানো হয়, ডিসি যদি অনুমতি দেন তাহলে তাদের ডিভিশন সুবিধা দেওয়া হয়।
ডিভিশনে যে সুবিধা:
কারাগারে মন্ত্রী-এমপিদের ডিভিশন নিয়ে আইজি প্রিজন যা জানালেন,
যারা ডিভিশন পান তাদের আলাদা রুম বা সেলে রাখা হয়। সেখানে থাকে খাট, ভালো বিছানা, টেবিল, চেয়ার, তোষক, বালিশ, তেল, চিরুনি, আয়নাসহ কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস। ডিভিশন পাওয়া বন্দিদের জন্য একজন করে সহকারী দেওয়া হয়। তারা সংশ্লিষ্ট বন্দির প্রয়োজনীয় কাজগুলো করে দেন। ছেলে বন্দির ক্ষেত্রে সাহায্যকারী হিসেবে ছেলে আর মেয়ে বন্দির জন্য একজন মেয়ে থাকবেন। এছাড়া কারাগারের বাইরে থেকে স্বজনদের দেওয়া খাবার যাচাই-বাছাই করে তাদের দেয় কারা কর্তৃপক্ষ।
বিশেষ সূত্রে জানা যায়, ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে দেশের শীর্ষ ধনী সালমান এফ রহমান ও সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বর্তমানে কেউ খোঁজ-খবর নিচ্ছেন না।এমনকি আত্মীয়-স্বজনরাও তেমন দেখা করতে আসছেন না। কারাগারের নিয়ম অনুযায়ী ১৫ দিন পরপর স্বজনদের দেখা মেলে। বাইরের খাবার নেওয়ার নিয়ম না থাকায় কারাগারের খাবারই জুটছে তাদের ভাগ্যে।
এ বিষয়ে সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (এআইজি-উন্নয়ন) মো: ফরহাদ বলেন,‘বর্তমানে সারাদেশে কারাগারে রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যসহ ৪৩ জন ভিআইপি। তাদের মধ্যে ১০ জন জেল কোড অনুযায়ী ডিভিশন সুবিধা পাচ্ছেন। কারাগারে ডিভিশন মানে আলাদা একটি নির্ধারিত ভবনে থাকার সুযোগ পাওয়া। সাধারণ বন্দিদের তুলনায় ডিভিশন পাওয়া বন্দিদের খাবারের তালিকায় দু-একটি আলাদা আইটেম থাকে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো: মোতাহের হোসেন বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সরকারি গেজেটেড অফিসাররা কারাগারে এলে ডিভিশন পান। বাকি যারা বিশিষ্ট ব্যক্তি বা সাবেক এমপি-মন্ত্রী তারা আবেদন করলে অথবা এ বিষয়ে আদালত নির্দেশনা দিলে ব্যবস্থা করা হয়। যাদের বিষয়ে আদালত বলবেন না তারা যদি আবেদন করেন তখন সে আবেদনটি ডিসির কাছে পাঠানো হয়, ডিসি যদি অনুমতি দেন তাহলে তাদের ডিভিশন সুবিধা দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য,রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আর কেউ ভিআইপি নয়: হাইকোর্ট
বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
৩১ জুলাই ২০১৯, ১৬:০৬
ভিআইপি প্রটোকল বিষয়ে হাইকোর্ট বলেছেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আর কেউ ভিআইপি নয়, বাকিরা সবাই রাষ্ট্রের কর্মচারী।
বাংলাদেশে ভিআইপিদের বিশেষ সুবিধা অর্জনের বিষটি অসাংবিধানিক বলে উল্লেখ করেছেন বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ভিআইপি হিসেবে তাদের বিশেষ সুবিধা অর্জনের নামে অসাংবিধানিক,সম্পূর্ণভাবে অবৈধ, বৈষম্যমূলক এবং একই সাথে অনৈতিক ও অমানবিক দৃষ্টান্ত। আমাদের সংবিধানে পরিষ্কারভাবে সকল নাগরিকের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে।
লেখক:সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিষ্ট