বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫, ০৬:৩৯ পূর্বাহ্ন

খেলাপি ঋণ ও অব্যবস্থাপনায় বন্ধ হচ্ছে ৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠান

অনলাইন ডেস্ক: / ১৬ বার দেখা হয়েছে
আপডেট করা হয়েছে শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০২৫, ৯:১৬ পূর্বাহ্ন
- বাংলাদেশ ব্যাংক

দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় অবশেষে দম নিতে পারল না দেশের ৯টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান। আমানতকারীর টাকা ফেরত দিতে না পারা, ঋণের পাহাড়সম খেলাপি আর মূলধনের ঘাটতিতে ভেঙে পড়া এসব প্রতিষ্ঠানকে ‘অপরিচালনযোগ্য’ ঘোষণা করে অবসায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেবে সরকার, আর কর্মচারীরাও চাকরিবিধি অনুযায়ী সুবিধা পাবেন।

গত বৃহস্পতিবার গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক জরুরি বৈঠকে প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

পরে গভর্নরের অনুমোদনে অবসায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরই মধ্যে ফিন্যান্স কম্পানি আইন ২০২৩ অনুযায়ী লাইসেন্স বাতিল ও অবসায়নের প্রস্তুতি শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রেজল্যুশন বিভাগ।

বন্ধ হতে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, আভিভা ফাইন্যান্স, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কম্পানি (বিআইএফসি), প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স কম্পানি এবং প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধে সরকারের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা।

এর মধ্যে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়াকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, সমস্যাগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের নিট ব্যক্তি আমানতের পরিমাণ প্রায় চার হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। অবসায়নের প্রাথমিক ধাপে এই অর্থের জোগান দেওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের বেশির ভাগই খেলাপি।

এর মধ্যে এফএএস ফাইন্যান্সের ৯৯.৯৩ শতাংশ, ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ৯৮ শতাংশ, বিআইএফসির ৯৭.৩০ শতাংশ এবং ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ৯৬ শতাংশ ঋণ খেলাপি। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং একাই খেলাপি ঋণ জমিয়েছে তিন হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা, যার বেশির ভাগই আদায় অযোগ্য। পিপলস লিজিংয়ের খেলাপি ঋণের হার ৯৫ শতাংশ এবং লোকসান চার হাজার ৬২৮ কোটি টাকা। আভিভা ফাইন্যান্সের খেলাপি ৮৩ শতাংশ, লোকসান তিন হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। প্রিমিয়ার লিজিংয়ের ৭৫ শতাংশ ঋণ খেলাপি, লোকসান ৯৪১ কোটি টাকা।

জিএসপি ফাইন্যান্সের খেলাপি ৫৯ শতাংশ, লোকসান ৩৩৯ কোটি টাকা। প্রাইম ফাইন্যান্সের ৭৮ শতাংশ ঋণ খেলাপি, লোকসান ৩৫১ কোটি টাকা।

এ অবস্থায় ফিন্যান্স কম্পানি আইন ২০২৩-এর ৭(১) ধারা অনুযায়ী লাইসেন্স বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই ধারা অনুযায়ী আমানতকারীর স্বার্থবিরোধী কার্যক্রম, দায় পরিশোধে সম্পদের ঘাটতি এবং মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থতার কারণে লাইসেন্স বাতিল করা যায়। একই আইনের ৭(২) ধারা অনুযায়ী লাইসেন্স বাতিলের আগে ১৫ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর সুযোগ দিতে হয়। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত ২২ মে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সন্তোষজনক জবাব না আসায় বাংলাদেশ ব্যাংক চূড়ান্তভাবে অবসায়নের সিদ্ধান্ত নেয়।

বর্তমানে দেশে মোট ৩৫টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ২০টিকে সমস্যাগ্রস্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই ২০ প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণ ২৫ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা, যার মধ্যে খেলাপি ২১ হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। খেলাপির হার দাঁড়িয়েছে ৮৩.১৬ শতাংশ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By Limon Kabir