মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:০৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ
নোটিশ:
তথ্য ও প্রচার মন্ত্রণালয় নিবন্ধনকৃত অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্য পিপলস্ নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকে সারা দেশে জেলা প্রতিনিধি নিয়োগ করা হবে। মোবাইল: ০১৭১১-১১৬২৫৭, ০১৭১২-৪০৭২৮২ ' ই-মেইল : thepeopelesnews24@gmail.com

মুমিনের বিপদ-আপদ পাপমোচনে সহায়ক

অনলাইন ডেস্ক: / ৩৫ বার দেখা হয়েছে
আপডেট : বুধবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৫

জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপেই মানুষকে মুখোমুখি হতে হয় নানা পরীক্ষা ও বিপদের। কারো কাঁধে রোগের ভার, কারো হৃদয়ে প্রিয়জন হারানোর বেদনা, কারো সংসারে অভাবের কষাঘাত; কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে এসব কষ্ট কোনো অর্থহীন যন্ত্রণার নাম নয়, বরং তা এক মহান রহমত ও আত্মিক পরিশুদ্ধির প্রক্রিয়া।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মুমিন নারী-পুরুষের ওপর, তার সন্তান ও ধন-সম্পদের ওপর বিপদ-আপদ অনবরত লেগেই থাকে; শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহর সঙ্গে এমন অবস্থায় মিলিত হয় যে তার ওপর কোনো গুনাহ থাকে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৯৯)।

বিপদে লুকিয়ে থাকা রহমত : মানুষের চোখে বিপদ মানে ক্ষতি, কিন্তু আল্লাহর দৃষ্টিতে এটি হতে পারে পবিত্রতার অগ্নিপরীক্ষা।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, ধন-সম্পদ, প্রাণ ও ফল-ফসলের ক্ষতি দ্বারা; আর ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৫৫)।

এই আয়াত যেন মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য এক সত্য ঘোষণা করে। যেখানে বলা হয়েছে- কষ্ট আল্লাহর অপ্রসন্নতার নিদর্শন নয়, বরং এটি তাঁর প্রিয় বান্দাদের জন্য এক আত্মিক পরিশুদ্ধির সুযোগ। বিপদে মুমিনের প্রতিক্রিয়া : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মুমিনের ব্যাপার কতই না বিস্ময়কর! তার সব অবস্থাই তার জন্য কল্যাণকর। সে যদি সুখ পায়, আল্লাহকে কৃতজ্ঞতা জানায়; এতে তার কল্যাণ। আর যদি কষ্টে পড়ে, ধৈর্য ধারণ করে; এটাও তার জন্য কল্যাণ।’
(মুসলিম, হাদিস : ২৯৯৯)।

এ হাদিস স্পষ্ট করে দেয় যে আল্লাহর কাছে প্রকৃত সফলতা কষ্টহীন জীবনে নয়, বরং ধৈর্য ও সন্তুষ্টির জীবনে।  বিপদ-আপদ গুনাহমুক্তির এক অপার পথ : বিপদ-আপদকে আল্লাহ এমনভাবে সাজিয়েছেন যাতে তা বান্দার অন্তরের গুনাহের কালিমা মুছে দেয়।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো মুসলিম যখন কষ্ট, ব্যাধি, দুঃখ, দুশ্চিন্তা বা কোনো ধরনের যন্ত্রণা ভোগ করে; এমনকি একটি কাঁটাও যখন তার বিঁধে যায়; আল্লাহ তাতে তার কিছু গুনাহ মোচন করে দেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৬৪১)।

এই হাদিস প্রমাণ করে, মুমিনের প্রতিটি অশ্রুবিন্দু বৃথা যায় না; প্রতিটি ব্যথা পরিণত হয় আত্মার পরিশুদ্ধি ও সওয়াবের সিঁড়িতে।

কষ্টের মধ্যেও আনন্দের গোপন রহস্য : ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেছেন, ‘যখন আল্লাহ কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন, তখন তিনি তাকে পরীক্ষা দেন। কারণ কষ্টের মাধ্যমেই বান্দা তার রবের কাছে ফিরে আসে, আত্মা পরিশুদ্ধ হয় এবং গুনাহ দূর হয়।’ (আল-ফাওয়ায়িদ, পৃষ্ঠা-৮৭)।

সুতরাং যিনি কষ্টকে আল্লাহর পক্ষ থেকে এক তাযকিয়া, অর্থাৎ আত্মার প্রশিক্ষণ হিসেবে গ্রহণ করেন, তাঁর জীবনেই মুমিনের মর্যাদা প্রস্ফুটিত হয়। নবী-রাসুলদের জীবনে পরীক্ষার রীতি : প্রিয় বান্দারাই সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষায় পড়েছেন। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা আসে নবীদের ওপর, তারপর যারা তাদের নিকটতম অনুসারী, তাদের ওপর।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৯৮)।

ইউসুফ (আ.)-এর কারাবাস, আইয়ুব (আ.)-এর দীর্ঘ ব্যাধি, ইয়াকুব (আ.)-এর দৃষ্টিহানি—সবই ছিল আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের গুনাহ মুক্তি ও মর্যাদা বৃদ্ধির পর্যায়। ধৈর্য সাফল্যের সেতুবন্ধ : মুমিন যখন ধৈর্যের সঙ্গে বিপদে স্থির থাকে, তখন তার অন্তর এক অনন্য প্রশান্তিতে ভরে যায়। কারণ সে জানে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৫৩)।

এই ‘সঙ্গে থাকা’র অনুভূতি মুমিনের জন্য সব কষ্টকে সহজ করে দেয়। আল্লাহর সান্নিধ্যই তখন তার আশ্রয় ও প্রাপ্তির চূড়ান্ত রূপ। মুমিনজীবনের বিপদ-আপদ তাকে ধ্বংস করার জন্য নয়, বরং তাকে পরিশুদ্ধ ও সম্মানিত করার জন্য। যিনি কষ্টে আল্লাহর রহমত অনুভব করেন, তিনি আসলে আল্লাহর ভালোবাসায় ধন্য। কারণ প্রতিটি রোগ, প্রতিটি ক্ষতি, প্রতিটি অশ্রু, তার গুনাহ মোচনের সাক্ষী হয়ে থাকে।

অতএব, মুমিনের বিপদ তার পতনের নয়, বরং তার পুনরুত্থানের সূচনা; তার কষ্টই তাকে গুনাহমুক্ত, পরিশুদ্ধ ও আল্লাহর প্রিয় করে তোলে।

লেখক : শিক্ষার্থী, তাকমিল, জামিয়া ইমদাদিয়া মুসলিম বাজার, মিরপুর, ঢাকা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর