দেশে চাকরিপ্রার্থীদের দীর্ঘ আন্দোলনের মুখে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা দু,বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার,এটাকে সাধুবাদ জানায়।কিন্তু সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসির) অধীনে বিসিএস পরীক্ষায় একজন প্রার্থী তিনবারের বেশি অংশ নিতে পারবে না,এটা সঠিক নয় ‘অযৌক্তিক’।অন্তর্বর্তী সরকার যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবছে,সেটি‘মৌলিক অধিকারের’প্রশ্ন।এ অধিকার কেড়ে নেওয়ার আইনী বৈধতা দুনিয়ার কারো নেই।বিষয়টি আমি মানতে পারছিনা। আর জাতী মেনে নিবে বলেও আমার মনে হয় না।
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বেঁধে দিলে সেই পর্যন্ত সবার আবেদন করার সুযোগ রাখা উচিত এবং রাখতে হবে। কারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনিতেই দীর্ঘ সেশনজট লেগেই থাকে। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বেঁধে দেওয়ার পর কে কতবার পরীক্ষা দিবে,সেটা নির্ধারণ করে দেওয়াটা নিশ্চয় সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পরে না বলে আমি মনে করি।শিক্ষার কোন বয়স নেই,(বিসিএসওশিক্ষা)একজন শিক্ষার্থীর পাস করে বেড়িয়ে আসা পর্যন্ত যতবার প্রয়োজন পরীক্ষা দিবে। বয়স থাকবেনা,চাকরি করবে না,সহজ বাংলা হিসেব।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যদিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আবির্ভাব। এসেই সেই বৈষম্যমূলক আচরণ?মৌলিক অধিকার নিয়ে কাটাছেঁড়া,এটা কিসের আলামত?প্রশ্ন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে।
‘বয়সসীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি নিশ্চয়ই ভালো। কিন্তু আপনি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ঠিক করে দিচ্ছেন,আবার কতবার আবেদন করা যাবে; সেটাও ঠিক করে দিচ্ছেন। এখানে তো একটার সঙ্গে আরেকটা নিয়মের স্পষ্ট বিরোধ দেখা যাচ্ছে। যদি আবেদনের সুযোগ সর্বোচ্চ তিনবার দেওয়া হয়, সেখানে তো বয়সসীমার প্রয়োজন নেই।’
একজন শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করে প্রথম বিসিএসে তড়িঘড়ি যখন অংশ নেন, তখন সেটাতে সাকসেস রেট খুব কম। বাংলাদেশের বাস্তবতায় একাধিকবার বিসিএসে অংশ নিয়েই সফলতার হার বেশি এবং অনেকে তো শেষ বিসিএসে গিয়েও চাকরি পান।
এখানে একটা জিনিস করা যেতে পারে যে, দুই বা তিনবারের বেশি কাউকে নিয়োগের সুপারিশ করা হবে না। কারণ, অনেকে এক ক্যাডারে নিয়োগ পেয়ে সেটা ছেড়ে অন্যটাতে চলে যান। এতে যারা বেকার, তারা বেকারই থাকেন। শুধু শুধু অনেক পদে নতুন নিয়োগের মূলা দেখানো হয়।’
বিসিএসে সর্বোচ্চ তিনবার পরীক্ষা দেওয়া যাবে,এটা কোনো দিক থেকেই যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নয়।পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নয়,বরং কতবারের বেশি সুপারিশ পেতে পারবে না; সেটা বেঁধে দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বয়সসীমা ৩২ বছর করা এবং তিনবারের বেশি বিসিএসে অংশ নেওয়া যাবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে দ্রুত আদেশ জারি হতে পারে। তবে তিনবারের বেশি যে বিসিএসে অংশ নেওয়া যাবে না, এটা বাস্তবায়নে প্রথমে ‘বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বিধিমালা, ২০১৪’ সংশোধন করতে হবে।‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’ এর ধারা ৫৯-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিধিতে সংশোধন বা সংযোজন আনবে।
পিএসসির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ক্যাডার শাখা) সূত্র বলেন,বিষয়টি নিয়ে কোনো নির্দেশনা বা সিদ্ধান্ত আমাদের এখানে আসেনি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় যেভাবে বলবে,আমরা সেভাবে করবো।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ,পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব সূত্র বলেন,বয়সসীমার বিষয়টি তো ক্লিয়ার (স্পষ্ট)। বাকি যে বিষয়টি (বিসিএসে সর্বোচ্চ তিনবার অংশগ্রহণ) সেটা নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ক্ষুদেবার্তা,জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস এবং এই আপামোর জনসাধাণ-ই এই রাষ্ট্রের মালিক, এটা নিশ্চয় আর কোন সরকারের ভূল হবার কথা নয়।এই রাষ্ট্রের জনসেবায় নিয়োজিতদের বা রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যয়ভারের অর্থের যোগানদাতাও এই জনগণ। আর সরকার এই রাষ্ট্রকাঠামো পরিচালনা করার শুধুমাত্র একটি ‘গাইড লাইন’।মানুষের বেঁচে থাকার ৫টি মৌলিক অধিকারের প্রথমটি অন্ন।এই অন্নকে ঘীরেই নিত্যপণ্য ,আর এখানেই যত সিন্ডিকেট।সরকার আসে যায়,নেতা পরিবর্তন হয়,নতুন নেতা তৈরী হয়।কিন্তু বাজার সিন্ডিকেট কেউ ভাঙ্গেনা।বাজার সিন্ডিকেটের কবলে পরে প্রায় মরে বেঁচে থাকা।এ রকম অবস্থায় যদি আরেক একটি অধিকার নিয়ে টানা হেঁচড়া শুরু হয় তবে সাধারণ মানুষ কোথায় দাঁড়াবে।প্রশ্ন সরকারের কাছে।দেশের সার্বিক অবস্থা এলোমেলো,সমস্যা ও চাহিদা অফুরন্ত,অগ্রাধিকারভিত্তিতে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। সরকার কতক্ষণ আছেন,কতদিন থাকবেন, এটা নিয়ে সাধারণ মানুষের মাথা ব্যথা নেই। দেশের ক্লান্তিলগ্নে জনকল্যাণে দেশের হাল ধরেছেন ,জনকল্যাণেই কাজ করবেন এমনটায় প্রত্যাশা দেশবাসীর।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদি ও কলামিষ্ট জয়পুরহাট।