সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ০১:৩১ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
সিরাজগঞ্জে শিশু কন্যাকে হত্যার পর বস্তাবন্দী করে পালাল সৎমা শিগগিরই ‘শক্তিশালী আন্দোলন’ শুরু হবে: নাহিদ টঙ্গীতে মোবাইল ছিনতাই করতে গিয়ে গার্মেন্টস শ্রমিক মাহফুজকে হত্যা পুরান ঢাকায় সোহাগ হত্যা; আনসার সদস্যদের দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ সত্য নয়: আনসার ডিজি আবারও সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা দিলো ডিএমপি সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা আরও দুই মাস বাড়ল চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ধরতে চিরুনি অভিযান শুরু হতে পারে:স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কুড়িগ্রামকে মাদকমুক্ত করতে অভিযান চলবে-জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা  টাঙ্গাইলে ঘাটাইলের জোরদিগিতে মসজিদের নামে জমি দান করায় দানকারীর বিরুদ্ধে ৬টি মিথ্যা মামলা  বিএনপির বিরুদ্ধে  ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে  কাজিপুরে বিক্ষোভ মিশিল  

প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং কিছু কথা

এম.এ.জলিল রানা / ১০০ বার দেখা হয়েছে
আপডেট করা হয়েছে বুধবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৪, ৬:৪০ অপরাহ্ন

শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। আর শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি উন্নতি সাধন করতে পারেনা”।এমন শব্দ ছোট বেলা থেকেই শুনেছি এবং বুঝে বা না বুঝে এশব্দটি মুখস্থ করে এসেছি।তবে এটি চরম বাস্তব সত্যবাণীও বটে।আর এ মেরুদন্ড- প্রথম যে কারখানায় তৈরি হয় এর নাম প্রাথমিকবিদ্যালয়।

একটি শিশু ভবিষ্যতে কতটুকুন ন্যায়-নিষ্ঠা, নীতিবান ,আদর্শ, চরিত্রবান হবে কিংবা পরিবার,সমাজ, দেশ ও জাতির প্রতি কতটুকুন দায়িত্বশীল হবে সেটি অনেকাংশেই নির্ভর করে তার জীবনের প্রাথমিক শিক্ষার উপ।তাই প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।
প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে করনীয়, এক্ষেত্রে পরিবার,সমাজ,রাষ্ট্র এবং শিক্ষকের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত, প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে বাঁধা এবং তাউত্তরণে কি-ইবা করণীয় আছে এবং আসলেই শিক্ষাই কি জাতির মেরুদন্ড সে সব বিষয় নিয়েই আলোচনা করাই এ প্রতিবেদনের মুলউদ্দেশ্য।

এক সময় এমনছিল, যখন বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীর হারছিল খুবকম আর সেক্ষেত্রে মেয়েদের হারছিল আরও কম।সরকারের শিক্ষার বহুমাত্রিক কর্মসূচি যেমন সময়মত বিনা মূল্যে বই বিতরণ, বিনা বেতনে শিক্ষা, ফ্রি টিফিনের ব্যবস্থা, বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ প্রভৃতি কারণে একদিকে যেমন বেড়েছে শিক্ষার মান তেমনি অন্যদিকে বেড়েই চলেছে শিক্ষারহার।আমাদের দেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে কমবেশি সবারই ধরনা আছে।

শুরুতেই আমরা বাচ্চাদের ঘাড়ে চাপিয়েদেয় এক বোঝা বইয়ের ব্যাগ আর ভালো ফলাফলের জন্য অভিভাবক, পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও শিক্ষক সবাই পাগলা ঘোড়ারমতো ছোটাছুটি করি।ফলে ভালো ফলাফলধারী অনেক শিক্ষার্থী পাওয়া গেলেও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় মানবিক গুণাবলীসম্পন্ন ভাল মানুষের বড়ই সংকট।প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় যেসব কারণ দায়ীএর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ের উপর আলোচনা করা হল।

(১) নৈতিক শিক্ষাব্যবস্থার অভাব: প্রাথমিক শিক্ষাস্তরের সিলেবাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, সেখানে নৈতিক শিক্ষা বা নীতিকথার চেয়ে তাত্ত্বিক কথায় অনেক বেশি যা বাচ্চারা মুখস্থ করে শুধুমাত্র পরীক্ষায় পাশের জন্য।এমনকি প্রতিদিন লাইনে দাঁড় করিয়ে যে শপথ বাক্য পাঠ করানো হয় তার অর্থ মন দিয়ে কয়জন শিক্ষার্থী অনুভব করে তানিয়ে ও রয়েছে অনেকেরই প্রশ্ন।

(২) সু-শিক্ষিত বা মানসন্মত শিক্ষকের অভাব: বলতে কোন দ্বিধা নেই, যারা উত্তম মানুষ গড়ার কারিগর, তাদের অনেকেরই নৈতিক মান নিয়ে প্রতিনিয়ত অনেক খবর পত্রপত্রিকায় দেখা যায়।ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে স্বপ্ন আর আশার আলো দেখানোর মহানদায়িত্ব যাদের, তারা শিক্ষকতা নামক এক মহানপেশাটিকে নেহায়েতই আয় রোজগারের একটি উপায় হিসেবে বেছেনিয়েছেন বা নিচ্ছেন।এঅবস্থা থেকে বেরিয়ে আশা খুবি জরুরি।

(৩) শিক্ষক সংকট: বর্তমানেশিক্ষার্থী-শিক্ষকের যে অনুপাত তা বাস্তবে মানসম্মত শিক্ষার উপযোগী নয়।এক তথ্য অনুযায়ী এ অনুপাত-১ঃ৫৩।এ অনুপাত কমিয়ে-১ঃ২৫এ আনা জরুরি।তাছাড়া শিক্ষার আদর্শিক জায়গা বা গুণগতমানে পৌঁছানো কখনোই সম্ভব হবে না।

(৪) শিক্ষার পরিবেশগত অভাব: আদর্শিক জাতিগঠনের লক্ষ্যে সুস্থমেধা বিকাশ উপযোগী যে ধরনের শ্রেণীকক্ষ প্রয়োজন তা অনেক বিদ্যালয়েই নেই।সরেজমিন দেখা গেছে, অনেক বিদ্যালয়ে সিট বেঞ্চনেই, টয়লেট নেই, নেই খেলার সামগ্রী – যা প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে খুবি জরুরি।

(৫) দারিদ্রতা: বর্তমানে অনেক পরিবার দারিদ্র সীমার নীচে বসবাস করছে।এসব পরিবারের বেশিরভাগ মা-বাবারা মনে করেন তার সন্তান স্কুলে গিয়ে যে বৃত্তিপাবেন তার চেয়ে অনেক বেশি আয় করতে পারবে যদি সে বাসাবাড়ি বা বাইরে অন্য কোথাও কাজ করে।ফলে তাদের সন্তানদেরকে বিদ্যালয়ের চেয়ে জীবন-জীবিকার সন্ধানে কাজে নিয়োজিত করছেন।একারণে শিক্ষার সুদূর প্রসারী ধারণা ও ফলাফলের ব্যাপারে তাদের ধারণা একেবারেই কম।

(৬) বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির দুর্বলতা: বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির অন্যতম দায়িত্ব হলো শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করা।কিন্তু বাস্তবতার আলোকে দেখাযায় বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির অনেক সদস্যই শিক্ষার গুরুত্ব বা গুণগতমান বৃদ্ধির বিষয়ে মোটেও সচেতন নয়।অনেকেই বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য হওয়াকে বা সভাপতিহওয়ার বিষয়টিকে সম্মান বৃদ্ধির/ক্ষমতা-আধিপত্য বিস্তার /আর আয়রোজগার বৃদ্ধির উপায় ও উপকরন হিসেবে বেছে নিয়েছেন।ব্যবস্থাপনা এ কমিটির সভাপতি হওয়ার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র রাজনৈতিক মতাদর্শকে বিবেচনানা করে তাঁর নিজস্ব শিক্ষাগতযোগ্যতা এবং শিক্ষার প্রসারে তার অবদানকে বিবেচনা করার জন্য বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে।

(৭) অভিভাবকদের অসচেতনতা: দেশের অধিকাংশ মানুষ যেহেতু গ্রামাঞ্চলে বসবাস করে এবং তারা কৃষি কাজের সাথে জড়িত, তাই স্বাভাবিকভাবেই তারা তাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে তাদের মত কৃষক বানাতে চায় বা চাওয়াটায় স্বাভাবিক।তাদের অনেকেরি ধারণা,পড়ালেখা করে কি আর হবে।পড়ালেখা করে গরীব মানুষের সন্তানদের চাকরি পাওয়া কঠিন।আর তাছাড়া তাঁরা চিন্তিত শিক্ষার গুরুত্ব বা সুদূর প্রসারী ফলাফল নিয়ে ।

প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে করণীয়:(১) শুধু পঠ্যক্রম ভুক্ত বিষয়ের উপর নির্ভর করে না থেকে আদর্শ ভিত্তিক নীতিনৈতিকতা সম্পন্ন মানসিকতা তৈরিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। (২) ৪বছর বয়সে বিদ্যালয়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক করে ৬বছর বয়স পর্যন্ত কেবলমাত্র নৈতিক শিক্ষা প্রদান করতে হবে।৬বছর পর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদান শুরু করতে হবে।(৩) শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা সম্পূর্ণ, চরিত্রবান ও অতিযোগ্যতা সম্পূর্ণ দক্ষদেরকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। (৪) শিক্ষকদের জন্য পৃথক বেতনকাঠামো নির্ধারণ করে তাদের পদমর্যাদাও বাড়াতে হবে। (৫) শিক্ষার্থী-শিক্ষক অনুপাত কমিয়ে আনতে হবে। (৬) শিক্ষার বিষয়ে অভিভাবকদের আরও বেশি সচেতনতা বাড়াতে হবে। (৭) প্রতিটি বিদ্যালয়ে মাসে কমপক্ষে ১দিন সফল ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদেরকে তাদের ভবিষ্যৎ তৈরির জন্য স্বপ্ন দেখাতে হবে এবং দেশজাতির সঠিক ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে ধারণা প্রদান করতে হবে। (৮) আর সর্বোপরি, সুস্থ্য মেধাবিকাশের ক্ষেত্রে শিক্ষার পরিবেশ তৈরির জন্য যা যা উপায় ও উপকরণ প্রয়োজন তা সরকারের পক্ষথেকে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য নিশ্চিত করতে হবে।

শেষান্তে এমনটায় আশাবাদ ব্যক্ত করতে চাই যে, বিনয়ী,নম্র, সৎ ও যোগ্যতা সম্পন্ন একটি আদর্শ জাতি গঠনের জন্য যে সব বাঁধা বিপত্তি রয়েছে তা অবশ্যই একদিনে দূরকরা হয়তো সম্ভব হবে না। এবং যে স্বপ্ন নিয়ে এই জাতির পথচলা শুরু হয়েছে তা অবশ্যই অচিরেই পূর্ণহবে।আর পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ,সহমর্মিতা, সহনশীলতা, মানবিক দায়িত্ববোধ এবং সেবাধর্মী মানসিকতার একটি জাতিগঠনের জন্য সবাই সম্মিলিতভাবে প্রানান্তকর প্রচেষ্টায় কাজ করবো-এমটায় প্রত্যাশা দেশ ও জাতির কাছে।

শুধু শিক্ষা দিয়ে কাজ হবে না। আর শিক্ষাই যে জাতির মেরুদন্ড এটা পেছনে ফেলে এ গণ্ডি থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে।আগামীতে দেশ জাতিকে সঠিক পথে পলিচালনার জন্য সঠিক নেতৃত্ব আর যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে এ প্রজন্মকে প্রস্তুত করতে হলে, স্ব-স্ব, সঠিক ধর্মীয় অনুশাসনের মাধ্যমে সু-শিক্ষার আদলে এ প্রজন্মের মেরুদন্ড তৈরী করতে হবে।আর সবার জন্য সর্বক্ষেত্রে মনে রাখা প্রয়োজন যে,মায়ের হাতে শিক্ষার হাতে খড়ি,আদর্শ শিক্ষার আদী বুনিয়াদ।তাই শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড নয় বরং সু-শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড।(সু-শিক্ষায় গড়ব দেশ,সব মানুষের বাংলাদেশ)।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিষ্ট,জয়পুরহাট:


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By Limon Kabir