বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫, ০৬:০৭ পূর্বাহ্ন

বিমা খাতে দাপট পাঁচ কোম্পানির

অনলাইন ডেস্ক: / ১৩ বার দেখা হয়েছে
আপডেট করা হয়েছে রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৫, ৯:৪৪ পূর্বাহ্ন

একটির সংকটেই ঝুঁকিতে পড়বে পুরো খাত

দেশের বিমা খাত নিয়ন্ত্রণ করছে শীর্ষ পাঁচ কোম্পানি। এদের হাতেই সম্পদ ও প্রিমিয়ামের সিংহভাগ। এসব কোম্পানির যে কোনো একটিতে সংকট তৈরি হলে ঝুঁকি তৈরি হবে পুরো খাতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই পাঁচ কোম্পানির দাপট বিমা খাতের প্রতিযোগিতা কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি পদ্ধতিগত ঝুঁকি তৈরি করেছে। ছোট ছোট কোম্পানি টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে এবং দিনদিন পণ্য ও সেবার বৈচিত্র্য সীমিত হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জীবন বিমা খাতে সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৮ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। শীর্ষ পাঁচ কোম্পানির দখলে আছে প্রায় ৭৭ শতাংশ বা ৩৭ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকার সম্পদ। ৬৫ শতাংশের বেশি প্রিমিয়ারও তাদের হাতে। এ খাতে সরকারি প্রতিষ্ঠান জীবন বীমা করপোরেশন একাই ৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ সম্পদ ও ৭ দশমিক ০১ শতাংশ প্রিমিয়াম নিয়ন্ত্রণ করে।

নন-লাইফ বিমা খাতে সম্পদ ২০ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। শীর্ষ পাঁচ প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে ৬২ দশমিক ৬৭ শতাংশ বা ১২ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকার সম্পদ এবং ৫৬ দশমিক ০২ শতাংশ প্রিমিয়াম। সরকারি প্রতিষ্ঠান সাধারণ বীমা করপোরেশন একাই নন-লাইফ জীবন বিমা খাতের ৪২ দশমিক ১৭ শতাংশ সম্পদ এবং ২৭ দশমিক ১০ শতাংশ প্রিমিয়াম দখল করে রেখেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্পদ ও প্রিমিয়ামের এমন অতিরিক্ত ঘনত্ব বিমা খাতের প্রতিযোগিতা সীমিত করে দিচ্ছে এবং কিছু প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াচ্ছে।

বিমা খাত এককভাবে পরিচালিত হলেও এর আর্থিক কর্মকাণ্ড সরাসরি যুক্ত রয়েছে ব্যাংক, নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মূলধন বাজার ও বন্ড বাজারের সঙ্গে। জীবন বিমা কোম্পানিগুলো বিনিয়োগের প্রায় ৬৩ শতাংশ সরকারি বন্ডে রেখেছে।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) পরিমাণ ২০২৩ সালের ১৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ থেকে কমে ২০২৪ সালে ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশে নেমেছে।

এ আমানত ব্যাংক খাতের আমানতের মাত্র ০ দশমিক ৯৫ শতাংশ হওয়ায় বিমা কোম্পানি হঠাৎ টাকা তুলে নিলে ব্যাংক খাতে বড় ধরনের চাপ পড়বে না। তবে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ধস নামলে বিমা খাতও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিনিয়োগের ১০ দশমিক ৫৯ শতাংশ রাখা হয়েছে পুঁজিবাজারে। শেয়ারবাজারের দুর্বল পারফরম্যান্স সরাসরি বিমা খাতের আয়কে প্রভাবিত করছে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত বিমা কোম্পানির সম্মিলিত বাজার মূলধন ২০২৩ সালের ৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ থেকে কমে ২০২৪ সালে ৩ দশমিক ৫৩ শতাংশে নেমে এসেছে। এর মানে, শেয়ারবাজারে বিমা খাতের প্রভাব সীমিত। কিন্তু বিমা খাতের নিজস্ব বিনিয়োগ শেয়ারবাজারে উল্লেখযোগ্য হওয়ায়, বাজারে মন্দা এ খাতের ওপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছে।

বিশ্লেষকদের মতে, শীর্ষ পাঁচ প্রতিষ্ঠানের দাপট খাতজুড়ে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করছে। এদের যে কোনো একটির বড় সংকট পুরো খাতকে নাড়িয়ে দিতে পারে। বাজারের বড় অংশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকায় নতুন বা ছোট কোম্পানিগুলো প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছে। এতে বাজারে সেবা ও পণ্যের বৈচিত্র্য সীমিত হচ্ছে। বিমা খাতের ঘনত্ব ও আন্তসংযোগ খাতটিকে ঝুঁকিপূর্ণ করছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে সতর্ক করেছে। সঠিক নীতি ও কঠোর তদারকি ছাড়া এই খাত অচিরেই আরও বড় ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে, যা সামগ্রিক আর্থিক স্থিতিশীলতাকেও প্রশ্নের মুখে ফেলবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
Theme Created By Limon Kabir