সময়ের প্রখর স্রোতধরা বহিয়া যায,নবীনের উচ্ছলতায় ধেয়ে প্রবীণ এসে যায়।আজ সীমাহীন সম্মান আর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি বিশ্ব প্রবীণদের।যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের আজ আমরা নবীন।এসো হে বিশ্ব সমাজ, প্রবীণদের করি সম্মান,প্রাবীণদের হাত ধরেই নবীনের সব জয়গান।
দেশে এখন প্রায় দেড় কোটি প্রবীণ রয়েছেন।(প্রবীণদের এ সংখ্যা ২০২৫ সালে ২ কোটি ছাড়িয়ে যাবে,সহায়-সম্বলহীন অসহায় এ প্রবীণরা সরকারি তেমন কোনোও সুবিধাই পান না।২০১৬ সাল থেকে একাধিকবার প্রবীণ কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইনের খসড়া করা হলেও হয়নি দৃশ্যমান,আর দেখেনি আলোর মুখ।
দেশে জনসংখ্যার এক বড় অংশই প্রবীণ।প্রবীণদের‘সিনিয়র সিটিজেন (জ্যেষ্ঠ নাগরিক)’হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন সরকার।একি সাথে তাদের জন্য রয়েছে জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা।বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করনে আছে একটি কর্মপরিকল্পনাও ।
কিন্তু,জীবনের শেষান্তে এসেও বলতে গেলে অসাহ ও সহায়-সম্বলহীন এই প্রবীণরা সরকারি তেমন কোনোও সুবিধাই পান না।সুদীর্ঘ ৯ বছরেও সরকার বাস্তবায়ন করতে পারেনি কর্মপরিকল্পনাটি। নীতিমালা আর কর্মপরিকল্পনা করেই দায় সেরেছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়নও অগ্রগতির বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেননি।এ আইনটির অগ্রগতির বিষয়েও জানাতে পারেননি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।একজন আরেকজনকে দেখিয়ে দিলেও সদুত্তর মেলেনা কারও কাছে
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে এখন প্রায় দেড় কোটি প্রবীণ রয়েছেন।গড় আয়ু বেড়ে মৃত্যুহার কমে যাওয়ায় প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা পর্যায়ক্রমে বাড়ছে।
১৭ নভেম্বর-২০১৩‘জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা,২০১৩’করা হয়। নীতিমালা অনুযায়ী-২০১৪ সালের ২৭ নভেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ষাট ও ষাটোর্ধ্ব প্রবীণদের‘সিনিয়র সিটিজেন’ করেন। আর ৪ জুন-২০১৫ সালে একটি কর্মপরিকল্পনা করে বাস্তবায়নের জন্য তা পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কাছে ।
কর্মপরিকল্পনা অনুসারে জ্যেষ্ঠ নাগরিক ভিত্তিতে প্রবীণদের সব ধরনের পরিবহনে কম ভাড়ায় যাতায়াত ব্যবস্থা,হাসপাতালগুলোতে সাশ্রয়ীমূল্যে আলাদাভাবে চিকিৎসাসেবা, আলাদা বাসস্থানের সুবিধা,প্রবীণ স্বাস্থ্যবিমা চালু,নির্বাচন কমিশন থেকে আলাদা পরিচয়পত্র সহ বহমাত্রিক-সুবিধা নিশ্চিত করার কথা ছিল।আর নিয়ম অনুযায়ী এসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়,বিভাগ ও সংস্থাগুলো ।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বাজেট,কার্যক্রম ও মূল্যায়ন) মো: নজরুল ইসলামের নিকট কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘এ বিষয়ে আমি বলতে পারবো না।এটা নিয়েঅতিরিক্ত সচিব মো: ইব্রাহিম খানের সাথে কথা বলুন।’
প্রশাসন অনুবিভাগ,তিরিক্ত সচিব ইব্রাহিম খান বলেন,‘এটি আমার এখতিয়ারাধীন কাজ নয়।এটি বলতে পারবে আইন শাখা।একই বিষয়ে আইন ও সংস্থা অধিশাখার যুগ্মসচিব এরশাদ হোসেন খান বলেন,বিষয়টি আমার না‘যুগ্মসচিব ছরোয়ার হোসেন এ বিষয়ে বলতে পারবেন।কাজের কাজ কিছুই রেই শুধুই তালবাহান।
প্রবীণ নীতিমালা ও কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নর সার্বিক বিষয় নিয়ে যুগ্মসচিব (কার্যক্রম অধিশাখা,অতিরিক্ত দায়িত্ব পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অধিশাখা) ছরোয়ার হোসেন বলেন,‘এ বিষয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ভালো বলতে পারবেন।এছাড়াও মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সচিব আচে,কথা বলতে পারেন তার সাথেও।
প্রবীণদের নিয়ে কাজ করেন এমন ব্যক্তিদের সূত্র বলছে,প্রবীণদের সুরক্ষায় প্রয়োজন আইন।কারণ আইন বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা আছে। আর নীতিমালা,কর্মপরিকল্পনা করা হলেও তা বাস্তবায়নে বাইরে থেকে দেখভাল করার কোনো পক্ষ নেই।তাই সেগুলো পড়ে থাকে। বে-সরকারিভাবেও প্রবীণদের সুরক্ষার উদ্যোগে রয়েছে অনেক ঘাটতি।তাই প্রবীণদের বড় অংশের জীবনটায় এখন যেন বঞ্চনার।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সূত্র বলেন,‘বিশ্বব্যাপীই আসলে প্রবীণদের অবস্থা ভালো নয়।মানুষ যে কত অপরিণামদর্শী,এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে সবাই প্রবীণদের বিষয়ে উদাসীন।’
তিনি বলেন,‘প্রবীণদের জন্য সরকারের যত উধ্যোগ এর মধ্যে বয়স্কভাতাই একমাত্র সমৃদ্ধ হয়েছে।এছাড়া নীতিমালা করা হয়েছে। সেটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ আমরা দেখছি না। আইন হলে সেটি বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা থাকে।আমরা ২০১৭ সালে প্রবীণ কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইনের খসড়া দিয়েছি। কিন্তু সেটিও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে পড়ে আছে। আমরা বহু হাতে পায়ে ধরেছি, কিন্তু কোনো কাজে আসেনি।’
প্রবীণ কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন দ্রুত চূড়ান্ত করে বাস্তবায়ন‘সর্বজনীন পেনশন প্রবীণদের বড় একটা সুরক্ষা হতে পারে। কিন্তু এটাকে একটা রাজনৈতিক মোড়কে ঢেকে দেওয়ার কারণে সেভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না।‘বে-সরকারি পর্যায়ে প্রবীণদের সুরক্ষার বিষয়ে উদ্যোগও খুবই কম। কারণ প্রবীণদের জন্য কোনো ফান্ড পাওয়া যায় না। দেশি-বিদেশি কেউই প্রবীণদের বিষয়ে আগ্রহী নয়।’
একাধিক সূত্র মতে,বিশ্বব্যাপী মানুষের মৃত্যুহার কমে মানুষ প্রবীণ হচ্ছে। প্রবীণদের মধ্যে নারীদের অবস্থা বেশি খারাপ।বিরাট সংখ্যক প্রতিবন্ধী, তারা যখন বয়স্ক হচ্ছে,খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।নবীন আছে প্রবীণ হবে,ক্রমান্বয়ে প্রবীণ বেড়েই যাবে,প্রশ্ন থেকে যায়,কিন্তু এ ব্যাপারে আমরা কতটা প্রস্তুত।
আসুন আমরা বিশ্বব্যাপী প্রবীণদের সম্মান ও শ্রদ্ধার পাশপাশী তাদেরকে । সুখী-সাচ্ছন্দময়,আনন্দ ও নিরাপদ জীবণ উপহার দিতে আইন প্রনয়ন করে এর যথাযথ বাস্তবায়ন করি।আজকে যারা নবীন,আগামী দিনে তারায় প্রবীণ এ কথাটি সবায় যেন মাথায় রাখি।
লেখক:সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিষ্ট,