সিরাজগঞ্জ শহীদ মডেল স্কুলের পরিচালক হাছানুজ্জামান তালুকদারের বিরুদ্ধে চতুর্থ শ্রেণির ৮ শিশু শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত করার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় গত রবিবার (২৬ অক্টোবর) জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন অভিভাবকরা।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকালে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) রোজিনা আক্তার অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, শহীদ মডেল স্কুলের পরিচালক হাছানুজ্জামান তালুকদারের বিরুদ্ধে ৮ শিশু শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত করার অভিযোগ পেয়েছি। ডিসি স্যারের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, গত ২২ অক্টোবর টিফিন পিরিয়ডে স্কুলের কয়েকজন শিক্ষার্থী ভবনের ছাদে ওঠে। এ সময় পরিচালক হাছানুজ্জামান তাদের অন্ধকারাচ্ছন্ন কক্ষে ডেকে বেত্রাঘাত করেন। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে শিশু শিক্ষার্থীদের শারীরিক শাস্তি রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ। তবুও ওই স্কুলে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। এতে শিশুরা মানসিক আঘাতে ভুগছে ও পড়াশোনার প্রতি অনীহা তৈরি হচ্ছে। ছাদে ওঠা নিষিদ্ধ হলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ ছাদের দরজা বন্ধ রাখেনি। পরিচালক নিজে শ্রেণি শিক্ষক না হয়েও শিক্ষার্থীদের বেত্রাঘাত করেছেন।
শিক্ষার্থী তোয়াসিনের মা শ্যামলী খাতুন বলেন, তোয়াসিনের বাবাও একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আমার ছেলেসহ একই রুমে ৮ জনকে ডেকে নিয়ে মারপিট করেছে। প্রথমে ওইভাবে গুরুত্ব দেইনি পরে দেখি ওই রাতে আমার ছেলে হঠাৎ চিৎকার করে ওঠে এবং শরীরে প্রচুর জ্বর আসে। এই ঘটনায় আমরা ৮ জন অভিভাবক জেলা প্রশাসক বরাবর একটা লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
শিক্ষার্থী ইভানের মা শারমিন সুলতানা বলেন, অন্ধকার ঘরের ভিতরে নিয়ে আমার সন্তানকে পরিচালক খুব মারপিট করেছে। আমার সন্তান ভয় করে স্কুলে যেতে চাচ্ছে না। ওই পরিচালক আগে থেকে খারাপ ব্যবহার করেছে। কিন্তু এভাবে অন্ধকার রুমে নিয়ে যেভাবে মেরেছে এতে আমার সন্তানের পেছনের কোমরের নিচের অংশে ফুলে গেছে।
শিক্ষার্থী রাজিনের মা বলেন, ওই পরিচালক খুব খারাপ আচরণ করে। আমার ছেলে ওইদিন ছাদে ওঠেনি। সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে ছিলো। অথচ অন্ধকার রুমে ডেকে নিয়ে মেরেছে। এটা সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের জন্য আমরা ডিসি অফিসে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। শিক্ষার্থী মানহার মা মায়মুনা বলেন, ওইদিন আমার ছেলেকে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রেখে মেরেছে। এতে সে অসুস্থ হয়ে যায়।
এ বিষয়ে পরিচালক হাছানুজ্জামান তালুকদার বেত্রাঘাতের বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি জানান, স্কুলের ছাদ থেকে অন্য ছাদে গিয়ে লাফালাফি করছিল। এজন্য সামান্য বেত্রাঘাত করেছি। এ বিষয়ে আমি আর কোনো মন্তব্য করব না।
এর আগে, চলতি বছরের ১৭ জুলাই এক শিক্ষার্থী অসুস্থ থাকায় ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়। সেই কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষক বুলবুল হোসেন ঘুমন্ত অবস্থায় শিক্ষার্থীকে এলোপাতাড়ি বেত্রাঘাত করেন। ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীকে পেটানোর দায়ে পরিচালক হাসানুজ্জামান রঞ্জু ও সহকারী শিক্ষক বুলবুল হোসেনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়। মামলায় শিক্ষক বুলবুল হোসেন কয়েক মাস জেল খাটেন।